রামায়ণ : আরণ্যকাণ্ড – শ্রীরামের সহিত যুদ্ধে খরের মৃত্যু
দূষণ পড়িল, খর লাগিল ভাবিতে।
কাতর হইয়া বীর নেত্র জলে তিতে।।
হাতে অস্ত্র করিয়া ধাইয়া আগুসারে।
এত সেনাপতি মোর একা রাম মারে।।
রাম আর খর বীর অগ্নির আকার।
দশদিক জল-স্থল বাণে অন্ধকার।।
অর্ব্বুদ অর্ব্বুদ বাণ এড়িয়া সে খর।
ডাক দিয়া খর বীর করিছে উত্তর।।
মানুষ হইয়া তোর এত অহঙ্কার।
দেবগণ নাহি পারে, তুই কোন্ ছার।।
কত বাণ মারিস্, অগ্রেতে যাক দেখা।
আমার হস্তেতে তোর মৃত্যু আছে লেখা।।
শ্রীরাম বলেন, খর লব তোর প্রাণ।
মুনি-স্থানে পেয়েছি অজেয় ধনুর্ব্বাণ।।
শরভঙ্গ দিয়াছেন এ অক্ষয় তূণ।
যাত চাই তত পাই, নাহি হয় ন্যূন।।
শ্রীরামের বচনেতে লাগে চমৎকার।
ত্রাসে খর চিন্তিল সংশয় আপনার।।
ত্রাস বুঝি খরেরে এড়েন রাম বাণ।
খান খান করেন খরের ধনুখান।।
কাটা গেল ধনুক চিন্তিত হয়ে খর।
লইল ধনুক আর অতি শীঘ্রতর।।
রামের উপরে করে বাণ বরিষণ।
চতুর্দ্দিকে জল-স্থল ছাইল গগন।।
নানা অস্ত্রে দশদিক করিল প্রকাশ।
জিনিলাম রামেরে বলিয়া মনে আশ।।
যে ধনুকে রঘুনাথ করিছেন রণ।
রাক্ষসের বাণে তাহা হইল ছেদন।।
যে ধনুক দিলেন অগস্ত্য মুনিবর।
সে ধনুকে সন্ধান পূরেন রঘুবর।।
সে ধনুকে সন্ধান পূরিল সন্ধান।
কাটিলেন খরের হাতের ধনুর্ব্বাণ।।
রথধ্বজ পতাকা করেন খণ্ড খণ্ড।
ভূমিতে লোটায় রণে সারথির মুণ্ড।।
অগ্নিবাণ এড়েক ধনুকে দিয়া চাড়া।
কাটিলেন শ্রীরাম রথের অষ্ট ঘোড়া।।
রামের দুর্জ্জয় বাণ তারা যেন ছোটে।
আরবার খরের হাতের ধনু কাটে।।
মন্ত্র পড়ি খর বীর মহাগদা এড়ে।
যতদূর যায় গদা, তত দূর পোড়ে।।
গাছের নিকটে গেলে গাছ সব জ্বলে।
আলো করি আসে গদা গগন-মণ্ডলে।।
অগ্নি জ্বলে গদাতে, না হয় শান্ত বাণে।
ত্রিভুবন একাকার ছাইল আগুনে।।
আর বাণ ছাড়েন শ্রীরাম মন্ত্র পড়ে।
পৃথিবীতে কত ধরে অন্তরীক্ষ যোড়ে।।
অগ্নি সম বাণ জ্বলে পর্ব্বত আকার।
অগ্নিবাণে তার গদা হইল সংহার।।
পাইলেন শ্রীরাম তখন অবসর।
খরের শরীর বাণে করেন জর্জ্জর।।
সর্ব্ব কলেবর তার ভিজিল শোণিতে।
রক্তে রাঙ্গা হয়ে বীর চাহে চারিভিতে।।
হাতে অস্ত্র নাহি আর, উঠি দিল রড়।
রামেরে রুষিয়া যায় খাইতে কামড়।।
রামেরে কামড় দিতে যায় মহারোষে।
শ্রীরাম ঐষিক বাণ জুড়িলেন ত্রাসে।।
বজ্রাঘাতে যেমন পর্ব্বত দুই চির।
গায়ে প্রবেশিতে বাণ পড়ে খর বীর।।
চতুর্দ্দশ সহস্র রাক্ষস পড়ে রণে।
শ্রীরামেরে বাখানে আসিয়া দেবগণে।।
বিরিঞ্চি বলেন, রাম কর অবধান।
সকল দেবতা করে তোমার কল্যাণ।।
আইলেন শ্ঙ্কর তোমায় হয়ে সুখী।
মহেন্দ্র তোমাতে তুষ্ট তব রণ দেখি।।
কুবের বরুণ আদি, যত দেবগণ।
অষ্টলোকপাল আসি করেন স্তবন।।
তোমার প্রসাদে এবে বেড়াবে স্বচ্ছন্দে।
যথা তথা দেব দেবী রহিবে আনন্দে।।
রামেরে বন্দেন গিয়া জানকী লক্ষ্মণ।
করেন সকলে বসি ইষ্ট-সম্ভাষণ।।
অস্ত্র-ক্ষত দেখিয়া রামের কলেবরে।
জানকীর নেত্রনীর ঝর ঝর ঝরে।।
তাহারে কহেন রাম রণ-বিবরণ।
শুনি সীতা কৈকেয়ীকে করিল স্মরণ।।