রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – ইন্দ্র কর্ত্তৃক বৃত্রাসুর বধ এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ করিয়া ব্রহ্মবধ পাপ হইতে মুক্তি
বৃত্র নামে অসুর সে বিপ্রের নন্দন।
আপনার বাহুবলে জিনে ত্রিভুবন।।
বৃত্রাসুর-প্রতাপেতে কাঁপে আখণ্ডল।
ঠেকয়ে তাহার মাথা আকাশ-মণ্ডল।।
ধার্ম্মিক যে বৃত্রাসুর ধর্ম্মে রাজ্য পালে।
বিনাবৃষ্টি বরিষণে নানা শস্য ফলে।।
পুত্রে রাজ্য গিয়া গেল তপস্যা কারণ।
অসুরের তপস্যাতে কাঁপে দেবগণ।।
দেবগণের লয়ে গেল বিষ্ণুর গোচর।
বৃত্রাসুর তপ-কথা কহে পুরন্দর।।
ধার্ম্মিক সে বৃত্রাসুর বলে মহাবল।
তার সম রাজা নাহি অবনী-মণ্ডল।।
বহু তপ করে সে পুণ্যের নাহি সংখ্যা।
যাহা চাবে তাহা পাবে কারো নাহি রক্ষা।।
বিষ্ণুর চরণে সবে করেন স্তবন।
বৃত্রাসুরে মারি রক্ষা কর দেবগণ।।
বিষ্ণু কহে বৃত্রাসুর বড়ই চতুর।
আমার সেবাতে মান বেড়েছে প্রচুর।।
স্বহস্তে মারিতে কভু যুক্তি নাহি হয়।
প্রকারে বধিয়া তারে ঘুচাইব ভয়।।
তিন অংশ হইব অসুরে মারিবারে।
এক অংশ বর গিয়া পাতাল ভিতরে।।
আর এক অংশে আমি বর মর্ত্ত্যপুরে।
আর এক অংশে বর তোমার শরীরে।।
তোমার শরীরে আমি হইনু দোসর।
বৃত্রাসুরে মারিবারে চলহ সত্বর।।
যুদ্ধেতে চলিল ইন্দ্র বিষ্ণুর বচনে।
প্রবেশ করিল গিয়া বৃত্রাসুর-রণে।।
বৃত্রাসুরে দেখি দেবে লাগে চমৎকার।
ইন্দ্রেরে বলিল হব সহায় তোমার।।
বিষ্ণুতেজে বৃত্র অরি বহু শক্তি ধরে।
বহ্র হানিলেক বৃত্রাসুরের উপরে।।
বজ্র-অস্ত্র আঘাতেতে বৃত্রাসুর মরে।
ব্রহ্মবধ প্রবেশিল ইন্দ্রের শরীরে।।
ব্রহ্মহত্যা ভয়ে ইন্দ্র ত্রাসিত অন্তরে।
বৃত্রাসুরে মারি ইন্দ্র মহাপাপে ঘেরে।।
পাপে পূর্ণ হয়ে ইন্দ্র ভাবেন বিষাদে।
বৃত্রাসুরে মারি আমি পড়িনু প্রমাদে।।
সকল দেবতা গেল বিষ্ণুর সদন।
ব্রহ্মহত্যা পাপে ইন্দ্রে কর পরিত্রাণ।।
বৃত্রাসুরে বধা কৈল তব তেজে।
ব্রহ্মহত্যা পাপে রক্ষা কর দেবরাজে।।
বিষ্ণু বলিলেন অশ্বমেধ আর পূজা।
অশ্বমেধ-যজ্ঞ কর ইন্দ্র দেব-রাজা।।
ব্রহ্মবধ পাপে ইন্দ্র হৈল অচেতন।
তপ জপ যজ্ঞ হোম ছাড়ে ত্রিভুবন।।
নদী স্রোত ছাড়ে, আর যোগী ছাড়ে যোগ।
রাজ্যচর্চ্চা ছাড়ে রাজা, ছাড়ে উপভোগ।।
ব্রহ্মবধ পাপে ইন্দ্র হইল অজ্ঞান।
ইন্দ্র অচেতন, যজ্ঞ করে দেবগণ।।
অশ্বমেধ যজ্ঞ আরম্ভিল দেবগণ।
নানা ভোগ দিয়া সবে পূজে নারায়ণ।।
অশ্বমেধ যজ্ঞ যদি হৈল অবসান।
ব্রহ্মবধ পাপ নাহি থাকে সেই স্থান।।
এক অংশ ব্রহ্মবধ জলোপরি ভাসে।
আর অংশ ব্রহ্মবধ বৃক্ষোপরি বৈসে।।
আর অংশ ব্রহ্মবধ নারী রজঃস্বলা।
অগ্নিরূপে পাতালে সান্ধায় এক কলা।।
চারি ভাগ ব্রহ্মবধ রহে চারি স্থান।
ব্রহ্মবধ-পাপে ইন্দ্র পাইলেন ত্রাণ।।
ব্রহ্মহত্যা-পাপ নাশে অশ্বমেধ-তেজে।
রাজসূয়-যজ্ঞ কৈলে সবংশেতে মজে।।
সংসারের কর্ত্তা তুমি পালিছ সংসার।
রাজসূয়-যজ্ঞ কৈলে সকলি সংহার।।
রাজসূয়-যজ্ঞে ছিল শ্রীরামের মন।
অশ্বমেধ-যজ্ঞে মতি দিল সর্ব্বজন।।
রাম বলে রাজসূয় বাঞ্ছা ছিল আগে।
তোমা সবাকার বোলে করিলাম ত্যাগে।।
ভাল যুক্তি সভামধ্যে কহিল লক্ষ্মণ।
অশ্বমেধ করিতে হইল মোর মন।।