Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অথঃ জনৈক বিপ্লবী কথা || Asim Das

অথঃ জনৈক বিপ্লবী কথা || Asim Das

অথঃ জনৈক বিপ্লবী কথা

এক্ষুনি চক্ষুদান পর্ব শেষ হলো । ঘন্টা দুয়েক দেরি হয়ে গেল , শুধু ডেথ সার্টিফিকেটের ফর্মে , ধর্মের পর শূন্যস্থান ফাঁকা রাখার কারণে । আসলে উনি নিজেকে মানুষ হিসেবেই পরিচয় দিতেন । কিন্তু নিয়মনীতি বজায় রাখতেই হয় । তাই শেষ অবধি অনেক বাকবিতন্ডা সেরে ” ধর্মহীন ” লিখিয়ে তবেই শবদেহ ছাড়া পেল । এবারে দেহদানের উদ্দেশ্যে যাত্রা । সময় বেশি নেই । বিকেল চারটেয় মর্গের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে । সেটাই নাকি নিয়ম সাধারণের জন্য ।

শববাহী শকট এগিয়ে চলুক । ততক্ষণে যে মানুষ আজ রবিবার, শব হলেন, তাঁর কিছু স্মৃতিচারণা করা যাক ।

নাম — সুবিমল । পদবী উনি পছন্দ করতেন না । অবিবাহিত । মৃত্যুকালীন বয়স — বিরাশি । আদি বাড়ি — খুলনা জেলার দৌলতপুর ।
অধুনা – কলকাতার নিউটাউন ( ছিল ) ! দাদা, সমবয়সী মাতৃসমা বৌদি আর পুত্র – কন্যার মতো ভাইপো – ভাইঝি

ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে কুটিল রিউমাটয়েড আথ্রারাইটিসের শিকার । ফলে দুহাতের কয়েকটি আঙুল বাঁকা । স্বাধীনতার ছুরি ছিন্নমূল জীবন – পথকে ফালাফালা করে কেটে দেয় ।
তাই নিরন্তর লড়াই । অবশেষে দাদার চাকরি । দিদি ও বোনদের বিয়ে । পরবর্তীতে নিজেরও চাকরি ।
বিলিতি কোম্পানি । তখনকার সময়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি মাইনে এবং নিরাপদ আশ্রয় ।
————————————-
এরপরেই এলো সেই উত্তাল সত্তর দশকের বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ। গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার ডাক ।
নিরপদ সুখী জীবনের টান ছিঁড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তীক্ষ্ণ শায়কের মতো বিপ্লবের ডাকে । সকল মানুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করার কল্পনায় বিভোর এক স্বপ্নে – পাওয়া বিপ্লবী সুবিমল ।
গোপন ডেরায় রাত্রি যাপন , পুলিশের হাতে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে- যাওয়া , বাড়িতে খানাতল্লাসী । ক্রমে ক্রমে সরোজ দত্ত , সুশীতল রায়চৌধুরী , চারু মজুমদারের হত্যা কিংবা মৃত্যু ! বিপ্লবের জ্বলন্ত দাঔ দাঔ শিখা ক্রমশ নিভে নিভে তুষের ধিকিধিকি আগুন হয়ে শেষ , নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন !
পরমপ্রিয় বন্ধু নবারুণ , তিন বছর জেল খেটে পুনর্বার বহাল হয়েছেন চাকরিতে ।
সুবিমল আর চাকরি পান নি ।
টিউশন করে , দোরে দোরে বই বিক্রি করে যৎসামান্য আয় বৌদির হাতে তুলে দিয়ে রাত্রে ফুটপাতের পথ শিশুদের শিক্ষা দানে সততই রত এক প্রাণ সুবিমল ।

শববাহী শকট ঢুকে পড়েছে হাসপাতালে । নিয়ম মেনে পুলিশ ঘুষ চাইলো । শবদেহ হাজির করা হলো মর্গের সামনের গেটে । গেটের দারোয়ান ঘুস চাইলো । এই সবের আগেই প্রথম বকশিশ চেয়েছিল হাসপাতালের কর্মী- শববাহক ।
জীবনভর অকৃতদার সুবিমল , যে জটিল ব্যাপারটা জানতেন না , কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেগুলো বোঝা গেলো, শবদানের ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে । অবিবাহিত সুতরাং নিঃসন্তান । নিঃসন্তান অতএব সাক্ষীর সাক্ষরের জটিলতা ।

এইসবের মধ্যেই চারিদিকে মাছি ভন ভন , ভ্যাপসা চাপা দুর্গন্ধে স্যাঁতসেঁতে আসন্ন এক নিঃসঙ্গ রাত্রি যেন নেমে এলো নিশ্চুপ শুয়ে- থাকা সুবিমলের স্ট্রেচারের চারপাশে ।
আজন্ম সৎ , উদার , মহান বিপ্লবী আজ জনতাহীন একা শুয়ে আছেন এই এক অদ্ভুত আঁধারে ।

উনি কোনও নেতা বা বিধায়ক , মন্ত্রী কিংবা সাংসদ ছিলেন না । শুধুমাত্র সাধারণ একজন মনে প্রাণে বিশ্বাসী জনৈক বিপ্লবী ।

সঙ্গে ছিলেন সেই চির – বন্ধু নবারুণ কাকু । হঠাৎই গুমড়ে – থাকা আবেগ এসে ঝাঁকুনি দিলো আমার মস্তিষ্ক কোষের গভীরে । বোধকরি চেঁচিয়েই উঠলাম —- নবারুণ কাকু , কমরেডকে রেড স্যালুট দেবেন না ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress