Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অথ কয়লা ও লাকড়ি উনুন কথা || Purabi Dutta

অথ কয়লা ও লাকড়ি উনুন কথা || Purabi Dutta

অথ কয়লা ও লাকড়ি উনুন কথা

কয়লার উনুনে আঁচ বা সোজা কথায় আগুন ধরানো যে এক কানুনগত শিল্প — তা কি অস্বীকার করা যায়? ওর মধ্যেই কথা হতো কার হাতে কয়লা উনুন ভালো জ্বলে বা চট করে ধরে —অর্থাত হাতযশ, যে হাতযশ ছিল রান্নায় , কাঁথাশিল্পে , মশলাপেষায় । সাথে সুচতুর বাচনভঙ্গীমা। আলোচনা চলত কিভাবে কয়লা বাতাস খেয়ে জ্বলে উঠবে। কয়লাঘর (সম্মানে) মানে এক অপরিসর স্থান, যেখানে মজুত থাকত ঝুড়িতে বড়ো বড়ো কয়লা পাথর স্তুপাকৃতি কমপক্ষে কেনা হতো একমণ। থাকত হাতুরি আর এক পাথর যাতে কয়লা মাপমতো করে ভেঙ্গে নেওয়া যায়। থাকত আরো কিছু বেত বা বাঁশের ঝুড়ি পরিবহনের জন্য। একটি পড়তি ঝড়তি ছোট্ট ঝাড়ু , থাকত এক অবহেলিত কিন্তু অপরিহার্য ভাঙ্গাচোরা কালিমাখা তালপাতার হাতপাখা, ( উনুনে হাওয়া দেবার ), থাকত ঘুঁটে আর এক ঝুড়িতে, তোলা উনুন বহন করবার জন্য S করা লোহার শিক। আর কিছু “এঠেল” মাটি, নিভন্ত ব্যবহৃত উনুনের নুতন করে পরিচ্ছন্নতার জন্য। আগুন আঁচ দেবার জন্য ধুলোকালিমাখা এক কেরোসিন বোতল, আরো কত কি……. এ ঘরটির জিম্মাদারি থাকত বিশ্বস্ত পরিচারকের উপর, অবশ্যই গৃহকর্ত্রীর তত্ত্বাবধানে।

তোলা উনুন তৈরি হতো কোন অ্যালুমিনিয়াম বালতি বা ড্রাম ব্যবহারে। এ ছাড়া কোন কোন বড়ো বাড়িতে রান্নাঘরে থাকত পাকা ইট সিমেন্ট দিয়ে স্থায়ী পাকা উনুন, কয়লা ও কাঠের উনুনের সাথে কিছু গর্ত করা স্পেশাল খাবার গরম রাখবার জায়গাও— অর্থাত কুকিং রেঞ্জের । সভ্যতার বিকিরণে আর বিজ্ঞান প্রযুক্তির রমরমায়, পরিবেশ সচেতনতায় কয়লা ও খড়ির চুলা আউট। যদিও এখনও নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজে বিরাজমান, ফুটপাতে চা রুটি তৈরীর দোকানে— হাতের লাঠি— ইস্তিরিওয়ালার দৌলতে দেখা যায় কয়লা উনুন । দেখা যায় কলকাতার কোন কোন ফুটপাতে ইটপাতা খড়ির চুলা (লাকড়ি বিনা, শুকনো গাছের পাতা, দুমরানো কাগজ , শুকনো ডাবের খোলা, বাঁশ কঞ্চির টুকরো ইত্যাদি ইন্ধনের), ফুটপাথবাসী নাগরিকদের ব্যবহার যাদের জন্ম ও মৃত্যুর নথিকরণ অবান্তর আবদার।

দিন দিন নানা মুস্কিল বাড়ছে আর মুশকিল আসান আসছে ” আসানবিবি ” র ব্রত বিধিতে। শুধুই কি পরিবেশ সচেতনতায় কয়লা কারবার বন্ধ? কে খোঁজ রাখছেন? যুগ যুগ ধরে ঈশ্বর মাটির তলে যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বৃক্ষসমষ্টিদের করে রেখেছিলেন ‘অঙ্গার’, সে সঞ্চিত কালো হিরের লোভে কয়লা খনির ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে কলিয়ারি—কলসীর জলের মতো একদিন ত নিঃশেষ হবেই!!! প্রথা ও বিকল্পপ্রথা তাই হাত ধরে চলে।

পরিবেশ ত এক বাহানা, কে তোয়াক্কা করছেন পরিবেশ দূষণের? মানবহিতের কারণে কেন তাহলে তামাকজাত পদার্থ তৈরি সম্পূর্ণ বন্ধ হচ্ছে না? একটু বাজার মন্দা হবার আতংকে তাই আটা ময়দা র জানালা খোলা। বন্ধ হবে কি মদ্য তৈরি কারখানা?

আজ পর্যন্ত গ্রীন হাউস এফেক্ট মুক্তি আয়ত্তের সমাধান ধরা ছোওয়ার বাইরে। বননিধন অকারণ পশুনির্যাতন দ্বার খোলা নিরন্তর। হঠাৎই হঠাত বিশ্ব বৈঠক খানা গালগল্পের জিগির হৈচৈ ধনীদের আর বেঁচে থাকার লড়াইসংগ্রাম গরীবের নিঃশ্বাস ও জ্বালানী বিকল্প খোঁজা সরু গলিতে গলিতে।

জন হিতকর শব্দটি বেশ জোড়াল কাঠামোঘেড়া,কিন্তু অহিতকর সুখটান যে অন্যত্র বাঁধা। প্রকৃতি ব্যতীত প্রকৃতি শুদ্ধ করবার ক্ষমতা কারোর আছে? মানুষও কি প্রকৃতির পরিবেশের এক অঙ্গ নয়? কে ভাবছেন? আসলে মানুষ শুধু প্রভুত্ব চায় নিজ সুখস্বাচ্ছন্দের পরিপন্থীতে, সাজানো ঈশ্বর প্রদত্ত সামগ্রীর । পরিবেশ এক বাহানামাত্র। গৃহস্থালী , স্টীম ইঞ্জিন রেল, বিদ্যুৎ উৎপাদন, মেটালার্জি নানা কারখানা, রাসায়নিক কর্মকান্ড ইত্যাদিতে কয়লার ব্যাপক ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ মূল ভিলেন হয়ে উঠলো— কয়লা পুড়িয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড,মনোঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোকার্বন ইত্যাদি। উপায় তাই বিকল্প ব্যবস্থার । কিন্তু এদিকে আবার হাজার শত বছরের ভূতল কোঠায় সঞ্চিত এ সম্পদ ত ফুরিয়েও আসছে। নতুন নতুন কয়লা খনি শিল্পও নিঃশেষিত হতে দেরী নেই। বিকল্প ব্যবস্থার দ্বারস্থ না হলে অবশ্যই এ সংকটমোচনে অপেক্ষা করতে হবে আবার লক্ষ লক্ষ বছর—- কবে মৃত বৃক্ষ রূপান্তরিত হবে অঙ্গারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress