Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অমৃতা || Bani Basu » Page 13

অমৃতা || Bani Basu

অমৃতা (Amtrita) – ১৩

‘উজ্জীবন’-এর দরজায় দাঁড়াল ধূসর রঙের মারুতি এসটিমটা। ছাতা হাতে রহমান শোফার নেমে দাঁড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলল। নেমে গেট অবধি পৌঁছে হঠাৎ রহমানের হাত থেকে ছাতাটা কেমন কেড়ে নিলেন ডক্টর কার্লেকর। —‘রহমান, ছাতাটা একটু রাখছি। বুঝলে?’

—ঠিক আছে সাব।

—গুড মর্নিং

— গুড মর্নিং

—গুড মর্নিং

নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন রঞ্জন। বেল বাজালেন। এনকোয়্যারি থেকে রিসেপশনিস্ট মেয়েটি উঠে এল।

—তুমি কেন? রজ্জাক কী করছে? আশ্চর্য তো? রজ্জাককে বলবে—আই ডোন্ট ওয়ান্ট হিম টু রিপীট দিস। যাই হোক সিসটার মাধুরীকে ডেকে দিও।

—সেন না দাশ?

—সরি, সেন।

মাধুরী সেন বেশ বয়স্কা। চল্লিশের বেশ ওপরে। কিন্তু দারুণ কর্মঠ, পটু এবং দায়িত্ববোধসম্পন্ন। দুই মাধুরীই। কিন্তু দাশ-এর বয়স চব্বিশ-পঁচিশ, দেখতে-শুনতেও একটা আলগা চটক আছে। রম্ভা চান না মাধুরী দাশ রঞ্জনের কাছাকাছি আসে। মাধুরী দাশও খুবই নিপুণ। তবু, নিজের জীবনের এই জটিলতার কথা মনে রেখেই রঞ্জন মাধুরী সেনকে তাঁর কাজকর্মগুলো করতে দিতে পছন্দ করেন।

মাধুরী সেন আসতে রঞ্জন নিচু গলায় বললেন—আমি যাচ্ছি, রাউন্ডে আসতে একটু দেরি হতে পারে। আমার চেম্বারের বাইরে নট টু বি ডিসটার্বড-টা লাগিয়ে দিন। কোনও কারণেই যেন কেউ আমাকে বিরক্ত না করে। আশা করছি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে এসে যাব। পেছনের দরজায় একটা ট্যাক্সি ডাকিয়ে রাখুন। আপনিই। এলে আমাকে ডাকবেন। ছাতাটা নিয়ে যান।

কতকগুলো আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টের ওপর ঝুঁকে পড়লেন কার্লেকর।

একটু পরেই হলুদ-কালো ট্যাকসিটা ছুটে চলল ডোভার লেনের দিকে।

খসখস খসখস করে খবরের কাগজের ওপর মুখস্থ উত্তর লিখে যাচ্ছে অমৃতা। স্পেশ্যাল পেপার … শর্ট নোট সব—বিজয় গুপ্ত কেতকা দাস রামেশ্বর ভট্টাচার্য দ্বিজ মাধব …। এগুলো স-ব সে আগে মুখস্থ করেছে, মুখেও বলে নিয়েছে। কিন্তু তার বাবা তাকে এই কায়দাটা শিখিয়ে দিয়েছেন। যতই বলে নাও, লেখবার সময়ে ঠি-ক ভুলে যাবে। সেইজন্যে লেখার অভ্যাস দরকার। বাবারা নাকি ছোটবেলায় এ সব কাজ বালি-কাগজে করতেন। সেগুলো অনেক কমদামি। এখন সে সব পাওয়া যায় না, কাগজ জিনিসটাই দুর্মূল্য হয়ে গেছে। একটা রুলটানা বা না-টানা লম্বা ফুলস্ক্যাপ সাইজের খাতা আট থেকে ন টাকার মধ্যে আসা-যাওয়া করে। অত পয়সা অমৃতা কী করে খরচ করবে? সে পুরোনো খবরের কাগজের ওপর শাঁই শাঁই করে লিখে যায়। মাসি মাঝে মাঝে বলেন—কী রে, খবরের কাগজের ওপর লিখছিস বুঝতে পারবি?

অমৃতা একটু হাসে। বুঝতে পারবার তত দরকার নেই। দরকার হল গড়গড় করে এই লিখে যাওয়াটা।

একটা নোট লেখা শেষ করে সে ফিরে মাসির দিকে তাকায়—তোমরা কেমন করে পরীক্ষার প্রিপেয়ারেশন করতে মাসি?

—আমি তো বার বার করে পড়তাম। ঘুরে ফিরে পড়তাম।

—নিজে উত্তরগুলো লিখতে না?

—কিছু লিখতাম, আর কিছু স্রেফ বই পড়ে চলে যেতাম।

—হত তাতে?

—ওই যা হত তা হত। বি.এ পাস কোর্সের পড়া তো, তা-ও জানতাম যে দেখাশোনা চলছে, পছন্দ হলেই বিয়ে হয়ে যাবে।

বিয়ের প্রসঙ্গে অমৃতার চোয়াল সামান্য কঠিন হয়ে যায়। লক্ষ পড়বার মতো নয়। চোয়ালের এই কঠিনতাও অমৃতার ভেতরের। সে জিজ্ঞেস করে—তোমার কী সাবজেক্ট ছিল মাসি?

—দূর, অত কি মনে আছে? ওই ফিলসফি, হিসট্রি, স্যানসক্রিট বোধহয়।

—পড়তে তোমার ভাল লাগত না?

—নাঃ।

—কী ভাল লাগত তাহলে?

—এই গপ্পো করা, নিন্দেমন্দ পরচর্চা, সিনেমা যাওয়া, আমাদের সময়ে তো প্রচুর সিনেমা-হল, প্রচুর সিনেমা, প্রতি সপ্তাহে একটা করে দেখতাম।

—যাঃ।

—মাসির ওপর অশ্রদ্ধা হচ্ছে না কি রে?

অমৃতার মুখ নরম, নরম, আরও নরম হয়ে গেল। সে বলল—

—অশ্রদ্ধা? কী যে বলো!

—তবে উনি যখন চলে গেলেন তখন আমার বয়স ঠিক পঁয়ত্রিশ। উনিশে বিয়ে হয়েছিল, ঠিক ষোলো বছর। সেই সময়টা …সম্পদ তখন এগারো বছরের। বারোয় পা দিয়েছে। ওকে দেখাশোনাটা খুব বড় কাজ ছিল। তবু, তবু মনে হত কেন আর একটু ভাল করে পড়াশোনাটা করিনি! টাকা-পয়সার অভাব তত বুঝিনি। খুব ভাল ইনসিওরেন্স ছিল, অফিস থেকেও পাওনা ছাড়া অতিরিক্ত অনেক দিয়েছিল, তা ছাড়া এই বাড়ি ছিল, মহানির্বাণ রোডের বাড়িটা ব্যাঙ্ককে ভাড়া দেওয়া, কিন্তু তা নয়, কেমন শূন্য-শূন্য লাগত। মনে হত আমার নিজের ভেতরটায় কিছু নেই, কিছু জন্মায়নি।

—তাহলে আবার শুরু করলে না কেন?

—অভ্যেসটাই তখন চলে গিয়েছিল, বুঝলি অমি? কতকগুলো সাপ্তাহিক পত্রিকা, মেয়েদের পত্রিকা আর কখনও সখনও এক আধটা বাংলা নভেল ছাড়া কিছ্‌ছু পড়িনি এই ষোলো বছর। বয়সটাও তখন মনে হত অনেক। কেঁচে-গণ্ডুষ করতে লজ্জাও ছিল, আবার ওই যে বলছি অনভ্যাস। মনের মধ্যে গভীরতাই বলিস আর মনোযোগই বলিস—কণামাত্র ছিল না।

অমৃতা বলল—ধ্যাঃ। তোমার গভীরতা নেই? মনোযোগ নেই? বিশ্বাস করতে বলো?

বললেন—মগজ, মস্তিষ্কের কথা বলছি রে। মাথা দিয়ে কোনও কঠিন জিনিস সল্‌ভ করতে পারার ক্ষমতাটা চলে গিয়েছিল।

—চলে যায়নি মাসি। হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছিল। জাগাবার চেষ্টা করলেই জাগত। তা ছাড়া, তোমার কোনও মোটিভেশন ছিল না। টাকা-পয়সার যেহেতু অভাব ছিল না। তাই নতুন করে কিছু করার উৎসাহ বা প্রেরণা পাওনি।

—ঠিক বলেছিস। কত বুঝিস তোরা আজকালকার মেয়েরা।

—এমা, তোমাকে এভাবে বলা আমার উচিত হয়নি।

—দেখো কাণ্ড, আমি কি তাই বলেছি? সত্যিই আমার মনে হয়, তোরা কত কত এগিয়ে গেছিস। কত কী জানিস। কত ভুল করিস না। কত ভুল শুধরে নিতে পিছপা হস না।

—আমরা একটা নতুন প্রজন্ম মাসি, এটা আমাদের কোনও বাহাদুরি নয়। সায়েন্স, টেকনলজি, মাস-মিডিয়া এই সব কথা আমাদের শিখিয়েছে। ভাবনা উসকে দিয়েছে। তোমাদের সময়ের থেকে আমাদের সময় আর একটু এগিয়ে গেছে।

—ভেতরে ভেতরে কিন্তু রয়ে গেছে সেই পশুবৃত্তি, সেই লোভ, সেই হিংসা … একটু থেমে অমৃতা আবার বলল।

শিবানী বললেন—না, তুই পড়, আমি তোকে বড্ড বকাচ্ছি। অমৃতা হাসল। পড়া জিনিসটাও তো যান্ত্রিকভাবে হয় না। তার মধ্যে অন্য মানুষের উষ্ণতা, অন্য মানুষের যুক্তি, বুদ্ধি, জীবনবোধ এসব না মিশলে আর যারই হোক, তার পড়া হয় না।

শর্মিষ্ঠা তো বেশিরভাগ সময়েই সর্বোচ্চ নম্বর পায়। কিন্তু ওকে একটা আলোচনার মধ্যেও আজ পর্যন্ত টেনে আনতে পারল না কেউ। রবীন্দ্রনাথ-কাদম্বরী রহস্যের মতো মুখরোচক মনোরোচক বিষয়ে পর্যন্ত না।

নিলয় প্রশ্নটা করেছিল। শর্মিষ্ঠা বলল—‘কবিমানসী’ তো পড়েছিস?

—তা পড়েছি উল্টেপাল্টে।

—তা হলে? তা হলে জিজ্ঞেস করছিস কেন?

—হায় কপাল! ওটা তো জগদীশ ভট্টাচার্যের দেখা-বোঝা, তুই কী বুঝিস, তোর কিছু মনে হয় না?

—না। আমি ওঁদের দেখিওনি। শুনিওনি।

—তাই বলে বুঝবিও না?—অমৃতা অনুযোগ করে।

—বুঝতে হলে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কথা বলতে হয়, কাদম্বরী দেবীর সঙ্গে কথা বলতে হয়, প্ল্যানচেটে বসবি? তাতেও হবে না, টিকটিকি লাগাতে হবে।

—কী আশ্চর্য! রবীন্দ্রনাথের লেখাগুলো তো রয়েছে। কবিতা, গান।

—তোরা বুঝগে যা।

অর্থাৎ শর্মিষ্ঠা, একটি সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া মেয়ে, যার হাতের লেখা ভাল, যে বানান ভুল করে না, প্যারাগ্রাফিং সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে, যথেষ্ট পড়ে, এবং যথেষ্টর চেয়েও বেশি মুখস্থ করে, সে তার অর্জিত বিদ্যাকে প্রয়োগ করতে পারে না। তার জীবন, মননের সঙ্গে ওই পড়াশোনার কোনও যোগ নেই।

অমৃতার পেটের ভেতরে এই সময়ে সে ডিগবাজি খেল। প্রচণ্ড একটা টান ধরল পেটে। টেবিলটা ধরে সেই ধাক্কা সামলাল সে। এই রকম সময়গুলো ছাড়া অমৃতার খেয়ালই থাকে না, তার ভেতরে একটি অঙ্কুর, জীবন্ত অঙ্কুর, তার নিজের সৃষ্টি, তার নিজের রক্তপ্রবাহের লালন, সে যা খায় ও-ও তার সারবস্তু পায়, তার অসুখ করলে ওরও অসুখ করবে। কোনও অনুভূতি নেই তার ওর জন্যে। অথচ ওকে বাঁচাবার জন্যেই সে একদিন প্রচণ্ড লড়াই করেছিল। যার ফলে তার নিকটজনদের মুখোশ মোচন হয় তার কাছে। আশ্চর্য, কোনও কৌতূহল পর্যন্ত নেই। ডক্টর কার্লেকর বলেছেন—ও ছেলে। সে কিন্তু জানতে চায়নি। কোনও বাৎসল্য, মাতৃত্ববোধ নেই আজ তার মধ্যে। একটা বাঘিনী যেন একটা বিড়ালী হয়ে গেছে। থাবার ওপর মুখ পেতে যে ঘুমোতে ভালবাসে। তার ক্ষেত্রে এই ঘুম অবশ্য এম.এ ফাইন্যালের পড়া। খবরের কাগজগুলো সরিয়ে রেখে সে একটা বই টেনে নিল, রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের ওপর আলোচনা।

ডক্টর কার্লেকর যখন খালি পায়ে এই ঘরে ঢুকলেন, পেছনে তাঁর মিসেস শিবানী দত্ত, তিনি একটা অভিনিবিষ্ট পিঠকে ঝুঁকে থাকতে দেখলেন। দেখলেই বোঝা যায় এই অভিনিবেশ গভীর—মাথার চুলগুলো কিছু পিঠে, কিছু কানের পাশ দিয়ে সামনের দিকে ঝুলে পড়েছে। একটা সাদার ওপর হালকা ছাপের আঁচল, একটি কানের সোনার ছোট্ট মাকড়ি।

তিনি মিসেস দত্তর দিকে ফিরে তাকালেন। উনি হেসে বললেন—ঠিক আছে, আপনার কাজ তো আপনাকে করতেই হবে। আসুন। অমৃতা…ডাক্তারবাবু এসেছেন।

রুটিন চেক-আপ। প্রতি মাসে ডক্টর কার্লেকর নিষ্ঠাভরে কাজটা করে যাচ্ছেন। সব রোগিণীই তাঁর দায়িত্ব। কিন্তু এই মেয়েটি বিশেষ দায়িত্ব। বিশিষ্ট এই মেয়েটিও। এ রকম অদ্ভূত মেয়ে তিনি আর দেখেননি। স্বামী যাকে ক্লোরোফর্ম করে অজ্ঞান করে এম.টি.পি করতে নার্সিং হোমে নিয়ে এসেছিল, যে জবরদস্তির ফলে সে মারা যেতেও পারত, সে সব ঘটনা যেন মন থেকে মুছে ফেলে দিয়েছে মেয়েটি। সন্তান কবে ভূমিষ্ঠ হবে, কেমন করে হবে, এ সব নিয়েও তার কোনও ভয়-ভাবনা নেই। অদ্ভূত নির্ভীক। তিনি যে তাকে ওই পরিস্থিতি থেকে বাঁচালেন, এখনও নিয়মিত তদারকি করে যাচ্ছেন, এ নিয়ে কোনও কৃতজ্ঞতার বাড়াবাড়িও তার বাক্যে তো দূরের কথা, হাবে-ভাবেও তিনি দেখেন না। তার সমস্ত মনোযোগ সূচিবিদ্ধ হয়ে আছে কতকগুলি বইয়ে, কতকগুলি খাতার পাতায়।

অনেকটা…অনেকটা কি রম্ভার মতো? মেডিক্যাল কলেজের থার্ড ইয়ারের রম্ভা! যখনই ওর হস্টেলে যেতেন এই ধরনের একটা দৃশ্য দেখতেন। অভিনিবিষ্ট। ফিরেও তাকাত না কারও দিকে। তিনি…তিনিই জোর করে তার সেই অভিনিবেশে থাবা বসালেন, ভাগ চাইলেন সময়ের, কামমোহিত করলেন সেই অপাপবিদ্ধ কুমারীকে, তার গহনা বেচে সে রঞ্জনকে লন্ডনে পাঠাল এম আর সি ও জি করতে, নিজে তখনকার এক বিখ্যাত গাইনির সহকারী হিসেবে কাজ নিল মেডিক্যাল কলেজেই..। তারপর? তারপর? লন্ডনেই কি আর এক ডিগ্রিকামী শার্লটের সঙ্গে তাঁর প্রচণ্ড মাখামাখি শুরু হয়ে গেল? তারপর? একদিন কোনও খবর না দিয়ে উদ্‌ভ্রান্ত রম্ভা কার্লেকর যখন তার অ্যাপার্টমেন্টের বেল-এ হাত রাখল, তার কিছুক্ষণ, অল্প কিছুক্ষণ আগেই মাত্র চলে গেছে শার্লট, সেদিনের সান্ধ্য সহবাস সেরে। সমস্ত ঘরে শার্লটের পারফিউমের মেয়েলি গন্ধ। বালিশের পাশে তার ব্রা কুণ্ডলীকৃত। নীচ থেকে কেয়ারটেকার ফোন করে জানাল ইন্ডিয়া থেকে এক মহিলা এসেছেন, দেখা করতে চাইছেন, তখন রঞ্জন পাঁচ মিনিট সময় চেয়ে নিয়ে দ্রুত হাতে প্যান্টের জিপার টানছেন, ব্রাটা ফেলে দিচ্ছেন ট্র্যাশ-ক্যানে, চুলে দ্রুত চিরুনি চালাচ্ছেন। টেপ-ডেকে জ্যাজ চলছিলই। মুখে উচ্ছ্বসিত হাসি নিয়ে তিনি রম্ভাকে অভ্যর্থনা করেছিলেন। দরজাটা খোলার আগে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে উদ্বেগ মিশে ছিলই। দরজা খোলবার পর সেটা সত্যিকার উচ্ছ্বাস হয়ে গেল। উঃ, কত, কতদিন পর আবার সেই পরিচিত প্রিয় মুখ, সেই দেহ, সেই গন্ধ! তিনি ভাবতেও পারেননি।

—তুমি!

—এলাম!

—প্যাসেজ মানি?

—জোগাড় করলাম।

—ছুটি?

—চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।

—অ্যাঁ?

—কেন? অ্যাাঁ কেন? এখন তুমি যা স্কলারশিপ পাচ্ছ তাতে আমি এখানে চালিয়ে নিতে পারব।

—মা-বাবা?

—আমার না তোমার?

—ধরো তোমার।

—তাঁরা তো লখনউ-এ রয়েছেন। যেমন ছিলেন তেমনি থাকবেন। আর তোমার বাবা-মার গ্রামের জমি-জমাতে যেমন চলে যাচ্ছিল তেমনি চলে যাবে।

—মঞ্জুর বিয়ে?

—মঞ্জু তোমার দায়িত্ব রঞ্জন। আমি তাকে ভালবাসি বলেই তার দায়িত্বটা আমার ওপর চাপিয়ে দেবার মতো অপুরুষ এবং সুযোগসন্ধানী স্বার্থপর কি তুমি?

তারপর সমস্ত আবহাওয়াটাকে রোমাঞ্চিত করে রম্ভা তাঁর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পেছনে দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সুটকেস মাত্র একটা, মাটিতে পড়েছিল। অশ্রুধারায় ভিজে যাচ্ছিল রঞ্জনের টি শার্ট।

রম্ভাকে তিনিই নষ্ট করে দিয়েছেন। কিছুতেই, কিছুতেই আর তার বিশ্বাস অর্জন করতে পারলেন না তিনি। রম্ভা আর পড়ল না, চাকরি করল না, প্র্যাক্টিস করল না, অথচ কী ব্রিলিয়ান্ট মেয়ে ছিল, ডিফিকাল্ট ডেলিভারির কত খুঁটিনাটি তিনি রম্ভার কাছ থেকেই শিখেছেন। কত লক্ষ লক্ষ রোগিণীকে বঞ্চিত করলেন তিনি। দেশকে বঞ্চিত করলেন এক নিবেদিত কর্মী প্রাপ্তি থেকে। পরিবারকে বঞ্চিত করলেন এক চমৎকার দায়িত্বশীল, উপার্জনক্ষম বধূ থেকে। নিজেকে বঞ্চিত করলেন স্বাভাবিক দাম্পত্য-জীবন থেকে, ছেলেমেয়েকে বঞ্চিত করলেন মাতৃ-পিতৃসঙ্গ থেকে। আর রম্ভা? রম্ভাকে বঞ্চিত করলেন সবচেয়ে বেশি। বিষিয়ে দিলেন তার মন। মস্তিষ্ক আর সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল না। গাইনোকলোজি অ্যান্ড অবসটেট্রিক্স-এ গোল্ড মেডালিস্ট একটা গুডিভ স্কলার এখন বিউটি ক্লিনিক, হেল্‌থ ক্লাব এই সব চালায় তাও নাম কা ওয়াস্তে। ক্লিনিক থেকে, ক্লাব থেকে রম্ভা তার আরশুলা রঙের মারুতি নিয়ে সারপ্রাইজ ভিজিট দেবে ‘উজ্জীবন’-এ, মেডিক্যালে, শহরের যেখানে যত নার্সিংহোমে তাঁর রোগিণী আছে, অপারেশন আছে সর্বত্র। রম্ভার এই প্যারানইয়া তাঁরই প্রতিদান তার প্রেম, তার গহনা-র মূল্যে কেনা ডিগ্রির পরিবর্তে।

এ মেয়েটি? এই অমৃতা? এ-ও কি ওইরকম উজ্জ্বল ছাত্রী? কী অখণ্ড অভিনিবেশ নিয়ে পড়াশোনা করে! এ বিবাহিত ছিল। সে বিবাহে প্রেম ছিল না, এ তিনি দুই পার্টির সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে জেনেছেন। এ নিজেকে তৈরি করছে। একা জীবনে দাঁড়াবার জন্য সংগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই সংকল্পের কাঠিন্য তিনি প্রত্যেকবার এখানে একে পরীক্ষা করতে এসে টের পান। কিন্তু, বলা তো যায় না, বাইশ তেইশ বছরের বাচ্চা মেয়ে একটা। যদি কেউ দস্যুর মতো এসে এর প্রণয় লুঠ করে? নষ্ট করে দেয় এই সংকল্প? এই অভিনিবেশ? তাঁকে রম্ভা পালাতে দেয়নি। কিন্তু এর সেই হতে-পারে প্রণয়ী যদি পালায়? যদি অমৃতার কোনও অর্থবল না থাকে? যদি—যদি—যদি।

—ব্লাড প্রেশারটা এত বেড়েছে কেন? পা-টাও ফুলেছে বেশ। নুন খাওয়া চলছে না কি পাতের পাশে?

—উহুঃ।

—ওকে জিজ্ঞেস করবেন না ডাক্তারবাবু, ও জানে না ও কী খায়। যখন যা ধরে দিই নির্বিবাদে খেয়ে নেয়। পাতে নুন দিই না।

—খিদে বাড়েনি?

—বাড়েওনি কমেওনি।

—বাচ্চাটা একটু ছোট। তা হোক। অমৃতা, একটু বেশি করে খাও। বুঝলেন মিসেস দত্ত। দুধ, একটু ফল, আর ডাল ভাত গ্রিন ভেজিটেব্‌লস আর মাছ। চিকেন-টিকেন না খেলেও চলবে, তবে মাছটা চাই-ই। একটু বেশি করেই। সম্ভব হলে একটু লিভার।

—চিকেন বা মাটনে আপত্তি নেই তো?

—মাটনটা থাক এখন, চিকেন ইজ ও কে। আর ওই যে বললাম লিভার।

মিসেস দত্ত মহিলাটির দিকে তাকিয়েও খুব অবাক হল ডক্টর কার্লেকর। মেয়েটি ঠিক বুঝেছিল কিন্তু কার ওপর ও নির্ভর করতে পারবে। চমৎকার চিনেছিল। তিনি ভেবেছিলেন এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা। কিছুদিন পর হয় মিসেস দত্ত, নয় অমৃতা নিজেই, তার আত্মসম্মানজ্ঞান যথেষ্ট, এখান থেকে চলে যাবার ব্যবস্থা করবে। বাবা-মার কাছে এই পরিস্থিতিতে থাকাটা ওর বিপজ্জনক। তখন কী করবেন সেটা তাঁকে ভাবতে হচ্ছিল। এমন কথাও ভেবেছিলেন সিস্টার মাধুরী সেনকে অনুরোধ করবেন। যদিও মনে মনে জানেন সেটা প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে। মাধুরী দুটি মাত্র ঘর নিয়ে থাকে। একটা ঘেরা বারান্দা। সেখানেই রান্না-বান্না। একটি ঘরে থাকেন মাধুরীর বৃদ্ধ বাবা, অন্য ঘরে তারা স্বামী-স্ত্রী। এর মধ্যে কোথায় আর একজনের জায়গা হবে। রম্ভাকে সব বলে নিজেদের বাড়িতে রাখবার কথাও ভেবেছিলেন। হৃৎকম্প হয়েছিল, তবু ভেবেছিলেন। কিন্তু এই মিসেস দত্ত সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিলেন। কথায় বলে না? যার কেউ নেই তার ভগবান আছেন! কথাটাকে একটু ঘুরিয়ে বলা যায় যার কেউ নেই তার প্রতিবেশী থাকে, বন্ধুর মা থাকে।

ডক্টর রঞ্জন কার্লেকর চলে যাবার পরও অমৃতা ফিরে পড়তে বসতে পারে না। প্রথমত তার এইবার একটু ক্লান্ত লাগছে। শরীরটা একটু দুর্বল, মাথা টলছে। তারও ওপর ডাক্তার এলেই তার মনে পড়ে যায়, সব মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় তাকে নিয়ে একটা কেস চলছে, মনে পড়ে যায় তিন বছরের বিবাহিত জীবনের সেই বিরাট দুঃস্বপ্ন যেটাকে সে ঠিক দুঃস্বপ্ন বলে চিনে উঠতে পারেনি। খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না তো জীবনে। বরাবর পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে চলতে মনে হত এই ভাবেই চলতে হবে, অন্তত তাকে। অভিযোগ করে লাভ নেই। মা যাকে জন্ম দিয়েই হার্টের রোগ বাধান, জ্ঞান হওয়া থেকে যে তার মায়ের ধাত্রী, সে অভিযোগহীন, আবেগবর্জিত প্র্যাক্টিক্যাল মানুষ হবে না তো কে হবে? কেরিয়ার একটা গড়তে হবে এটুকুই সংকল্প ছিল। তেমন রেজাল্ট হলে কলেজ, নইলে স্কুল, নইলে যা হোক একটা সম্মানজনক কিছু। বাইরে বেরোতে পারবে। পাঁচজন মানুষের সঙ্গে মেলামেশার একটা আলাদা জগৎ তৈরি হবে। এই কংসের কারাগার চিরন্তন লাগবে না তখন। হাতে থাকবে নিজের উপার্জন করা টাকাপয়সা, আলাদা একটা গুরুত্ব তৈরি হবে তার। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল তা তো তার দুঃস্বপ্নেরও অতীত ছিল! সন্তান ধারণ করাটা দোষের কেন হবে, সে এখনও বুঝতে পারে না। ঠাকুমা-ঠাকুৰ্দাদের তো স্বপ্নই কচি-কচি নাতি-নাতনি! সুদ্ধু সে আর অত কাজ করতে পারবে না বলে তাঁরা, নিজেদের প্রথম নাতিকে গর্ভে বিনষ্ট করতে চাইলেন? তাদের বাবাও চাইল? সমস্ত ব্যাপারটাই যেন একটা বোধের অগম্য প্রহেলিকা! এমন হয়! হতে পারে?

—আসতে পারি?

অরিন্দম ঘোষ বাইরে থেকে জিজ্ঞেস করে।

একটা ডিভানে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বুজে ছিল সে। বলল—আসুন। অরিন্দম আজও তাকে নিজের নাম বলেনি।

—মিঃ ঘোষ বলে ডাকলেই তো চলবে! সে বলে।

অমৃতা কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপাচাপি করতে পারে না। তবু বলেছিল—আপনি তো এখন বেশ চেনা মানুষ হয়ে গেছেন। এত চেনাকে কেউ মিস্টার বলতে পারে না কি?

—তা হলে ঘোষদা? অনেক অফিসে এটা চালু আছে। জানেন তো? বাঙালি দেখলেই ভারতের আপামর অবাঙালি বলবে দাদা। সেই আমেরিকান ইয়োরোপিয়ানদের ধারণা ছিল না? ইন্ডিয়া মানেই ম্যাজিক, ইয়োগী, আর সার্পেন্ট। এদেরও তেমনি ধারণা বাঙালি মানেই দাদা, রসগোল্লা আর মছলি।

—আমি অবাঙালিও নই, আপনার অফিস কলিগও নই, ঘোষদা-টোষদা বলতে পারব না।

—আচ্ছা লালটু নামটা আপনার কেমন লাগে?

—আমার ভাল লাগার ওপর আপনার নাম নির্ভর করছে না কি?

—বেশ আপনি আমাকে লালটুদা বলেই ডাকবেন অমৃতা।

অমৃতা অবশ্য লালটুদা-টা বলে ডাকটা এড়িয়ে যায়। তবে স্বীকার করতেই হবে এই লালটুদা, অথবা ঘোষদা মানুষটি খুব মজার এবং খুব উপকারী।

—আসুন, বলতে বলতে সে উঠে বসল। পেটে একটু চাড় লাগল, সামান্য মুখ বিকৃত হল তার।

—খুব অসুবিধে করলাম বোধহয়…

এ কথার উত্তর দিল না অমৃতা।

কাছাকাছি একটা বেতের মোড়া টেনে বসে অরিন্দম ঘোষ পকেট থেকে দুটো খাম বার করলেন। এগিয়ে দিলেন অমৃতার দিকে।

প্রথমটা খুলতেই মা-বাবার চিঠি বেরোল। অরিন্দম ঘোষ তার বাবা-মার সঙ্গে দৌত্যের কাজটা স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছেন। এক সময়ে ডঃ কার্লেকর এটা অপছন্দ করেছিলেন।— অমৃতার বাবা-মার বাড়ি ওরা নজর রাখবে।

ঘোষ তখন জানান—পেছন নেওয়া টিকটিকিদের ফাঁকি দেবার বহু উপায় না কি তাঁর জানা আছে।

মা লিখেছে:

খুকি,

তোকে না দেখে আমি আর থাকতে পারছি না। চার পাঁচ মাস হতে চলল, তোকে দেখিনি, তোর গলা শেষ কবে শুনেছি মনে পড়ে না। তোর শরীরের এই অবস্থায়, মনের এই অবস্থায় আমি মা হয়ে তোর কিছুই করতে পারছি না, আমার দিবারাত্র বুক ধড়ফড় করে। শিবানীর কাছে তুই খুব ভালই আছিস, ঘোষ ছেলেটি বারবার আশ্বাস দিয়ে যায়। কিন্তু আমার মন মানে না। যদি আমার ভালমন্দ কিছু হয়ে যায় আর দেখা হবে না। তুই সত্যি-সত্যি ঠিক আছিস কি না, কী অসুবিধে আমাকে খুলে লিখবি। নইলে ভাবব।

ইতি তোর

অভাগিনী মা।

বাবা লিখেছে,

অমৃতা,

আমার চিঠি তোমার মায়ের চিঠির পুনশ্চ বলে মনে করবে। আমার মনের অবস্থা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। দু হাজার টাকা আপাতত পাঠাচ্ছি। আরও পাঠাব দিন পনেরোর মধ্যে। যত তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে আসো, ততই ভাল।

ইতি

বাবা

এতই যদি না-দেখে-থাকতে-না-পারা তা হলে মেয়ে গ্র্যাজুয়েট না হতেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলে কেন মা? তোমার বুক ধড়ফড় কবে করত না মা? আমার অসুখ করলে বাড়ত। আমার পরীক্ষার ফলাফল বেরোবার সময়ে বাড়ত। আমি শাড়ি পরছি, আমার চুল কোমর ছোঁয় ছোঁয় দেখে বাড়ত। তোমার এ বুক ধড়ফড়ানি থামাতেই তো চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দিলে? আর ভাল-মন্দ কিছু হয়ে যাওয়া? মানে মৃত্যু? একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই কিন্তু তার বাবা-মার তার কাছে মৃত হয়ে যাওয়া। অন্তত সমাজ তাই প্রত্যাশা করে, এখনও। একটা মেয়ে বাইশ বছর তেইশ বছর বাবা-মার কাছে প্রতিপালিত হল, এতদিন পর্যন্ত মেশামেশি, মাখামাখি, তিনজনে কি চারজনে মিলে একটা ইউনিট। কিন্তু বিয়ের পরদিনই সেই নিজের বাড়ি বাপের বাড়ি হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কথা হয় বউ বেশি বেশি বাপের বাড়ি যায় কি না। দুই কুটুম্বে ভাব-ভালবাসা, মনের মিল, যেমন গল্প উপন্যাসে পড়া যায়, বাস্তব-জীবনে সে রকম খুবই কম হয়। হলে ভাল, না হলে ক্রমশ মেয়ের কাছে মেয়ের বাবা মা মৃত থেকে মৃততর হয়ে যেতে থাকেন। মা! মা গো! ও বাবা, কোথায় গেলে! কেন এমন ভুল করলে, হঠাৎ অসাবধানে অমৃতার চোখ ফেটে উষ্ণ প্রস্রবণ বেরিয়ে এল। দারুণ যন্ত্রণা হচ্ছে চোখে। পাহাড় ফাটিয়ে যখন গরম জল বেরিয়ে আসে তখন পাহাড়ের পাথরদেরও কি এমন লাগে? দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁট টিপে বসে আছে অমৃতা, চোখ দিয়ে অবিরল উষ্ণ ধারাপাত। সামনে ঘোষ চুপ করে বসে সেই ধারাপাত দেখছে, পড়ছে। সোজা চোখে নয়, চোখ নিচু, কিন্তু প্রথম চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসার দৃশ্যটা দেখেছে, দেখেছে সেই ঠোঁট কামড়ে ঠোঁট ফোলানো থামাবার আপ্রাণ চেষ্টা, দেখে নিয়েই চোখ নিচু করে ফেলেছে, এখন মনে-মনে দেখছে, গুনছে তেরো ক্কে তেরো, তেরো দু গুণে ছাব্বিশ, তিন তেরং ঊনচল্লিশ, চার তেরং বাহান্ন..নামতা পড়ছে। মনে মনে। কতক্ষণে থামে, কতক্ষণে। মেয়েদের অশ্রুপাতের সামনে পুরুষরা খুব অসহায়, অপ্রয়োজনীয়, অপ্রস্তুত বোধ করে। বিশেষ করে সেই অশ্রুর পেছনে যখন তাদের কোনও অবদান থাকে না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress