আবহাওয়া
শ্রীযুক্ত নিত্যানন্দ পাটনায়েক কটক বেতার কেন্দ্রের একজন সামান্য ঘোষক। তিনি নিউজ বুলেটিনগুলি পাঠ করে শ্রোতাদের শোনান। মূল সংবাদের সঙ্গে তার সংযোগ খুবই কম, কারণ সে সবই রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে রিলে হয়ে আসে, স্থানীয় সংবাদ প্রচার করার সুযোগ কখনও কখনও পাটনায়েক যে পান না তা নয়, কিন্তু সেও খুবই কম। কারণ ঘোষকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে জুনিয়ার।
নিত্যানন্দবাবু যদিও উড়িষ্যাবাসী, উড়িষ্যাতেই তার জন্ম এবং ওড়িয়াই তার মাতৃভাষা, তবু যৌবনকালে তিনি কলকাতায় কলেজে পড়াশুনা করেছিলেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই বাংলা ভাষা তার বেশ আয়ত্ত হয়েছিল এবং এই ভাষার প্রতি তার একটা অনুরক্তিও মনে মনে গড়ে উঠেছিল।
কটক বেতারকেন্দ্রে কাজ করতেন তিনি, কিন্তু তার কান পড়ে থাকত আকাশবাণী কলকাতায়। প্রত্যেক মুহূর্তেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে, রেডিও স্টেশনের সেটে কলকাতা কেন্দ্রের প্রোগ্রামে কান পেতে তিনি মনে মনে তুলনা করে যেতেন কটক কতটা উঠল কিংবা নামল। কখনও তার হৃ কুঞ্চিত হত অপার বিরক্তিতে, কখনও বা একটু বঙ্কিম হাসির রেখা দেখা দিত ঠোঁটের সীমানায়।
আজ কিছুদিন হল একটা একঘেয়ে কাজের ভার পড়েছে নিত্যানন্দ পাটনায়েকের উপর। আবহাওয়া পূর্বাভাসটি তাঁকে পাঠ করতে হয়। প্রতিদিন একই ভাষায় একই রকম কয়েকটি শব্দ, মধ্যে দু-একটি হয়তো সম্ভবত জাতীয় ওড়িয়া অব্যয় ব্যবহার করে দু মিনিটের নীরস বুলেটিন।
এই আবহাওয়া বুলেটিন শুধুই যে নীরস বা একঘেয়ে কেবল তাই নয়, কয়েকদিন ঘোষণার পর নিত্যানন্দবাবু নিজেই ধরতে পেরেছেন ব্যাপারটা নিতান্তই বাজে এবং ফালতু। যেকোনও ভবিষ্যৎ বাণীর মতোই এই বাণী পুরোটাই লেগে গেলে গেল, না লাগলে লাগল না। কিন্তু অসুবিধা এই যে আবহাওয়ার ভবিষ্যৎ বার্তার ভবিষ্যৎ নিতান্তই কাজের ব্যাপার, একবারে বর্তমানের ঘাড়ের পিছনে দাঁড়িয়ে সকালে বলতে হয় বিকেলে কী হবে, বিকেলে বলতে হয় রাতে কী হবে।
আজকাল পাবলিক আছে, খবরের কাগজ আছে। তারা ভুল ঘোষণা নিয়ে হাসাহাসি করে, অম্ল-তিক্ত কটাক্ষ এমনভাবে করে, যেন আকাশবাণীর ঘোষক শ্রীযুক্ত নিত্যানন্দ পাটনায়েকেরই সম্পূর্ণ দায়িত্ব ব্যাপারটায়, যেন তার বাড়িতেই হাওয়া অফিস, সেখানে বসেই গবেষণা করে ব্যারোমিটারের পারা মেপে আর মুরগির নাচ দেখে নিজেই আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রস্তুত করে নিরীহ জনসাধারণকে বেকুব ভেবে আকাশবাণীর মাধ্যমে প্রচার করেন শ্রীযুক্ত পাটনায়েক।
ব্যাপারটা তো আর ঠিক তা নয়। হাওয়া অফিস থেকে ইংরেজিতে টাইপ করা বুলেটিন এসে পৌঁছায় রেডিও দপ্তরে, নিত্যানন্দবাবুর কাজ সেটিকে ওড়িয়ায় অনুবাদ করে নির্দিষ্ট সময়ে আকাশবাণী কটকে প্রচার করা।
কিন্তু অসুবিধা হল এই যে, নিত্যানন্দবাবুর নিজেরও একেক সময় ভীষণ খটকা লাগে এই বুলেটিনগুলো প্রচার করতে। ঝকঝক করছে রোদ্দুর, কটকের আকাশের একশো মাইলের মধ্যে একবিন্দু মেঘ নেই এমন টনটনে সকালে একবার গলা খাঁকারি দিয়ে যখন তাকে ঘোষণা করতে হয়, আজ সকালের দিকে প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে সঙ্গে ঝড়ের সম্ভাবনা তখন যে শ্রোতার দল তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবেই এ বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে না, কিন্তু তার দুঃখ হয় শ্রোতারা কি ঘোষকের কণ্ঠস্বরেও একটু সংশয়, একটু দ্বিধা খুঁজে পান না, তারা কি বুঝতে পারেন না যে এই সামান্য ঘোষক অনুবাদক মাত্র, নিতান্তই রুটিনের চাকরি তা না হলে তিনিও জানেন ঘোষণা করা উচিত ছিল, দুচার ছয় মাসের মধ্যে বৃষ্টি বা ঝড়ের সম্ভাবনা নেই, অন্তত আজ সকালের রোদ্দুর দেখে এই রকমই মনে হচ্ছে, এ সত্ত্বেও যদি বৃষ্টি হয় তার জন্যে আবহাওয়ার অফিসের কর্তারা দায়ী, কারণ তারা বলেছেন সাংঘাতিক ঝড় বৃষ্টি হতে পারে, কেন বলেছেন ঈশ্বর জানেন, শ্রোতারাও তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন।
দুঃখের বিষয়, এ ধরনের কোনও ঘোষণা আকাশবাণী একদিনের বেশি বরদাস্ত করবে না। শুধু একদিন মানে ওই প্রথম দিন, তার পরদিনই কানে ধরে আকাশবাণী থেকে বার করে দেবে, না হয় পাগলা গারদে পাঠিয়ে দেবে। এই দুর্দিনে নিজের কাজটিকে যতই উপহাসযোগ্য মনে হোক, নিত্যানন্দ পাটনায়েক কিছুতেই কাজ হারাতে রাজি নন।
নিত্যানন্দবাবুর মনের যখন এই অবস্থা, যখন নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও নেহাত প্রাণের দায়ে তাকে চাকরি করে যেতে হচ্ছে অর্থাৎ আবহাওয়ার অসম্ভব বুলেটিন পাঠ করে যেতে হচ্ছে সেই সময় একদিন সকালে সাড়ে সাতটার একটু আগে দৈববাণী শুনতে পেলেন।
আগেই বলেছি যে কলকাতা বেতারকেন্দ্রের প্রোগ্রামগুলির উপরে স্বাভাবিক অনুরাগ এবং কৌতূহলবশত তিনি যথাসম্ভব কান পেতে রাখতেন। কলকাতা বেতারকেন্দ্রেও কটকের মতোই আবহাওয়ার বুলেটিন প্রচারের আয়োজন আছে এবং তার জন্যেও একজন সংশয়াচ্ছন্ন, দ্বিধান্বিত ঘোষক আছেন।
তবে কলকাতা কেন্দ্রের আবহাওয়া ঘোষণা কটক কেন্দ্রের কয়েক মিনিট আগে হয়ে যায়। একদিন বুলেটিন পাঠ করার জন্য স্টুডিওতে প্রবেশ করার আগে নিত্যানন্দবাবু অভ্যাসমতো নিজের অনুবাদে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন। সেদিন সকালবেলা বেশ মেঘলা, মাঝে মধ্যে জোর ঝাপটা বৃষ্টি হচ্ছে সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া।
বাইরের যখন এইরকম প্রাকৃতিক অবস্থা তখন যথারীতি নিত্যানন্দবাবুকে পাঠ করতে হবে, আজ সকালের দিকে আকাশ পরিষ্কার এবং সুন্দর আবহাওয়া থাকবে..ইত্যাদি, ইত্যাদি।
একবার নিজের অনুবাদ করা ঘোষণাপত্রটির দিকে তাকাচ্ছেন, আরেকবার জানলা দিয়ে বাইরে যেখানে আকাশবাণীর দেয়াল ঘেঁষে বুড়ো নিমগাছটার ডালে টপটপ করে জলের ফোঁটা পড়ছে আর শোঁ শোঁ হাওয়ার ঝাপটা লাগছে সেইদিকে অসহায়ভাবে তাকাচ্ছেন পাটনায়েক, এমন সময় তার কানে এল দৈববাণী। তারই প্রিয় বাংলা ভাষায় কলকাতা বেতারকেন্দ্রের ঘোষক বলছেন, প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি হবে, এমনকী শিলাবৃষ্টি, সাইক্লোন হতে পারে।
কলকাতার ঘোষণা সম্পূর্ণ মিলে যাচ্ছে কটকের প্রাকৃতিক অবস্থার সঙ্গে কিন্তু নিত্যানন্দবাবুকে কটকের আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিটিই পাঠ করতে হবে মিলুক বা না মিলুক।
সেইদিন বিজ্ঞপ্তিটি পাঠ করার পরেই ভীষণ শিলাবৃষ্টি হল কটকে। রেডিও স্টেশনের গেটে খোয়াবাঁধানো রাস্তা বরফকুচিতে ছেয়ে গেল তার পর এল সাইক্লোন। সেই সাইক্লোনে শুধু কটক শহরের কয়েকটি টিনের চালা এবং ছোট-বড় গাছই যে উলটে গেল তাই নয় শ্রীযুক্ত নিত্যানন্দ পাটনায়েকের মনের মধ্যেও একটা বিরাট আলোড়ন তৈরি হল। তিনি একনাগাড়ে সাত দিন ছুটির দরখাস্ত করে বাসায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
বাসায় শুয়ে শুয়ে চারবেলায় চারবার করে কলকাতা আর কটকের আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনতে লাগলেন এবং বাইরের প্রাকৃতিক অবস্থার সঙ্গে মেলাতে লাগলেন। যতই মেলাতে লাগলেন তত চমৎকৃত হলেন পাটনায়েক। কলকাতার আবহাওয়া দপ্তর যাই বলে সব অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় কটকের অবস্থার সঙ্গে কিন্তু উড়িষ্যা হাওয়া অফিসের একটি ভবিষ্যৎ-বার্তাও মিলতে চায় না। মনে হয় কে যেন ইচ্ছে করে রসিকতা করছে।
বিছানায় শুয়ে থাকার জন্যেই হোক বা অন্য যেকোনও কারণেই হোক এই সাতদিনে নিত্যানন্দ পাটনায়েকের বুদ্ধি খুবই খুলে গেল। তিনি কলকাতায় তাঁর এক পুরনো কলেজি বন্ধুকে চিঠি লিখলেন–প্রত্যেকদিন সকাল, দুপুর, বিকেল এবং রাত্রিতে কেমন আবহাওয়া থাকে তার বিবরণ যেন অবশ্যই তাকে পরের দিনের সকালের ডাকে পাঠানো হয়, সঙ্গে কয়েকটি ঠিকানা লেখা রিপ্লাই। কার্ড পাঠিয়ে দিলেন। পুরনো বন্ধুটি নিত্যানন্দকে শান্ত সুস্থির লোক বলেই জানতেন, হঠাৎ এই ধরনের আদেশ পেয়ে তিনি ভাবলেন নিত্যানন্দ বুঝি পাগল হয়ে গেছে। তিন দিনের মধ্যে যখন কোনও উত্তর এল না, নিত্যানন্দ একটা অর্ডিনারি আর একটা এক্সপ্রেস পর পর দুটি টেলিগ্রাম পাঠালেন। বন্ধুটি তখন ব্যস্ত হয়ে পাগল ক্ষ্যাপানো আর উচিত হবে না এই ভেবে পর পর সাতদিন ধরে যথারীতি বন্ধুকৃত্য পালন করলেন।
বলাই বাহুল্য, ইতিমধ্যে নিত্যানন্দবাবু তার ছুটি আরও পনেরো দিন বাড়িয়ে দিলেন। একটি লম্বা চার্ট তৈরি করে খাতা বাঁধিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। পাঠকদের অনুধাবনের সুবিধার জন্যে একদিন একবেলার চার্টটি নীচে হুবহু মুদ্রিত করা হল:
ক) তারিখ ৩০ জুন রবিবার
খ) সময় সকালবেলা ৭টা-১০টা
গ) কটকের আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তি
ভীষণ ঝড় বৃষ্টি হতে পারে
ঘ) কটকের প্রকৃত আবহাওয়া।
উজ্জ্বল রৌদ্র, নির্মেঘ নীলাকাশ
ঙ) কলকাতার আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তি
উজ্জ্বল রৌদ্র, নির্মেঘ নীলাকাশ
চ) কলকাতার প্রকৃত আবহাওয়া
ভীষণ ঝড় বৃষ্টি।
সাতদিন চারবেলা করে এই রকম আটাশটি চার্ট পূর্ণ হল, অবশ্য চার্টের (চ) অংশটি পূরণ করতে দুদিন বা তিনদিন দেরি হত, কারণ ওটা পূরণ করা হত কলকাতার চিঠি পেয়ে।
আটাশটি চার্ট দেখে দেখে নিত্যানন্দ নিশ্চিত হলেন যে কটকের আবহাওয়ার পূর্বাভাস কলকাতার ক্ষেত্রে এবং কলকাতার পূর্বাভাস কটকের ক্ষেত্রে চমৎকার মিলে যাচ্ছে। যেকোনও চার্টের (গ) এর সঙ্গে (চ) এবং (ঙ) এর সঙ্গে (ঘ) মেলালেই জিনিসটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তাঁর এই সদ্য আবিষ্কৃত তথ্য নিয়ে ছুটির পরদিনই নিত্যানন্দবাবু প্রথমে আকাশবাণীর অধিকর্তা এবং পরে হাওয়া ভবনের অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করলেন। দুঃখের বিষয় এই দুজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীই পাটনায়েক সাহেবকে পাগল ভেবে বসলেন। তবে তারা এ বিষয়ে আর বেশি মাথা ঘামালেন না।
এর মধ্যে পাটনায়েক কাজে যোগদান করেছেন এবং যথারীতি আবার তাঁর ভাগে পড়েছে আবহাওয়ার বুলেটিন। সদ্যলব্ধ জ্ঞানে অকুতোভয় এবং দ্বিধাহীন পাটনায়েক হাওয়া অফিসের বুলেটিন আর ছুঁয়ে দেখেন না। তাঁর ঘোষণার ঠিক পনেরো মিনিট আগে কলকাতা বেতারকেন্দ্রের ঘোষক বাংলায় যা বলেন তাই হুবহু টুকে নিয়ে ওড়িয়ায় তিনি পুনঃপ্রচার করেন।
ব্যাপারটা ধরা পড়ল দিন দশেকের মধ্যে। হাওয়া অফিসের অধিকর্তা আর আকাশবাণীর অধিকর্তা যুগপৎভাবে কয়েকটি অভিনন্দন পেয়ে বিস্মিত, হতবাক হয়ে গেলেন। এমন অভূতপূর্ব সঠিক পূর্বাভাস কটক বেতারকেন্দ্রে তো দূরের কথা পৃথিবীর কোনও বেতারকেন্দ্রে প্রচারিত হয় কিনা এ বিষয়ে অনেকেই অভিমত দিলেন।
দুই অধিকর্তা হতভম্ব। বৃষ্টি বললে বৃষ্টি, ঝড় বললে ঝড়, রোদ বললে রোদ এমন তো হওয়ার কথা নয়। সবই যদি এমন অবিশ্বাস্যভাবে মিলে যায়, লোকে যদি সরকারি ঘোষণা বিশ্বাস করতে আরম্ভ করে তা হলে তো সমূহ বিপদ।
সামান্য খোঁজ হতেই পাটনায়েক ধরা পড়ে গেলেন এবং সাসপেন্ড হয়ে গেলেন।
এখন আর তার জন্যে পাটনায়েকের দুঃখ নেই, কারণ তিনি জ্ঞান ও গবেষণার জন্যে শাস্তি পেয়েছেন, সক্রেটিস, গ্যালিলও থেকে পরশুদিনের ড. খোরানা পর্যন্ত সকলের কথা মনে করে পাটনায়েক সান্ত্বনা দিলেন নিজেকে।
এদিকে কিন্তু তিনি মোটেই থেমে থাকলেন না। তার চার্ট বইটি সাইক্লোস্টাইল করে ছাপিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার প্রতিটি মন্ত্রীকে, প্রতিটি বিরোধী দলের নেতাকে এমনকী লন্ডন, নিউইয়র্ক, মস্কো পৃথিবীর সব রাজধানীতে এবং ইউনেসকোতে এক কপি করে পাঠিয়ে দিলেন।
মাস তিনেক পরে ইউনেসকো ভারত সরকারের কাছে এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রার্থনা করলেন।
তখন খোঁজ পড়ল নিত্যানন্দ পাটনায়কের। কটক বেতার কেন্দ্রের অধিকর্তা ভাবলেন কীসে আবার কী হয়ে যায়। যেন কিছুই জানেন না এই ভাবে নিত্যানন্দবাবুকে ডেকে বললেন, কী মশায়, কাজে আসছেন না কেন আজকাল? তারপর নিত্যানন্দবাবু উত্তর দেওয়ার আগেই বললেন যে, আপনি একবার দিল্লি থেকে ঘুরে আসুন, আপনারা হলেন কৃতবিদ্য লোক।
অর্থাৎ নিত্যানন্দবাবুর সাসপেনশন রদ হয়ে গেল, অনেকগুলো টাকা বকেয়া মাইনে একবারে হাতে পেলেন এবং তদুপরি দিল্লি যাওয়া এবং থাকার খরচ।
এর পরের ঘটনা অতি সংক্ষিপ্ত করে বলা যেতে পারে, কারণ যাঁরা খবরের কাগজ পড়েন তারা। সবাই মোটামুটি বিষয়টি জানেন। নয়াদিল্লিতে একটি সর্বভারতীয় আবহাওয়া পূর্বাভাস তদন্ত ও অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছে। তিনজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তিনজন বৈজ্ঞানিক, একজন আই সি এস সেক্রেটারি এবং শ্রীযুক্ত নিত্যানন্দ পাটনায়েককে এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য মনোনয়ন করা। হয়েছে।
কমিটি এখন পুরাদমে তাঁদের গবেষণা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। আকাশবাণীর সমস্ত কেন্দ্রের ঘোষকদের এই তথ্যানুসন্ধান কমিটির সামনে সাক্ষী ডাকা হয়েছে। হাওয়া অফিসের প্রধান কর্তারাও তাদের বিস্তারিত রিপোর্ট ও মতামত পেশ করেছেন।
মোট কথা, আবহাওয়া পূর্বাভাস তদন্ত ও অনুসন্ধান কমিটি পূর্ণোদ্যমে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সমস্ত বড় বড় খবরের কাগজে এই কমিটি গঠন ও তার কার্যাবলি বিষয়ে একাধিক গুরুগম্ভীর সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে কটক মিউনিসিপ্যালিটি শহরতলির একটি মোটামুটি পরিচিত রাস্তার নাম পালটে নিত্যানন্দ পাটনায়েক স্ট্রিট নামকরণ করেছেন। আগামী বছর নিত্যানন্দবাবু অন্তত পদ্মভূষণ উপাধি পাবেন বলে অনেকেই অনুমান করেছেন। কেউ কেউ বলছেন নিত্যানন্দবাবুর নোবেল বিজ্ঞান পুরস্কার পাওয়াও উচিত। তবে সেটা পদার্থ না রসায়ন না অন্য কোনও শাখায় হবে সে বিষয়ে স্যার সি.ভি. রামনের কাছে খোঁজখবর নেয়ার জন্যে একটি ছোট কমিটি গঠিত হয়েছে কটক শহরে।
তবে কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি এবং সেই রিপোর্টের জন্যে দেশবাসী অধীর প্রতীক্ষা করছে।
.
শেষ সংবাদ
ভারত কা রাজপত্রে ঘোষিত একটি প্রেসনোটে এই মাত্র জানা গেল আবহাওয়ার পূর্বাভাস তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি আশা করছেন এই রিপোর্টটি কার্যকরী করা হলে ভারতবর্ষে কোথাও আর আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কোনও ভুলত্রুটি থাকবে না। সব অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবে।
এখন থেকে কটকের হাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হবে আকাশবাণী কলকাতায়, পাটনার বিজ্ঞপ্তি মাদ্রাজে, মাদ্রাজের বিজ্ঞপ্তি শিলং-এ এবং কলকাতার বিজ্ঞপ্তি কটকে। আকাশবাণীর সমস্ত কেন্দ্র এবং হাওয়া অফিসগুলির নাম তালিকা করে সাজিয়ে দিয়েছেন কমিটি, কোন কেন্দ্র থেকে কোন অফিসের বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হবে।
এর পর থেকে আশা করা যাচ্ছে কেউ আর আকাশবাণীর আবহাওয়া ঘোষণা নিয়ে হাসাহাসি করবে না, সবাই স্পষ্ট মিলিয়ে দেখতে পাবে, বৃষ্টি বললে বৃষ্টি হচ্ছে, রোদ বললে সঙ্গে সঙ্গে ঝকঝকে রোদ উঠছে, হোক না শ্রাবণ মাস।