Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অমৃতা || Bani Basu » Page 22

অমৃতা || Bani Basu

অমৃতা (Amtrita) – ২২

সাতুই নভেম্বর বাংলা সেকেন্ড পার্ট ফিফ্‌থ পেপার পরীক্ষা দিতে এল অমৃতা, একজন সদ্য জননী, আর দোলা একজন সদ্য বিবাহিতা। অমৃতা এই তিন সপ্তাহে খানিকটা সেরে উঠেছে ঠিকই। কিন্তু মোটের ওপর সে দুর্বল। বাড়ি থেকে একটা কুশন নিয়ে এসেছে। এক ফ্লাক্স গরম দুধ, টিফিন। বেশ কুসুম-কুসুম গরম করে দুধটা দিয়েছেন মাসি, খিদে পেলে সে টুক করে ফ্লাসকের ঢাকনা খুলে নামিয়ে দুধটা ঢেলে রাখে, লিখতে লিখতে এক ফাঁকে খেয়ে নেয়। তবু অমৃতা এটা পেরে যাচ্ছে, কেন না সে জয়িতাদির নোট্‌স থেকে একটা মূল্যবান শিক্ষা নিয়েছে। কী করে অল্প কথায় বেশি বলা যায়। ভাষার ওপর অসামান্য দখল না থাকলে, শব্দভাণ্ডার অফুরান না হলে এটা সম্ভব নয়। অতটা পারবে না অমৃতা, পারবে না তিলকও। শোনা যায় জয়িতা রায় তিন ঘণ্টায় লেখা শেষ করে, বাকি একঘণ্টা রিভিশন করতেন, রিভিশনে ভুল কিছু বেরোত না, শূন্যস্থানও কিছু না, কিন্তু আরও ভাল শব্দ আরও সুন্দর শব্দ বসানো হত কিছু, স্টার দিয়ে মার্জিনে মার্জিনে আরও কিছু নতুন চিন্তা, পরীক্ষকরা সেই মার্জিনের অতিরিক্তটুকু পড়ে ধন্য হতেন। অমৃতা-তিলক পেয়েছে সেই নোটস। কিছুটা তো পারবেই। সবচেয়ে বড় কথা পরীক্ষা দিতে, লিখতে ভীষণ ভাল লাগছে তাদের। অমৃতার প্রথমটা বাচ্চার খাওয়ার চিন্তায় কষ্ট হয়েছিল। পরীক্ষার সময়টার কথা মনে করে, ডাক্তারের পরামর্শে ওরা বাচ্চাকে বেবি ফুড খাওয়ানো অভ্যেস করিয়েছে। কিছুতে মুখে নিতে চায় না, চোখ বুজিয়ে ফেলে, ফুঁপিয়ে কাঁদে, আর অমৃতার মনটা স্নেহে গলে যায়, শরীরটাও তার হয়ে যায় যেন নবনীতে তৈরি, গলতে থাকে। কিন্তু মাসি কড়া হাতে শাসন করেছেন মা ছেলে দুজনকেই। তাই খানিকটা নিশ্চিন্ত অমৃতা। আর, একবার প্রশ্নোত্তরের ভেতর ঢুকে পড়বার পর তার আর জগৎ-সংসার কিছুই খেয়াল থাকে না।

দোলা পরীক্ষা দিচ্ছিল সিক-বেডে। ওদের থেকে আলাদা ঘরে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যখন দোলার রেজিস্ট্রেশন হল, তার সঙ্গে হল পশ্চিমি কায়দার একটা রিসেপশন। আশ্বিন মাসে বিয়ের লগ্ন থাকে না। তাই রইল না টোপর, আলপনা-পিঁড়ি, গায়ে-হলুদ, অধিবাস, ছাদনাতলা, কিচ্ছু না। তবে শানাই বাজল, বাজল কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত, সরোদ-সেতার-বেহালাও, স্বভাবতই রেকর্ডে। খাওয়া-দাওয়ার মেনুও খুব ভাল। কিন্তু কনের ফ্যাকাশে মনমরা চেহারায় বিয়ের সাজ ভাল ফুটল না।

আত্মীয়স্বজনরা মন্তব্য করলেন—পরীক্ষার মুখোমুখি বিয়েটা না দিলেই হত। মেয়েটা দুশ্চিন্তায়, দুর্ভাবনায় যেন কেমন হয়ে গেছে। আমাদের সেই হাসকুটে টগবগে লাবণ্যময় মেয়েটা বলে চেনাই যাচ্ছে না।

উত্তরে একজন বললেন—বরপক্ষের নাকি ভীষণ তাড়া ছিল।

আর একজন বললেন—তাড়াটা কনেপক্ষেরও হতে পারে। জামাই যা দেখছি একে তো ফেলে রাখা যায় না, সঙ্গে সঙ্গে বেহাত হয়ে যাবে।

দোলা বন্ধুদের নেমন্তন্ন করতে চায়নি। কিন্তু সুমনা-সব্যসাচী ধরে ধরে প্রত্যেককে করেছেন। অনেকেই আসেনি। অমৃতা একবার ঘুরে গিয়েছিল সকালের দিকে। ছেলের জন্য বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি। শর্মিষ্ঠা পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠছে না, তার কথা বাদ। কিন্তু লাবণি এসেছিল খুব সেজেগুজে অরিন্দমের সঙ্গে, আর এসেছিল সব কটা পেটুক ছেলে। পরীক্ষাই হোক, আর যা-ই হোক খাওয়া তার ওপর দোলার ‘মালদার’ বাবার দেওয়া রিসেপশনের খাওয়া ওরা মিস করবে না। আর একজনকে দোলা ফোনে নেমন্তন্ন করেছিল, কী ভেবে কে জানে। সে হল সীজার, অমৃতার শ্বশুরবাড়ির পাড়ার সেই পরোপকারী ছেলেটি।

দোলা সিক-বেডে পরীক্ষা দিচ্ছে শুনে সকলেই একটু অবাক। বিয়ে হতে না হতেই অসুখ বাধিয়ে বসলি? কী? না জন্ডিস। খালি তিলকের মাথায় একটা কথা কয়েকবার ঘুরপাক খেয়েছিল—‘শী ইজ ইন গ্রেভ ডেঞ্জার।’ পুরোপুরি বোঝার মতো সময় বা মনোযোগ তার ছিল না, কিন্তু কথাগুলো তার অজান্তেই তার মাথার ভেতর একটা সংকেত পাঠাচ্ছিল, রিং রিং রিং রিং …

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress