আমার শৈশবের সেই খিদিরপুর
আমার ভাল লাগা, মন্দ লাগা , আমার প্রেম অপ্রেম , আমার আশা নিরাশা সবই কিন্তু এই শহরটাকে ঘিরে ! তবে বিশেষ করে আমার শৈশবের সেই খিদিরপুরকে আজও আমি ভুলতে পারি নি ! তাই বোধহয় আজও পুজোর সময় ১০ এ মণিলাল ব্যানার্জি রোডের সেই আটপৌরে বাড়িটির সামনে গিয়ে স্থানুবৎ দাঁড়াই ! যে ভাড়া বাড়িতে আমার শৈশবের দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছিল । আজও খিদিরপুর মানেই যেন আমার কাছে এক নস্টালজিয়া। হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আজও খিদিরপুরের অলি গলি মুখরিত হয় । ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ ভারতের সূচনা লগ্ন থেকেই খিদিরপুর গুরুত্ব পেয়ে আসছে। সুদূর অতীতের সেইসব সাদা কালো দিনে ব্রিটিশরা এখানে একটি আধুনিক সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলে । এরপর ক্রমে ক্রমে সমগ্র এলাকাটির দ্রুত উন্নয়ন হয়। সময় যতই গড়িয়েছে শহরের ব্যস্ততম এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়েছে খিদিরপুর। অতীতের একসময় ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন রুটি রুজির টানে । কিন্তু ‘খিদিরপুর’ এই নামটির উৎপত্তি হল কিভাবে ? অনেকের মতে, খিদিরপুর নামটির উৎপত্তির সঙ্গে শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। মনে করা হয়, শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট কিড ! তাঁর পুত্র জেমস কিড এই অঞ্চলে একটি ডক প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত ভূকৈলাস রাজবংশের জমিতেই নির্মিত হয়েছিল সেই ডক ! আর জেমস কিড এর নামানুসারে নাকি জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘ কিডারপুর’! অবাক কান্ড ! অনেকে আবার ভিন্ন মত পোষণ করেন। মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী জলসাম্রাজ্য তথা দরিয়ার পীরের নাম খাজা খিজির। তাৎপর্যের বিষয় হল ,ফরাসীতে যা ‘ খিজির’ উচ্চারণ , আরবিতে তা ‘ খিদর ‘ । আর সেই খাজা খিজির বা খাজা খিদির নাম থেকেই নাম হয়েছে খিদিরপুর। খিদিরপুরের অনতিদূরে বয়ে গেছে স্রোতস্বিনী গঙ্গা । একাধিকবার সেই দইঘাট এ গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি কিভাবে সেখানে জোয়ার ভাটা খেলা করে ! তবে গঙ্গাতীরের এই অঞ্চলটি কিন্তু অতীতের একসময় সবুজ বনানী ও যারপরনাই তৃণলতা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল, বলেই বোধহয় জায়গাটির নামকরণ হয়েছে খিদিরপুর !