ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিপোর্টটা
অফিসে বসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিপোর্টটা গম্ভীর মুখে দেখছিল শবর। কোচকানো অ্যাসিস্ট্যান্ট লালু পাশে দাঁড়ানো।
আর ইউ শিয়োর লালু?
অ্যাবলোলিউটলি।
ক্রস চেক করেছ?
হ্যাঁ স্যার।
শবর পিছনে হেলান দিয়ে বসে বলল, দেন দি কমপ্লিকেশন ডিপেন্স।
হ্যাঁ স্যার।
শোনো, মিস্টার সরকারকে আমাদের ফাইন্ডিংসটা এখনই জানানোর দরকার নেই।
ঠিক আছে স্যার।
আমি আজই একবার দেওঘর যাচ্ছি। কাল ফিরব। ট্রেনের একটা টিকিট অ্যারেঞ্জ করো। যে-কোনও ট্রেন।
নো প্রবলেম স্যার।
লালু চলে যাওয়ার পর শবর অনেকক্ষণ সিলিং-এর দিকে চেয়ে রইল। তারপর উঠল। দেওঘর।
ভোরবেলা জশিডিতে নেমে একটা অটো রিকশা ধরে সোজা রিখিয়ায় হাজির হয়ে গেল শবর।
তোমার নাম বান্টা?
জি হুজুর।
কতদিন এখানে কাজ করছ?
চার-পাঁচ বরিষ হবে।
বান্টা, তোমার কাছে কয়েকটা জিনিস জানতে চাই।
বলুন।
এই ফটোটা দেখো, চিনতে পারো?
জি।
এ লোকটা কে?
নাম তো মালুম নেই।
কতদিন হল আসছে এখানে?
করিব দো-তিন সাল হবে।
এসে কী করে?
কুছ মালুম নেহি বাবু। আসে, চলে যায়।
কতদিন থাকে?
রহতা নেহি। আকে চলা যাতা। দো তিন চার ঘণ্টা রহতা হ্যায়।
ওদের কী কথা হয় জানো?
নেহি হুজুর।
কখনও কিছু কানে আসেনি?
মালুম হোতা বাবুসে পয়সা লতা হ্যায়।
দেখেছ কখনও?
নেহি হুজুর। ব্যাঙ্ক কা যো কাগজ হ্যায় না, চেক?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, চেক।
ওহি লেতা হ্যায়।
কত টাকার চেক জানো?
নেহি হুজুর। এক দো দফে দেখা।
লোকটা ঘনঘন আসে?
দো-তিন মাহিনা বাদ বাদ।
আমি যে পুলিশের লোক তা তুমি জানো?
নেহি হুজুর।
আমি বাড়িটা একটু সার্চ করতে চাই।
বান্টা মাথা নেড়ে রলে, হুকুম নেহি হুজুর।
শবর মায়াভরা চোখে বান্টার দিকে একটু তাকাল। বান্টা বেশ বলবান, লম্বা চওড়া মানুষ। আড়ে দিঘে শবরের ডবল।
শবর ঘড়ি দেখল। তাকে আজকের তুফান বা ডিলাক্স এক্সপ্রেস ধরে ফিরে যেতে হবে। থানায় গিয়ে সার্চ ওয়ারেন্ট বা সেপাই আনার সময় নেই। অগত্যা–
শবর এক পা বান্টার দিকে এগোল। তার ডান হাতটা বিদ্যুদ্বেগে একটা চপারের মতো নেমে এল বান্টার মাথায়। একটা শব্দও না করে বান্টা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। সংজ্ঞাহীন।
বিশাল বাড়ির পিছন দিকটায় একটা বড় ঘর হল সর্বজিতের স্টুডিয়ো। একটু অগোছালো। একদিকে ডাই করা নতুন ক্যানভাস। অনেক সম্পূর্ণ ও অসম্পূর্ণ ছবি চারদিকে ছড়ানো। একধারে একটা টেবিল। তার ড্রয়ারগুলো খুঁজে দেখল শবর। অজস্র স্কেচ আঁকা কাগজ পাওয়া গেল। বেশিরভাগই মানুষের মুখ।
একদম তলার ড্রয়ারে একটা ম্যানিলা এনভেলপের মধ্যে একটা স্কেচ পাওয়া গেল অজস্র কাগজের মধ্যে। সেটা পকেটস্থ করল সে। তারপর সন্তর্পণে বেরিয়ে এল।
বাইরে তার ভাড়া-করা অটোরিকশা অপেক্ষা করছিল। সে উঠে পড়ল।
.
আপনি ডেভিড?
হ্যাঁ।
আপনার বাবার নাম জন ডালি?
হ্যাঁ।
উনি কী করেন?
একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট।
কীসের ইন্ডাস্ট্রি?
মেশিন পার্টস।
বিগ ম্যান?
হ্যাঁ।
আপনি কতদিন কলকাতায় আছেন?
পাঁচ-ছ বছর।
এখানে কী করেন?
ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট।
মাসে কত রোজগার হয়?
কিছু ঠিক নেই। দু’-তিন হাজার হবে।
এই ফ্ল্যাটটার ভাড়া কত?
দু’ হাজার।
কীভাবে এত টাকা ভাড়া দেন?
দিই।
বাট হাউ?
ম্যানেজ করি।
টিনার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী?
উই আর ফ্রেন্ডস।
ইন্টিমেট?
সর্ট অফ।
আর ইউ ইন লাভ?
মে বি।
ডেভিড, প্রেমে পড়া অপরাধ নয়। বলুন।
সত্যি কথা বলতে কী, আমরা বন্ধু। তার বেশি কিছু নয়।
ডেভিড, আপনি টিনার বাবাকে চেনেন?
না। নেভার মেট হিম।
নেভার?
হ্যাঁ।
কথাটা বিশ্বাস করতে বলেন?
নয় কেন?
কথাটা সত্যি নয় বলে।
ডেভিড চুপ করে থাকে।
আপনি কতদিনের ড্রাগ অ্যাডিক্ট?
ড্রাগ! আই নেভার—
আই নো এ ড্রাগ অ্যাডিক্ট হোয়েন আই সি ওয়ান।
ডেভিড কাঁধ ঝাঁকাল। কিছু বলল না।
কতদিনের নেশা?
চার-পাঁচ বছর হবে।
ব্রাউন সুগার?
আই ওয়াজ অন হ্যাশ। রিসেন্টলি ব্রাউন সুগার। ইয়েস।
টাকা কে দেয়? সর্বজিৎ সরকার?
হি হ্যাজ মানি।
সেটা কথা নয়। টাকাটা উনি এমনি দেন না।
আমি কিছু সার্ভিস দিই।
সেটা জানি। হাউ ডিড ইউ মেক এ কন্ট্যাক্ট উইথ হিম?
টিনার কাছে শুনেছিলাম ওর বাবা ফ্রাস্ট্রেটেড অ্যান্ড আনহ্যাপি। রিখিয়ায় থাকেন।
একদিন ওখানে গিয়ে হাজির হলেন?
হ্যাঁ।
তারপর?
আমাদের অনেক কথা হল।
কী কথা?
অ্যাবাউট হিজ ফ্যামিলি। হিজ ওয়াইফ অ্যান্ড চিল্ড্রেন।
কী কথা?
সব ডিটেলসে মনে নেই। তবে—
তবে—
উনি ওঁর ওয়াইফকে খুব ঘৃণা করেন।
তাতে কী?
উনি আমাকে একটা কাজ দিয়েছিলেন। টু সিডিউস হিজ ওয়াইফ।
কিন্তু কেন?
টু টেস্ট হার চেস্টিটি পারহ্যাপস।
আপনি তাই করলেন?
হ্যাঁ, ইট ওয়াজ এ বিট ড্রামাটিক।
ওয়াজ ইট ইজি?
মোর অর লেস। মেয়েরা মধ্যবয়সে একটু অ্যাডভেঞ্চারাস হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা সেক্স স্টার্ভড।
সত্যি কথা বলছেন?
আই হ্যাভ নাথিং টু লুজ।
ছবিগুলো উনি কবে আঁকতে শুরু করেন?
তা জানি না।
এই স্কেচটা দেখুন। এটা কার মুখ?
বান্টু সিং-এর।
বান্টুর ছবি তো উনি কল্পনা থেকে আঁকেননি?
না। আই সাপ্লায়েড দা ফটোগ্রাফ।
আপনিই ওর ইনফর্মার তা হলে?
ইট ওয়াজ এ জব টু মি। জাস্ট এ জব।
এখন বলুন, ইরাদেবীর সঙ্গে আপনার কতটা ঘনিষ্ঠতা?
অনেকটাই।
তিনি কি আপনার প্রেমে পড়েছেন?
ঠিক তা বলা যায় না।
আপনি?
আই লাইক হার।
সেক্স?
ইয়েস। অকেশনালি। শি হ্যাজ প্রেজুডিস।
মা-মেয়ে দু’জনের সঙ্গেই?
না। টিনাকে আমি টাচ করিনি।
কেন, আপনার কি সংস্কার আছে?
তা নয়। তবে সর্বজিৎ সরকার ওটা সহ্য করতেন না।
ছবিগুলো আপনি দেখেছেন?
হ্যাঁ।
একটা পরিবারকে ওরকম এক্সপোজ করা কি ঠিক?
ডেভিড ফের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, স্যার, আমি কারও মরাল গার্জিয়ান নই। আমার টাকার দরকার। আমি কাজ করেছি।
আপনার বাবা জন ডালি আসলে কী করেন?
বললাম তো—
ওটা মিথ্যে কথা।
বাবা প্রফেসর। নাউ রিটায়ার্ড।
আপনি ডাক্তার?
পাশ করিনি। তবে ফোর্থ ইয়ার অবধি পড়েছি।
সর্বজিৎ সরকার কত টাকা এ পর্যন্ত দিয়েছেন আপনাকে?
হিসেব নেই। থার্টি-ফর্টি থাউজ্যান্ড হবে।
হাউ দা পেমেন্ট ওয়াজ মেড?
উনি চেক দিতেন, আমি কলকাতায় এসে ভাঙিয়ে নিতাম।
এবার একটা গুরুতর প্রশ্ন।
জানি। ইউ আর হোমিং ইন।
মার্ডারের দিন সকালে কোথায় ছিলেন?
নট অন দি স্পট।
দেন ইউ আর স্টেটিং দ্যাট ইউ আর নট গিল্টি?
ইফ ইট স্যুটস ইউ স্যার।
কখনও রিভলভার ব্যবহার করেছেন?
না। চোখেই দেখিনি।
ঠিক তো?
ডেভিড হাসল। কিছু বলল না।
ছবিগুলো হোটেল রুম থেকে কীভাবে চুরি যায়?
আপনি তো জানেন।
তবু শুনি।
আমি একজন বেয়ারাকে কিছু বকশিশ দিয়ে বলি সিংঘানিয়া ময়দানে বিপদে পড়েছেন। খবরটা যেন ওর লোকদের দেওয়া হয়।
তারপর?
ওরা তড়িঘড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি হোটেলে ঢুকি।
ঢুকতে দিল?
কেন দেবে না? আমি দু’দিন ওই হোটেলে ছিলাম যে।
মাই গড। তারপর?
ছবিগুলো আমার ঘরে ট্রান্সফার করে দিই।
তারপর?
পরদিন সর্বজিৎ সরকার এসে প্যাক করে নিয়ে যান।
ছবিগুলো এখন কোথায়?
জানি না। উনি বলেননি। অ্যাম আই আন্ডার অ্যারেস্ট?
এখনও নয়। কিন্তু আর একটা কথা।
বলুন।
রিগার্ডিং দা মার্ডার উইপন।
ইজি। আই স্টোল হার রিভলভার দ্যাট মর্নিং।
আবার জায়গামতো রিপ্লেস করেছেন কি?
ডেভিড মাথা নাড়ল, না। ওটা আর দেখিনি।
বলতে চান ওটা সর্বজিতের কাছেই আছে?
থাকতে পারে।
এই অপারেশনটার জন্য কত টাকা পেলেন?
টেন থাউজ্যান্ড অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচারস।
শুনুন ডেভিড, খুন করার মতো এলিমেন্ট সর্বজিতের মধ্যে নেই। হু ডিড ইট?
আমি জানি না স্যার। আই অ্যাম জাস্ট এ স্টুল।
ইউ আর অ্যাকসেসরি টু এ মার্ডার।
ডেভিড কাঁধ ঝাঁকাল, আই অ্যাম ইন মাই লাস্ট স্টেজ অফ অ্যাডিকশন। আই শ্যাল নট লিভ ভেরি লং। গো অ্যাহেড অ্যান্ড হ্যাং মি।