রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – মুনির আশ্রমে শত্রুঘ্নের রামায়ণ গান শ্রবণ
বীণার স্বরেতে নাদ হৈল আচম্বিত।
মধুস্বরে গান গায় রামায়ণ-গীত।।
দেশ ছাড়ি সীতা আর শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
গাছের বাকল পরি প্রবেশিলা বন।।
শ্রীরাম যাইতে বনে কান্দে সর্ব্ব লোক।
দশরথ মরিলেন পেয়ে পুত্রশোক।।
রাজার মরণে যত রাজরাণীগণ।
যেমতে করিলা রাজার শ্রাদ্ধাদি তর্পণ।।
রাম গেলা বনে, ভরত মাতুলের পাড়া।
চারি পুত্র থাকিতে রাজা হৈল বাসি মড়া।।
চৌদ্দ বৎসর রহিলেন পঞ্চবটী বনে।
সীতা হরে লইলেক লঙ্কার রাবণে।।
সবংশে রাবণে রাম করিলা সংহার।
বহুযুদ্ধে করিলেন সীতার উদ্ধার।।
সমধুর স্বরে গীত করিলা যখন।
সর্ব্ব লোক শুনিয়া মোহিত রামায়ণ।।
দুই শিশু গীত গায় বাজিতেছে বীণা।
সর্ব্বলোক শুনে যেন অমৃতের কণা।।
শত্রুঘ্ন চক্ষের জল নারেন রাখিতে।
দুই চক্ষে বারিধারা মুছেন দু-হাতে।।
শ্রীরামের দুঃখ শুনি শত্রুঘ্ন বিকল।
মোহ সম্বরিতে নারে চক্ষে পড়ে জল।।
পাত্র মিত্র সবে বলে শুন মহামুনি।
এমত অমৃত-গান কভু নাহি শুনি।।
চারি প্রহর রজনী মধুর গীত শুনে।
সর্ব্বলোক নিদ্রা যায় নিশি জাগরণে।।
শত্রুঘ্ন বলেন মুনি করি নিবেদন।
কোথাকার দুই শিশু গায় রামায়ণ।।
শুনিলাম রামায়ণ মধুর সঙ্গীত।
কহ মুনি এই গীত কাহার রচিত।।
মুনি বলে বার্ত্তা জিজ্ঞাসিলে শত্রুঘন।
দুই শিশু গান করে শিষ্য দুই জন।।
আমি রচিয়াছি রামায়ণ সপ্তকাণ্ড।
শুনে লোক মোক্ষ পায় অমৃতের ভাণ্ড।।
কহিতে এ কথাবার্ত্তা প্রভাতা রজনী।
প্রভাতে চলিল বীর বন্দি মহামুনি।।
শত্রুঘ্ন সসৈন্যে যমুনা হৈল পার।
শত্রুঘ্নের সঙ্গে বাদ্য বাজিছে অপার।।
তিন দিনে গেল বীর অযোধ্যা-নগর।
যোড়হাতে রহিলেন রামের গোচর।।
শত্রুঘ্ন করিলা রামের চরণ বন্দন।
তোমার প্রসাদে প্রভু মারিনু লবণ।।
মারিনু লবণে যুদ্ধ করিয়া বিশাল।
মথুরাতে প্রজা বসাইনু চালে চাল।।
বার বৎসর না দেখিয়া তোমার চরণ।
ধরিতে না পারি প্রাণ হৈল উচাটন।।
তব অদর্শনে প্রভু জীবন কি কার্য্য।
কি করিবে সুখভোগ মথুরার রাজ্য।।
শত্রুঘ্নের তরে রাম দিলা আলিঙ্গন।
রাম বলে ভাই তব মধুর বচন।।
সবার কনিষ্ঠ ভাই গুণের সাগর।
তোমারে দেখিলে দুঃখ পাসরি বিস্তর।।
পঞ্চ দিন তরে ভাই বঞ্চিব হরিষে।
পঞ্চ দিন পরে যেও মথুরার দেশে।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ আর ভরত শত্রুঘন।
চারি ভাই একত্রে হইল সম্ভাষণ।।
চারি ভাই পঞ্চ দিন একত্রে রহিলা।
শত্রুঘ্নেরে মথুরায় বিদায় করিলা।।
মথুরায় হইলেন শত্রুঘন রাজা।
অযোধ্যায় শ্রীরাম পালেন সব প্রজা।।
শ্রীরামের রাজ্যে লোক সর্ব্ব সুখে বৈসে।
গাহিল উত্তরকাণ্ড পণ্ডিত কৃত্তিবাসে।।