Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আদরের বৌ || Mallik Kumar Saha

আদরের বৌ || Mallik Kumar Saha

আদরের বৌ

হঠাৎ কানে এল “ওগো শুনছ ” —-
বিবাহিত পুরুষদের কাছে এযে অতি পরিচিত বাক্য । এটা এমন এক বাক্য যা না শোনার ভান করলে অথবা উত্তর দিতে দেরী হলে মুহূর্তের মধ্যেই এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে । বিদ্যার্থী ইচ্ছাকৃত ভাবে শিক্ষক মহাশয়ের প্রশ্নে বলে থাকে, “শুনতে পাইনি স্যার ।”সেই বেচারা মাষ্টারমশাই যথেষ্ট কঠোর হলেও ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রায়শ: বিনীত হতে দেখা যায়। কিন্তু স্ত্রীর ডাকে তাৎক্ষণিক উত্তর না দিয়ে ভান করে বসে থাকার সাহস আজ পর্যন্ত কোন স্বামীর হয়েছে কিনা, তা বলা কঠিন।এই তো বিয়ের কিছুদিন আগ পর্যন্ত সকলকে উৎসাহের সঙ্গে বলে বেড়িয়েছি , ” সে আমার বসন্তের কোকিল । সুমিষ্ট ভাষী।”

কিন্তু,কি যে হলো বিয়ের পর … কেন যে হলো … তা আর বুঝা গেল না । আর যা বুঝতে শিখলাম তার থেকে মনে হলো, “ও আমার বুনো ওল ।”

আর দেরী না করে কাছে গিয়ে বললাম , “আদরের বৌ, আমায় ডেকেছ ?”
—– না , ডাকিনিতো ।

তবে কি আমি ভুল শুনলাম ?হতেও পারে।আজকাল কাজের চাপ এতটা বেড়েছে যে —–

—– থাক্ থাক্ আর কাজের দোহাই দিয়ে লাভ নেই। ব্যাপারটা বল দেখি —– আদর যে একেবারে উতলে উঠেছে।

কি করে বুঝাই বল দেখি তোমায় ? আমি তো ভাল মনেই তোমার কাছে এলাম । আর তুমি কি না —–

— এই নাও, বাজারের ব্যাগখানা ধর । ঘরে শাক- সব্জী কিছু নেই। মাছ আনতে ভুলো না। তবে হ্যাঁ, ঐ ছোট মাছ আমি আর কুটতে পারব না। বড় মাছ কেটে আনবে। এবার একটু তাড়া করে বাজার আনতো বাপু ।

একটু অন্য মনস্ক থেকে বললাম, ” তুমি কি আমায় কিছু বললে ?”

—– কাকে বলছি তবে ? এতক্ষণ কি তুমি কানে তূলো গুঁজে রেখেছিলে ? বাজার এনে দাও ।

তুমি একটু চেঁচিয়ে কথা বলছো না তো?

—– আর কত মিষ্টি করে বলবো ! এমনিতেই পাড়ার লোকে আমায় মিষ্টি বউ বলে ডাকে।

ও তাই বুঝি।

—– তবে নয় তো কি ?

আমিও তো তোমায় ‘ আদরের বৌ’ বলে ডাকলাম,শুনতে পাওনি?

—– শুনতে পেয়েছি বটে। কিন্তু, ঐ পাশের বাড়ীর কুন্তীর মা যখন আমায় আদর করে ‘ মিষ্টি বৌ’ বলে ডাকে, তখন মনে হয় আমি প্রজাপতি হয়ে উড়ে গিয়ে ঐ কৃষ্ণচূড়ার পাঁপড়িতে বসি।

ভাগ্যিস্ ! আমি বাগানখানিতে কৃষ্ণচূড়া লাগাইনি। তা হলে যে কি হতো?

—– কি হে বাপু,তুমি আমায় কথায় ভুলিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ? বাজার কখন আনবে ?

যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি ।

ঘন্টা – খানিক পর বাড়ীতে ঢুকতেই অতি ক্ষীণ অথচ মিষ্টি গানের শব্দ কানে ভেসে এল। কাছে এসে বুঝতে পারলাম এ যে আদরের বৌ এর মিষ্টিগলা। বাজারের ব্যাগখানা নামিয়েই বললাম, “ভারীমিষ্টি গানের গলা তো তোমার ! এতদিন কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলে এই যাদু? গুনগুন করে কেন,গলাছেড়েই গাও।”

—– শুনবে কোথা থেকে? কান যে তোমার চিলে নিয়ে গেছে। সাধে কি বলি আজকাল তোমার ধ্যান অন্য কোথাও। যাই হোক,আগামী বুধবার রতনবাবুর বড় ছেলের বিয়ের বৌভাত। নিমন্ত্রণের চিঠিখানা টেবিলে রেখে দিয়েছি। অনেকদিন পর একটা আলাদা আমেজের নিমন্ত্রণ পেলাম।তাই উৎসাহে গুনগুন করে গান করছি।

সখের সেইদিনটি আসতেই যেন মিষ্টি বৌয়ের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা দিল। নিজেকে সুন্দরী করে তুলার রকমারী আয়োজন শুরু হয়ে গেল জোরকদমে। ভাগ্যিস্ মুখমন্ডলখানি ফর্সা ছিল। তা নাহলে হলুদ,চন্দন,বেসন, মুলতানি মাটি, দুধ, দৈ, ফল,লেবু ইত্যাদি ইত্যাদির লেপনে ও ঘর্ষণে মুখমন্ডলকে সুন্দরতর করার চেষ্টা কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত। ইতিপূর্বে যে কজন স্ত্রীকে একাজে লিপ্ত হতে দেখেছি,তাতে ভগবানের কাছে একটাই প্রার্থনা তিনি যেন ভুল করেও কোনো মহিলার গায়ের রং একটুও কালো না করেন। এমনিতেই স্ত্রীগণ পরশ্রীকাতর,তারমধ্যে গায়ের রং কালো বলে নিন্দা হলে কারণে অকারণে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে ডালের মধ্যে লবণ বেশী, ঝোলে ঝাল বেশী করে দিয়ে গাল ফুলিয়ে রাখার অভিমানে পারদর্শী। যাই হোক সেদিন আমরা রতনবাবুর আতিথ্যে এবং আয়োজনে প্রসন্ন যে হয়েছি তাতে সন্দেহ নেই। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে অন্যান্য নিমন্ত্রণ বাড়ী থেকে আসার পর গৃহিণীর অনেক অভিযোগ শুনতে হয়েছে। কিন্তু আজ তেমন কোনো অভিযোগ আসবে বলে মনে হয় না।কারণ আত্মতুষ্টির দিক থেকে মুখখানি একেবারে উজ্জ্বল।

ঠিক সময়ে আমরা বাড়ী ফিরে এলাম। নিঃস্তব্ধ রাতে জ্যোৎস্নার আলোকে ধীরে ধীরে পথ হেঁটে আসার আনন্দ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। মনে পড়ে গেল প্রথম দিনে তাকে দেখার কথা। দুজন দুজনকে জানা অজানার অনেক স্মৃতিই মানস নয়নে ফুটে উঠল। এমন সময় পিছন থেকে দুটি শব্দ কানে এল।

—– ওগো শুনছ ।

এমন শান্তধীর প্রকৃতি আগে কখনও দেখেছি বলে মনে হয়নি। কাছে থেকেও আদরের বৌ সত্যিই যে এত মধুর ভাষীনী তা সহজে বুঝতে পারিনি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ” কিছু বলবে কি ?”

—– বলছিলাম আজ অনুষ্ঠান বাড়ীতে কচি কলাপাতা রঙের শাড়ীতে মিসেস সেনকে তোমার কেমন লেগেছে?

এই সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ভীষণ দ্বিধায় পড়ে গেলাম। নিজ স্ত্রীর সম্মুখে অন্য স্ত্রীর প্রসংশা যে প্রায়ই বিপরীত পরিস্থিতি গড়ে তোলে।কাল বিলম্ব না করে সহজভাবে উত্তর দিলাম,”বেশ ভালই তো ।”

আমার উত্তর শুনে কোনরূপ দ্বেষভাব পোষণ না করে অতিশয় উৎসাহিত হয়ে বলে উঠল,”আমারও বেশ দারুন লেগেছে ।স্নেহমাখা মুখখানা । মনে হলো ঠোঁটের দুধারে মৃদু হাসি লেগেই আছে।”

ও তাই বুঝি। তোমার নজর এড়িয়ে যায় এমন কি কিছু আছে?

—– আচ্ছা,বলছিলাম কি, মিসেস সেনের গলায় এক সুন্দর হীরের হার ছিল।বেশ মানিয়েছে তাকে।রূপ ও রঙে তার তুলনা নেই।তার উপর গলায় …(কথা শেষ না হতেই)

“হীরের হারটি কি সুন্দর দেখাচ্ছে,তাই না ? এই নাও আলমারীর চাবি।খুলে দেখ বাক্সটিতে তোমার জন্য এক আকর্ষণীয় হীরের হার এনে রেখেছি।হাজার হলেও তুমি যে আমার আদরের মিষ্টি বৌ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *