Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আপন জন || Rana Chatterjee

আপন জন || Rana Chatterjee

আপন জন

“দেখো তোমার ছেলের কান্ড! ভুট্টা পুড়িয়ে দিলাম,খেয়ে বলে কিনা মা আর একটা দাও”।
 ভুট্টা শুনে সৌমেনও অবাক,তার ভীষন প্রিয় অথচ এ তল্লাটে  কখনো পায় না কাঁচা ভুট্টা বিক্রি হতে তবু  বাড়িতে কি করে এলো!!তখনো সৌমেনের মনে পড়ছে ছোটবেলায় বাবা হাটে  গেলেই কিনতো। বিকালে পুড়িয়ে নুন লেবু মাখিয়ে মা যেই দিতো উফ কতো যে আনন্দ!

রান্নাঘর থেকে সৌমী তখনো বলছে  জানো,একটা বয়স্ক ভিখারি বাবুকে খুব ভালোবাসে।না দেখতে পেলে খোকা,খোকা বলে হাঁকবে।সে আজ কাঁচা ভুট্টা দিয়ে গেল,কিছুতেই দাম নিলো না!
“সেকি  কথা,দিনকাল ভালো নয়!ওসব অপরিচিত দের প্রশয় দিও না আর কোনোদিন”, বলে সাবধান করলো সৌমেন স্ত্রীকে।

“না গো লোকটার একটা টান আছে। অমন মোটেও নয়”। পাশের ঘর থেকে ছেলে বিট্টুর আবদার এলো,” বাবা তোমার পুরানো কিছু জামা চাই ,ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছিলো দেখলাম ভিখারি দাদু।”

“বলিস কি রে, বাইরের লোককে একদম দাদু বলে ডাকছিস যে!আচ্ছা বেশ বের করে রাখবো অব্যবহৃত আমার বেশ কিছু পোষাক, ওনাকে দিস” নরম গলায় বলেছিল ছেলেকে।

সেদিন অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল সৌমেন,বারান্দা দিয়ে  বিট্টুর ভিখারি দাদুকে দেখে চমকে ওঠলো! এ কি, এ সে কাকে দেখছে!! খুব ছোট্ট বেলায় যে মানুষটার স্মৃতি মুছে গেছে মন দেখে,তাকে কিনা দেখছে তাদের নতুন বাড়ির সামনের রাস্তায়! মা আর বাবার খুব অশান্তি হতো আর ভয়ে কাঁটা হতো ছোট্ট সৌমেন।তারপর একদিন রাতে বাবা আর ফিরলো না!আত্মীয়রা বলতো আপনভোলা মানুষটা সংসারের খাঁচায় টিকতে পারবে না জেনেই মুক্তি দিয়ে চলে গেছে।একদিন লোকাল থানা থেকে মা ছেলেকে একটা রেলে কাটা ডেড বডি সনাক্ত করতে নিয়ে গেছিল,তবু সৌমেনের মন বলেছিল “মা এটা বাবা নয় মোটেই”।

আজ বছর খানেক হলো মা মারা গেছেন,প্রিয় ঠাম্মা কে হারিয়েছে বিট্টু।কুড়ি বছর আগে রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা বাবা কিনা আজ আগন্তুক। সৌমেন দৌড়ে হাত দুটো ধরে ঘরে টানছিল মানুষটাকে,কি জানি ভয় পেয়ে গেল সে!
তবে কি বাবার স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে!কোনো বাজে পাল্লায় পড়ে কি মানুষটা তবে চিরতরে সব ভুলে গেছে!

বিট্টু ভিখারি দাদুর পাশে বসলো,হাত দুটো জড়িয়ে নিলো আদরে আর কি আশ্চর্য বাবা তাকে একবারও বকছে না।কি কান্ড বাবার চোখে জল!!বাবা তুমি কি চিনতে পারছো আমায়, ও বাবা তুমি কাঁদছো??গলাটা স্বাভাবিক করে সৌমেন বললো,না না তোর খুশিতে আমিও খুব খুশি,এটা আনন্দাশ্রু।ততক্ষনে গিন্নিকে হালকা করে বুঝিয়ে দিয়েছে সৌমেন,এই মানুষটা বাইরের কেউ নয়,তারই জন্মদাতা বাবা।বাড়ির মধ্যে কেমন যেন একটা  খুশির পরিবেশ তৈরি হয়েছে নিমেষে।সৌমী টিফিন সাজিয়ে মানুষটার কাছে যেতেই অবাক!তার শাশুড়ি মায়ের একটা ঝুলন্ত ছবির সামনে মানুষটা চুপ করে দাঁড়িয়ে,যেন খুব চেনা অথচ মনে করতে পারছে না এমন একটা কষ্ট অতিথিকে শান্ত থাকতে দিচ্ছে না।ঘণ্টা খানেক এমন ভাবে কাটলো,বাবা কে ফিরে সৌমেন শুধু খুশি না,সৌমী,বিট্টু অবাক।যে ঘরটাতে আপন করে বসিয়েছিল মানুষটাকে, বিশ্রাম করতে দিয়েছিল,দুপুরে খাবার বেড়ে ডাকতে গিয়ে দেখে কোথাও তো নেই!খোঁজ খোঁজ করেও কোনদিকে পেলো না ওরা।আজ অনেক গুলো দিন পার,না আর আসে নি কোনোদিন বিট্টুর দাদু হয়তো ঠাম্মাকে অমন ছবিতে দেখে মনের মধ্যে ওঠা ঝড় সামলাতে পারবে না ভেবে অজানা উদ্দেশ্যে আবার পাড়ি দিয়েছে মানুষটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress