সূর্য পাকা ফলের মতো টুপ ক’রে পড়ল
দিগন্তের ওপারে। অন্ধকারের জিভ
লেহন করছে পৃথিবীকে। তোমাকে দেখলাম দাঁড়ানো
এক বিশাল প্রান্তরে হু হু হাওয়ার মধ্যে।
তোমার খোঁপার বেলফুলগুলো দূরের আকাশের তারা,
হাওয়ার তোড়ে শাড়ি
আরো বেশি লেপ্টে যাচ্ছিলো শরীরে। মনে হ’লো,
তুমি তাকিয়ে আছো অনন্তের দিকে উদাসীন দৃষ্টিতে।
সেই মুহূর্তে তোমার মুখ চুম্বন করতে পারতাম, অথচ
এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা আমাকে শাসন করছিলো
শুরু থেকেই; দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
শুধু দেখছিলাম তোমাকে। উদ্দাম হাওয়া
নিস্তব্ধতা এবং নৈশ রাগিনী
আমাকে আমন্ত্রণ জানালো তোমার সৌন্দর্য পানের জন্যে।
রাত্রির পেয়ালা উপচে পড়েছিলো
মদিবার চেয়েও মদির এক পানীয় যা আমাকে
প্রতিশ্রুতি দেয় অমরতার। তুমি সরাইখানার দরজার
আড়ালে দাঁড়িয়ে বাড়ালে হাত। অকস্মাৎ একটি কালো
বেড়াল, যার চোখ দু’টো সবুজ, আমাকে ‘অবুঝ’ ব’লে
দিলো লাফ ধূ ধূ শূন্যতায়। তোমার চোখে ফসফরাসের আলো।
তুমি, আমি খোলা আকাশ,
নগ্ন সমুদ্রতীর, নানা রঙের নুড়ি, রাত্রির ঠোঁটে
কিসের ঝিলিক, কে এক কংকাল
আমার শরীর ঘেঁষে চলে যায়, তার ঠান্ডা নিঃশ্বাস
লেগে থাকে আমার গ্রীবায়। আমরা দু’জন,
তুমি আর আমি, পরস্পর হাত ধরে হাঁটতে থাকি
সামনের দিকে, পেছনে পড়ে থাকে
সরাইখানার নিস্তেজ আলো, মাতালদের
কোলাহল। সেই কর্কশ কম্বল-জড়ানো কংকাল
বাদুড়ের মতো উড়ে যায়। অনিশ্চয়তা
আলেয়া হয়ে হাতছানি দেয়, হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া
ধুলো ছুঁড়ে দেয় আমাদের চোখে, চাঁদ
আত্মহননের গান শোনায়, আমরা
একে অন্যকে আরো বেশি জড়িয়ে ধরি জন্ম-জন্মান্তরের আকর্ষণে।