Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আমার সাইন্টিস মামা || Muhammad Zafar Iqbal » Page 2

আমার সাইন্টিস মামা || Muhammad Zafar Iqbal

এতোদিন মামাকে বেশি পাত্তা দেই নাই। কেন দিব? একজন সায়েন্টিস্টকে কে পাত্তা দেয়? ক্রিকেট প্লেয়ার হলে একটা কথা ছিল কিংবা ব্যান্ডের গায়ক। পুলিশ কিংবা র‍্যাব হলেও কথা ছিল, হাতে রাইফেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। সায়েন্টিস্টদের মতো শান্তশিষ্ট ঢিলেঢালা নিরীহ মানুষদের কে পাত্তা দেয়? কিন্তু যখন আমি আবিষ্কার করলাম মামা তার বগলের নিচে একটা পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তখন এক লাফে আমার কাছে মামার সম্মান একশ গুণ বেড়ে গেল। প্রথমবার মামাকে পাত্তা দিতে শুরু করলাম।

মামা আমাদের বাসায় কয়েকদিন থাকবেন, আমি এখন তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলাম। মামা যেন টের না পায় সেভাবে তাকে চোখে চোখে রাখলাম। মামা কী করে, কার সাথে কথা বলে কী নিয়ে কথা বলে, কম্পিউটারে কী টাইপ করে, কাগজে কী লিখে, কী কাগজ পড়ে, কি দেখে খুশি হয়, কী দেখে রাগ হয়, কখন দাঁত কিড়মিড় করে কখন নিজে নিজে হাসে এই সব কিছু দেখে দেখে আমি বুঝে গেলাম মামা আসলে কী করছে।

মামার কথাবার্তা কাগজপত্র কম্পিউটার স্ক্রিনে সবচেয়ে বেশি যে শব্দটা পাওয়া গেল সেটা হচ্ছে ‘ইউরেনিয়াম’। আগে হলে ভাবতাম ফজলী আম ল্যাংড়া আমের মতো ইউরেনিয়াম একধরনের আম। এবারে সেটা ভাবলাম না, একটু ঘাটাঘাটি করে বুঝতে পারলাম যে ইউরেনিয়াম মোটেও আম না, এটা হচ্ছে এক ধরনের মৌলিক পদার্থ (খোদাই জানেন তার মানে কী!) যেটা দিয়ে এটম বোমা বানায়। তখন হঠাৎ করে বুঝে গেলাম মামা কী করছে, মামা পুরো দেশ চষে ফেলছে এই দেশে ইউরেনিয়ামের খনি আছে কীনা সেটা দেখার জন্য। কীভাবে মামা সেটা দেখছে সেই কায়দাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না, এই ব্যাপারে যে বৈজ্ঞানিক শব্দটা ব্যবহার করছে সেটা হচ্ছে ‘গামা রে স্পেকট্রোস্কোপি উচ্চারণ করতেই দাঁত ভেঙে যায়। গামা রে ব্যাপারটা কী ঠিক বুঝতে পারলাম না তবে কিছুদিন আগে একটা দুর্ধর্ষ বই পড়েছিলাম সেখানে যে ভিলেন ছিল সে শত্রুকে হত্যা করতে ডেথ-রে দিয়ে। গামা রে ডেথ রে এর মতো ভয়ংকর কিছু হতে পারে। মনে হয় এক ধরনের অদৃশ্য আলো যেটা শরীর ফুটো করে চলে যেতে পারে।

মামা কী করছে জানার পর মামার সম্মান আমার কাছে আরো একশ গুণ বেড়ে গেল। মামা যদি আসলেই ইউরেনিয়ামের খনি পেয়ে যায় আর আমি যদি সেখান থেকে কয়েক কেজি সরিয়ে ফেলতে পারি তাহলে কী মজা হবে। তাহলে স্কুলের সায়েন্স ফেয়ারে আমি ছোটখাটো এটম বোমা বানিয়ে দেখাতে পারি। সত্যিকারের এটম বোমা বানাতে পারলে নির্ঘাত ফার্স্ট সেকেন্ড হয়ে যাব জীবনেও কোনোদিন কোনো কিছুতে পুরস্কার পাই নাই, সায়েন্স ফেয়ারে পুরস্কার পেলে আমার সম্মানটাও বেড়ে যাবে। আপু কথায় কথায় বলতে পারবে না, অকম্মার ধাড়ী!

মামা কয়েকদিন আমাদের বাসায় থেকে আবার তার ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরি নিয়ে বের হওয়ার জন্য রেডি হলো। আম্মু কিছু খাবার রান্না করে দিচ্ছেন। মামা জামা কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে নিচ্ছে, তখন শুনলাম আব্বু মামাকে বলছেন, “আমার কী মনে হয় জান?”

মামা জিজ্ঞেস করল, “কী?”

“আমার মনে হয় তোমার সাথে আরো একজন থাকা উচিত। একেবারে একা একা থাকাটা ঠিক না।”

মামা হা হা করে হাসল, বলল, “আমার সাথে কে থাকবে? বনে জঙ্গলে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। মশার কামড় খেতে হয় স্লিপিং ব্যাগে ঘুমাতে হয়, সপ্তাহে একদিন গোসল–

আব্বু বললেন, “সে যাই হোক, তবু একেবারে একা থাকা ঠিক না। আর কিছু না হোক, কথা বলার জন্যও তো একজন লোক দরকার।”

মামা এবারে মুখ গম্ভীর করে বলল, “আসলে আমি নিজেও বিষয়টা ভেবেছি। একজন এসিস্টেন্ট থাকলে খারাপ হতো না। আমার প্রজেক্টে তার জন্য বাজেটও আছে, মাসে মাসে ভালো বেতন দিতে পারব। কিন্তু আমি ঠিক মানুষ খুঁজে পাচ্ছি না। এটা তো আর অফিস স্টাফ না যে কাগজপত্র টাইপ করে দেবে। এই মানুষটা চব্বিশ ঘণ্টা আমার এক দুই হাতের ভিতর থাকবে, ঠিক মানুষ না হলে আমার লাভের বদলে ক্ষতি হবে।”

আব্বু মাথা নাড়লেন, বললেন, “তা ঠিক তোমার আবার সায়েন্টিফিক ব্যাপার স্যাপারের প্রজেক্ট। টেকনিক্যাল মানুষ দরকার, যে এই সায়েন্স জানে। সেটা কোথায় পাবে? এরকম মানুষ পাওয়া মুশকিল।”

মামা বলল, “না দুলাভাই, আমার টেকনিক্যাল মানুষ দরকার নাই, আমার দরকার একজন চালাক চতুর মানুষ যে আমার সাথে থাকবে। সায়েন্টিফিক ব্যাপার স্যাপারগুলো আমি নিজেই দেখব, একজন এসিস্টেন্ট শুধু সাথে থাকবে টুকটাক সাহায্য করবে।”

মামা এই কথাটা বলার সাথে সাথে আমার ব্রেনের মাঝে চিড়িক করে একটা শব্দ হলো, আমার মনে হলো আমি কেন মামার এসিটেন্ট হয়ে যাই না! আমার পরীক্ষা শেষ, এখন স্কুলে যেতে হবে না বহুদিন, আমি যথেষ্ট চালাক চতুর (যদিও বেশির ভাগ মানুষ সেটা জানে না তাদের ধারণা আমি হাবা টাইপের, আমি নিজেও সেরকম ভান করি। আমার জঙ্গলে থাকতে কোনো আপত্তি নাই, আমাকে মশা কামড়ায় না, কামড়ালেও আমি টের পাই না। সপ্তাহে একদিন গোসল আমার মনের মতো কাজ, সত্যি বলতে কী মাসে একদিন গোসল করলেও আমার কোনো আপত্তি নাই, (আপু সবসময় বলে বেড়ায় আমি খবিস, খবিস মানে কী আমি জানি না। ভালো কিছু না এইটুকু আন্দাজ করতে পারি।) স্লিপিং ব্যাগে ঘুমাতে আমার আপত্তি নাই, যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময়ে আমি যতক্ষণ ইচ্ছা ঘুমাতে পারি। মামার টুকটাক কাজ আমার থেকে ভালো করে কে করতে পারবে? কিন্তু সেটা সবাইকে কে বোঝাবে? কেমন করে বোঝাবে?

কাজেই আমি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে শুরু করলাম। প্রথমে মামাকে বোঝাতে হবে যে আমি মামার এসিস্টেন্ট হতে পারব। যদি কোনোভাবে মামাকে বুঝাতে পারি তাহলে আম্মু আব্বুকে বোঝানো খুব কঠিন হবে না। আম্মু আব্বু যদি বুঝতে না চায় তাহলে টানা ঘ্যান ঘ্যান করে যেতে হবে। দরকার হলে আমি খুব ভালো ঘ্যান ঘ্যান করতে পারি।

হাতে সময় বেশি নাই তাই সেদিন বিকেল বেলাতেই মামা যখন একা। তার কম্পিউটারের সামনে মুখ বাঁকা করে বসে আছে তখন আমি হাজির হলাম। কোনো ধানাই পানাই করা যাবে না তাই আমি সোজাসুজি কাজের কথায় চলে এলাম, বললাম, “মামা, তোমার সাথে একটা কথা আছে।”

মামা এক নজর আমাকে দেখল, তারপর আবার কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে তার হাতের চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “কী কথা?”

“তুমি তোমার সাথে কাজ করার জন্য একটা এসিস্টেন্ট খুঁজছ না? আমি তোমার এসিস্টেন্ট হতে চাই।”

মামা তার চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে একটা বিষম খেলো। কাপটা টেবিলে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে কাশতে কাশতে বলল, “অ্যাঁ?”

আমি দ্বিতীয়বার কথাটা বললাম। মামা আমার দিকে তাকিয়ে রইল তার চোখে কেমন জানি অবিশ্বাস। তারপর বলল, “তুই আমার এসিস্টেন্ট হতে চাস?”

“হ্যাঁ।” আমার কথায় যেন কেননা কিছু অস্পষ্ট না থাকে সেইজন্য পরিষ্কার করে বললাম, “আমি তোমার এসিস্টেন্ট হতে চাই।”

মামা আরো কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে রইল এবং এবারে তার মুখে কেমন এক ধরনের হাসি ফুটে উঠল। হাসিটা মোটেও ভালো টাইপের হাসি না। মামা বলল, “তোর কেন ধারণা হলো আমি একটা গেন্দা বাচ্চাকে আমার এসিস্টেন্ট হিসেবে নেব?”

আমি মুখটা যতটুকু সম্ভব গম্ভীর করে বললাম, “তার প্রথম কারণ হচ্ছে আমি মোটেও গেন্দা বাচ্চা না। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আমি শুনেছি তুমি আব্বুকে বলেছ তোমার এসিস্টেন্ট হওয়ার জন্য টেকনিক্যাল হওয়ার দরকার নেই, চালাক চতুর হলেই হবে। আমি যথেষ্ট চালাক চতুর। তিন নম্বর কারণ হচ্ছে আমাকে নিলে তোমার বেতন দিতে হবে না। তুমি। চাইলে দিতে পার কিন্তু না দিলেও আমি কাজ করব। চার নম্বর কারণ হলো_”

মামা আমাকে বলল, “দাঁড়া আগে এই তিনটা কারণ ভালো করে বুঝে নিই। তুই গেন্দা বাচ্চা না তাহলে তোর বয়স কতো?”

“বারো। আর একটা বছর হলেই আমি টিন এজার হব। টিন এজাররা যথেষ্ট বড়। মানুষেরা টিন এজারদের রীতিমতো ভয় পায়।”

মামা কষ্ট করে মুখের হাসিটা গোপন করল, তারপর বলল, “আর চালাক চতুর তুই চালাক চতুর?”

হ্যাঁ।”

“কীভাবে জানিস?”

“প্রমাণ চাও?”

মামা এবারে একটু অবাক হলো। বলল, “তুই প্রমাণ দিতে পারবি?”

“তোমার পছন্দ হবে কি না জানি না, কিন্তু দিতে পারব।”

মামার মুখে সেই খারাপ টাইপের হাসিটা আবার ফেরত এলো, বলল, “দে দেখি।”

আমি বললাম, “যদি দেখাতে পারি আমি চালাক চতুর তাহলে আমাকে নিবে?”

“আগে দেখা।”

আমি গলা পরিষ্কার করে বললাম, “ঠিক আছে। তুমি কাউকে জানাতে চাও না কিন্তু আমি জানি তুমি একটা পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়াও। রিভলবার না, পিস্তল। ম্যাগাজিনে আটটা গুলি আঁটে।”

মামার মুখের সেই খারাপ টাইপের হাসিটা অদৃশ্য হয়ে চোয়ালটা কেমন জানি ঝুলে পড়ল। আমি না দেখার ভান করে বললাম, “তুমি ঠিক কী কর সেটাও কাউকে জানাতে চাও না কিন্তু আমি জানি তুমি সারা দেশে ইউরেনিয়ামের খনি খুঁজে বেড়াও।” (মামার চোয়াল এবারে আরো খানিকটা ঝুলে পড়ল।) আমি না দেখার ভান করে বলতে লাগলাম, “ইউরেনিয়াম খুবই মূল্যবান ধাতু। এর একটা আইসোটপ হচ্ছে ইউরেনিয়াম টু থার্টি ফাইভ– এটা দিয়ে বোমা বানায়। (মামার সাথে কথা বলার জন্য এই লাইনটা মুখস্ত করে এসেছি!) তুমি সেই ইউরেনিয়ামের আইসোটপ খুঁজে বের করেছ গামা রে স্পেকট্রোস্কোপি দিয়ে।”

আমি মামার চোখের দিকে না তাকিয়ে বললাম, “তুমি যদি চাও তাহলে আমি গভীর রাত্রে একটা মেয়ে যে তোমাকে বিয়ে করার উপদেশ দিয়েছিল সেই ঘটনাটার কথা বলতে পারি। কিংবা মেহরিন ম্যাডামের কথা বলতে পারি?

এইবারে ফটাশ শব্দ করে মামার স্কুলে পড়া চোয়াল বন্ধ হয়ে গেল। মামা শুকনো গলায় বলল, “তু-তু-তুই কেমন করে জানিস?”

“চোখ কান খোলা রাখলে যারা চালাক চতুর তারা সেগুলো জেনে যায়। আমি জেনে গেছি। সবার সামনে ভান করি কিছুই জানি না। হাবা গোবা একজন মানুষ।

মামা কেমন করে জানি আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম, “এখন কী তিন নম্বর কারণটা সম্পর্কে বলব?”

মামা বলল, “না। দরকার নাই।”

‘তাহলে আমাকে নিবে, মামা?”

মামা কিছু বলল না। তখন আমি সর্বশেষ অস্ত্রটা ব্যবহার করলাম। একটু কাছে গিয়ে মামার হাত ধরে খুবই নরম গলায় বললাম, “প্লিজ মামা প্লি-ই-ই-জ। সব মামারা তাদের ভাগ্নেদের কতো আদর করে, তাদের জন্য কতো কিছু করে, তুমি আমার মামা, তুমিও করবে না? এসিস্টেন্ট বানানোর দরকার নাই, তুমি মনে করো আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি। তোমার সাথে আমি বেড়াতে যাচ্ছি। তুমি আমাকে গল্প বলবে, আমি শুনব। আমি তোমাকে একটুও ডিস্টার্ব করব না।”

মনে হলো মামার মুখটা একটু নরম হলো। আমি তখন গলার স্বরকে আরো মোলায়েম করে বললাম, “মামা, আমি কাউকে কিছু বলব না। কিছু বলব না, খোদার কসম। আমার জন্য তোমার কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি সব জায়গায় ঘুমাতে পারি, সবকিছু খেতে পারি। দরকার হলে জঙ্গলে বাথরুম করতে পারব। তোমার মাইক্রোবাস আমি পরিষ্কার-পরিছন্ন করে রাখব। তুমি আমাকে যেটা করতে বলবে সেটাই করব, তোমার যন্ত্রপাতি দেখে শুনে রাখব। প্লিজ মামা প্লিজ।”

মনে হলো মামার মুখটা আরো নরম হলো। আমি গলার স্বর প্রায় কাঁদো কাঁদো করে বললাম, “মামা, আমার জীবনে কোনো আনন্দ নাই, এই বাসায় কেউ আমাকে পাত্তা দেয় না (কথাটা মোটামুটি সত্যি), কেউ আদর করে না (কথাটা বানানো), সবাই সারাক্ষণ বকাবকি করে (কথাটা একটু সত্যি একটু বানানো), তোমার সাথে যদি যাই তাহলে কয়েকটা দিন জীবনে একটু আনন্দ হবে। জীবনে কখন কী হয় কে বলতে পারবে? একটু আনন্দ করতে দাও মামা। প্লিজ, মামা, প্লি-ই-ই-ই-ই-ই-জ।”

মামা প্রথমবার মুখ খুললো, বলল, “তোর আম্মু আব্বু যেতে দিবে?”

আমার মনে হলো আনন্দে একটা লাফ দেই। অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর বললাম, “সেইটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও। আম্মু আব্বুকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। শুধু তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করে তুমি বলবে তোমার কোনো আপত্তি নাই।”

মামা একটা নিঃশ্বাস ফেলল, তারপর বলল, “ঠিক আছে, তোকে প্রথমে ছোট একটা ট্রিপে নেই, তিন চারদিনের ট্রিপ, দেখি তুই টিকতে পারিস কি না।”

“ঠিক আছে মামা।”

আমি সেই রাতের মাঝে আম্মু আর আব্বুকে রাজি করিয়ে ফেললাম। কিছু কথাবার্তা বানিয়ে বলতে হলো, কিছু বাড়িয়ে চাড়িয়ে বলতে হলো। এবং প্রচুর ঘ্যান ঘ্যান করতে হলো। কিন্তু সেটা তো করতেই হয়। আমার চাইতে ভালো ঘ্যান ঘ্যান পৃথিবীতে কেউ করতে পারে না।

ঘুমানোর আগে আমি যখন আমার ব্যাগটা গোছাচ্ছি তখন আপু একটু অবাক হয়ে বলল, “টোপন, তুই নাকি মামার সাথে যাচ্ছিস?”

আমি একটা টি শার্ট ভাঁজ করতে করতে বললাম, “মামা যেতে বলল তার এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য নাকি আরেকজন সায়েন্টিস্ট দরকার। আরেকজন কোথায় পাবে? তাই আমাকে বলেছে, আমি না করতে পারলাম না।”

আপু চোখ কপালে তুলে বলল, “তুই? সাইন্টিস্ট?”

“না। ঠিক সাইন্টিস্ট না। পার্টনার বলতে পার। মামা যখন আমাকে তার সাথে যেতে বলেছে আমি বললাম মামা, এতো জটিল এক্সপেরিমেন্ট, আমি কী পারব। মামা বলল, তুই না পারলে কে পারবে? তোর মতো চালাক চতুর ছেলে আর কে আছে? আমি ভাবছিলাম পরীক্ষা শেষ এখন কম্পিউটার প্রোগ্রামিংটা শিখব। নতুন একটা ল্যাংগুয়েজ বের হয়েছে নাম হচ্ছে সি শার্প। শেখার জন্য এখন দেরী হয়ে যাবে। যাই হোক অন্য অভিজ্ঞতাও হবে। সেটা খারাপ কী? তাই না আপু?”

আপু কথা বলতে পারে না, আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। আমি গলা নামিয়ে বললাম, “মামার প্রজেক্টে পার্টনারের জন্য অনেক টাকা রাখা থাকে। মামা আমাকে সেখান থেকে প্রতি মাসে বেতন দিতে চেয়েছিল। আমি রাজি হই নাই। নিজের মামার কাছ থেকে কেউ টাকা নিতে পারে? কী বল আপু?”

আমি দেখলাম আপুর চোয়ালটা ঝুলে পড়ল। সেটা দেখে আমার বুকটা ভরে গেল আনন্দে!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *