Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হাংরি জেনারেশন || Sankar Brahma

হাংরি জেনারেশন || Sankar Brahma

বাংলা সাহিত্যে স্থিতাবস্থা ভাঙার আওয়াজ তুলে, ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে, শিল্প ও সাহিত্যের যে আন্দোলন হয়েছে, তার নাম হাংরি আন্দোলন। মলয় রায়চৌধুরী হাংরি শব্দটি আহরণ করেছিলেন ইংরেজি ভাষার কবি জিওফ্রে চসারের ইন দি সাওয়ার হাংরি টাইম বাক্যটি থেকে, আর তাত্ত্বিক ভিত্তি সংগ্রহ করেছিলেন সমাজতাত্ত্বিক অসওয়াল্ড স্পেংলারের দি ডিক্লাইন অব দি ওয়েস্ট গ্রন্থটির দর্শন থেকে। স্পেংলার বলেছিলেন, একটি সংস্কৃতি কেবল সরলরেখা বরাবর যায় না; তা একযোগে বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয়। তা হল জৈবপ্রক্রিয়া, এবং সেকারণে সমাজটির নানা অংশের কার কোনদিকে বাঁকবদল ঘটবে তা আগাম বলা যায় না। যখন কেবল নিজের সৃজনক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, তখন সংস্কৃতিটি বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয়। তার সৃজনক্ষমতা ফুরিয়ে গেলে, তা বাইরে থেকে যা পায় ত-ই আত্মসাৎ করতে থাকে, খেতে থাকে, তার ক্ষুধা তখন তৃপ্তিহীন।

১৯৬১ সালের নভেম্বর মাসে পাটনা শহর থেকে একটি ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং হারাধন ধাড়া ওরফে দেবী রায়। কবিতা সম্পর্কিত ইশতাহারটি ছিল ইংরেজিতে, কেন না পাটনায় মলয় রায়চৌধুরী বাংলা প্রেস পাননি। আন্দোলনের প্রভাবটি ব্যাপক ও গভীর হলেছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে হাংরি আন্দোলনে যোগদান করেন বিনয় মজুমদার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, সুবিমল বসাক, ডেভিড গার্সিয়া, ত্রিদিব মিত্র, ফালগুনী রায়, আলো মিত্র, অনিল করঞ্জাই, রবীন্দ্র গুহ, সুভাষ ঘোষ, করুণানিধান মুখোপাধ্যায়, প্রদীপ চৌধুরী, সুবো আচার্য, অরুপরতন বসু, বাসুদেব দাশগুপ্ত, সতীন্দ্র ভৌমিক, শৈলেশ্বর ঘোষ, হরনাথ ঘোষ, নীহার গুহ, আজিতকুমার ভৌমিক, অশোক চট্টোপাধ্যায়, অমৃততনয় গুপ্ত, ভানু চট্টোপাধ্যায়, শংকর সেন, যোগেশ পাণ্ডা, মনোহর দাশ, তপন দাশ, শম্ভু রক্ষিত, মিহির পাল, রবীন্দ্র গুহ, সুকুমার মিত্র, দেবাশিষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। অনিল করঞ্জাই এবং করুণনিধান মুখোপাধ্যায় ছিলেন চিত্রকর।
১৯৬৫ সালে প্রকৃত অর্থে হাংরি আন্দোলন ফুরিয়ে যায়।

নকশাল আন্দোলনের পর উত্তরবঙ্গ এবং ত্রিপুরার তরুণ কবিরা আন্দোলনটিকে আবার জীবনদান করার চেষ্টা করেছিলেন। সত্তর দশকের শেষে যাঁরা পুনরায় আন্দোলনটিকে জিইয়ে তোলার চেষ্টা করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অরুণেশ ঘোষ, অরণি বসু, অরুণ বণিক, অলোক গোস্বামী, আপ্পা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিত্য মালাকার, কিশোর সাহা, জামালউদ্দিন, জীবতোষ দাশ, দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নির্মল হালদার, দেবজ্যোতি রায়, পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল, প্রিতম মুখোপাধ্যায়, বিজন রায়, রবিউল, সমীরণ ঘোষ, রতন নন্দী, রাজা সরকার, সত্যেন চক্রবর্তী, সৈকত রক্ষিত, সুব্রত রায়, সুব্রত চক্রবর্তী, রসরাজ নাথ, সেলিম মোস্তফা, শঙ্খপল্লব আদিত্য, সুভাষ কুন্ডু, স্বপন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
কিন্তু তাত্ত্বিক ভিত্তিটি সঠিক জানা না থাকায় তারা আন্দোলনটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি।

হাংরি আন্দোলনকারিরা প্রধানত একপৃষ্ঠার বুলেটিন প্রকাশ করতেন। যেগুলো পাটনা থেকে প্রকাশিত, সেগুলো ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল। কখনও বা পোস্টকার্ড, পোস্টার এবং এক ফর্মার পুস্তিকা প্রকাশ করতেন। এক পাতার বুলেটিনে তাঁরা কবিতা, রাজনীতি, ধর্ম, অশ্লীলতা, জীবন, ছোটগল্প, নাটক, উদ্দেশ্য, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে ইশতাহার লেখা ছাড়াও, কবিতা, গদ্য, অনুগল্প, স্কেচ ইত্যাদি প্রকাশ করেছিলেন। বুলেটিনগুলো হ্যান্ডবিলের মতন কলকাতার কলেজ স্টিট কফি হাউস, পত্রিকা দপতর, কলেজগুলোর বাংলা বিভাগ ও লাইব্রেরি ইত্যাদিতে তারা বিতরন করতেন। হাংরি আন্দোলনের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার এইটি-ই প্রধান কারণ বলে মনে করেন গবেষকরা। কিন্তু হ্যান্ডবিলের মতন প্রকাশ করায় তারা ঐতিহাসিক ক্ষতি করেছেন নিজেদের, কেন না অধিকাংশ বুলেটিন সংরক্ষণ করা সংগ্রাহকদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। কলকাতার লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্র বহু চেষ্টায় গোটা দশেক সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ঢাকা বাংলা একাডেমিও কয়েকটি সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ১৯৬৩-৬৫ সালের মাঝে হাংরি আন্দোলনকারীরা কয়েকটি পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন। সেগুলো হল, সুবিমল বসাক সম্পাদিত প্রতিদ্বন্দ্বী, ত্রিদিব মিত্র সম্পাদিত উন্মার্গ, মলয় রায়চৌধুরী সম্পাদিত জেব্রা, দেবী রায় সম্পাদিত চিহ্ন, প্রদীপ চৌধুরী সম্পাদিত ফুঃ সতীন্দ্র ভৌমিক সম্পাদিত এষণা, এবং আলো মিত্র সম্পাদিত ইংরেজি দি ওয়েস্ট পেপার। পত্রিকাগুলোর প্রতিটি সংখ্যা সংরক্ষণের প্রয়াস তারা করেননি। কলকাতার লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি মাত্র কয়েকটি সংখ্যা সংগ্রহ করতে পেরেছে। বিট আন্দোলনের কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ কলকাতায় থাকাকালীন ইংরেজি বুলেটিনগুলো সংগ্রহ করে স্ট্যনফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করে গেছেন বলে বিদেশী গবেষকদের সৌজন্যে এগুলোর অবস্থান জানা যায়। সত্তর দশকের শেষাশেষি আন্দোলনটিকে পুনরায় জীবিত করার যখন অসফল প্রবাস করা হয়েছিল, তখন অরুণেষ ঘোষ প্রকাশ করেন জিরাফ, অলোক গোস্বামী প্রকাশ করেন কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্প, সুভাষ ঘোষ সম্পাদনা করেন আর্তনাদ, এবং অন্যান্যরা ক্ষুধার্ত, ক্ষুধার্ত খবর, ক্ষুধার্ত প্রতিরোধ, রোবট, ধৃতরাষ্ট্র ইত্যাদি।

সুবিমল বসাক, দেবী রায় ও মলয় রায়চৌধুরীর কিছু-কিছু প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কার্যকলাপের কারণে ১৯৬৩ সালের শেষার্ধে হাংরি আন্দোলন বাঙালির সংস্কৃতিতে প্রথম প্রতিষ্ঠানবিরোধী গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত হয়। বহু আলোচক হাংরি আন্দোলনকারীদের সে সময়ের কার্যকলাপে ডাডাবাদের প্রভাব লক্ষ করেছেন। এই কারণে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যাব, সতীন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন। শ্মশান, গোরস্তান, ভাটিখানা, আওড়া ও শেয়ালদা স্টেশনে তারা কবিতা পাঠের আয়োজন করতেন।
‘মুখোশ খুলে ফেলুন লেখা জীব-জন্তু, দেবতা, দানবের মুখোশ পাঠাতেন মন্ত্রী, সমালোচক, প্রশাসকদের; কবিদের সমালোচনা করতেন বিবাহের কার্ডে; তৎকালীন মানদণ্ডে অশ্লীল স্কেচ ও পোস্টার আঁকতেন ও বিলি করতেন; একটি গ্রন্থের দাম রাখতেন লক্ষ টাকা বা কয়েকটি টি.বি. সিল। বাণিজ্যিক পত্রিকায় গ্রন্থ রিভিউ করার জন্য জুতোর বাক্স পাঠাতেন কিংবা সাদা কাগজ পাঠাতেন ছোটগল্প নামে। তাদের রচনায় প্রশাসন ও মিডিয়াকে আক্রমণ করতেন। বেনারস এবং কাঠমান্ডু গিয়ে সাহিত্য সম্পর্কহীন হিপিনীদের সঙ্গে মাদকসেবন এবং যৌন যথেচ্ছাচারে লিপ্ত হয়ে সেখানকার সংবাদপত্রে শিরোনাম হতেন। পেইনটিং প্রদর্শনী করে শেষ দিন প্রতিটি ছবিতে আগুন ধরিয়ে দিতেন। এই সমস্ত অসাহিত্যিক কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা দাবী করতেন যে অচলায়তনকে ভাঙা যাবে। অবশ্য তাদের অনুকরণে পরবর্তীকালে বহু প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক এসেছেন বাংলা সাহিত্যে, যদিও সাহিত্যের বাইরে তারা অন্য কাজ করেননি। কিন্তু হাংরি আন্দোলনকারীদের কার্যকলাপে প্রশাসন অচিরে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হল।

১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইনডিয়ান পিনাল কোডের ১২০বি, ২৯২ এবং ২৯৪ ধারায় ১১ জন হাংরি আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। তারা হলেন: সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, দেবী রায়, সুভাষ ঘোষ, শৈলেশ্বর ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী, উৎপলকুমার বসু, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুবো আচার্য এবং সুবিমল বসাক। এঁদের মধ্যে প্রথম ছয়জনকে গ্রেফতার করে এবং কলকাতার ব্যাংকশাল কোর্টে তোলে। মলয় রায়চৌধুরীকে হাতে হাতকড়া এবং কোমরে দড়ি বঁধে রাস্তায় হঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, চোর-ডাকাতদের সঙ্গে। মকদ্দমার ফলে উৎপলকুমার বসু অধ্যাপনার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন, প্রদীপ চৌধুরী রাসটিকেট হন বিশ্বভারতী থেকে, সমীর রায়চৌধুরী সরকারি চাকরি থেকে সাসপেন্ড হন, সুবিমল বসাক ও দেবী রায়কে কলকাতার বাইরে বদলি করে দেয়া হয়, সুবো আচার্য ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ফেরার হয়ে যান।

এরপর ভয়ে অনেকেই হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন। লালবাজারের কনফারেন্স রুমে মলয় রায়চৌধুরী এবং সমীর রায়চৌধুরীকে জেরা করেন একটি ইনভেসটিগেটিং বোর্ড যার সদস্যরা ছিলেন স্বরাষ্ট্র দপতর, পুলিশ প্রশাসন, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ, ভারতীয় সেনার প্রতিনিধিরা এবং পশ্চিমবঙ্গের আ্যাডভোকেট জেনারাল। ১২০বি ধারাটি ছিল ষড়যন্ত্রের, এবং সেকারণে প্রত্যেক হাংরি আন্দোলনকারী সম্পর্কে তথ্যপঞ্জি (Dossier) খুলে ফেলেছিলেন কলকাতা গোয়েন্দা বিভাগ। গ্রেফতারের সময়ে প্রত্যেকের বাড়ি লণ্ড-ভণ্ড করা হয়েছিল। বইপত্র, ডায়েরি, টাইপরাইটার, ফাইল, পান্ডুলিপি, কবিদের চিঠির সংগ্রহ ইত্যাদি যেগুলো পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল তা আর তারা ফেরত দেননি।

হাংরি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের হয় ১৯৬৪ সালে এবং তা চলে ৩৫ মাস, অর্থাৎ ১৯৬৭ পর্যন্ত। ১২০বি এবং ২৯৪ ধারা তুলে নিয়ে কেবল ২৯২ ধারায় চার্জশিট দেয়া হয় মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে তার ‘প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটির জন্য ; বাদবাকি সবাইকে রেহাই দেয়া হয়। নিম্ন আদালতে সাজা হলেও, তিনি উচ্চ আদালতে মামলা জিতে যান তারা।

মোকদ্দমাটির কারণে তাদের খ্যাতি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সুবিমল বসাকের হিন্দি ভাষায় দখল থাকায় ভারতের অন্যান্য ভাষার সংবাদপত্র ও পত্রিকায় তাদের রচনা ও কাজকর্ম নিয়ে প্রচুর বিতর্ক তাদের প্রচারের আলোয় নিয়ে আসে। হাংরি আন্দোলনকারীরা তা-ই চাইছিলেন। পশ্চিম বাংলার ট্যাবলয়েডগুলোতে তাদের নিয়ে রসালো সংবাদ, এমনকি জনতা (৯.১০.৬৪), দৈনিক যুগান্তর(৭.৮.১৯৬৪ সুফী), আনন্দবাজার( ৮.৯.৬৪ চন্ডী লাহিড়ী) ও স্টেটসম্যান (২০.১২.৬৪ রবি) পত্রিকায় দেবী রায় ও মলয় রায়চৌধুরীর কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল। দৈনিক যুগান্তর-ই তিন দিন প্রধান সম্পাদকীয় (১৯.৭.৬৪, ৭.৯.৬৪, ১৫.৪.৬৫) লিখেছিলেন কবি কৃষ্ণ ধর। আমেরিকার টাইম পত্রিকায় ( নভেমবর ১৯৬৪) তাদের ফোটো এবং সংবাদ প্রকাশিত হবার ফলে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার পত্রপত্রিকা তাদের সংবাদ ও রচনা প্রকাশ করার জন্য কলকাতায় প্রতিনিধি পাঠায়। ভারতবর্ষে তারা সমর্থন পেয়ে যান প্রতিষ্ঠিত লেখকদের।

সাময়িক দুর্ভোগ হলেও হাংরি মকদ্দমা তাদের সাপে বর হয়। অনিল করনজাই ললিতকলা একাডেমীর পুরস্কার পান। অমেরিকা ও ইউরোপে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন বিশেষ হাংরি আন্দোলন সংখ্যা প্রকাশ করেছিল যা ওই বয়সের কবি ও লেখকদের জন্য নিঃসন্দেহে অকল্পনীয়। কলকাতায় এই ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল: “ইহা কি বেহুদা পাগলামি?” (দর্পণ, ১.৫.৬৪), “দেবদূতেরা কি ভয়ংকর” চতুষ্পর্ণা (পৌষ, ১৩৭০), “সাহিত্যে বিটলেমি কী এবং কেন?” (অমৃত, শ্রাবণ ৮, ১৩৭১), “হা-ঘরে সম্প্রদায়” (১.১০.৬৪), “কাব্যচর্চার নামে বিকৃত যৌনলালসা” (জনতা, ৪.৯.৬৪), “পুলিশি বেটন কি শিল্প বিচার করবে?” (দর্পণ, ২৭.১১.৬৪), “Erotic Lives & Loves of Hungry Generation” (Blitz, 19.9.64), “Middlebrows Thrive on New Kind of Writing” (The Statesman, 30.12.64), ” Not By Poetry Alone” (NOW, 20.11.64).

হাংরি আন্দোলনের অবদান সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচক বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে এম ফিল এবং পি আইচ ডি গবেষণা হয়েছে। অতএব যে কয়েকটি ক্ষেত্রে গবেষকরা একমত সেগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।

পত্রিকার নামকরণ : হাংরি আন্দোলনের পূর্বে পত্রিকার নাম হতো কবিতা, পূর্বাশা, অরণি কৃত্তিবাস, অগ্রণি, শতভিষা,উত্তরসূরী, ধ্রুপদী, সংবেদ, ক্রান্তি, চতুরঙ্গ ইত্যাদি। হাংরি আন্দোলনকারীরা যে-ধরনের নাম রাখার চল করলেন তা বৈপ্লবিক। ফলে তার পর থেকে পত্রিকার নামকরণে বিপুল পরিবর্তন ঘটল। যেমন, কৌরব, আবার এসেছি ফিরে, মানুষের বাচ্চা, ঢ়পের কাগজ, আমি আর লীনা হেঁটে চলেছি, ক্ষেপচুরিয়াস, দিল্লী হাটার্স ইত্যাদি। সাবঅলটার্ন বা নিম্নবর্গ থেকে সাহিত্যক্ষেত্রে আগমন, যা কবিতা, কৃত্তিবাস, শতভিষা, ধ্রুপদী ইত্যাদি পত্রিকায় দৃষ্টিকটুভাবে অনুপস্হিত থাকতো। হাংরি আন্দোলন প্রথম যৌথভাবে প্রন্তিকের ডিসকোর্সকে স্থান করে দিল। পাঠবস্তুতে মুক্তসূচনা ও মুক্তসমাপ্তির প্রচলন,বিশেষ করে প্রদীপ চৌধুরী, ফালগুনী রায়, মলয় রায়চৌধুরী, ত্রিদিব মিত্র ও শৈলেশ্বর ঘোষের কবিতা-বিশেষ যেখান থেকে ইচ্ছা পড়া যায়, স্তবক ও পঙ্‌ক্তি উপর-নিচ রদবদল করে পড়া যায়। একই প্রক্রিয়া গদ্যে এনেছেন সুভাষ ঘোষ, সমীর রায়চৌধুরী, ফালগুনী রায় ও সুবিমল বসাক।

মনস্হিতি প্রকাশকালীন অব্যয় শব্দ কবিতায় প্রয়োগ; যেমন ওঃ, আঃ, আহ, আআআআআআআহ‌,, উঃ, শ্যাঃ, ফুঃ, হাহ ইত্যাদি, বিশেষ করে মলয় রায়চৌধুরী, প্রদীপ চৌধুরী ও ফালগুনী রায়- এর কবিতায়। পাঠবস্তুতে অনুক্রমহীনতা প্রয়োগ : বাক্যবুননে লজিকাল ক্র্যাক বা যুক্তি-ফাটল প্রয়োগ যা দেবী রায়, মলয় রায়চৌধুরী, শৈলেশ্বর ঘোষ প্রমুখের কবিতার বৈশিষ্ট্য। সত্তর দশকের পর পশ্চিম বাংলায় এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছিল। গুরুচণ্ডালী শব্দগঠন ও বাক্য প্রয়োগ যা হাংরি আন্দোলনকারীদের পূর্বে নিষিদ্ধ ছিল বর্তমানে আকছার হয়ে গেছে। ভঙ্গুর বাকপ্রতিমা প্রয়োগ। হাংরি আন্দোলনকারীদের কবিতায় একটি ছবি সম্পূর্ণ গড়ে ওঠার আগেই তা মিলিয়ে গিয়ে আরেকটি ছবি ভেসে ওঠে। বাংলা কবিতায় এটি এখন প্রতিষ্ঠিত শৈলী। যৌন চিত্রকল্প, অশ্লীল শব্দ, গালমন্দ, নিচুতলার অভিব্যক্তি যা পাঁচের দশক পর্যন্ত পাঠবস্তুতে নিষিদ্ধ ছিল তার যথেচ্ছ প্রয়োগের সূত্রপাত করে গেছেন হাংরি আন্দোলনকারীরা। তাদের পাঠবস্তুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গৌহাটি বিস্ববিদ্যালয়ের রিডার ড, শঙ্কর ভট্টাচার্য লিখেছেন যে সেগুলো “সাধারণত প্রতিবাদ-মুখর, আনুষ্ঠানিকতা-বর্জিত, প্রাতিস্বিকতায় ভঙ্গুর, অস্হির, আস্বস্তিকারক, ছকহিন, ঐক্যহীন, খাপছাড়া, এলোপাতাড়ি ও আয়রনিমূলক”। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগীব প্রধান ড. তরুণ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “ভাষায়, ছন্দে, অলংকার, স্তবকে তুমুল ভাংচুর” করেছেন তারা, এবং “যৌনতার সঙ্গে এসেছে ব্যঙ্গ, আত্মপরিহাস ও অসহায় মানুষের নিস্ফলতার যন্ত্রণা; আত্মপ্রক্ষেপ ঘটিয়ে তঁরা নিরপেক্ষ হয়ে যান”। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি. দে মলয় রায়চৌধুরী ও হাংরি আন্দোলন বিষয়ে ৩৫০ পৃষ্ঠার গবেষণার জন্য পিএচ.ডি. সম্মান দ্বারা ভূষিত হয়েছেন।

(সিনেমায় হাংরি আন্দোলন)

বাইশে শ্রাবণ ফিল্মটির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এই ছবিতে গৌতম ঘোষ (স্বনামধন্য চিত্রপরিচালক) একজন হাংরি আন্দোলনকারী কবির অনবদ্য আভিনয় করেছেন। মেইন স্ট্রিম বাংলা ফিল্মে ইতোপূর্বে হাংরি আন্দোলন নিয়ে কোনও কাজ হয়নি। ২০১১ বর্ষে হাংরি আন্দোলনের ৫০ বছর উপলক্ষে এই ফিল্মটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

(কয়েকটি বহুচর্চিত ইশতাহার)

‘কবিতা সম্পর্কিত প্রথম ইংরেজি ইশতাহার (নভেমবর ১৯৬১)’।
Poetry is no more a civilizing manoeuvre, a replanting of the bamboozled gardens; it is a holocaust, a violent and somnambulistic jazzing of the hymning five, a sowing of the tempestual hunger.

(কবিতা আর সভ্যতার কৌশল নয়, বাঁশের বাগানের প্রতিস্থাপন; এটি একটি সর্বনাশ, একটি হিংসাত্মক এবং নিদ্রাহীন জ্যাজিং ফাইভের স্তোত্র, একটি প্রচণ্ড ক্ষুধার বপন।)

Poetry is an activity of the narcissistic spirit. Naturally, we have discarded the blankety-blank school of modern poetry, the darling of the press, where poetry does not Resurrection itself in an orgasmic flow, but words come up bubbling in an artificial muddle. In the prosed-rhyme of those born-old half-literates, you must fail to find that scream of desperation of a thing wanting to be man, the man wanting to be spirit.

(কবিতা হল নার্সিসিস্টিক চেতনার একটি কার্যকলাপ। স্বাভাবিকভাবেই, আমরা আধুনিক কবিতার ফাঁকা-ফাঁকা স্কুলকে পরিত্যাগ করেছি, প্রেসের প্রিয়তম, যেখানে কবিতা একটি অর্গ্যাজমিক প্রবাহে পুনরুত্থান করে না, কিন্তু শব্দগুলি একটি কৃত্রিম গোলমালে বুদবুদ হয়ে আসে। সেই জন্মগত-পুরোনো অর্ধ-সাক্ষরদের গদ্য-ছন্দে, আপনি অবশ্যই মানুষ হতে চান এমন একটি জিনিসের হতাশার চিৎকার খুঁজে পেতে ব্যর্থ হবেন, যে মানুষটি আত্মা হতে চায়।)

Poetry of the younger generation too has died in the dressing room, as most of the younger prosed-rhyme writers, afraid of the satanism, the vomitous horror, the self-elected crucifixion of the artist that makes a man a poet, fled away to hide in the hairs.

(তরুণ প্রজন্মের কবিতাও ড্রেসিংরুমে মারা গেছে, কারণ বেশিরভাগ তরুণ গদ্য-ছড়া লেখক, শয়তানবাদের ভয়ে, বমি বিভীষিকা, শিল্পীর স্ব-নির্বাচিত ক্রুশবিদ্ধ হয়ে একজন মানুষকে কবি করে, পালিয়ে যায়। চুলে লুকিয়ে রাখে।)

Poetry from Achintya to Ananda and from Alokeranjan to Indraneel, has been cryptic, short-hand, cautiously glamourous, flattered by own sensitivity like a public school prodigy. Saturated with self-consciousness, poems have begun to appear from the tomb of logic or the bier of unsexed rhetoric.

(অচিন্ত্য থেকে আনন্দ এবং অলোকেরঞ্জন থেকে ইন্দ্রনীল পর্যন্ত কবিতাটি রহস্যময়, সংক্ষিপ্ত, সতর্কভাবে চটকদার, পাবলিক স্কুলের প্রডিজির মতো নিজস্ব সংবেদনশীলতায় চাটুকার। আত্ম-চেতনায় পরিপূর্ণ, কবিতাগুলি যুক্তির সমাধি বা অলিঙ্গিত অলঙ্কারশাস্ত্রের বিয়ার থেকে আবির্ভূত হতে শুরু করেছে।)

‘ কবিতা বিষয়ক প্রথম বাংলা ইশতাহার (নভেমবর ১৯৬১)’।
কবিতা এখন জীবনের বৈপরীত্যে আত্মস্থ। সে আর জীবনের সামঞ্জস্যকারক নয়, অতিপ্রজ অন্ধবল্মীক নয়, নিরলস যুক্তিগ্রন্থন নয়। এখন, এই সময়ে, অনিবার্য গভীরতার সন্ত্রস্তদৃক ক্ষুধায় মানবিক প্রয়োজন এমনভাবে আবির্ভূত যে, জীবনের কোনো অর্থ বের প্রয়োজন শেষ। এখন প্রয়োজন অনর্থ বের করা, প্রয়োজন মেরুবিপর্যয়, প্রয়োজন নৈরাত্মসিদ্ধি। প্রগুক্ত ক্ষুধা কেবল পৃথিবী বিরোধিতার নয়, তা মানবিক, দৈহিক এবং শারীরিক। এ ক্ষুধার একমাত্র লালনকর্তা কবিতা, কারণ কবিতা ব্যতীত কী আছে আর জীবনে। মানুষ, ঈশ্বর, গণতন্ত্র এবং বিজ্ঞান পরাজিত হয়ে গেছে। কবিতা এখন একমাত্র আশ্রয়।

কবিতা থাকা সত্ত্বেও, অসহ্য মানবজীবনের সমস্তপ্রকার অসম্বদ্ধতা। অন্তর জগতের নিষ্ঠুর বিদ্রোহে, অন্তরাত্মার নিদারুণ বিরক্তিতে, রক্তের প্রতিটি বিন্দুতে রচিত হয় কবিতা। উঃ, তবধ মানবজীবন কেনএমন নিষ্প্রভ। হয়তো, কবিতা এবং জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে যাঁরা অভ্যস্ত তাদের অপ্রয়োজনীয় অস্তিত্ব এই সঙ্কটের নিয়ন্ত্রক।

কবিতা বলে যাকে আমরা মনে করি, জীবনের থেকে মৌহমুক্তির প্রতি ভয়ংকর আকর্ষণের ফলাফল তা কেবল নয়। ফর্মের খঙাচায় বিশ্বপ্রকৃতির ফাঁদ পেতে রাখাকে আর কবিতা বলা হয় না। এমনকি প্রত্যাখ্যাত পৃথিবী থেকে পরিত্রাণের পথরূপেও কবিতার ব্যবহার এখন হাস্যকর। ইচ্ছে করে, সচেতনতায়, সম্পূর্ণরূপে আরণ্যকতারবর্বরতার মথ্যে মুক্ত কাব্যিক প্রজ্ঞার নিষ্ঠুরতার দাবির কাছে আত্মসমর্পণই কবিতা। সমস্ত প্রকার নিষিদ্ধতার মথ্যে তাই পাওয়া যাবে অন্তরজগতের গুপ্তধন। কেবল, কেবল কবিতা থাকবে আত্মায়।

ছন্দে গদ্য লেখার খেলাকে কবিতা নাম দিয়ে চালাবার খেলা এবার শেষ হওয়া প্রয়োজন। টেবলল্যাম্প ও সিগারেট জ্বালিয়ে, সেরিব্রাল কর্টেক্সে কলম ডুবিয়ে, কবিতা বানাবার কাল শেষ হয়ে গেছে। এখন কবিতা রচিত হয় অরগ্যাজমের মতো স্বতঃস্ফূর্তিতে। সেহেতু ত্রশ্নূ বলাৎকারের পরমুহূর্তে কিংবা বিষ খেয়ে অথবা জলে ডুবে ‘সচেতনভাবে বিহ্বল’ হলেই, এখন কবিতা সৃষ্টি সম্ভব। শিল্পের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কবিতা সৃষ্টির প্রথম শর্ত। শখ করে, ভেবে-ভেবে, ছন্দে গদ্য লেখা হয়তো সম্ভব, কিন্তূ কবিতা রচনা তেমন করে কোনো দিনই সম্ভব নয়। অর্থব্যঞ্জনাঘন হোক অথবা ধ্বনিপারম্পর্ষে শ্রুতিমধুর, বিক্ষুব্ধ প্রবল চঞ্চল অন্তরাত্মার ও বহিরাত্মার ক্ষুধা নিবৃত্তিরশক্তি না থাকলে, কবিতা সতীর মতো চরিত্রহীনা, প্রিয়তমার মতো যোনিহীনা, ঈশ্বরীর মতো অনুন্মেষিণী হয়ে যেতে পারে।

মুক্তি বিষয়ক ১৪-বিন্দু ইশতাহার (১৯৬২)
১.আমার সম্পূর্ণ অহং-এর খাঁটি আবিষ্কার। ২. কবিতা চলাকালীন আমাকে এবং আমার সমস্ত কিছুকে যতরকমভাবে পারা যায় উপস্হিত করা। ৩. কবিতায় আমাকেঠিক সেই মুহূর্তে আটক করে ফাঁস করা যখন আমি কোনো না কোনো কারণে ফেটে পড়েছি, আর আমার ভেতর দিকতা বেরিয়ে পড়েছে। ৪. নিজস্ব অহং দিয়ে প্রতিটি মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ, তারপর স্বিকার আধবা প্রত্যাখ্যান। ৫. সমস্তকিছুকে বস্তু মনে করে আরম্ভ, এবং প্রত্যেকটিকে নাড়িয়ে দেখে নেওয়া যে তা প্রাণবন্ত কি না। ৬. সামনে এসে পড়া ব্যাপারকে হুবহু গ্রহণ না করে তার প্রত্যেকটি দীক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখা। ৭. পদ্যছন্দ ও গদ্যছন্দ উভয়েরই অবলুপ্তি ঘটিয়ে একটা সহজসরল নিজস্ব শৈলীর ব্যবহার যা ধাঁ করে ঢুকে যাবে যাকে জানানো হচ্ছে তার মেজাজে। ৮. কথা বলার সময়ে যে ধরন, মাপ আর ওজনের শব্দ ব্যবহার করা হয়, কবিতাতেও অবিকল তাই। ৯. কথা বলার সময়ে শব্দের ভেতরে যে ধ্রণের ধ্বনি পুরে দেয়া হয়, কবিতাকে সেই ধ্বনিতে আরও চাঁচাছোলা করে উদ্‌ঘাটন করা। ১০. পাশাপাশি দুটি শব্দের এতাবতকালের আঁতাত ধাক্কা দিয়ে ভেঙে দেয়া এবং তদ্বারা অসবর্ণ ও অবৈধ শব্দ এবং বাক্য তৈরি। ১১. কবিতায় আজ পর্যন্ত ব্যবহৃত সমস্ত সাহায্য প্রত্যাখ্যান, আর বাইরের কোনো রকম ঘুষ না নিয়ে কবিতাকে নিজেই মৌলিক হতে দেয়া। ১২. কবিতাই মানুষের সর্বশেষ ধর্ম, সে ব্যপারটা খোলাখুলি স্বীকার করা। ১৩. তীরের মতো বয়ানে অতিষ্ঠ অস্তিত্ব, বিবমিষা, বিরাগ আগাগোড়া তীব্রভাবে জানানো। ১৪. অন্তিম প্রাতিস্বিকতা।

‘রাজনীতি বিষয়ক ইশতাহার (১৯৬৩)’
১.প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষের আত্মাকে রাজনীতিমুক্ত করা হবে। ২. প্রাতিস্বিক মানুষকে বোঝানো হবে যে অস্তিত্ব প্রাক-রাজনৈতিক। ৩. ইতিহাস দিয়ে বোঝানো হবে যে, রাজনীতি আহ্বান করে আঁস্তাকুড়ের মানুষকে, তার সেবার জন্যে টানে নান্দনিক ফালতুদের। ৪. এটা খোলসা করে দেয়া হবে যে গান্ধীর মৃত্যুর পর এলিট ও রাজনীতিকের মধ্যে তুলনা অসম্ভব। ৫. এই মতামত ঘোষণা করা হবে যে রাজনৈতিক তত্ব নামের সমস্ত বিদগ্ধ বলাৎকর্ম আসলে জঘন্য দায়িত্বহিনতা থেকে চাগিয়ে ওঠা মারাত্মক এবং মোহিনী জোচ্চুরি। ৬. বেশভার মৃতদেহ এবং গর্দভের লেজের মাঝামাঝি কোথাও সেই স্থানটা দেখিয়ে দেয়া হবে যেটা বর্তমান সমাজে একজন রাজনীতিকের। ৭. কখনও একজন রাজনীতিককে শ্রদ্ধা করা হবে না তা সে যেকোনো প্রজাতি বা অবয়বী হোক না কেন। ৮. কখনো রাজনীতি ধেকে পালানো হবে না এবং সেই সঙ্গে আমাদের কান্তি-অস্তিত্ব থেকে পালাতে দেয়া হবে না রাজনীতিকে। ৯. রাজনৈতিক বিশ্বাশের চেহারা পালটে দেয়া হবে।

(বিখ্যাত কয়েকটি হাংরি-বাস্তববাদী কবিতা)
[ ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল ]

উৎপলকুমার বসু রচিত ‘পোপের সমাধি’
মলয় রায়চৌধুরী রচিত ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’
শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘সীমান্ত প্রস্তাব’ ও ‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আবেদন’
বিনয় মজুমদার রচিত ‘একটি উজ্জ্বল মাছ’
ত্রিদিব মিত্র রচিত ‘হত্যাকাণ্ড’
সমীর রায়চৌধুরী রচিত ‘হনির জন্মদিন’
ফালগুনী রায় রচিত ‘মানুষের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই’ ও ‘নষ্ট আত্মার টেলিভিশন’
সুবোধ আচার্য রচিত ‘মড়ক’
প্রদীপ চৌধুরী রচিত ‘চৌষট্টি ভুতের খেয়া
শেলেশ্বর ঘোষ রচিত ‘ঘোড়ার সঙ্গে ভৌতিক কথাবার্তা’
শম্ভু রক্ষিত রচিত ‘আমি স্বেচ্ছাচারী’
দেবী রায় রচিত ‘উন্মাদ শহর’
সুবিমল বসাক রচিত ‘হাবিজাবি’
করুণানিধান মুখোপাধ্যায় রচিত ‘ক্ষুৎকাতর সানপাকু’
আলো মিত্র রচিত ‘মাতাল অনুভব’
বিকাশ সরকার রচিত ‘ভৎর্সনার পাণ্ডুলিপি’
অরণি বসু রচিত ‘ভূমিকা’
রাজা সরকার রচিত ‘কিছু কালো ফুল ও তার ক্ষত’
জীবতোষ দাশ রচিত ‘সুন্দর ভোর’
অরুণ বণিক রচিত ‘শারীরিক অভিযান’
অরুণেশ ঘোষ রচিত ‘একরাত্রির আকাশ’
নির্মল হালদার রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া’
অবনী ধর রচিত ‘ওয়ান শট’।

(বিখ্যাত কয়েকটি হাংরি-বাস্তববাদী গদ্য)
[ ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল ]

সুবিমল বসাক রচিত ‘ছাতামাথা’
সমীর রায়চৌধুরী রচিত ‘স্মৃতির হুলিয়া’ ও ‘প্রতুলের মা ওমলেট অবধি’
ফালগুনী রায় রচিত ‘কাঠের ফুল’
বাসুদেব দাশগুপ্ত রচিত ‘বমনরহস্য’
সুভাষ ঘোষ রচিত ‘আমার চাবি’

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বিজনের রক্তমাংস’।

[ তথ্যসূত্র – অন্তর্জাল ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *