Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উত্তরণ || Abhijit Chatterjee

উত্তরণ || Abhijit Chatterjee

বেশ ভাল লাগল আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়ে,আসি এখন,ফোন নাম্বার তো রইলোই–চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালো ঋদ্ধি।ঋদ্ধি সেনগুপ্ত,বাড়ি শহরতলীতে।বাবা মা আর ঠাকুমা আর ‘বব’ তাদের অতি প্রিয় ল্যাব্রাডর এই নিয়ে সংসার।রোগাটে গড়ন ,মাথা ভর্তি কোঁচকানো চুল ,চোখে হাই পাওয়ারের চশমা।জামা কাপড়ের ঠিক ঠিকানা নেই।পান ,বিড়ি, সিগারেট, গাঁজা, মদ কিচ্ছু ছোঁয় না।প্রেম করে না ,ওর না’কি ভয় করে।বয়স সাতাশ।ওর বন্ধুদের কথায় ঋদ্ধি একটা অচল পয়সা।ওরা ঋদ্ধিকে জাদুঘরে স্টাফ করে রেখে দেবে ওর ওটাই থাকার জায়গা।এত দুচ্ছাই করা সত্ত্বেও ঋদ্ধি বন্ধুদের ফার্স্ট চয়েস।তার কারণ ঋদ্ধি যে কোনও জটিল প্রবলেম কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সমাধান করে দেয়।আর ঋদ্ধির চোখ দেখলেই না’কি বোঝা যায় কতটা গভীরে গিয়ে ঋদ্ধি ভাবতে পারে।ওর একটা নামও জুটেছে ” গিঁট খোলার মাস্টার “।ঋদ্ধির এই সমাধান করার গুণটা তাকে কর্মজীবনেও সাফল্য এনে দিয়েছে।ভার্সিটির চৌকাঠ পেরিয়ে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই সে একটা লজিস্টিক কোম্পানিতে পাতি বুকিং ক্লার্ক হয়ে যোগ দেয় বড়মামার দৌলতে।মালিক অবাঙালি,ব্যবসা নিয়ে বড়ই উদাসীন,খালি ঈশ্বরের নাম গান আর মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়াতেন। কর্মচারীদের ভেতর এই নিয়ে ক্ষোভ ছিল,কারণ কেউ ব্যক্তিগত প্রবলেম ওনাকে বলার সুযোগই পেত না। কাজে যোগ দেবার কয়েকদিনের মধ্যেই ঋদ্ধি ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারে।একদিন বড়বাবুর হুকুমে সে অফিসের সারা দিনের কালেকশান জমা দিতে মালিকের বাড়িতে যায়।বড়মামার খাতিরে মালিক তাকে চিনলেও তেমন আলাপ ছিল না।ঐ দিন চা খেতে খেতে উনি ঋদ্ধির সমস্ত কিছু জানতে পারেন।তখনই অফিস কেমন লাগছে প্রশ্নের উত্তরে ঋদ্ধি অনুমতি নিয়ে ধীরে ধীরে মূল প্রবলেমটা বলে।শুনে তিনি বলেন যে তিনি ওয়াকিবহাল তবে ঈশ্বর ওনাকে যে ভাবে বেঁধে রেখেছেন যে অফিস করতে ওনার ভাল লাগে না এবং ঋদ্ধির মতামত চেয়েছিলেন।ঋদ্ধি বিনম্র কন্ঠে সমাধানের রাস্তা দেখিয়ে ওনাকে ভাবতে বলেছিল।থুতনিতে হাত বোলাতে বোলাতে উনি ‘হুম’ বলে চুপ করে গিয়েছিলেন।পরেরদিন অফিসে হৈ চৈ।বাবলু ডেলিভারিম্যানের বাবা হাসপাতালে ভর্তি ,ওর কিছু অ্যাডভান্স লাগবে,হপ্তা খানেক আগেই সে বড়বাবুর কাছে আর্জি রেখেছিল।তা এখনও মঞ্জুর হয় নি,তার আজকেই টাকা লাগবে ,তার তো মাথা খারাপ হয়ে গেছে।বড়বাবু তুলসীদা অসহায়ের মত বলছেন যে উনি দেওয়ার তো মালিক ন’ন।কোম্পানির মালিকের সঙ্গে তার দেখাই হয় নি,ঋদ্ধি সব শুনে বলেছিল দাদা হয়ত ওর যা প্রয়োজন তা হবে না তবে আমরা এতগুলো স্টাফ যদি কিছু করে জমা করে ওকে একটা ফান্ড তুলে দিলাম আর আপনি ইতিমধ্যে মালিকের বাড়িতে গিয়ে বাবলুর ব্যাপারটা ভাল করে বুঝিয়ে বলে টাকাটা মঞ্জুর করিয়ে নি’ন।সেই টাকা পেলে আমরা আমাদের টাকা বুঝে নিলাম বাবলুকে বাকিটা দিয়ে দিলেন। ডেসপ্যাচের তপন আর স্টেনো মালতি দি ঋদ্ধির কথাতে সমর্থন করেছিল।সেইমত প্রায় হাজার বারো টাকা উঠেছিল।ঐ দিনই বিকেলের দিকে হতাশ গলায় তুলসীদা ঋদ্ধিকে ডেকে বলেছিলেন -এই দ্যাখো ,স্যার এখুনি ফোনে বললেন আসবে না ,তোমার হাত দিয়ে কালকের মত ক্যাশ যেন পাঠিয়ে দি।সন্ধ্যেবেলাতে ঋদ্ধি অফিস কালেকশনের সঙ্গে নিয়ে গেল পেন্ডিং কিছু ফাইল।আর তারপরেই চমক।অনেক ফাইলে সই করিয়ে তো নিলই বাবলুর অ্যাপ্লিকেশনটাও মঞ্জুর করিয়ে আনলো।পরেরদিন ঋদ্ধি অফিসে দস্তুরমত হিরো হয়ে গেল।ক্রমশ মালিক ঋদ্ধির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠলেন,প্রমোশন পেল, মাইনে বাড়ল।অনেক মাথা খাটিয়ে ঋদ্ধি মালিককে রাজি করিয়ে ক্যুরিয়ারের ব্যবসা শুরু করলো।কোম্পানিতে ঋদ্ধি তখন সেকেন্ড বস।তুলসীদাও প্রতি কাজে ঋদ্ধির শরণাপন্ন হচ্ছেন এমন এক সময় ক্লায়েন্ট ভিজিট করতে গিয়ে পরিচয় হলো সতীশ আগরওয়ালের সঙ্গে।উনি দেশের সবথেকে বড় লজিস্টিক কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ঋদ্ধির কোম্পানির মালিক আর উনি ছোটবেলার বন্ধু। মালিকের কাছ থেকে উনি ঋদ্ধির ব্যাপারে বেশ কিছু কথা জেনেছেন,সেই ঋদ্ধিকে পেয়ে উনি জহুরির মত পরীক্ষা নিতে শুরু করলেন এবং সব শেষে উনি বললেন যে সরকার থেকে ওনাকে জমি দেওয়া হচ্ছে যেখানে লজিস্টিক হাব তৈরি হবে,ঋদ্ধি যদি সেখানকার সর্বময় কর্তা হয়ে দায়িত্ব নেয় তাহলে উনি নিশ্চিন্ত থাকবেন।ঋদ্ধি বিনয়ের সঙ্গে তার অক্ষমতার কথা জানায়,সে যে তার বর্তমান মালিকের সঙ্গ ছাড়বে না সে কথাও বলে আসে।দিন কতক বাদে স্বয়ং মালিক ঋদ্ধিকে তার বাড়িতে ডেকে প্রায় হাতজোড় করে মিঃ আগরওয়ালের প্রস্তাব গ্রহণ করতে মিনতি করতে থাকেন।দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ঋদ্ধি ওনার কাছে কিছু সময় চেয়ে ফিরে আসে।ব্যাপারটা ঋদ্ধিরকে এতটাই বিচলিত করে যে তার এই ব্যবহার পরিবর্তন বাড়িতে ধরা পড়ে।ঋদ্ধি বাবা আর মা’কে সব খুলে বলে।শেষে বড়মামার কাছে যায় সমাধান করতে না পেরে।দু চার দিন বাদে বড়মামা সকলকে বলে গেলেন যে ঋদ্ধির মালিকের পূর্ণ সম্মতি আছে এবং স্বয়ং আগরওয়াল বাবু ঋদ্ধির মালিকের প্রতি বিশ্বাস যোগ্যতায় আপ্লুত। ঋদ্ধির উচিত কাজটা নেওয়া ,মাইনে বিশাল অঙ্কের হবে এছাড়াও কোয়ার্টার ,গাড়ি ,বিদেশ ভ্রমণ তো আছেই সঙ্গে থাকবে উৎসাহ ভাতা ,বছরে একবার। যার অঙ্ক বেশ ভালোই।

Pages: 1 2 3 4
Pages ( 1 of 4 ): 1 234পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *