হিন্দু ,বৌদ্ধ,জৈন,খৃষ্টান- সর্বধর্ম সমন্বয়ের এই ভারতে আমার জন্ম,
আমার মত হাজারো,লাখো নারীর জন্ম।
যে ভারতবর্ষে আজো জাতি,ধর্ম,বর্ণের রেষারেষি প্রত্যক্ষ্যে পরোক্ষে অব্যাহত,
যে ভারতবর্ষে নারীদের নেই নিরাপত্তার কোন সুরক্ষিত বেষ্টনী,
যে ভারতবর্ষে প্রতিদিন নারী নির্যাতনের ছবি !
যে ভারতবর্ষে এখনো কন্যাভ্রুণকে নির্মমভাবে নিশ্চিহ্ন করা হয়,
যে ভারতবর্ষে কচি শিশু থেকে যুবতী,বৃদ্ধা নারীকেও লালসার শিকার হতে হয় প্রতিদিন!
যে ভারতবর্ষে নারীকে অবহেলিত অপমানিত লাঞ্ছিতা হতে হয় শারীরিক,মানসিক সর্বতোভাবে!
যে ভারতবর্ষে নারীকে পণ্যের মত ভাবা হয়,নারীকে দলিত করা হয় কামনার যূপকাষ্ঠে —
সেই ভারতের মেয়ে আমি- আমরা-
আমাদের ফিরোজা,মেরী ,কমলা, মৌরী – যে কোন নাম হতে পারে,তাতে কি যায় আসে!
অথচ,এই ভারতবর্ষ সাধকের দেশ,মানবধর্মের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের দেশ,জীবে শিব জ্ঞানে পূজারীর দেশ,
এই ভারতেই রবি,নজরুল,সুকুমার, জীবনানন্দ জন্মেছিলেন,
যারা সোচ্চারে মানবসেবার কথা বলে গেছেন,
সাম্য, মৈত্রী,সৌহার্দ্যের কথা,প্রেম ভালোবাসার কথা বলে গেছেন,
বলেছেন,সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই–
তো নারীর সংজ্ঞা কি?
নারী কি মানুষ তথা মানবী নয়!
নারী কি শুধুমাত্র পুরুষের ভোগের বস্তু!
পুরুষের যাবতীয় বিকৃত কামনার নিবৃত্তির উপকরণ!
নারী তার সহজাত ধর্ম ও মনন দিয়ে পুরুষকে চিনতে পারে আর ফলে আতঙ্কিত,শঙ্কায় জীবনের অনিশ্চয়তার উদ্বেগে সন্ত্রস্ত থাকে,
নারীর নেই নিজস্ব বাড়ি,পায়ের তলায় মাটি,নেই স্বাধীনতা,
নারী কেবল রক্তমাংসের উপাদেয় উপকরণে সজ্জিত পুরুষের যৌনক্ষুধা নিবৃত্তির আধার মাত্র।
নারী তো পুরুষকে জন্ম দেয়,তবু সে মেয়েমানুষ।
আমিও তেমনি মেয়েমানুষ,পুরুষের ভোগের বস্তু,
সে হিন্দু,বৌদ্ধ,জৈন,খৃষ্টান যাই হয়ে থাকি – মেয়েমানুষ তো!
নারীর কোন ধর্ম নাই ,একটাই সংজ্ঞা – মেয়েমানুষ!
যতোই মাথা তুলতে চেষ্টা করি মুখে কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়,প্রয়োজনে তপ্ত লৌহ ছ্যাকা!
অসহ্য যাতনায় সিঁটিয়ে থাকি, আর ধর্ষিত হতে থাকি লালসার আগুনে,
পথে ঘাটে,মাঠে ময়দানে,জঙ্গলে সর্বত্র ছেয়ে আছে নারীখাদক হায়েনার জ্বলজ্বলে চোখ,
যে নারীই কারো মা,বোন,জায়া,কন্যা !
বিধাতার ললিত সৃষ্টি- আমরা নারী!