Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অপেক্ষা || Apeksha by Rabindrnath Tagore

অপেক্ষা || Apeksha by Rabindrnath Tagore

 সকল বেলা কাটিয়া গেল
         বিকাল নাহি যায়।
    দিনের শেষে শ্রান্তছবি
    কিছুতে যেতে চায় না রবি,
    চাহিয়া থাকে ধরণী-পানে,
         বিদায় নাহি চায়। 
 
    মেঘেতে দিন জড়ায়ে থাকে,
         মিলায়ে থাকে মাঠে—
    পড়িয়া থাকে তরুর শিরে,
    কাঁপিতে থাকে নদীর নীরে,
    দাঁড়ায়ে থেকে দীর্ঘ ছায়া
         মেলিয়া ঘাটে বাটে। 
 
    এখনো ঘুঘু ডাকিছে ডালে
         করুণ একতানে।
    অলস দুখে দীর্ঘ দিন
    ছিল সে বসে মিলনহীন,
    এখনো তার বিরহগাথা
         বিরাম নাহি মানে। 
 
    বধূরা দেখো আইল ঘাটে,
         এল না ছায়া তবু।
    কলস-ঘায়ে ঊর্মি টুটে,
    রশ্মিরাশি চূর্ণি উঠে,
    শ্রান্ত বায়ু প্রান্তনীর
         চুম্বি যায় কভু। 
 
   দিবসশেষে বাহিরে এসে
         সেও কি এতখনে
    নীলাম্বরে অঙ্গ ঘিরে
    নেমেছে সেই নিভৃত নীরে,
    প্রাচীরে-ঘেরা ছায়াতে-ঢাকা
         বিজন ফুলবনে? 
 
    স্নিগ্ধ জল মুগ্ধভাবে
         ধরেছে তনুখানি।
    মধুর দুটি বাহুর ঘায়
    অগাধ জল টুটিয়া যায়,
    গ্রীবার কাছে নাচিয়া উঠি
         করিছে কানাকানি। 
 
    কপোলে তার কিরণ প’ড়ে
         তুলেছে রাঙা করি।
    মুখের ছায়া পড়িয়া জলে
    নিজেরে যেন খুঁজিছে ছলে,
    জলের’পরে ছড়ায়ে পড়ে
         আঁচল খসি পড়ি। 
 
    জলের’পরে এলায়ে দিয়ে
         আপন রূপখানি
    শরমহীন আরামসুখে
    হাসিটি ভাসে মধুর মুখে,
    বনের ছায়া ধরার চোখে
         দিয়েছে পাতা টানি। 
 
   সলিলতলে সোপান-’পরে
         উদাস বেশবাস।
    আধেক কায়া আধেক ছায়া
    জলের’পরে রচিছে মায়া,
    দেহেরে যেন দেহের ছায়া
         করিছে পরিহাস।

    আম্রবন মুকুলে ভরা
         গন্ধ দেয় তীরে।
    গোপন শাখে বিরহী পাখি, 
 
    আপন মনে উঠিছে ডাকি,
    বিবশ হয়ে বকুল ফুল
         খসিয়া পড়ে নীরে। 
 
    দিবস ক্রমে মুদিয়া আসে
         মিলায়ে আসে আলো।
    নিবিড় ঘন বনের রেখা
    আকাশশেষে যেতেছে দেখা,
    নিদ্রালস আঁখির’পরে
         ভুরুর মতো কালো। 
 
    বুঝি বা তীরে উঠিয়াছে সে,
         জলের কোল ছেড়ে।
    ত্বরিত পদে চলেছে গেহে,
    সিক্ত বাস লিপ্ত দেহে—
    যৌবনলাবণ্য যেন
         লইতে চাহে কেড়ে। 
 
   মাজিয়া তনু যতন ক’রে
         পরিবে নব বাস।
    কাঁচল পরি আঁচল টানি
    আঁটিয়া লয়ে কাঁকনখানি
    নিপুণ করে রচিয়া বেণী
         বাঁধিবে কেশপাশ। 
 
    উরসে পরি যূথীর হার
         বসনে মাথা ঢাকি
    বনের পথে নদীর তীরে
    অন্ধকারে বেড়াবে ধীরে
    গন্ধটুকু সন্ধ্যাবায়ে
         রেখার মতো রাখি। 
 
    বাজিবে তার চরণধ্বনি
         বুকের শিরে শিরে।
    কখন, কাছে না আসিতে সে
    পরশ যেন লাগিবে এসে,
    যেমন করে দখিন বায়ু
         জাগায় ধরণীরে। 
 
    যেমনি কাছে দাঁড়াব গিয়ে
         আর কি হবে কথা?
    ক্ষণেক শুধু অবশ কায়
    থমকি রবে ছবির প্রায়,
    মুখের পানে চাহিয়া শুধু
         সুখের আকুলতা। 
 
   দোঁহার মাঝে ঘুচিয়া যাবে
         আলোর ব্যবধান।
    আঁধারতলে গুপ্ত হয়ে
    বিশ্ব যাবে লুপ্ত হয়ে,
    আসিবে মুদে লক্ষকোটি
         জাগ্রত নয়ান। 
 
    অন্ধকারে নিকট করে
         আলোতে করে দূর।
    যেমন, দুটি ব্যথিত প্রাণে
    দুঃখনিশি নিকটে টানে,
    সুখের প্রাতে যাহারা রহে
         আপনা-ভরপুর।

    আঁধারে যেন দুজনে আর
         দুজন নাহি থাকে।
    হৃদয়-মাঝে যতটা চাই
    ততটা যেন পুরিয়া পাই,
    প্রলয়ে যেন সকল যায়—
         হৃদয় বাকি রাখে। 
 
    হৃদয় দেহ আঁধারে যেন
         হয়েছে একাকার।
    মরণ যেন অকালে আসি
    দিয়েছে সব বাঁধন নাশি,
    ত্বরিত যেন গিয়েছি দোঁহে
         জগৎ-পরপার। 
 
   দু দিক হতে দুজনে যেন
         বহিয়া খরধারে
    আসিতেছিল দোঁহার পানে
    ব্যাকুলগতি ব্যগ্রপ্রাণে,
    সহসা এসে মিশিয়া গেল
         নিশীথপারাবারে। 
 
    থামিয়া গেল অধীর স্রোত
         থামিল কলতান,
    মৌন এক মিলনরাশি
    তিমিরে সব ফেলিল গ্রাসি,
    প্রলয়তলে দোঁহার মাঝে
         দোঁহার অবসান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress