যদি ভরিয়া লইবে কুম্ভ , এসো ওগো , এসো মোর
হৃদয়নীরে ।
তলতল ছলছল কাঁদিবে গভীর জল
ওই দুটি সুকোমল চরণ ঘিরে ।
আজি বর্ষা গাঢ়তম , নিবিড়কুন্তলসম
মেঘ নামিয়াছে মম দুইটি তীরে ।
ওই যে শবদ চিনি নূপুর-রিনিকিঝিনি ,
কে গো তুমি একাকিনী আসিছ ধীরে ।
যদি ভরিয়া লইবে কুম্ভ , এসো ওগো , এসো মোর
হৃদয়নীরে ।
যদি কলস ভাসায়ে জলে বসিয়া থাকিতে চাও
আপনা ভুলে —
হেথা শ্যাম দূর্বাদল , নবনীল নভস্তল ,
বিকশিত বনস্থল বিকচ ফুলে ।
দুটি কালো আঁখি দিয়া মন যাবে বাহিরিয়া
অঞ্চল খসিয়া গিয়া পড়িবে খুলে ।
চাহিয়া বঞ্জুলবনে কী জানি পড়িবে মনে
বসি কুঞ্জে তৃণাসনে শ্যামল কূলে!
যদি কলস ভাসায়ে জলে বসিয়া থাকিতে চাও
আপনা ভুলে ।
যদি গাহন করিতে চাহ , এসো নেমে এসো হেথা
গহনতলে ।
নীলাম্বরে কিবা কাজ , তীরে ফেলে এসো আজ ,
ঢেকে দিবে সব লাজ সুনীল জলে ।
সোহাগ-তরঙ্গরাশি অঙ্গখানি দিবে গ্রাসি ,
উচ্ছ্বসি পড়িবে আসি উরসে গলে —
ঘুরে ফিরে চারি পাশে কভু কাঁদে কভু হাসে ,
কুলুকুলু কলভাষে কত কী ছলে!
যদি গাহন করিতে চাহ , এসো নেমে এসো হেথা
গহনতলে ।
যদি মরণ লভিতে চাও , এসো তবে ঝাঁপ দাও
সলিলমাঝে ।
স্নিগ্ধ , শান্ত , সুগভীর , নাহি তল , নাহি তীর ,
মৃত্যুসম নীল নীর স্থির বিরাজে ।
নাহি রাত্রি দিনমান — আদি অন্ত পরিমাণ ,
সে অতলে গীতগান কিছু না বাজে ।
যাও সব যাও ভুলে , নিখিল বন্ধন খুলে
ফেলে দিয়ে এসো কূলে সকল কাজে ।
যদি মরণ লভিতে চাও , এসো তবে ঝাঁপ দাও
সলিলমাঝে ।