একুশে পা (Ekushey Paa) : 11
‘ওর ভেতরে একটা সূক্ষ্ম ইম্পিশ ব্যাপার আছে…’
সোমার বেশির ভাগ দিনই বাড়ি ফিরতে সন্ধে হয়ে যায়। একেক দিন সন্ধে উতরে যায়। অমিত রিডারশিপের জন্য চেষ্টা করছে। তারও পোস্ট ডক্টর্যাল পেপার্সের জন্যে খাটতে হয়। একেকদিন সেও ফেরে সোমার সামান্য আগে বা পরে। সোমা দেখছে শ্বশুরবাড়িতে এসে অমিতের কেমন একটা গা-ছাড়া ভাব এসে গেছে। আজ নিয়ে তিনদিন সে বাড়ি ফিরে দেখল অমিত ঋতুর ঘরে চিতপটাং হয়ে শুয়ে আছে, আর ঋতু উপুড় হয়ে তার গা ঘেঁষে, পা দুটোকে ওপরে তুলে গালে হাত দিয়ে মগ্ন হয়ে গল্প করে যাচ্ছে। পাশেই বেড সাইড টেবিলে দুটো প্লেটে ভুক্তাবশিষ্ট। অর্থাৎ এইখানে, এই শোবার ঘরেই খাওয়া-দাওয়া হয়েছে। সামান্য উঠে গিয়ে খাবার টেবিলে বসতেও আলস্য। সোমা মাস কয়েক হল অভ্যন্তরে একটি নতুন প্রাণের বীজ বহন করছে। এই নিয়ে তাকে প্রাণান্তকর খাটুনি খাটতে হয়। একে জোকায় যাওয়া-আসা। সেটাই তো প্রাণ বের করে দেয়। নেহাত সময়টা শীত তাই সহ্য করা যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই তার ভীষণ শির টেনে ধরে পায়ে, পেটে। পাগলের মতো খিদে পায়। তার পরেই গা বমি করতে থাকে। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া-আসাটাও সে একাই করে। অমিত কাজ করুক। পড়াশোনা করুক। কিন্তু এ কী? ঋতুর নিজের পড়াশোনা, কলেজ ইত্যাদিও চুলোয় গেছে।
সোমা বাবা-মাকে তার অবস্থার কথা বলেনি। ফ্রান্স যাওয়া ঠিকঠাক হয়ে যাবার পরে তার মা ব্যাপারটা বুঝতে পারেন। সোমা অবশ্য খুবই স্বাবলম্বী। সে কোনও অবস্থাতেই কারো সাহায্য নেওয়া পছন্দ করে না। মায়েদের সময়েও এ অবস্থায় বাপের বাড়ি থাকার রেওয়াজ ছিল। কিন্তু সোমা এসব প্রথাকে পাত্তা দেয় না। মীনাক্ষী অপরাধী গলায় বলেছিলেন, ‘তার ওপর ঋতুকে তোর ওপর চাপিয়ে যাচ্ছি।’
সোমা তখন খুব রাগ করেছিল, ‘মা, আমি একটা অ্যাডাল্ট মেয়ে, আড়াই মাসের জন্য ছোটবোনের দায়িত্ব নিতে পারব না?’
‘কিন্তু তোমার ছোটবোনটি যে কখন কী মেজাজে থাকে।’
‘—আমার ওপর ছেড়ে দাও’, চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসে বলেছিল সোমা, ‘তাছাড়াও ঋতু তো বড় হচ্ছে!’ সোমার ধারণা তার ক্ষেত্রে যেমন বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে মেজাজে ভারসাম্য এসেছিল, দায়িত্ববোধ এসেছিল, নিজের জীবন সম্পর্কে নিজের একটা আলাদা কৌতূহল এসেছিল, ঋতুর বেলাতেও তাই-ই হবে। কিন্তু এক সপ্তাহে এ বাড়িতে থাকতে এসে তার সেসব ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। ঋতুকে ঠিক যে অবস্থায় রেখে সে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল, ফিরে এসে তাকে ঠিক সে জায়গায় তো সে দেখতে পাচ্ছেই না। উপরন্তু একজন সম্পূর্ণ অচেনা, কিরকম কুঁড়ে, উচ্চাকাঙক্ষাহীন, নাক উঁচু, মরিয়া ধরনের এক তরুণীর সঙ্গে বাস করতে হচ্ছে তাকে। ব্যক্তিস্বাধীনতায় সেও বিশ্বাস করে, কিন্তু তাই বলে কিছু বলতে পারে না? সে বাথরুমে গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে, বাইরের জামাকাপড় বদলে, গায়ে একটা গরম শাল মুড়ি দিয়ে বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসন্তী চা এনে হাজির করল, সঙ্গে চিকেন ওমলেট।
সোমা বলল, ‘নিয়ে যাও বাসন্তীদি। খিদে নেই।’ বাসন্তী বলল, ‘কিছু খেয়েছ আপিসে?’ ‘না’, ‘তাহলে? সোমা এখন খিদে ফেলে রাখতে নেই, খেয়ে নাও।’ সোমা উল্টো দিকে ফিরে শুলো। বাসন্তী চা এবং জলখাবার টেবিলে রেখে, ঋতুর ঘরে সোজা ঢুকে গেল। ঋতু এখন অমিতের মাথায় চুল নিয়ে খেলা করছে। বাসন্তী বলল, ‘জামাইবাবু, সোমাদিদি এসেছে, শুয়ে পড়েছে ও ঘরে, কিছু খেলো না। না খেলে কিন্তু ভয়ঙ্কর যন্তন্না হবে—কিছুক্ষণ পর, বলে দিচ্ছি।’
অমিত ধড়মড় করে উঠে বসল, তারপর এক লাফে মাটিতে নেমে তাড়াতাড়ি ও ঘরে পৌঁছে গেল।
‘সোমা, সোমা, কখন এসেছ? খাওনি কেন? এই তো এখানে রয়েছে, ওঠো। খেয়ে নাও।’ সোমা একইভাবে শুয়ে। একটু নিচু হয়ে অমিত দেখল তার গালে জলের দাগ চিকচিক করছে, সে এদিক-ওদিক দেখে সোমার গালে একটা ভারী গোছের চুমু দিয়ে বলল, ‘কী হল? রাগ করেছ কেন? আমি বুঝতে পারিনি তুমি এসেছ।’
‘আমি আছি, আমি তোমার স্ত্রী, আগে বান্ধবী ছিলুম, এসব কিছুই মনে রাখবার দরকার কি অমিত? যাও, যেখানে ছিলে সেখানে যাও। আমায় বিরক্ত করো না।’
‘তাই বলে তুমি খাবে না? সারাদিনের পর? তারপরে যন্ত্রণা শুরু হবে, তখন ছোটাছুটি…’
‘তোমাকে ছোটাছুটি করতে হবে না। লেট মি অ্যালোন।’
অমিত অসহায়ের মতো দরজার দিকে মুখ করে ডাকল, ‘ঋতু, ঋতু দিদির কি হল দেখো তো, খাচ্ছে না …।’
এবার সোমা সটানে উঠে দাঁড়াল—তার মুখ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে, সে প্রাণপণে নিজেকে সংযত করবার চেষ্টা করতে করতে চাপা গলায় বলল, ‘বেরিয়ে যাও এ ঘর থেকে অমিত, বেরিয়ে যাও বলছি!’
ঋতু ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়েছিল। বলল, ‘পাগলের মতো চেঁচামেচি করছিস কেন? খাবি না তো খাস না—তাই বলে শুধু শুধু সীন ক্রিয়েট করবি?’ সোমা আর পারল না, হাত বাড়িয়ে ঋতুর গালে একটা ঠাস করে চড় কষিয়ে দিল, তারপর টাল সামলাতে না পেরে দড়াম করে পড়ে গেল।
‘রাইটলি সার্ভড’—ঋতু খানিকটা সরে যাওয়ায় বেশি লাগেনি। সে নিজের গালে হাত বুলোতে বুলোতে বলল।
‘অমিত বলল, “বলছ কি ঋতু—ওকে তোলো! বাসন্তীদি! বাসন্তীদি!’ বাসন্তী রান্নাঘরের ভেতর দিকে স্টোররুমের মধ্যে ছিল। কিছু বুঝতে পারেনি। সে ঘরে এসে দেখল—সোমা সটান মেঝের ওপর পড়ে আছে। অজ্ঞান। সে বলল, ‘তখনই বলেছিলুম তিন মাস পোয়াতি, সারাদিন খেটেখুটে এসে না খেলে এমন যন্তন্না হবে, তা মেঝেতে শুয়ে পড়েছে কেন?’
অমিত বলল, ‘পড়ে গেছে।’
‘পড়ে গেছে?’ বাসন্তী আতঙ্কিত গলায় বলল, ‘পড়ে গেছে? হাঁ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছ কী? ঋতু বাড়ির ডাক্তারবাবুকে কল দাও, শিগগিরই। দেখো দিকিনি, মা-বাবা নেই, এ সময়ে কত যন্ত-আত্তি, সেবার, আদরের দরকার। কেউ নেই। কী করি গো!’ বাসন্তী গ্লাসে করে জল এনে সোমার মাথায় ছিটোতে লাগল।
ডাক্তারবাবু চেম্বারে নেই, আসবামাত্র তাঁকে যেন খবরটা দেওয়া হয় বলে ঋতু ফোন রাখল। বাসন্তীতে অমিতে মিলে এখন সোমাকে বিছানায় শুইয়েছে। বাসন্তী তার পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, অমিত মাথায় কপালে জলের ছিটে দিচ্ছে একটু একটু। সোমার পাতলা চেহারা, ঋতুর মতো সে ছোটখাটো মানুষ নয়, চেহারার ধরনটা বেশ লম্বাটে। সে এখন চিত হয়ে শুয়ে আছে বলে ঋতু বুঝতে পারল দিদি অন্তঃসত্ত্বা, এইবার বোধহয় সোমার জ্ঞান হয়েছে, চোখের পাতা ঈষৎ কাঁপছে, ঠোঁট দুটোও থরথর করে কাঁপছে। মাঝে মাঝে সে যন্ত্রণার শব্দ করছে। বাসন্তী মুখ ফিরিয়ে বলল, ‘রান্নাঘর থেকে একটু দুধ ছেঁকে নিয়ে এসো তো ঋতু, আমি এই জাল দিয়ে নামিয়ে এসেছি। একটা চামচও এনো।’
ঋতু দুধটা এনে বাসন্তীর হাতে দিল। সে নরম গলায় বলল, ‘সোমা, খুকু—দুধটা খেয়ে নাও তো সোনা!’ চামচে করে সে দুধ খাইয়ে দিতে লাগল, সোমা বাচ্চা মেয়ের মতো দুধটা খেয়ে নিল। ঋতু আস্তে আস্তে সেখান থেকে সরে এসে বারান্দায় দাঁড়াল। ডাক্তার-কাকা আসছেন না কেন এখনও?
রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ডাক্তার সেন এবং অমিত দুজনে মিলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নার্সিং হোমে নিয়ে গেলেন। তার পেটে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে, ব্লীডিং হচ্ছে।
ঋতু বারান্দায় দাঁড়িয়েই ছিল, দাঁড়িয়েই ছিল। বাসন্তী যখন খাবার জন্য ডাকতে এলো, সে ববল, ‘অমিত এলে খাব।’
বাসন্তী সামান্য ঝাঁঝাল গলায় বলল, ‘অমিতের সঙ্গে তোমার কী? সে কখন আসবে তার কোনও ঠিক আছে নাকি? আর এও বলি ঋতু অত বড় জামাইবাবুকে দাদা বলতে পার না?’
‘জ্ঞান দিচ্ছ নাকি আমাকে?’ ঠাণ্ডা গলায় ঋতু বলল।
‘যা খুশি বলল আমাকে, ছোট থেকে আছি তোমাদের বাড়ি। তোমাকে দু হাতে মানুষ করেছি। কাজ করে খাই বলে মনে করো না, আমার চোখ নেই, কান নেই। মানতে না পার যেদিন বলবে চলে যাব। এখন সোমাটার কী হবে ভেবে আমার প্রাণ উড়ে যাচ্ছে।’ ঋতু চুপ করে বারান্দায় বসে রইল। দশটা নাগাদ অমিত ফিরল, উদভ্রান্ত চেহারা। বাসন্তী উৎকণ্ঠিত মুখে বলল, ‘কী হল জামাইবাবু, ভালো আছে?’ ঋতুও পেছনে দাঁড়িয়ে। অমিত বলল, ‘চেষ্টা করছেন ডাক্তাররা, সী ইজ বীয়িং, গিভন এভরি কাইন্ড অফ হেল্প। আমি একটু পরেই আবার যাব।’
ঋতু বলল, ‘আমিও যাবো অমিত।’
অমিত খাচ্ছিল, মুখ তুলে বলল, ‘তুমি কোথায় যাবে, ছেলেমানুষ!’
ঋতুর খাওয়ার রুচি চলে গেল। তবু সে প্লেটের খাবারগুলো নাড়াচাড়া করতে লাগল। বাসন্তী আপন মনেই বলল, ‘আজকাল সব ছেলে-ছোকরার কাণ্ড। বাড়িতে একটা বড়ো মানুষ কেউ নেই। শরীরের যত্ন, মনের যত্ন, এ সময়ে মনটাও নরম হয়ে যায়। বউদি যে এই সময়ে কেন গেল?’
অমিত মুখ-টুখ ধুয়ে ওইখানেই বসে একটা সিগারেট ধরালো। তারপর ব্যাগের ভেতর থেকে আর কিছু টাকাকড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল, যাবার সময়ে বলে গেল, ‘বাসন্তীদি, ঋতুকে দেখো। আমি দরকার হলে টেলিফোন করব।’
দিন সাতেক পরে সোমা বাড়ি এলো। অনেক কষ্টে বাচ্চাটা বেঁচেছে। আপাতত একদম বেড-রেস্ট। খুব ফ্যাকাশে হয়ে গেছে সোমা। স্ট্রেচার থেকে তাকে বিছানায় শুইয়ে দেবার পর ঋতু একটা পাতলা কম্বল তার গায়ে ঢাকা দিয়ে দিল। বলল, ‘সোমা! এখন কেমন আছিস?’
‘ঠিক আছি।’ সোমা একটু বিবর্ণ হাসল, ‘তুই? ঠিক আছিস তো? ব্যস্ত হোস না। কলেজ-টলেজ যা।’
অমিত ছুটি বাড়িয়ে নিল। বাসন্তীই সব করছে সেবার কাজ। ঋতু মাঝে মাঝে বাসন্তীর নির্দেশমতো একটু আধটু রান্না করে। তার কলেজ এবং নাচের ক্লাস বন্ধ করতে দেয় না কেউই। অমিত প্রায় সব সময়েই সোমার ঘরে। বিশেষত ঋতু এলেই সে যেখানেই থাকুক বোঁ করে সোমার ঘরে ঢুকে যায়। ঋতুর এতে অত্যন্ত অপমানবোধ হয়। সে-ও ঢুকেই কোন দিকে না তাকিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়, সেখানে বসেই খায়। একটু পরে সোমার ঘরে গিয়ে সোমার খোঁজ নেয়। তারপর আবার নিজের ঘরে ঢুকে যায় বা বারান্দায় গিয়ে বসে। রাত্রে খাওয়ার সময়ে অমিত ঘরে খায়। ঋতু খায় খাবার টেবিলে। একা।
সোমা এখন একটু ভালো। গায়ে জোর পেয়েছে। সে বলল, ‘ঋতু ফিরলেই তুমি ওরকম ল্যাজ তুলে এ ঘরে দৌড়ে আসো কেন?’
অমিত গম্ভীরভাবে বলল, ‘তোমার স্বাস্থ্যটা তো দেখতে হবে?’
‘অমিত শ্লেষ করে নিজের দোষ ঢাকবার চেষ্টা করো না। দিনের পর দিন কাজ ফেলে বাড়িতে বসে আড্ডা দিয়েছ, আমাকে বাদ দিয়ে দুজনে সিনেমা গেছ, দোকানবাজার গেছ, দিনের পর দিন। প্রতিদিন রাত্তির সাড়ে ছটা সাতটায় বাড়ি ফিরে দেখেছি …’ সোমা থেমে গেল।
‘কী দেখেছ বলো! বললে না!’
‘তুমিও জানো আমিও জানি, বলবার আর কী আছে?’ সোমা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
‘সেই জন্যেই তো এই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
‘এটাও মোটেই ঠিক হচ্ছে না। ও কি ভাবছে বলো তো! একটা ছোট মেয়ে বই তো নয়।’
‘তুমি যতটা ভাবছ ততটা ছোট ও নয় বোধহয়, ওর ভেতরে একটা সূক্ষ্ম ইম্পিশ ব্যাপার আছে।’
‘সূক্ষ্ম-টুক্ষ্ম নয়। বেশ স্থূলভাবেই আছে। ও নিজে সব সময় সবার মনোযোগের কেন্দ্র হতে চায়। ছলে-বলে-কৌশলে। না হতে পারলে খেপে যায়’, সে ক্ষীণ স্বর তুলে ডাকতে লাগল, ‘ঋতু! ঋতু!’
বেশ কিছুক্ষণ পর ঋতু এসে দরজার গোড়ায় দাঁড়াল। সোমা বলল, ‘খেয়েছিস?’
‘হ্যাঁ।’
‘এখানে এসে বস না রে একটু! শুয়ে শুয়ে বোর হয়ে গেলাম।’
‘কেন একজন তো রয়েছে।’
‘দূর দুজনে আড্ডা হয়! এখন তো আমি আউট অফ ডেঞ্জার। চলে আয়, তিনজনে মিলে আড্ডা দেওয়া যাবে।’
ঋতু একবার অমিতের, একবার সোমার মুখের দিকে তাকাল। তার পর গম্ভীরভাবে বলল, ‘আমার নাচ প্র্যাকটিস আছে। ও ঘরে যাচ্ছি।’ সে চলে যাবার জন্য ফিরে দাঁড়িয়েছে, সোমা বলল, ‘এ ঘরে কর না।’
‘এ ঘরে স্পেস নেই যথেষ্ট,’ বলে ঋতু আর দাঁড়াল না।
একটু পরে সোমা বলল, ‘ওর মেজাজ ঠিক হতে সময় লাগবে।’
অমিত বলল, ‘তোমার অত ব্যস্ততার দরকার কি? যখন ঠিক হবে, হবে।’
‘সে তো বটেই।’ সোমা বলল, ‘তবে আমার আট ন’বছরের ছোট বোন কি না! দেখো অমিত ও ছেলেমানুষ। ওর মধ্যে এখনও অনেক ইম্যাচুওরিটি আছে। চড়টা আমি ওকে মেরেছিলুম অসভ্যতার জন্য। বড় দিদি হিসেবে শাসন করবার রাইট আছে বলে। কিন্তু, আসল চড়টা আমি নিজের গালেই মেরেছি।’
অমিত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সোমা হতাশ হয়ে বলল, ‘বুঝতে পারলে না? তুমি কিন্তু ছেলেমানুষ নও, ইম্যাচিওর নও, বুঝতে না পারার কোনও কৈফিয়ত তোমার নেই। জীবনে যা করবে, দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে করবে।’
অমিত বলল, ‘বুঝলুম।’
‘কী বুঝলে?’
‘সময়ে বলব। আপাতত বাদানুবাদ চালাবার পক্ষে বড্ড চিঁচিঁ করছ। চুপ করো।’