রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – সীতা কর্ত্তৃক পৃথিবীকে আবাহন এবং পৃথিবীর সহিত পাতালে প্রবেশ
সীতার বচন যে শুনিল সর্ব্বলোক।
লজ্জায় কাতরা সীতা পৃথিবীকে ডাকে।।
মা হইয়া পৃথিবী মায়ের কর কাজ।
এ ঝিয়ের লাজ হৈলে তোমার যে লাজ।।
কত দুঃখ সহে মাগো আমার পরাণে।
সেবা করি থাকি সদা তোমার চরণে।।
উদরে ধরিলে মোরে তা কি মনে নাই।
তোমার চরণে সীতা কিছু মাগে ঠাঁই।।
করিলেন সীতা পৃথিবীকে এই স্তুতি।
সপ্ত পাতালেতে থাকি শুনে বসুমতী।।
সীতা নিতে পৃথিবী করিল আগুসার।
সপ্ত পাতাল হইতে হইল এক দ্বার।।
অকস্মাৎ উঠিল সুবর্ণ-সিংহাসন।
দশদিক্ আলো করে এ মর্ত্ত্য-ভুবন।।
নানাবিধ বসন ভূষণ পরিধান।
মূর্ত্তিমতী পৃথিবী রহিল বিদ্যামান।।
ঝি বলিয়া পৃথিবী সীতারে ডাকে ঘনে।
কোলে করি সীতাকে তুলিল সিংহাসনে।।
পরীক্ষা লইতে চান লোকের কথায়।
লোক লৈয়া সুখে রাম থাকুন হেথায়।।
মায়ে ঝিয়ে দুই জনে থাকিব পাতালে।
সর্ব্বলোক শুনিল পৃথিবী যত বলে।।
নাহি চাহিলেন সীতা উভয় ছাওয়ালে।
শ্রীরামের নিরখিয়া প্রবেশে পাতালে।।
পাতালে যাইতে রাম সীতার ধরে চুলে।
হস্তে চুলমুঠা রৈল সীতা গেল তলে।।
পাতালেতে প্রবেশিয়া তিলেক না থাকি।
স্বমূর্ত্তি ধরিয়া স্বর্গে গেলেন জানকী।।
লক্ষ্মী স্বর্গে গেলেন হরিষ দেবগণ।
অযোধ্যা-নগরে হেথা উঠিল ক্রন্দন।।
শ্রীরামের ক্রন্দন হইল অনিবার।
হাহাকার শব্দ করে সকল সংসার।।
সীতার চরিত্র-কথা শুনে যেই লোকে।
পুঞ্জ পুঞ্জ পুণ্য হয় পাপ নাহি থাকে।।
কৃত্তিবাস রচিল কবিত্ব চমৎকার।
গাহিল উত্তরকাণ্ডে চরিত্র সীতার।।