অপরাহ্ন – 13
কাঁদছিল অন্তু মিয়া।
সে খবর পেয়েই রওনা হয়েছে। তার শরীরটা ভালো না। মসজিদের কাছাকাছি। এসে আর চলতে পারছে না। রাস্তার পাশে বসে শব্দ করে কাঁদছে। এবারও সে খালিহাতে আসে নি। তার লুঙ্গির খুঁটে কাঁচা সুপারি। বোনের জন্যে নিয়ে এসেছে। এরকম ভয়াবহ দুঃসংবাদ পাওয়ার পরেও সুপারিগুলি সে জোগাড় করেছে। শিশুরা পৃথিবীর কোনো দুঃসংবাদই স্বীকার করে না।
খবির হোসেন বললেন, তুমি কে?
কোনো জবাব এল না।
তুমি কি এই গেরামের?
না।
নাম কি তোমার?
অন্তু মিয়া।
ও আইচ্ছা, চিনলাম। পথের মইধ্যে বইসা কানতে ক্যান? ধর, আমার হাত ধর। চল আমার সঙ্গে। আমারে চিনছ?
অন্তু খবির হোসেনের হাত ধরল। রোগা একটা হাত। কিছুক্ষণ পরপর কেঁপে। কেঁপে উঠছে। খবির হোসেন গভীর মমতায় বললেন, ও বাঁইচ্যা আছে। কিছু হয় নাই। কিছু হইলে খবর পাইতাম। মরণের খবর পাইতাম। মরণের খবর গ্রামের ইমাম পায় সবার আগে। বুঝলা? ধর, শক্ত কইরা আমার হাত ধর। তামার খুঁটের মইধ্যে কি?
সুপারি।
বোনের জইন্যে আনছ?
অন্তু মিয়া মাথা নাড়ল এবং অন্য হাতের তালুতে চোখ মুছল।
মনিরউদ্দিনের বাড়ির সামনে একটি গরুর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। জলিল নিয়ে এসেছে। মনিরউদ্দিনকে গঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। অনেক লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। বেশ বড় একটা জটলা। গ্রামের মাতবর শ্রেণীর লোকজনও সবাই আছে। বজলু সরকার ভারি গলায় নির্দেশ দিচ্ছেন। উঠোনে তিন-চারটা হারিকেন এবং কুপি। তাতেও ঠিক আলো হচ্ছে না।
বজলু সরকার বললেন, সঙ্গে কে কে যাইতেছে? শুধু জলিল গেলে কাম হইত না। আরেকজন দরকার।
খবির হোসেন এগিয়ে গেলেন। তিনি যাবেন। সঙ্গে তাঁর বেতের সুটকেসটা থাকবে। পিছুটান রাখতে চান না। হয়তো গঞ্জ থেকে আবার ফিরে আসবেন, হয়তো ফিরে আসবেন না।