আমার মা না হয়ে তুমি আর - কারো মা হলে ভাবছ তোমায় চিনতেম না , যেতেম না ঐ কোলে ? মজা আরো হত ভারি , দুই জায়গায় থাকত বাড়ি , আমি থাকতেম এই গাঁয়েতে , তুমি পারের গাঁয়ে । এইখানেতেই দিনের বেলা যা - কিছু সব হত খেলা দিন ফুরোলেই তোমার কাছে পেরিয়ে যেতেম নায়ে । হঠাৎ এসে পিছন দিকে আমি বলতেম , ' বল্ দেখি কে ?' তুমি ভাবতে , চেনার মতো চিনি নে তো তবু । তখন কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমি বলতেম গলা ধরে — ' আমায় তোমার চিনতে হবেই , আমি তোমার অবু !' ঐ পারেতে যখন তুমি আনতে যেতে জল , এই পারেতে তখন ঘাটে বল্ দেখি কে বল্ ? কাগজ - গড়া নৌকোটিকে ভাসিয়ে দিতেম তোমার দিকে , যদি গিয়ে পৌঁছোত সে বুঝতে কি , সে কার ? সাঁতার আমি শিখিনি যে নইলে আমি যেতেম নিজে , আমার পারের থেকে আমি যেতেম তোমার পার । মায়ের পারে অবুর পারে থাকত তফাত , কেউ তো কারে ধরতে গিয়ে পেত নাকো , রইত না একসাথে । দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে দেখা - দেখি দূরে দূরে — সন্ধেবেলায় মিলে যেত অবুতে আর মাতে । কিন্তু হঠাৎ কোনোদিনে যদি বিপিন মাঝি পার করতে তোমার পারে নাই হত মা রাজি । ঘরে তোমার প্রদীপ জ্বেলে ছাতের ‘পরে মাদুর মেলে বসতে তুমি , পায়ের কাছে বসত ক্ষান্তবুড়ি , উঠত তারা সাত ভায়েতে , ডাকত শেয়াল ধানের খেতে , উড়ো ছায়ার মতো বাদুড় কোথায় যেত উড়ি । তখন কি মা , দেরি দেখে ভয় হত না থেকে থেকে পার হয়ে মা , আসতে হতই অবু যেথায় আছে । তখন কি আর ছাড়া পেতে ? দিতেম কি আর ফিরে যেতে ? ধরা পড়ত মায়ের ওপার অবুর পারের কাছে ।