রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – শ্রীরামের ভদ্র পাত্রের নিকট সীতার অপবাদ শ্রবণ
এতেক আশ্বাস রাম দিলেন সীতারে।
সাত হাজার বৎসরান্তে আইলা বাহিরে।।
সহস্র বৃহন্দ বাহির আইলা যখন।
পাত্র মিত্র কাণাকাণি করিছে তখন।।
রাবণের ঘরে সীতা ছিল দশমাস।
হেন সীতা লয়ে রাম করেন বিলাস।।
হেনকালে আইল রাম বাহির চৌতারা।
দেওয়ানে বসিল রাম সভাখণ্ড পূরা।।
পাত্র মিত্র ভয় পেয়ে করে কাণাকাণি।
সীতা-নিন্দা রঘুনাথ শুনিলা আপনি।।
সীতা-নিন্দা শুনি রাম ত্রাসিত অন্তরে।
সীতাদেবী না জানেন আছে অন্তঃপুরে।।
ধর্ম্ম-রাজ্য কৈল বড় দশরথ বাপ।
নানা সুখ ভুঞ্জে লোক না জানে সন্তাপ।।
আমি রাজা হৈতে হে কে আছে কেমন।
রাজ্য-ব্যবহার কিছু কহ পাত্রগণ।।
এতেক জিজ্ঞাসে রাম সভার ভিতর।
নিঃশব্দ হইল লোক না দেয় উত্তর।।
ভদ্র নামে মহাপাত্র উঠে আচম্বিতে।
রামের সম্মুখে কথা কহে যোড়হাতে।।
পাত্র সে দুর্ম্মুখ বড় কারে নাহি ভয়।
নিষ্ঠুর হইয়া কথা আগে কয়।।
পাত্র বলে রঘুনাথ কর অবধান।
রঘুবংশে আছি আমি পাত্রের প্রধান।।
সর্ব্বলোকে চিন্তে প্রভু তোমার কল্যাণ।
তোমার প্রসাদে রাজ্যে নাহি অসম্মান।।
দশরথ-রাজার রাজত্ব যেই কালে।
সুবর্ণের পাত্র প্রজা নিত্য নিত্য ফেলে।।
এখন ফেলিছে পাত্র দিনেক অন্তর।
নিধন হতেছে রাজ্য শুন রঘুবর।।
শ্রীরাম বলেন কেন নির্ধন সংসার।
রাজা হয়ে করিলাম কোন্ অনাচার।।
রাজার পুণ্যেতে প্রজা বঞ্চে অতি সুখে।
রাজা পাপ করিলে দুঃখেতে প্রজা থাকে।।
ভদ্র বলে রঘুনাথ কহিতে না পারি।
পাত্র হয়ে অধিক কহিতে ভয় করি।।
শ্রীরাম বলেন ভদ্র না হও চিন্তিত।
পাত্র যে নির্ভয়ে কহে সেই সে উচিত।।
যোড়হাতে কহে ভদ্র করিয়া প্রণাম।
মোর এক নিবেদন শুন প্রভু রাম।।
ভদ্র বলে রঘুনাথ যাই যথা তথা।
সর্ব্বলোকে কহে এই সীতার বারতা।।
দেবাসুর যুদ্ধ মত হইয়াছে রণ।
সীতা উদ্ধারিলা রাম মারিয়া রাবণ।।
দোষ না বুঝিয়া সীতা আনিয়াছে ঘরে।
নির্ম্মল-কুলেতে কালি দিলা রঘুবরে।।
যে নারী কোলেতে করি লইল রাক্ষসে।
সেই নারী রাখিয়াছে নিজ গৃহবাসে।।
এই অপযশ তব সর্ব্বজন ঘোষে।
তোমার সম্মুখে কেহ নাহি কয় ত্রাসে।।
এত যদি কহে ভদ্র পাত্র সে দুর্ম্মুখ।
বজ্রাঘাতে পড়ে যেন রামের সম্মুখ।।
রামের নিকটে ছিল যত পাত্রগণ।
শ্রীরাম বলেন কহ যথার্থ বচন।।
পাইয়া রামের আজ্ঞা বলে পাত্রগণ।
যে বলিল ভদ্র, প্রভু সে সত্য বচন।।
শুনিয়া শ্রীরঘুনাথ ছাড়েন নিঃশ্বাস।
গাহিল উত্তরকাণ্ড কবি কৃত্তিবাস।।