Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একজন কবি শুধু || Shamsur Rahman

একজন কবি শুধু || Shamsur Rahman

মগজে পাখির ঘ্রাণ, টানেলের অন্তর্গত রূপ, বংশীধ্বনি,
হৃদয়ে অনেক প্রতিধ্বনিময় স্তর নিয়ে ঘুমায় বলেই
হয়তো-বা স্বপ্নে তার জ্বলজ্বলে কালো নীল সবুজ বাদামি
এবং ফিরোজা ঘোড়া, ভেলা,
একটি ইস্পাতি বাড়ি, বেহুলার রাঙা চেলী, উজাড় খামার
মিশে যায় আর গোরখোদকের নিঃশ্বাস হঠাৎ
লাগে যেন গালে ভোরবেলাকার স্বপ্নে। দীর্ঘ ঘাসে
কোদাল ঘুমিয়ে থাকে কর্পূর আতর ইত্যাদির স্মৃতি নিয়ে,
কোদাল ঘুমিয়ে থাকে, স্মৃতির মতন সাদা হাড়
আর মাটিমাখা করোটির স্বপ্ন নিয়ে
কোদাল ঘুমিয়ে থাকে, যেমন শ্রমিক তার হাড়ভাঙা খাটুনির পর,
কোদাল ঘুমিয়ে থাকে চুম্বনরহিত শুষ্ক ওষ্ঠের মতন।

‘হয়তো-বা স্বপ্নে’ এই শব্দ ক’টি মনে-মনে আউড়ে সে
নিজের ভেতরে যে-স্তব্ধতা থাকে, তাকে
নিঃসঙ্গ স্বজন ভেবে গাংচিল গাংচিল বলে মনের দ্বীপের
মাটিতে দবিজ লেখে নিভৃত দলিল।
‘হয়তো’ শব্দটি যেন থরথর চোখের নিবিড় পক্ষচ্ছায়া,
রোদে কম্পমান,
জ্যোৎস্নায় নিথর।
কখনো পাতার শিহরণ হয়ে আর কখনো-বা মাছরাঙা
পাখিটির চোখ হয়ে হৃদয়স্পন্দন হয়ে সদ্য প্রেমিকের জেনেছে সে
‘হয়তো’ হারিয়ে-যাওয়া যুবতী বোনের
প্রত্যাবর্তনের
ছায়াচ্ছন্ন আহত প্রত্যাশা,
‘হয়তো’ বেকার যুবকের দ্রুত কর্মখালি বিজ্ঞাপন পাঠ,
‘হয়তো’ পদ্মার বুকে শেষ রাতে জেলেদের জাল,
‘হয়তো’ টেবিলে খুব ঝুঁকে-থাকা কবির খাতার সাদা পাতা,
‘হয়তো’ অনেক দূরে স্মৃতিবিস্মৃতি মধ্যবর্তী ডাকবাংলো,
‘হয়তো’ রোদের আঙুলের স্পর্শে চকিতে শিউরে-ওঠা হ্রদ,
‘হয়তো’ শারদ আকাশের নীলে স্বপ্নবিন্দুর মতন কিছু
চকচকে কবুতর,
‘হয়তো’ হেমন্ত গোধূলিতে গুহাহিত
স্তব্ধ টেলিফোন,
‘হয়তো’ আপন শহরের শেষপ্রান্তে পরিত্যক্ত বাসডিপো,
‘হয়তো’ নির্জন গোরস্থানে পড়ে-থাকা ভাঙা বাঁশি,
‘হয়তো’ প্রাচীন চীনে কবির গভীর
সংকেতে মেদুর কোনো হাইকুর আভা,
‘হয়তো’ সমুদ্রতীরে অভ্রে-গড়া নিরিবিলি স্বপ্নের ফ্যাক্টরি।

‘হয়তো’ এখনও তার জীবনকে খানিক দুলিয়ে দেয় বলে
একটি ঘুমন্ত
সিংহকে জাগায় ভায়োলিনে ছড় টেনে
এবং পাড়ায় ঘুম গণ্ডারকে গিটারের সুরে।
সিংহের কেশরে আস্তেসুস্থে স্বপ্ন রেখে, রেখে কিছু আকাঙ্ক্ষার
রাধাচূড়া
দ্যাখে সে কখনো কোনো কোনো হ্যাংলা কলমের নিচে
বাংলা ভাষা তীরবিদ্ধ পাখির মতোই
আর্তনাদ করে।
কখনো-বা ময়লা পোস্টকার্ড স্নেহাশিস, শুভাশিস হয়, হয়
ব্যাকুল কুশল,
ভিন্ন ভিন্ন পোস্টকার্ড বকুলের মতো ঘ্রাণ নিয়ে
যে যার গন্তব্যে যায়। কোনো কোনো কার্ড মৃত গাংচিলের মতো
বাক্সে পড়ে থাকে সর্বদাই।

স্ট্রিটকার নর্তকীর মতো ক্ষিপ্র মুদ্রায় চঞ্চল চৌরাস্তায়,
পুলিশের হাতে কিছু সজীব গোলাপ গান গায়, গান গায়,
ভিখিরি বালক রুক্ষ ফুটপাতে একটি দুঃখিত কবিতার
পঙ্‌ক্তির মতন একা দুর্দশার ছায়ায় ঘুমায়।
কবর খননকারী যেন কালপুরুষ, একাকী গোধূলিতে
বিড়ি ফোঁকে ঘন ঘন, ঘাম মোছে কপালের, কোদালের মুখে
হীরের ঝলক দেখে হেসে ওঠে অকস্মাৎ, পা ঠোকে মাটিতে,
হাত দুটি মেলে দেয় আসমানে, কী যে খোঁজে, আর
বানায় কিসের তোড়া করোটির মতো;
কবর খননকারী কান পেতে শোনে কত খুলির গজল
এবং কখনো নিজে খনখনে গলায় পুরোনো গান গায়, গান গায়…

তিনজন দীপ্র ফিল্ড মার্শাল ম্যাপের দিকে তাকাতে তাকাতে
কিংবা কালো কফি খেতে খেতে
বিপুল বেলুন হয়ে মহাশূন্যে জমালেন পাড়ি, মারহাবা!
পাঁচজন অবসরপ্রাপ্ত খোঁড়া সৈনিক চায়ের কাপ থেকে অতীতের ক্বাথ করে পান। সাতজন বাজিকর অপরাহ্নে
সোৎসাহে বাজিয়ে ভেঁপু প্রজাপতি হয় এবং সতের জন
গলা-ফোলা, মঞ্চপ্রিয় জননেতা কী মোহন মাতলামি শেখাতে শেখাতে
নিমেষে গড়েন কত হিতবাদী ক্লাব, নামে বঞ্চনার ধস।
একজন কবি শুধু বারবার পুড়ে গিয়ে কেমন ধূসর
ভস্ম ফুঁড়ে পুনরায় নিঃশঙ্ক ওঠেন বেঁচে সতেজ পালক
নিয়ে বুকে, তারপর ‘শব্দ গান হও’ বলে স্বপ্নের গ্যারাজে
ব’সে একা-একা
লেখেন অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ কী তন্ময় রূপান্তরে।
পাশে তার চিতাবাঘ, ভায়োলিন এবং একটি সাদা হরিণ ঘুমায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *