Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উজান যাত্রা || Bani Basu » Page 11

উজান যাত্রা || Bani Basu

যাদবপুর কফিহাউজে ঢুকে মিঠু আর কাজল দেখল রৌনকদের পুরো দলটা মজুত।— হাই। হাই!

—এত হাই তোলবার কী আছে! আমরা তো হাতের কাছেই রয়েছি।— মিঠু বলল।

স্বরূপ বলল, কী জানি বাবা, তোরা চাকরি পাওয়ার দলে। একটু high না করলে কি পদধূলি দিবি? যে রকম ডুব মেরে আছিস!

বেশ অনেকদিন এই গ্রুপটার সঙ্গে দেখা হয়নি তাদের। কাজল অবশ্য নিয়মিত আড্ডার প্রয়োজনই অনুভব করে না। কিন্তু মিঠু করে, ভিন্ন ভিন্ন জলে সাঁতার কাটতে তার মজা লাগে। জীবনটা একঘেঁয়ে হয়ে যায় না হলে। আর সত্যিই তো, তার কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, নির্বাচনের সুযোগও বিশেষ নেই জীবনে। তাই যা ঘটছে, যা হাতের কাছে এসে যাচ্ছে, তাই নিয়েই সে যথাসাধ্য খুশি।

রৌনক এদের মধ্যে ধনীর সন্তান। একমাত্র তো বটেই। ওর আর্টস নিয়ে পাশ করাটা ওর বাড়ির একটা প্রচণ্ড দুর্ঘটনা। বাবা, মা দু’জনেই ব্যারিস্টার। ওঁরা এখন চেষ্টা করছেন রৌনকের যেন অন্তত একটা লিগ্যাল কেরিয়ার হয়। ও আইন পড়ছে। কিন্তু ওর মন শুধু টাকা ওড়ানোয়। বলল, যায্‌যাঃ, চাকরি করিস তো করিস— আয় এক প্লেট করে চিকেন বিরিয়ানি খাইয়ে দিচ্ছি। কোথায় যেতে চাস চল। এখানে যে কেন একটা বারও রাখে না বুঝি না। ঠান্ডা বিয়ার হলে জমত ভাল।

স্বরূপ কমার্সের ছেলে— ব্যাঙ্কের পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে, হয়ে যাবে একটা। কিন্তু রণজয় বা রণি তার ইংরেজির মাস্টার্স নিয়ে কিছুতেই স্লেটটা ধরতে পারছে না। সকলে বলছে স্কুল-সার্ভিসেও পরীক্ষা দে। রণির তাতে প্রচণ্ড অমত। সে এখন টিউশনি করে ভাল উপার্জন করে। ভাবছে অগত্যা ডাবলু বি সি এস-এ বসবে।

রিমি রীতা দুই বোন, খুবই ভাল ছিল সব দিক দিয়ে। এখন প্রচণ্ড ড্রাগ-অ্যাডিক্ট। কোথাও দু’দণ্ড স্থির হয়ে বসতে পারে না। এখন মিঠুদের দেখেই লাফ দিয়ে উঠে চলে গেল। বিশেষ করে কাজলের সঙ্গ ওরা সহ্য করতে পারে না। কে জানে কেন!

—কী রে কাজলদা, একটু হাল-হদিশ দে!

—কম্পিউটার শিখছ তো!

—ও তো ঘরের খেয়ে, গুচ্ছের খানেক ঢেলে শিখছিই।

—তা হলে কিছু একটা হয়ে যাবে।

অমিতাভ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কোনও অজ্ঞাত কারণে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে ও চান্‌স্‌ পায়নি। চুপ করে বসে ছিল।

রৌনক বলল, আসলে অমিতাভ বুঝলি তুই বাংলা-মিডিয়াম স্টাফ। অত ভাল ছেলে, কেরিয়ারটাই নষ্ট করলি, গড়বেতা না ফেতা ইস্কুলে। ফটাফট চলাফেরা করতে পারলে, বলতে পারলে— তোর চাকরি খায় কে?

অমিতাভ উঠে চলে গেল।

এই সময়ে শিখরিণী হন্তদন্ত হয়ে ঢুকল।

তোদের কতগুলো বুথ থেকে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করছি। মিঠু শোন!

মিঠু আর কাজল দু’জনেই উঠে গেল। রৌনক চোখ নাচিয়ে মন্তব্য করল।— কারেন্ট খেয়ে গেল।

—কী ব্যাপার?

—কস্তুরীদির কাছে গিয়েছিলাম ক্লাসের পর। গিয়ে দেখি খুব জ্বর। তার ওপরে ধরেছেন কোথায় গ্রামের দিকে যাবেন। কালই। আমি ঘাবড়ে গেছি। আমাকে ওঁর ওখান থেকে কিছুতেই ফোন করতে দিলেন না। আমার তো মোবাইল নেই। আশা করিনি তোমাদের এখানে পাব।

ডাক্তার এসে বললেন ভাইর‍্যাল না-ও হতে পারে। তাঁর নির্দেশে শিখরিণী মাথা ধুয়ে দিল দিদির। মিঠু প্যারাসিটামল দিল।— দিদি কী খাবেন? সুপ করে দিই?

আরে ডোন্ট বদার। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে নেই।

তা বললে তো চলবে না। স্ট্রেংথ ঠিক রাখতে হবে— কাজল বলল।

সে ঘর থেকে বিনা বাক্যব্যয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য। তার বেশ একটু পরে প্লেটের ওপর গরম কাচের গ্লাস নিয়ে ঢুকল। ধোঁয়া উঠছে সুপ থেকে। অর্থাৎ সে দোকানে গেছে, প্যাকেটের সুপ কিনে এনে তৈরি করেছে।

এক্ষুনি খান দিদি, একটু একটু করে, মিঠু, ওই ছোট কাপটা ধর তো, আমি ঢেলে ঢেলে দিচ্ছি। সে না-ছোড়। এবং গলায় বেশ কর্তৃত্বের সুর।

একটু পরেই রামলাখন গরম দুধ নিয়ে এল।

—তুমরা আমাকে কী ভাবচো বলো তো?— কস্তুরী প্রতিবাদ করে উঠলেন। তাঁর জ্বর কমতে শুরু করেছে। এখন গলায় একটু জোর এসেছে। ঠাট্টা করবার মেজাজও। বলে উঠলেন, কাজল য়ু নো হোয়াট, য়ু উইল মেক আ ফাইন হাজব্যান্ড! হেসে বললেন, সো কেয়ারিং অ্যান্ড কমপিটেন্ট।

—আমরা, আমরা বুঝি কিছু নই? মিঠু হইহই করে ওঠে। তার সঙ্গে শিখরিণী যোগ দেয়। কস্তুরী একটা হাত তার মাথার ওপর রাখেন, আর একটা হাত দিয়ে শিখরিণীকে খোঁজেন।

—তুমাদের তো প্রশ্ন উটচেই না। উইমেন আর ইনস্টিংটিভলি কেয়ারিং, এফিশিয়েন্ট, বাট মেন আর জেনার‍্যালি সাচ বাঙ্গলার্স। কাজল ইজ অ্যান এক্সেপশন।

কাজলের কোনও ভাবান্তর নেই। সে বলল, মিঠু, তোরা একটু পরে বাড়ি চলে যা। আমি আজ রাতটা এখানে থাকব।

কস্তুরী যথাসম্ভব প্রতিবাদ করলেন। কোনও ফল হল না। মিঠুও থাকতে চাইছিল, কিন্তু কাজল বা কস্তুরী কেউই তার কথায় কান দিলেন না।

ওরা দু’জন নামছিল। ক’দিন পরই নাকি কস্তুরী ঝাড়গ্রাম না পুরুলিয়ার দিকে যাবেন। মিঠু বলল, আমি যাবই। যেতেই হবে।

শিখরিণী হঠাৎ বলল, আমিও।

কাজল তো নিশ্চয়ই যাবে— মিঠু বলল, তুমি আবার কেন? দু’জনই যথেষ্ট না?

—এই স্টেপটাতে একটু বসবে মিঠু— শিখরিণী বলল— তোমার সঙ্গে খুব জরুরি কথা আছে। ভীষণ জরুরি।

একতলা-দোতলার মাঝের বড় ধাপটাতে বসে পড়ল শিখরিণী।

—কী এত জরুরি কথা! তোর বাড়িতে ভাববে না! কত দূর যেতে হবে এখন। যতই গাড়ি থাক।

—না না ঠিক চলে যাব। ভাবলে আর কী করতে পারি, চাকরি করি, সঙ্গে গাড়ি আছে, ড্রাইভার আছে, এর পরও ভাবলে কিছু করার নেই।

—বল কী বলবি!

শিখরিণী নিজের চুড়িগুলো একটু নাড়াচাড়া করল। তারপর বলল, তুমি জানো, কাজল ইংল্যান্ডে একটা অফার পাচ্ছে।

—তাই? কাজল আগেও পেয়েছে অনেকবার, নেয়নি। ওর পেপারগুলো ওরা খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করে।

—এটা আলাদা। অ্যামাউন্ট খুব ভাল। সব রকমের সুবিধে। ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ-এ। আমার ইচ্ছে এটা ও নিক।

—তোর ইচ্ছে? কাজল নিজের ছাড়া আর কারও ইচ্ছেকে পাত্তা দিলে তো! তা ছাড়া তুই কোত্থেকে জানলি? হঠাৎ ওর উপদেষ্টাই বা হতে যাচ্ছিস কেন?

—জেনেছি। কাজলের থেকেই। কথায় কথায় বলছিল। মিঠু, তুমিও ওকে একটু জোর করো। আর একটা কথা। ওর নাম তো কাজল সিং মুণ্ডা। মুণ্ডাটা ওকে বাদ দিতে বলো প্লিজ। জাস্ট কাজল সিং। সেটা সিংহর শর্ট ফর্ম বলে মনে হবে।

কেন?— মিঠু কখনও এমন আশ্চর্য হয়নি। তুই জানিস না পদবিটা ও কখনও গোপন করে না! ওটা ওর একটা স্যাটিসফ্যাকশন, গর্ব, জয়নিশান বলতে পারিস।

জানি, সবটাই জানি মিঠু। কিন্তু মানুষের মধ্যে অনেক সময়ে অনেক ছেলেমানুষি অহংকার, জেদ থেকে যায়, যেটা বর্তমান ও ভবিষ্যতের পক্ষে ক্ষতিকারক।

—তুই তা হলে ওকে ছেলেমানুষ মনে করিস!

—ও তো ছেলেমানুষই, ইম্যাচিয়োর।

—আর তুই?

—আমি ট্রাডিশন্যাল সমাজকে দেখতে পাই মিঠু, তাকে বদলাবার কথা যে ভাবি না, তা নয়। কিন্তু জোর করে বদলাতে গেলে উলটো ফল হয়। আমি সইয়ে সইয়ে, ভুলিয়েভালিয়ে বদলাবার পক্ষপাতী।

—তো তোর সেই যুক্তি তো কাজলের ক্ষেত্রেও খাটে! জোরজার করতে গেলে ওর জেদ চেপে যাবে।

—আমি তো জোর করতে বলছি না। সইয়ে সইয়েই করবে। কেননা ও তোমাকে বন্ধু বলে ভীষণ বিশ্বাস করে, মানে।

—আমি? তাই আমি বিশ্বাসঘাতকতা করব?

—প্লিজ মিঠু বোঝবার চেষ্টা করো, বিশ্বাস করে বলেই তোমার যুক্তিটা নিয়ে ও ভাববে। ভাবতে ভাবতে একসময়ে মেনে নেবে।

কিন্তু আমার তো কোনও যুক্তি নেই। ও যদি কাজল মুণ্ডা নাম নিয়ে মাথা উঁচু করে থেকে থাকতে পারে, যদি ও মিস্টার মুণ্ডা নামে ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ-এ স্কলারশিপ নিয়ে যায়, তাতে ক্ষতিটা কী! তোর কি পালচৌধুরী পদবি নিয়ে, আমার কি ব্যানার্জি পদবি নিয়ে কোনও আপত্তি আছে? থাকলেই অ্যাফিড্যাভিট করব!

একটু বিষণ্ণ হেসে শিখরিণী বলল, আমাদের অ্যাফিড্যাভিট করার দরকার নেই। এমনিতেই আলাদা পদবি হয়ে যাব।

মিঠু বলল, সেটাও কিন্তু আমাদের ইচ্ছাসাপেক্ষ। আমাদের ডিগ্রি টিগ্রি সবই বাবার পদবিতে। কর্মস্থলে পালটাবার অসুবিধে আছে। অনেকেই আজকাল পদবি পালটাচ্ছে না, যাই হোক শিখরিণী, কেন যে এই উদ্ভট প্রসঙ্গ তুললি। আর কেন যে এমন একটা কাজ যাতে আমার সায় নেই— আমাকে দিয়ে তা করাতে চাইছিস, আমি বুঝলাম না! আজ চলি, বাবা ভাববে, কাল কাজ আছে, এখানেও আসতে হবে।

—তোমাকে আমি পৌঁছে দিচ্ছি।

—ধ্যাত, তোকে উলটো দিকে যেতে হবে না? আমার কোনও দরকার নেই। আমি অটো নিয়ে চলে যাচ্ছি।

মিঠু উঠে পড়ল।

সত্যি কথা বলতে কী তার ভীষণ বিরক্ত লাগছিল। সমস্ত জিনিসটাই অর্থহীন। হঠাৎ কাজলের গোপন অভিভাবক হয়ে ওঠার অধিকার ওকে কে দিল? করবি করবি, নিজে কর। এখন ভেবে দেখলে শিখরিণীর সত্যিই একটু সর্দারি দিদিগিরির ভাব আছে। ও অনেক জানে, বোঝে, শুধু নিজেরটাই নয় অন্যেরটাও। মিঠু যখন এন. জি. ও-তে কাজ নিল, তখন কলেজ সার্ভিসে পরীক্ষা দেওয়াতেই যে মোক্ষ সেটা ও মিঠুকে বোঝাতে অনেক যুক্তি খরচ করেছিল। হঠাৎ এখন কাজলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে। ভাবুক। তাকে দিয়ে কেন?

বাড়ি ঢুকে আগেই সে চান করতে ঢোকে।

বাবা চেঁচিয়ে বলল, এ সময়ে চান কোরো না। একটু হাত পা ধুয়ে নাও ব্যস।

সে চেঁচিয়ে বলে ঠিক আছে। —কিন্তু গায়ে জল ঢালে ঠিকই। আফটার অল বাবা তো তার গোপন অভিভাবক নয়, আসল এবং খোলাখুলি। বাবার কথা সবসময়ে অমান্য করা তার একটা বিশ্রী অভ্যাস হয়ে গেছে। বাবা তো থাকত জামনগরে, বছরে খুব জোর দু’বার দেখা হত। মা-ই ছিল তার অভিভাবক। একটু বড় হওয়ার পরেই সে-ও মা’র। বাবাকে সে চিরদিনই অতিথি হিসেবে দেখেছে। মানছে যে— এই বিশ্বাসটুকু বেচারি বাবার থাক।

গায়ে জল ঢালতে ঢালতে হঠাৎ স্ক্রিনে ভেসে ওঠে শিখরিণীর সুন্দর মুখটা। কী এক দুশ্চিন্তায় মুখটা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। রোদ ঠিকই। কিন্তু বিকেলবেলার রোদ। এবং তখনই লাফিয়ে ওঠে কারণটা। মনের ওপর দিয়ে ভেসে যায় কস্তুরীদির মন্তব্য— ‘য়ু নো হোঅট কাজল, য়ু উইল মেক আ ফাইন হাজব্যান্‌ড্‌, সো কেয়ারিং অ্যান্ড কমপিটেন্ট।’ শিখরিণী কাজলকে ভালবাসে, ওকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু মুণ্ডা পদবিটা বোধহয় ওর পরিবারের সম্মতি পাবে না। তাই…। মুণ্ডাকে ও সিং, সিংহের এক সংস্করণ বলে চালাবে। অদূর ভবিষ্যতে কাজল দাঁড়াবে কাজল সিংহ আ ফাইন হাজব্যান্ড, কেয়ারিং অ্যান্ড কমপিটেন্ট, অব শিখরিণী সিংহ। বিয়ে করেই চলে যাবে লন্ডন। থেকে যাবে ওখানে। তারপর কে আর কার অতীত ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামাতে যাচ্ছে!

এটা অনুমান। কিন্তু সঠিক অনুমান। অনুমানটা তাকে অনেকক্ষণ অসাড় করে রেখে দিল। মগে জল নিয়ে মিনিটের পর মিনিট বসেই আছে, বসেই আছে।

বাবা ডাকল আবার। বেচারি!

—যাই বাবা— সে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরোয়।

—সেই চান করলি?

—না তো!

বাবাই টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে। ইলিশমাছ আজকে। খুব উৎসাহের সঙ্গে টেবিল সাজিয়েছে বাবা। খাবারগুলোও গরম করেছে। একটা কাঁটা ফুটে গেল তার মাড়িতে। আবার ওঠো, সাইলিসিয়া খাও। ধুত্‌, বাবার খাওয়াটাই মাটি করে দিল সে আজ। কিছুক্ষণ অন্তর অন্তরই জিজ্ঞেস করছে—গেছে! গেছে!

—আস্তে আস্তে যাবে বাবা।

—হ্যাঁ, বুঝতেই পারবি না কখন গলে গেছে।

তাই-ই তো বলছি। তুমি ব্যস্ত হচ্ছ কেন!

সে দেখল বাবা তার ঘরের দেওয়ালে মায়ের ছবিটার দিকে করুণ চোখে চেয়ে আছে। বাবা জানে— কেন মেয়ের এই অবাধ্যতা, কেন দু’জনের মধ্যে এই দূরত্ব!

সারারাত অজ্ঞাত অস্বস্তিতে ঘুম আসে না। ঘুম আসে না। নিজেই নিজেকে আয় ঘুম যায় ঘুম করতে থাকে সে। ভোরের দিকে দেখল মা বসে আছে একটা চেয়ারে। সামনে আর একটা চেয়ারে কস্তুরীদি। মায়ের পরনে সাদা চিকনের কাজ করা শাড়ি। কস্তুরীদির নীল শাড়ি। এই হালকা নীলটা মায়ের খুব প্রিয় ছিল। কেন যে এই শাড়ি বদলাবদলি সে বুঝতে চাইছিল না। কেমন হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। তারপর যেন নিজেই নিজের বোকামিতে লজ্জা পেল, একটা সোজা অঙ্ক না পারলে যেমন পায়। ঠিকই তো আছে! আরে!!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress