আলোর ঠিকানা
চতুর্থী শনিবারে পড়ায় সেদিন থেকেই রাজ্য সরকারের অফিস গুলোয় পূজোর ছুটি পড়েছে। শুক্রবার ছুটির পরে সোজা মেসে গিয়ে স্নান সেরে একবারে স্টেশনে।অফিসের ক্যান্টিনেই বিকেলের জলখাবারের পাট চুকিয়েছে। সেখান থেকেই তিনখানা রুটি আর ওমলেটও নিয়েছে রাতের খাবার হিসেবে।
মিষ্টির পাট এড়িয়েই চলছে, হালকা সুগার ধরা পড়েছে রক্তে।
উত্তরবঙ্গএক্সপ্রেসে রিজার্ভেশন কামরায় উঠে নিজের সীটে গুছিয়ে বসলো।
জিনিসপত্র সেরকম কিছুই নেয়নি । নামবে তো সেই ফালাকাটা ! পৌঁছাতে সকাল নটাও পার হয়ে যেতে পারে। সারাদিন অফিসের পর দৌড়-ঝাঁপ করে বেরিয়ে আসা ,তার পরে এই লম্বা সফরের ধকল। একটু জিরিয়ে নেবার তাগিদে ,হালকা চাদর মুড়ি দিয়ে চোখ বুজে শুয়ে পড়ল অমল ।সারাদিনের ধকলে, জানলা দিয়ে আসা ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঘুম আসতেও দেরী হলোনা , কখন ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে বুঝতেও পারে নি। চোখে আলো পড়তেই ধড়মড় করে উঠে বসলো।
ট্রেন বর্ধমান ঢুকছে, ভালোই হলো খেয়ে নেওয়া যাবে।
শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে এখনো।অবসাদ পিছু ছাড়ে না ,একা হলেই যেন চেপে বসে।
চাদরটা মুখে টেনে আবার শুয়ে পড়লো।
সামনের বার্থে এক মধ্যবয়সী মহিলাকে চাপিয়ে সঙ্গীটি পৌঁছে খবর দেবার কথা বলে ট্রেন থেকে নেমে গেলো।
মহিলার গলার স্বর শুনে ভুলে যাওয়া গানের কলির মতো কিছু একটা মনে এসেও মিলিয়ে গেল আলো আঁধারির সংশয়ে। সে সংশয়টুকুও কাটলো জানলা দিয়ে প্ল্যাটফর্মের আলো মহিলার মুখে পড়তেই।
…………….
পাখি! আজ দীর্ঘ তিরিশ বছর পর দেখছে তাকে! সেই পাখি! অমলের যৌবনের মানস প্রতিমা।
………………..
:তুই আমার কল্পনার নারী
মন নিবি ?
:আহাম্মক!
:হা হা হা হা হা……
: কবে দিয়ে বসে আছিস!
:কোথায় রেখেছিস ?
:বুকের ভেতর
কেউ যেন না দেখে
তাই রেখেছি ঢেকে!
অমলের বয়স ছাপ্পান্ন ছাড়িয়েছে,এ বয়সে উত্তেজনা ভালো নয় তবুও মন উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলো ।
মনে পড়তে লাগলো পুরানো কথাগুলি, এক এক করে ছবির মতো পরপর উঠে আসছে যে!
………
দুটো মনের অণু পরমাণু মিলেমিশে যেন জমাটবাঁধা
একটা অভিন্ন সত্ত্বা গড়েছি।
তোর হৃদয়ের স্পন্দন যেন আমার স্পন্দনে স্পন্দিত হচ্ছে !
এ এক বিরল অনুভূতি। জানি,শুনতে পাচ্ছি
………………
:গন্ধ পাচ্ছিস না!এইমাত্র শ্যাম্পু করে এলাম যে!
খুব পাচ্ছি!
:আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ একবার,
দেখছি তো,
: কি দেখলি !
: শুভ দৃষ্টি সম্পন্ন করলাম, তোর দিকে তাকিয়ে
ওহ,কী অনুভূতি অমল সারা শরীর শিরশির করছে।
: এই শিহরণ!
সত্যি, এ এক অপূর্ব প্রাপ্তি!
সত্যিই এক অনন্য প্রাপ্তি।
কোথায় চাপা পড়ে ছিল কে জানে! সেগুলি যে আজ মূর্ত হয়ে ফিরে আসবে কে জানতো !
……………
: এই নে সিঁদূর পরিয়ে দে অমল
দিলাম তোর কপালে সিঁদুরের রেখা ।
সোনা আমার,জন্মান্তরের স্বামী তুই
সব পূর্ণ হলো অমল
আর তো ছেড়ে যাবার প্রশ্নই আসে না ।
আমার বুকের ভেতরটা কেমন শিরশির করছে,
আমৃত্যু তোকে আপন করে রাখার মধুর দায়িত্ব আমার ।
বুকটা ভরে যাচ্ছে অমল
আমারো
: এতকিছু যে পাবার ছিল জানতাম না রে
………..
তুই আমার যৌবনের কল্পিত নারী
: নিয়তি যে
নির্ধারিত,
চূর্ণ হবার নয় ।
মানব মনের
সকল আশা
পূর্ণ হবার নয় ।
এখানেই গল্প শেষ হয়ে গেছিলো।
ঈশ্বর যা চান, তাই তো ঘটে । শেষ কথা বলার অধিকার যে কারুর নেই ।
কেন যে এতকথা বুকের ভেতর থেকে এক এক করে উঠে আসছে কে জানে!
উপরের বার্থে দুদিকের দুজন ভদ্রলোক ঘুমোচ্ছেন চাদর মুড়ি দিয়ে,বর্ধমানেই খাওয়া সেরে নিয়েছেন বোধহয়। সামনের বার্থের মহিলা আরেকটা আলো জ্বালতেই হঠাৎ ঝলমল করে উঠলো ।সত্যিই ঝলমল করে উঠলো অমলের সমস্ত অন্তর তন্ত্রী।এক অপূর্ব সুরের মূর্চ্ছনায় তখন জেগে উঠেছে অন্তরাত্মা।নিশ্চিত হয়েছেন পাখির ব্যাপারে। খাবারটা বের করে খেতে খেতেই অনুভবে বুঝছেন সামনের জন অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে।মুখ তুলতেই মহিলা বলেন অমল একই সাথে অমলও বলে ওঠে পাখি তুই!
-পাগল হবার জোগাড় । আমি যে ভাবতে পারছি না । সবকটা তন্ত্র এক সাথে মোচড় দিয়ে উঠলো ।এ কার দেখা আমি পেলাম ! দু চোখ আনন্দে জলে ভেসে যাচ্ছে, পাখি । নাহবেই বা কেন ! গোটা অন্তর যেথায় নিমজ্জিত, সেখানে ঈশ্বর যে সব দায় নিজের কাঁধে তুলে নেন । চল পরমেশ্বরকে ধন্যবাদ দিই দুজন মিলে । মনের সৌন্দর্য যেথায় অতল অপার, সেথায় জাগতিক সব কিছু খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে রে ।
-অমল,আমার চোখে জল আসছে রে এতদিন তোর দেখা পাইনি কেন!, আমার শূণ্য কলস ভরে নিতে এই অবেলায় পা বাড়িয়ে দিয়েছি ঘাটের দিকে,বেলা যে পড়ে আসছে সোনা।কখন ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে আসবে,তার কী ঠিক আছে অমল!
-তোর সাথে একটা দিনের ঘর করতে পারাটা যে হাজারখানা জন্মের সংসার করার থেকেও বেশি মূল্যবান । এসব একান্তে দুই মানব অনুভূতির কথা । অনুভূতির যে স্তরে পৌঁছালে, এর স্বাদ পাওয়া যায়, সেখানে কারই বা পৌঁছানোর গরজ আছে । বহিঃর্জগতে কোত্থাও স্বর্গ থাকে না। অন্তরের কেন্দ্রস্থলে তা ঘুমিয়ে থাকে, তাকে আবিস্কার করতে হয় ! আবিষ্কার করার কাজটা সহজতর হয়, নরনারীর পারস্পারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতায় । তাই তো ঈশ্বরকে সৃষ্টি করতে হলো জীবনের দুই মেরু ।
-ঈশ্বর আমাকে অপূর্ণ রেখেছিলেন কেন এখন বুঝলাম,জীবনের পাত্রটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলে তোকে রাখতাম কোথায়!
-ঈশ্বরের লীলা বোঝে এমন সাধ্য কার!
মিলনের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী, বিচ্ছেদের হাহাকার দীর্ঘস্থায়ী !
ঈশ্বরও বড়ো একারে !
-হ্যাঁরে আমার কথা তোর মনে ছিল!
-শেষ দিনেও তোকে খুঁজবো রে, তখন হয়তো হাতে মোবাইলটুকু ধরার ক্ষমতা থাকবে না ।
-হ্যাঁ,অমল আমিও আমার শেষদিনে……..
-মনের এতটা হাঁটা এই প্রথম । সময় দিয়ে এ তো মাপলে চলে না । আলো ! আলোর জোয়ারে আজ স্নান করে গেলাম ! তোকে যে এখানেই খুঁজে পেলাম,পেলাম আদিগন্ত উদ্ভাসিত আলোর ঠিকানা সেই আলোয় আমরা ভাসছি,ভেসে যাচ্ছি,কোথায় যাবো জানিনা এ যে কাউকে কিছু বলবার নয়, শুধু অনুভবের নির্জন ছায়াপথ ধরে দুজনের ঘুরে বেড়ানো ।
-ঝড়ে তোদের ঘর ভাঙলো,আমাদের জীবনটাও যে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে স্বপ্নেও ভাবিনি। বাবার বদলি হলো,চলে গেলাম ফালাকাটা ছেড়ে আর ফেরা হলো না
-আমি মেশোমশাইয়ের হাত ধরে কাজের খোঁজে চলে গেলাম কলকাতায়।
-আমি ছটফট করে মরেছি অমল, তখন না ছিল ফোন না ছিল তোর ঠিকানা।
-ঝড়ঝাপ্টা সামলে যখন ফিরলাম গোটা একটা আকাশ দেব তোকে, আলোয় ভাসবো আমরা ভাবতে ভাবতে এসে দেখলাম আমার পাখি তখন অন্য কারো খাঁচায় বন্দী হতে চলেছে, দেখলাম তোর বিয়ের কার্ডটা!
এই যে আমাদের দেখা হলো ভাবতো….
মনে হচ্ছে কী তিরিশটা বছর পেরিয়ে গেছে মাঝে। আজও সেরকমই ভালোবাসা তোর জন্য বুকে জমা হয়ে আছে যে!
অনুভব করছিএর চেয়ে বড়ো জিনিস সংসারে আর নেই ।
জীবনের প্রতিটি সেকেণ্ড এখন সার্থক !
-আজ মন কত শান্ত লাগছে অমল ভালোবাসার বিভূতি আমাদের সর্বাঙ্গে!
-তাই তোএ অপরূপ এক আনন্দের অনুভূতি !
-হ্যাঁ রে এই আনন্দের খোঁজ তো সবাই পায় না! যে পায়, সেই উপলব্ধি করতে পারে কী পেলাম!তবে একটা কথা তোকে মানতেই হবে , যৌনতাকে জয় না করলে,এখানে পৌঁছানো যায় না । প্রেম চিরন্তন,প্রেম থাকুক, আবেগ থাকুক ।পাবার আকুতি থাকুক ।
হৃদয়ের স্নিগ্ধতা দিয়ে বাঁচাই প্রেমটাকে ।সব কিছুর উপরে উঠতে গেলে, যৌনতাকে জয় করতে হয়, সেই জয়ের মালা পরেছি দু’জন । যৌনতা ছাড়াই যারা প্রেম চালিয়ে যেতে পারে, তারাই সত্যকার মানুষ । সাধারণ মানুষ যৌনতা ছাড়া প্রেম রাখতে পারবে না , জেনেই ঈশ্বরকে যৌনতার কল খাটাতে হয় ।কিন্তু যারা সেই অর্থে সামগ্রিক মানব গুণের অধিকারী, তারা এটা পারে ।
-পারবো অমল আমরা পারবো,এই বিশ্বাস আমার আছে তুইও পারবি জানি!
তোর মুখে চোখে কোথাও কোনদিন রাক্ষুসে খিদে তো দেখিনি অমল যা দেখেছি তাতে আমার মন প্রাণ তোর প্রতি প্রণত হয়েছে,সম্মানে।তুই যে আমার রাজার রাজা।
-ঈশ্বরের হয়তো এও এক পরীক্ষা! স্বয়ং ঈশ্বর যে খুঁজতে পাগল তার মনের মানুষটিকে । আমরা যে তারই ক্ষুদ্র প্রতিলিপি ।তাই দিনে রাতে সদাই কাউকে যেন খুঁজে চলেছি । কে যে তার শেষ মানুষ, সে নিজেও জানে না,নিরন্তর শুধু খুঁজে চলেছি কাউকে না কাউকে তাইতো মানুষ বড়ো অস্থির, বড়ো চঞ্চল, বড়ো আনমনা ।
এ রোগ তো ঈশ্বরেরও । তাই আমাদেরও ছাড় নেই তা থেকে। তাই তো ঘর ছেড়ে ঘর বাঁধা । সবই অতি স্বাভাবিক ঘটনা ।আমরা মোটা বুদ্ধির মানুষরা সব ভুল ব্যাখ্যা করে, ভুল বিচার করে, তালগোল পাকিয়ে বসে থাকি ।
-কী অসাধারণ ব্যাখ্যা!
বল অমল,বলে যা। কতদিন পর তোর কথা শুনছি। এতো ভালো লাগছে কী বলবো!
তোর মুখেই সাজে।
-উপলব্ধি করতে পারিস বলেই, এসব কথা মূল্যবান।
কারুর ভিতরে আমাদের ডুবতে পারা যে মহাপুণ্যের ।আমি ও কেমন ডুবে তলিয়ে আছি তোর মধ্যে । বিয়ে করলে,স্বামী-স্ত্রী হওয়া যায়, বাচ্চা তৈরির যন্ত্র হওয়া যায়, ভাবুক না হলে কি ভাব জমে! দুজন দুজনার মধ্যে একাত্ম হয়ে গেছি,আমাদের মন আর আত্মা মিলেমিশে এক হয়ে গেছে রে! আত্মিক মিলন এই একাত্ম হওয়ার মধ্যেই ঐশ্বরিক সূত্র লুকিয়ে । এমন মিলনে হৃদয় শান্ত হয়ে ওঠে,অপরিসীম স্নিগ্ধ সৌন্দর্যে পূর্ণ হয়ে ওঠে মন।অপার আনন্দের অনুভূতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয় মন এই অনুভবের গল্পটাই তো জীবনের সারাংশ ।
-এই অনুভব তো সবার হয় না!
-এরকম একটা মন যখন কারুর কপালে জোটে, তখন জাগতিক বস্তু বড়ো তুচ্ছ হয়ে পড়ে । দুজন দুজনকে পেয়েছি,ঈশ্বর মিলিয়েছেন আমাদের, পরস্পরকে পূর্ণ করার জন্য। এর বাইরে কিচ্ছুটি নয় !
-হ্যাঁ, তোকে বুঝতে হবে বলেই না সেই ঝড়ের পর থেকে বুকের ভেতর এত বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি।
– সব বলে ভারশূন্য হ, মনে রাখবো সব ।
-এত ভার বুকে বইতে বড়ো কষ্ট হয় যে!কাজের মধ্যে থাকি সবদিকে পূর্ণ অথচ …. জীবন আমাকে নিয়ে এতবড়ো পরিহাস কেন করলো,তার উত্তর হাতড়ে বেড়াই।
-পরিহাসও জীবনকে অনেক কিছু দেয়, যা তুচ্ছ পাওয়াকেও অতিক্রম করে যায় ।
-নারী হিসাবে আমি পরিপূর্ণতা নিয়ে বসে আছি অথচ এতবড়ো শূণ্যতা! এক বুক শূণ্যতা নিয়ে ঘুরে বেড়াই ,কেউ বুঝতেও পারে না।
-শূন্যতায় জীবনকে চেনা যায়! আমাদের সবার তো ঈশ্বর আছেন । ঈশ্বর যে এক ভয়ানক শূন্যতা নিয়ে দিন যাপন করেন।
-কেন এমন হলো বলতো,আমি জ্ঞানতঃ কোনদিন কারো ক্ষতি করিনি সব কর্তব্যই মুখ বুজে পালন করে যাই।
-জীবনটা কারুর না রে, এক্কেবারে একার, একাকীত্বই জীবনের মৌলিক ধর্ম । একাকীত্বেও যে একটা স্বর্গীয় স্বাদ থাকে । ঈশ্বরই তো বন্ধু হয়ে হানা দেন জীবনে ।
-তুই আমার ঈশ্বর ,অমল।
-এটাই তোকে বলতে চেয়েছি,দুজনেই দুজনের ঈশ্বর।
-অমল!
-খুব ক্লান্ত লাগছে রে! হাতটা ছুঁয়ে থাক না একটু।
-উফঃ কী শান্তি ! ঘুমোবি না অমল!
– হ্যাঁ,তোর হাতটা দিয়ে আমার বুকে, অনুভব করনা একই রকম নাড়ীর স্পন্দন।
পাখির হাতে হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ে অমল। অমলের ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে পাখি। তোলপাড় হয়ে যাচ্ছিল বুকের ভেতরটা, দুমড়ে মুচড়ে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিল যন্ত্রণায়। এক অজানা অচেনা অনুভূতি মনটাকে বারবার অন্যমনস্ক করে দিচ্ছে। এই কী তার সহপাঠি,সেই অমল ,তার সেই নওল কিশোর আজ এ কোন প্রেমের কথা শোনাচ্ছে পাখিকে! অমলের বুকে যে অধ্যাত্মিক চেতনার অনুভূতি মিলে মিশে এক হয়ে গেছে। আপন মনেই হেসে ওঠে পাখি। অমলকে ভালোবাসার বোঝাও যে আর বোঝা রইলো না।
……….
ঘুম ভেঙে অমল দেখে পাখি জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে। বুঝলো তার বোধহয় গন্তব্যে পৌঁছোতে দেরী নেই। চাওয়ালাকে ডেকে নিয়ে চা খেল দুজনে। অমলের মনে হলো আবেগের বশে কিছুটা হলেও কাল বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। পাখির কাছে সে উত্তরদায়ী,তাই চা খেয়ে বললো দেখ পাখি ,তোকে বোধহয় আর কয়েকটা কথা বলার আছে।
-বল না কি বলবি, এখনো তো সময় আছে!
-সব মানুষের ভিতরেই দুটো সত্ত্বা আছে তো । এই কথাটাই বলছিলাম একটি মানব সত্ত্বা,অপরটি পুরুষ সত্ত্বা তাই ছুঁকছুঁকে মন থাকবেই । যতই সাধনা বলি মায়ার কথা বলি মোহ থেকে মুক্তির কথা বলি না কেন,তাথেকে উত্তরণ খুব সহজ নয়।তবুও ঐ সত্ত্বাও যে সদা জাগরূক।এই দুই সত্ত্বাই তাদের কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা নিমিত্ত মাত্র।
-কাল রাত্রে চিন্তা করছিলাম,নিজের মনের দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করে দেখলাম কী দেখলাম জানিস!
-বল পাখি বল, কি দেখলি ?
-দেখলাম এক স্বপ্নের রাজকুমার তার মানসীকে নিয়ে ভেসে যাচ্ছে , প্রবল সুখে ভেসে দুটি মানব মানবী।প্রবল বন্যায় ভেসে যাবার আগের মুহূর্তে খড়কুটো ধরার আপ্রাণ চেষ্টায় সেই মানবীবলে উঠলো “তবে যে বলেছিলে,,”
তার ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে তাকে চুপ করিয়ে দিয়ে সেই প্রবল পুরুষ বলে উঠলো , “ভুল ভুল,সব ভুল ! সে যে ভাবের ঘরে চুরি ! প্রকৃতির এতবড়ো আয়োজনকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত স্বয়ং ঈশ্বরও যে মেনে নিতে পারবেন না। মিলনের মুহূর্ত না আসলে বিরহ কোথা! স্বয়ং ঈশ্বর এক থেকে দুই পৃথক সত্ত্বায় বিভক্ত হয়েছেন তা তো এই উদ্দেশ্যেই।এই মুহূর্তটির থেকে বড়ো আর কিছুই হতে পারে না আর সব মিথ্যে হোক এই মুহূর্তটি শুধু সত্য হয়ে বেঁচে থাকুক আমাদের জীবনে, ধ্রুবতারার মতো।”
-আমি ক্ষণিকে বিশ্বাসী ,অনন্ত নিয়ে আমার কারবার নয় । এই যে আজ দুজনে এত বকবক করে মরলাম। এতো স্বপ্নের কথা,কল্পনার ভাবনা মাত্র। আসলে কি জানিস ? যে উদারতায় মনটা বিচরণ করলে, সব কিছুই সুন্দর হয়ে ওঠে সেই উদারতাকে আমরা ভয় পাই । ভাবি, এই বুঝি সব ভেসে যাবে । সেগুলো তো মনের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষার কথা,তাকে অতিক্রম করা কঠিন,তবে এড়িয়ে যাওয়া জটিলতা যাতে না তৈরী হয়।আকাঙ্ক্ষার স্বরূপ অতি পবিত্র । আচ্ছা বল সত্যিই তো আমরা পরস্পরকে কাছে পেলে কতটা খুশী হতে পারি আন্দাজ কর! কিন্তু সংসারে,সমাজে প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবেই না ……
-জীবনটা হয়তো স্বচ্ছন্দ হতে পারতো অনেকখানি।
-তোর আগুন সূর্যের মতো পাখি!
-তোর কথা বলার ভঙ্গী আমার স্বপ্নগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় ।
-কোনো ক্লান্তি নেই দেখ ।কথা বলেই চলেছি , ভালোলাগা ছাড়া মনে আর কিচ্ছু নেই । এমন দিনও জীবনে কখনো আসবে তা জানাই ছিল না । আর কথা বলায় যে এতো সুখ, জীবন এই প্রথম জানলো ! আমার তো মনে হচ্ছে,ঈশ্বর এই দূরত্বটাই চেয়েছেন,এতেই হয়তো দুজনের মঙ্গল । দুজনে যা বলবো, দুজনেই তা জানি, মনের কথা জানাজানি থেকেই বন্ধুত্ব আগায়,বন্ধুত্বের চরম পরিণতি প্রেম, প্রেমের চরম পরিণতি ক্ষয়ক্ষতি আর যন্ত্রনা , প্রেম পার হলে নিঃশব্দ নির্জনতা । তবে শেষ কথা মানুষের জানবার কথা নয়, তার জানবার চেষ্টা করাও উচিত নয় ।
-এমন করে প্রেমের সংজ্ঞা তো কোনদিন বুঝিনি অমল! আমরা এখন কিসের মধ্যে আছি, বন্ধুত্ব নাকি প্রেম! বলে দে অমল !
-আমাদের বন্ধুত্ব ছিল বড়ো ক্ষণস্থায়ী, দুজনেই প্রেমে পড়বো বলেই মুখিয়ে ছিলাম।
–আমরা প্রেমেই পড়ে গিয়েছিলাম ,তাই তো!
-তবে এখন চলছে বন্ধুত্ব মাখানো প্রেম ।
হয়তো আর কোনদিন দেখা হবে না কিংবা…..
-অমল!সহ্য করতে পারবো না রে,
-পাগলি !
-এলি কেন তবে!
-আরো আপন করে নেব বলে! ডানহাতে মানবিক সম্পর্ক, বাম হাতে ঈশ্বর।পাখিকে ছেড়ে পুষলে, ভাবনা থাকে না ।এতে দুজনেই সুস্থভাবে বাঁচে!উৎকৃষ্ট বন্ধুর সাথে কাটানো দুটো দিন, গড়পড়তা বন্ধুদের সাথে কাটানো দুশো বছরের চেয়েও দামী ।
-তোকে আজো ভালোবাসি অমল, তাইতো এখনো ভুলতে পারলাম না !
-আমি তোর সঙ্গে চিরকাল থাকবো, এর মতো মিথ্যে , সংসারে আর দুটো হয়না, দেহ থাকা আর মন থাকা তো আলাদা বিষয় না, লাখো লাখো দম্পতি শিল-নোড়ার মত আবেগহীন ভাবে চিরকাল আছে, কিন্তু মন উড়ে বেড়ায়, এ থাকাটা তো, থাকা নয় ।
আমার থেকে কেউ ভালো বন্ধু পেলো, আমাকে এড়িয়ে যাবে । তখন ? আমি কি করবো বল?
-তোর থেকে ভালো বন্ধু পেলেই কেউ তোকে এড়িয়ে যাবে! গড়পড়তার নিয়ম সবক্ষেত্রে, সবার ক্ষত্রে খাটে না। হয়তো তুইই ঠিক,আবার হয়তো সবটা নয়।সব মানুষ কী একরকম! এত কঠিন কথা কত সহজেই বলে দিলি অমল! হয়তো সত্যিই বলেছিস।
– চিন্তা করিস না, ঈশ্বর যত দিন চাইবেন, ততদিন আছি ।
-এত কাঁদাচ্ছিস কেন অমল!
– এ জিনিস দূরত্বে মোছে না, হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠে এর শিকড় ছড়িয়ে গেছে ।
-আমার কষ্ট হচ্ছে অমল,খুব কষ্ট! এত কষ্ট দিচ্ছিস কেন বলতো!
– শ্রীকৃষ্ণ তো আজও কাঁদে, এ কান্নায় যে আয়ু বাড়ে । প্রেম করবি কষ্ট পাবিনা, তাই আবার হয় ? এই কষ্টেরও একটা তৃপ্তি থাকে, আনন্দ থাকে!
-এমন করে আপন করে কাছে টেনে নিলি কেন তবে!
-বুকের মাঝে আরো আপন করে রাখবো বলে !
এর পর যখন শান্ত হবি গভীর হবি, তখন দেখবি ঈশ্বর আর তোতে তফাৎ কমে গেছে ।: এক রকম হবার দরকার নেই বলেই, ঈশ্বর ভিন্ন ভিন্ন গড়েছেন । ঈশ্বর যেদিন বুঝবেন, তোর আর আমার আরো দূরত্বের প্রয়োজন, সেদিন কিছুই আর করার থাকবেনা।
পাগলী বন্ধু আমার ভালোবাসার মানুষ টাকে আবার ভোলা যায় ?
-ভরিয়ে দিলি হৃদয়টা অভাবনীয় আনন্দে।
-এই বয়সে আবেগ কম থাকে, কথায় সত্যটাই থাকে বেশি, এই আমার জীবন বোধ।
-তুই আমার কাছেঠিক কেমনটি জানিনা বুঝবি কিনা।যে ভালোবাসায় মেয়েরা মরে ঠিক তেমনটি!
-মানুষ যে ভালোবাসার ভিখারী ।যেখানে সে ভালোবাসা পায়, সেখানে সে নিজেকে লুটিয়ে দেয় বাঁধভাঙা জলোচ্ছ্বাসের মতো
প্রেম এসেছিল জীবনে,একটুখানি দিলাম নারীকে, বাকিটা রইলো আমার উত্তরপুরুষদের জন্য !আসলে তুইও ভীষণ যুক্তিবাদী। তাই আমার কথার যুক্তিবোধে নিমজ্জিত হতে তোর বেশি ভাবতে হয় নি । তোকে আমি আত্মায় মিশিয়ে নিলাম পাখি, তুই আর আমি ভিন্ন এটা মনে ঠাঁই দিস না ।
– শেষ গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে যে মণি-মাণিক্যের খোঁজ আমি পেলাম,তা অমূল্য অমল।
-আসলে কি জানিস পাখি সমস্ত মানুষ ও ঈশ্বর একপাত্রে গচ্ছিত বস্তু ।
-তোর কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছে তুই আমার প্রাণের কাছটিতে বসে মায়ার পরশ দিচ্ছিস।আচ্ছা বলতো আমি এত কাঁদছি কেন।আমার চোখ দিয়ে সেই থেকে জল পড়ছে,কেন বলতো!
-এ কান্না তো মানবিক নয়, ঐশ্বরিক কান্না, ভগবান যে দিনে রাতে বিভোর হয়ে এই মিষ্টি কান্নাই কেঁদে চলেছেন,
-এত সুন্দর কথা বলিস কী করে!
-বুঝতে পারিস না, কত বড়ো হাহাকার মনে বয়ে বেড়ালে ,তবেই এ ভাষার সান্নিধ্যলাভ করা যায়
-আমি সফল হয়েও নিঃস্ব।রিক্ততা বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি!
-যা পেলাম তাই বা কম কিসের !
– অন্তত পক্ষে চোখের দেখাটুকু তো হলো,প্রাপ্তির সীমানা ৯০ ভাগ পূরণ হলো । বাকি ১০ ভাগ পরজন্মের জন্য তোলা রইলো।
-অমলের ছবির দিকে কতবার অপলক তাকিয়ে থেকেছে পাখি,ওকে বুঝবে এমন সাধ্য কার! বলে
-তোর সবকিছু নিয়েই তুই বড়ো সুন্দর!
-সার্থক হলো জীবন, তেমন করে দেখলো কেউ ।
– তোর অপার সৌন্দর্য তোর অন্তর জুড়ে ,সেখানে না পৌঁছালে তোর সৌন্দর্যকে দেখার চোখ পাবে কোথায়!
– যা উপলব্ধির বিষয় তা চোখ দিয়ে দেখা যায়না,অন্তরে অন্তর যোগ না হলে সেই খোঁজ পাওয়া যায়না অমল!
-বেশ তো, মন্দ কী!এটা হয়তো হবারই ছিল ।
-আমরা সকলেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই চালিত হই।
-হ্যাঁ আশ্চর্য আমিও বড়ো কম হই নি।
-জন্মান্তর হয়তো সত্যিই আছে ,তাই যেটুকু বাকী রয়ে গেছিল সেটুকু এমন করেই ঈশ্বর পূরণ করে দিলেন। যা কিছু সব ঈশ্বরের ইচ্ছেতেই !
-বেশ তো!
কি জানি! অতশত বুঝতে গেলে থই পাবো না !
-বুকের ধুকপুকানি শোন না, ঐখানেই সব উত্তর সাজিয়ে রাখা আছে ।
-শুধু জানি যেখানে পৌঁছে গেছি সেখান থেকে ফেরার সাধ্য নেই!
-যে প্রেমে আমরা ডুবেছি, ঈশ্বর সারাক্ষন ওতেই ডুবে থাকেন । ফেরার কথা তো কোথাও লেখা নেই, মিথ্যে ! থামা যায়, কিন্তু ফেরা যায় না!
-আর তো কিছুই শুনছিনা দেখছিনা,বুঝছিও না,মগ্ন চেতনায় শুধু বুঁদ হয়ে আছি। –এই ডুবে থাকাই জীবন । জীবনে জীবন যোগ নাহলে জীবন খুঁজে পাওয়া যায় না!
ব্যক্তি প্রেমে ডুবে থাকাও যা, কৃষ্ণপ্রেমে ডুবে থাকাও তা।
সমস্যা হলো, মানুষ দুটোর একটাতেও ডুবতে পারে না ।
হ্যাঁ রে ঠিক তাই,ব্যক্তিপ্রেমের চেতনাই ঈশ্বরের প্রতি আকুলতা তৈরী করে।
– সব অপেক্ষাও শেষ অমল! তবুও আমি ওরই আছি আজো!
-ভেবে পাগল হবার জোগাড় !
কী অপরূপ সাহিত্য! জীবনের ভিতরে না ঢুকলে, এত স্বাদ বোধ হয় পেতাম না ।
আমি তো আসলে, তোরই আর একটা রূপছাড়া অন্য কিছু নয় ।
-আমার মনকে ছুঁতে পারে তেমন উচ্চতায় দেখিনি কাউকে,দেখার চেষ্টাও করিনি।ধ্যানমগ্ন উমা হয়ে আমার মহেশ্বরের মনোযোগ পেতে চেয়েছিলাম।
আছ মনে হলো এজন্যই হয়তো জীবনের ঝুলিটি খালিই রয়ে গেছে।
-হয়তো এটাও পক্ষান্তরে আশীর্বাদ।
-আমি জানি আমাদের আর কোনোওদিন দেখা হবে না ! তোর বুকের ভেতর একটুকরো ঘাসজমি রেখেদিস অমল,ব্যস আর কিচ্ছুটি নয় ।
-মনে হচ্ছে সবকিছু ভুলে খালি গল্প করি।তোকে ছাড়তে যে মন চায়নারে, তোকে কাছে পেলে নূতন করে দুজনেই বাঁচার স্বাদ পেতাম।
-প্রতিটি দিন বড্ড মনোরম হয়ে উঠত, কল্পনা করেও এত সুখ!
-মনের ভিতর এই ইচ্ছেগুলো ভীষণ সত্যি, এখন আমরা চূড়ান্ত সুখে ভাসছি।
-হ্যাঁ সত্যি এক আশ্চর্য সুখের সন্ধান পেলাম!
তোর মন ছোঁয়া কথায় আমি নিজেকে যে হারিয়ে ফেলছি ।
যাকে এমন করে ভালোবাসলাম তাকে আর একটিবার দেখতে পাবো না!
-আমার চোখেও জল আসছে কেন আমি জানি না। হালকা হ পাখি। তোর সব কষ্টের কথা আমাকে বলিস ।
-একবার বল অমল, আজো আমাকে ঠিক তেমনটিই ভালোবাসিস
-আমৃত্যু তুই থাকবি আমার হৃদয় অলিন্দে । তিরিশটা বছর ধরে তোর কথাই ভেবে গেছি,সারাক্ষণ!
-তুই জন্মান্তর মানিস?
-খুব মানি!
-সামনের জন্মে যেন তোকে পাই অমল!
-ঈশ্বর মানলে, জন্মান্তর না মেনে পারা যায় ! আমারও বাসনা এক চাওয়ায় সত্যতা থাকলে,ঈশ্বরের পূরণ করা ছাড়া কিছু করার থাকে না ।
-আমরা পরস্পরকে ঠিক চিনে নেব
-আমি ঘাটের কাছে বসে থাকবো , যখন বৈতরণী পার হবি দেখিস তোর হাত ধরে নৌকা থেকে নামাবো ।
– আমার সব পূর্ণ হয়ে গেল অমল,আর কোন দুঃখ নেই।
-আমাকেও কানায় কানায় ভরিয়ে তুলেছিস !এজন্মটা নাহয় আমাকে বন্ধু বলেই ভেবে নিস ! বয়স বাড়ে মানসিকতা বদলায়,বন্ধুত্বের আবেদন চিরকালীন।অন্তত তোর সাথে একাত্ম হতে পেরেছি । এ যে জীবনের কত বড়ো জয় , মনে হচ্ছে আমার স্পন্দনে তোর স্পন্দন মিশে গেছে।
-অন্যান্য সব চাহিদাই আজ মনে হচ্ছে বড়ো তুচ্ছ !
-আত্মার আত্মীয়তা চিরন্তন! তার ক্ষয় নেই , ভাঙন নেই । দূরত্ব আছে, বিনাশ নেই । জীবনে কখনো এই প্রাপ্তিটুকু যে ভোলবার নয় ।কালের স্রোতে দুজন দুজনের
কাছ হতে দূরে চলে যেতে পারি, কিন্তু এই মানসিক উত্তরণ বিস্মৃত হবার নয় ।
সুখে মরার জন্য পরমধন কুড়িয়ে পেলাম দুজন । মৃত্যু শয্যায় শুয়ে, যখন চোখটুকু চাইতে পারবো না, তখনো ভাবতে পারবো পৃথিবীতে স্বার্থহীন ভাবে পেয়েছিলাম অন্তত একজনকে । সেই
ভাবনাটুকুই মরণকে সার্থক করে তুলবে ।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ট্রেন ঢুকছে,দুজনের মুখেই বিষাদের ছাপ। পাখির জিনিষপত্র গুছিয়ে দরজায় এসে দাঁড়ালো অমল ,সম্মোহিতের মতো দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে আছে।সম্মিত ফিরলো পিছন থেকে কেউ নামবে বলে সরতে বলায়। প্ল্যাটফর্মে ট্রেন থামতেই হুড়মুড় করে নামা ওঠা…
পাখির হাত ধরে বড়ো যত্ন করে নামালো, হুইশল বেজে উঠতেই আবার উঠে পড়লো ট্রেনে।প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে দেখছে, অমলকে নিয়ে চলে যাচ্ছে ট্রেনটা।পাখির বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো। আস্তে আস্তে বিন্দুর মতো হয়ে ট্রেনটা মিলিয়ে যাচ্ছে দেখেও সেইদিকে চেয়ে পাখি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,ফোন নম্বরটা নেওয়া হয়নি যে !