Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উত্তরঙ্গ (১৯৫১) || Samaresh Basu » Page 7

উত্তরঙ্গ (১৯৫১) || Samaresh Basu

০৭. কালীবউ ও মধুকে নিয়ে

কালীবউ ও মধুকে নিয়ে শ্যাম গরুর গাড়ি নিয়ে যখন কেউটে দিয়ে বরুতির বিলের পাশ কাটিয়ে মালতীর শেষ প্রান্তে শ্বশুরবাড়ি বেদোই গাঁয়ের কিনারায় এসে দাঁড়াল তখন শীতের মিষ্টি রোদের আমেজে রোদ পোয়াচ্ছে দুপুর। এতক্ষণ সে গরুদুটোকে একটা কথাও বলেনি, ফলে অনেকখানি দেরি হয়ে গেছে। মনে হচ্ছিল সে ঝিমুচ্ছিল, কিন্তু সে সারা পথটাই কী যেন ভাবছিল।

গাড়ি ওখানে এসে দাঁড়াতেই কালী ভাবল শ্যাম বোধ হয় তামাক খাবে। সে মধুকে বলল, বোদাই গাঁ দেখিয়ে, ওই মাঠটা পেরিয়েই তোর দিদি-দাদার গাঁ।

মধু তড়াক করে এক লাফে কালীকে ধামসে ছইয়ের সামনে এসে বসল। এতখানি জ্ঞানে আর সে কখনও দিদিমার কাছে আসেনি। খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, দিদিমা খুব বুড়ি হয়ে গেছে, না রে মা?

কালী বলল, আমিই বুড়ি হলাম তা তোর দিদিমা।

আর দাদা?

বাবা? বাবা এখনও খুব শক্ত। মাঠে যায় এখনও। আর তুই এত বড় ধাড়ি, লাঙ্গল চালাতে শিখিসনি আজও।

মিছে বলিস্‌নে মা। গঙ্গার ধারের পৃথক জমিটে তো এবার আমিই চষলাম রে।

বড় দুঃখে বাড়ি ছাড়লেও অনেক দিন পরে বাপ-মাকে দেখতে পাবার আনন্দে কালীর মনটা কিছুটা হাল্কা হয়ে উঠেছে। ছেলের সঙ্গে হঠাৎ নানারকমে খুনসুটি লাগাল সে। বলল, ছাই, তুই চষেছিস না, তোর বাপ চষেছে।

মধু বলল, জিজ্ঞেস করে দ্যাখ না বাপকে।

শ্যাম তখন সত্যি সত্যিই কলকে সাজিয়ে আগুন ধরিয়ে হুঁকো টানতে শুরু করেছে।

কালী বলল, তা একেবারে বাড়ি গেইনা হয় হুকো ধরতে? এটুকু আর বসলে কেন?

শ্যামের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া গেল না, কেবল দীর্থ স্তব্ধতার পর থেকে থেকে হুঁকো টানার শব্দ শোনা গেল। অনেকক্ষণ পরে হঠাৎ বলল সে, মধু, ভেতর থেকে দু আঁটি বিচুলি দে দিনি বলদ দুটোকে।

শিক্ষিত বলদ দুটো কান নেড়ে, চামড়া কাঁপিয়ে লেজ দুলিয়ে ফোঁস ফোঁস করে উঠল।

কালী তার বিস্মিত মুখ বাড়িয়ে বলল, এখন আবার বিচুলি দেবে কেন গো? পো খানেক পথ তো বাকি?

আরও কয়েকটা হুঁকোয় টান দিয়ে কলকেটা নলচ্যুত করে শ্যাম বলল, বোদাই আর যাব না, বাড়ি ফিরব। গাড়ির মধ্যে মা-ছেলে চকিতে একবার চোখাচোখি করে কালী নেমে এসে বলল, তবে এত ঠাট করে বেরুলে যে?

বেরুলে কি আর ফিরতে নেই? শ্যাম কলকেটা উপুড় করে আগুন ঢেলে ফেলল।

ফিরতে হয় কি সে এতখানি পথ এসে কুটুম বাড়ির কানাচ থেকে? হতাশায় দমে যাওয়া কালীর মন উত্তপ্ত হয়ে উঠল—ভ্যালা মানুষ বাপু। আবার সে কোন পহরে ফিরে যাবে, কখন খাবে ছেলেটা। পথের মাঝে এ কী অনাছিষ্টি?

হুঁকো কলকে রেখে বলদ দুটোর গা হাতাতে লাগল শ্যাম। তারপর হঠাৎ কালীর কাছে এসে বলল, আমি পারব না বউ বাড়ি ছেড়ে থাকতে, তিলেকও নয়। মন বড় কাঁদছে। এ ভিটে ছেড়ে আমি কোথাও থাকতে পারব না।

কালী একটু চুপ করে থেকে মাথা নেড়ে বলল, এ তো আমি তখনই জানি। সাধ করে কী আর কাঞ্চীকে চোখ টিপেছিলাম। তা বলে ঘরের দরজায় এসে তুমি আজ ফিরে যাবে? আমি কতদিন বুড়ো বাপ-মাকে দেখিনি গো! মলো কি বাঁচল একটু চোখে দেখাটাও দেখে যাব না?

বলতে বলতে তার চোখ ছলছলিয়ে উঠল। মধুরও প্রায় তাই।

শ্যাম পশ্চিম দিকে তাকিয়ে একটা মস্ত নিশ্বাস ফেলে বলল চ তা হলে এসেছি যখন। তবে আজকের রাতটাই, কাল ভোরে-ভোরেই আবার ফিরব। আজ রাতে তোর সঙ্গে খানিক পরামশ্য করব।

আমার সঙ্গে? বাবাগো। কালী চোখ বড় করে বলল, সেটুকু বাড়িতে করলেই তো ন্যাটা কত?

শ্যাম বলদ দুটোকে বলল, চ বাবারা, একেবারে কুটুমবাড়িতে গিয়েই খাস্‌’খনি।

আনন্দের চোটে মধু বলল, দেও বাবা, পাচনটা নিয়ে আমি আগে বসি।

শ্যাম বলল, হ্যাঁ, তা’পর তোর পেছনে আবার আমি একটা নে বসি।

.

এক রাত মেয়ে জামাই নাতিকে প্রাণভরে আদরে সোহাগে ভরিয়ে পরদিন খানিক বেলায় বুড়োবুড়ি প্রাণের আশা না মিটিয়ে চোখের জলে তাদের বিদায় দিল। তাদের আত্মীয়স্বজনহীন সংসারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে পুজোর সময় এ বনবাসের জীবনে মেয়েজামাই বিশেষ করে নাতি আসতে কিছুতেই না ভোলে বারবার চোখের জলে সেকথা মনে করিয়ে দিল।

কালী আর মধুও খুব খানিক কাঁদল। শ্যাম শ্বশুরশাশুড়িকে মাটিতে গড় করে বলল, পুজোর সময় আর কেউ না হোক, মধুকে পাঠাতে সে ভুলবে না। তারপর ফিরে চলল গাড়ি।

ফেরার পথে এক কাণ্ড ঘটল।

যাবার সময় তারা কেউটে দিয়ে গিয়েছিল। আসবার সময় উচ্ছেগড় হয়ে সোজা মাঠের ধারে নাবাল পথ ধরে এগুল সে।

অদুরেই অজগর সাপের মতো দীর্ঘ রেললাইন পাতা হয়েছে। কেউ বলে লাইন নাকি নৈহাটি অবধি গিয়েছে। কেউ বলে কাঁচড়াপাড়া অবধি গিয়েছে। যাই হোক লাইন গেছে উত্তরে।

ইতিপূর্বে সেনপাড়া জগদ্দলের সবাই এসে রেললাইন দেখে গেছে। সবাই দূর দূর থেকেই দেখেছিল। কিন্তু কালো দুলের মেজো ছেলের নাতি বিষ্ণু নিতান্ত কৌতূহল চাপতে না পেরে কাছে এসে গাড়ির গায়ে একটু আঙুল ছুঁইয়েছিল। হায়, বেচারির সে কী খোয়র। গঙ্গায় নাইয়ে তুলসীর ছিটা দিয়ে ঘরে তোলা তো হয়েইছিল উপরন্তু প্রহারটাও কম খেতে হয়নি। কেন না, ওই গাড়ি অভিশপ্ত শুধু নয়, এত বড় অমঙ্গল নিয়ে তার আবির্ভাব হয়েছিল যে, গাড়ি চলবার পূর্ব মুহূর্তেই এক ব্রাহ্মণ শ্যামনগরে ট্রলি চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল। ব্রহ্মহত্যা করেছে ওই রেললাইন। কেউ বলে ঠাকুর নাকি তুলে ফেলতে চেয়েছিল রেললাইন, কেউ বলে মন্তর দিয়ে ট্রলি থামাতে চেয়েছিল বামুন, কিন্তু ব্ৰহ্মতেজকে অবহেলা করেই সে গাড়ি চলেছে। বোঝদার বাবু মহাজনেরা বলেছে, ওটা দৈব দুর্ঘটনা, বামুন নিজেই নাকি রেলের কাজ করত। যাই হোক, এতবড় অধর্মের কলের আশঙ্কায়, কলসি কলসি গঙ্গাজল ঢেলেছিল মেয়েবউরা রেলপথে। হে যন্ত্র, এ দেশে তোমার আবির্ভাব মঙ্গলময় হোক, এ আশা নিয়েই সেদিন পথের ধারে ধরে সিঁদুর মাখানো মঙ্গলঘট পাতা হয়েছিল।

আর এ সারা চাকলার মহাজনেরা সেদিন শ্যামনগরে কী ভোজটাই দিয়েছিল।

হায় রে মঙ্গল। নিশ্বাস পড়ল শ্যামের। কার মঙ্গল, কীসের মঙ্গল, হায় রে অনামুখো রটানো দেবতা! তা কি ছাই এ শ্যামের মতো মানুষেরা এক চিমটি ঠাহরও পাবে না! নাকি সে মঙ্গল কোম্পানির গা থেকে হাওয়ায় তাদেরও শরীর স্পর্শ করবে! জল ছেড়ে কোম্পানি ডাঙায় বাণিজ্য ফাঁদল, তার জুড়ি দেশি মহাজনে টাকা দিয়ে কবিয়ালকে দিয়ে গাওয়াল ব্যবসার মহিমাকীর্তন।

কি বা অপরোপ এই র‍্যাললাইন দেখি।
মুঙ্গেরে মুটকির ঘি, বাখরগঞ্জের চাল
দেশ ছেড়ে বিদেশে যায়, যেন পলকে পড়ে ঢেঁকি।

ইতিমধ্যে রেললাইনের উঁচু জমির কাছে গাড়িটা আসবার আগেই বলদ দুটো থমকে দাঁড়িয়েছিল দূরে একটা ঝকঝক শব্দ শুনে। এবং নাক উঁচু করে যেন কোনও বিপদের গন্ধ শুকছিল। তারপর আচমকা তাদের জীবনে একেবারে নতুন এক বিরাট দানোকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে মাটি কাঁপিয়ে হা হা করে ছুটে আসতে দেখে এক মুহূর্ত স্তব্ধ থেকে হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে পুবদিকে প্রাণপণ মারল ছুট।

শ্যাম হা হা করে উঠল, ছেড়ে দেওয়া দড়ি ধরে জোরে টান মারল, চিৎকার করে ফিরতে বলল। কিন্তু সে দানবীয় শব্দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি নিয়ে বলদ-দুটো উল্কা বেগে ছুটে চলল। গাড়ি কখনও বাঁয়ে, কখনও ডাইনে কাত হয়ে, কখনও ধপাস্ করে গর্তে পড়েই আবার হুড়মুড় করে ছুটল দিগবিদিদি জ্ঞানশূন্য হয়ে। কালী মধু জড়াজড়ি করে চেঁচিয়ে উঠল। সে চিৎকার কানে ঢুকতেই একবার চোখ ফেরাতে গিয়ে শ্যাম দেখল রেলইঞ্জিনের দুটো গোরা সাহেব হাততালি দিয়ে হাসছে। রাগে দুঃখে আগুন জ্বলে উঠল শ্যামের মাথায়। অন্ধের মতো পাচন দিয়ে গরু দুটোকে পিটতে লাগল সে। যা মুখে এল গালগাল দিতে লাগল। তাতে ফল ফলল উলটো। মার খেয়ে বলদ দুটো থামল না। আরও তীব্র বেগে ছুটল। একপাশের চাকা সরে গেছে তখন খানিক, দুইটা হেলে পড়েছে বাঁয়ে, গাড়ির পাটাতন আলগা হয়ে কালী মধুকে ছইয়ের মাথায় ঠুকে দিতে লাগল। এক দারুণ অপঘাতে মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। নামবার উপায় নেই, থামবার উপায় নেই। পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনিশ্চিত বিপদের হাতে প্রাণ সঁপে দিয়ে শ্যামও তখন গাড়ি আঁকড়ে বসে আছে।

উচ্ছেগড়ে খালের পুলের কাছে বলদ দুটো হঠাৎ দুটো হঠাৎ শান্ত হয়ে ঘাড় নুইয়ে চোখ পাকিয়ে দাঁড়াল। অর্থাৎ মার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। গাড়িটা তখন একদিকে বেঁকে হেলে গেছে। ভিতরে কালী মধু মৃতপ্রায়। নেমে পিছন দিয়ে আসতেই শ্যাম দেখল কালীর উরুৎ রক্তে ভেসে গেছে। দুহাতে পেট চেপে ধরেছে। মধুর ধাক্কা খেয়ে ঠোঁট কেটে গেছে।

শ্যাম আঁতকে উঠল; কালীবউ, কালীবউ, কী হল রে?

কালী একবার উঁ করে শব্দ করল মাত্র। মধু এতক্ষণে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

লোকজন জড়ো হল কয়েকজন। ঘোমটা-দেওয়া বয়স্কা মেয়েমানুষ একটি কালীকে নামতে বলল। নামলে, দেখেশুনে সে বলল, ভয়ের লয় বটে, বোধ হয় রেতু হয়েছেল, না রে বেটি?

কালী এ দারুণ বেদনাতেও লজ্জায় ঘোমটা টেনে দেওয়ার চেষ্টা করে ঘাড় নাড়ল।

সামনেই এক চাষীর ঘরে সবাই উঠল। মধু এখন নিজের জন্য নয়, মায়ের রক্ত দেখে কান্না জুড়েছে ফোঁস ফোঁস করে।

শ্যাম কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ থেকে দুরন্ত রাগে দাঁতে দাঁত ঘষে গাড়ির ভিতর থেকে একটা লাঠি বের করে হিসিয়ে উঠল গরু দুটোকে। শালা ভাগাড়ের মড়া!

গরু দুটো মার খাওগার জন্য যেন প্রস্তুত হয়েছিল। কেবল ভয়ে তাদের নাক দিয়ে শব্দ বেরুচ্ছিল ফোঁস ফোঁস করে, আর মাথাটা নুইয়ে দিয়েছিল সামনের দিকে।

শ্যাম মাথার উপর দিয়ে সাঁ করে লাঠি ঘুরিয়ে এনে মারতে গিয়েও ঘা দিল সাঁকোর বাঁধানো ধারে। তারপর হঠাৎ লাঠিটা মাটিতে ফেলে দিয়ে এক মুহূর্ত বলদ দুটোকে দেখে তাড়াতাড়ি খালের ধারে নেমে গিয়ে চোখে জলের ছিটা দিতে লাগল, আবোলাজীব তোরা পানভয়ে ছুটেছি, তাতে পানের ভয়ে তোদের আমি কেমন করে মারব।

কিন্তু তার দুভাগ্যে সেই ইঞ্জিনের গোরা সাহেব দুটোর উল্লসিত হাসির কথা মনে করে দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল তার বুক আর বার বার বলতে লাগল, কোন্ পাপে, মাগো, কোন পাপে!

এইদিন সন্ধ্যায় যখন সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে শ্যাম কালীবউকে আর মধুকে নিয়ে ফিরল তখন সারা সেনপাড়া-জগদ্দলে রাষ্ট্র হয়ে গেছে যে, মদনের বউ কাতুকে নিয়ে নারান দেশত্যাগ করেছে আজ দুপুরে। কোথায়, তা কেউই জানে না।

তখন শ্যামের মনে পড়ল গত রাত্রে কালীর সঙ্গে তার আলোচনার কথা। শ্যাম বলেছিল, লখাইকে বে দিলে হয় তো এ দুর্ঘটনা ঘটত না। কিন্তু কালী তাকে বুঝিয়েছে, হাজার বিয়ে দিলেও কাঞ্চন-লখাইকে ঠেকানো যেত না। উদাহরণস্বরূপ সে নারানের স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, দুর্ব্যবহার ইত্যাদি সরলভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে এবং এও বুঝিয়ে দিয়েছে শ্যাম যাই মনে করুক না কেন, অধর্মই হোক, নাকি কালীর মনটাই কালো, কিন্তু এ ব্যাপারে সে যেন তেমন দুঃখিত হয়নি। এখন শ্যাম যদি আঁট দিয়ে সংসার দেখে তবেই বাঁচোয়া, নইলে ঘরের দুর্দশা ঠেকানোযাবে না। আর নারান যদি নিতান্তই এ-সবে বাদ সাধে, তবে তার না হয় বিয়ে দেওয়া হোক আবার। নয়তো যদি সম্ভব হয় কাঞ্চনকেই নিজের করে নিক। লখাই যদি কাঞ্চনকে নিয়ে কোথাও চলেই যেত, তবে শ্যামের কিছু করার ছিল কি? কিন্তু লখাই তা যায়নি, উপরন্তু যেন শ্যাম এবং কালী বউয়ের শাস্তি মাথা পেতে নেওগার জন্য অপেক্ষা করে আছে। আর কাঞ্চন-খাইয়ের কথাও ভেবে দেখতে হবে বইকী!

শ্যাম ফিরে যখন কাতুকে নিয়ে নারানের চলে যাওয়ার কথা শুনল, তখন মনটা তার সত্যিই ভাইয়ের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠল। মনের মধ্যে কাঁটার খচখচানি থাকা সত্ত্বেও সে স্বীকার করল, জীবনভর নারান তাকে জ্বালিয়েছে, গাঁয়ে ঘরে মাথা নুইয়েছে এবং সংসারে থেকেও সে চিরকাল সংসারের বাইরে থেকে নিরন্তর বিপদ ও বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এবং বিস্মিত হল সে লখাইয়ের কাণ্ড দেখে, যখন লখাই তার পায়ের কাছে বসে পদ্মপুকুরের ধারে তার সঙ্গে নারানের মারামারির কথা বলল। সে চোখের জল রোধ করতে না পেরে লখাইকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, হারামজাদা খুন হলেও আমি তোমাকে দুষতুম না, লখাই। আজ আমি আবার নতুন করে ভাই বলে তোমাকে এ সংসারের সব ভার দিলুম। সে তুষ্ট হল এবং স্বস্তি পেল লখাইয়ের কৃতজ্ঞতা, দৃঢ়তা ও এ-সংসারের প্রতি প্রাণের টান দেখে। বলতে গেলে লখাই তাকে জয় করল।

কিন্তু অধরার গলাবাজির শেষ নেই। নারানকে ছেড়ে সে কখন শ্যামকে নিয়ে পড়েছে। সহ্য করতে না পেরে শ্যাম অধরার গলায় পা দিতে গিয়েছিল, কিন্তু লখাই তাকে ফিরিয়ে এনেছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress