সাইবারডগ
গদাধরবাবু পেশায় সাংবাদিক বাড়িতে একা থাকেন।কাজ সেরে রাতে বাড়িতে ফিরে দেখেন রোজ একটি কুকুর বাড়ির সদর আগলে ঘুমায়।সে ফিরে আসা মাত্র গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ে লেজ নেড়ে কুঁইকুঁই করে অনেক কিছু বোঝাতে চায় তাকে।
শুধু মুখে বলতে পারে না।গদাধর বাবু ওর গায়ে
হাত বুলিয়ে ভেতরে গিয়ে দুটো বিস্কুট এনে খেতে দিলে তা হজম করে সে চলে যায়।এভাবেই সে
তার বন্ধু হয়ে ওঠে। রাতে কোথায় থাকে কে জানে।সকাল হলেই আবার ঠিক তার বেরোনোর
সময় চলে আসে।গদাধরবাবু সকালেও তাকে
আদর করে বিস্কুট দিয়ে চলে যায়।যখনই কুকুরটার মাথায় হাত বোলায় মায়াভরা মুখটা যেন তার পায়ে নুয়ে পরে, সে যেন একটু আশ্রয় চায়।কুকুরটিকে ভালবেসে সে বাড়িতে আশ্রয় দেয়। কুকুরটিও পোষ মানিয়ে নিয়েছে তার সাথে। তারপর থেকে কুকুরের কাজ সেরে রেখে রোজ তার অফিসে যেতে দেরী হয়ে যায়।
অফিস থেকে ফোনে রোজই তাকে গালিগালাজ
শুনতে হয়।এর থেকে বাঁচার অন্য উপায় ভাবতে থাকে।
হঠাৎ এক গবেষণাগার থেকে একটি খবর প্রকাশের জন্য তার ডাক আসে।সেখান থেকে
জানায় চাঁদের ছায়াবৃত্ত অঞ্চলের বরফ আকারে জমে থাকা জলের ছবি তুলতে চন্দ্রযান পাঠায়।চন্দ্রযানটি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও একটি কুকুর নিয়ে সেখানে পৌঁছায়। কুকুরটি ছবি তুলতে পারেনি।জলে ভেজা শরীরে কুকুরটি ফিরে এসে প্রমাণ করে চাঁদে জলের অস্তিত্ব আছে।কুকুরটি
রক্তমাংসের ছিল না। এ ছিল রোবট কুকুর।
‘সাইবারডগ’ দেখতে কুকুরদের মতই । সারা দেহ ধাতুর তৈরি,মুখে থাকে সেন্সর। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন ইন্টার্যাক্টিভ ক্যামেরা এবং ফিশআই ক্যামেরাও লাগানো থাকে। কম্পিউটার ভিজন অ্যালগোরিদম লাগানো থাকায় সেন্সর ক্যামেরা দিয়ে সকল বাধা এড়িয়ে যেতে ওস্তাদ এই চারপেয়ে রোবট। রিমোট বা স্মার্ট ফোনের নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বিশেষ কাজও করে থাকে।
এই রোবট কুকুরের খবরটা প্রকাশ করতে হবে শুনেই আনন্দে লাফিয়ে ওঠে।তখনই মনে মনে
সে ঠিক করে একটা ‘সাইবারডগ’ কিনে ফেলবে।
এমন এক যন্ত্র কুকুর যে বাড়িময় তার সঙ্গে ঘুরতে পারবে।যাকে সময় দিতে হবেনা। যত্ন করতে হবেনা। সময় সময় খাবার দিতে হবেনা। পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবেনা।
বেড়াতে গেলে কুকুর কোথায় থাকবে সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে যাবে না। অথচ কুকুরের মতই এই রোবট কুকুর তার সাথে ঘুরবে।
সামনে কিছু পড়ে থাকলে তা নিজেই পাশ কাটাবে। বুঝে নেবে চেনা অচেনা মুখ। মনিবের বিভিন্ন আদেশ পালন করবে এই যন্ত্র কুকুর।সেকি
বলতে চায় তার প্রতিলিপিও দেখতে পাবে।
রোবট কুকুরের ওজন মাত্র ১৪ কিলোগ্রাম।সেই দিনের অপেক্ষায় যেদিন দুই চাকার রিক্সাটির সামনের দিকে থাকবে চার পায়ের রোবটকুকুরটি। তার পিঠের সঙ্গে রিক্সাটি বেঁধে দেওয়ার পর তারই নির্দেশনা অনুসারে তাকে দৌড়ে টেনে গন্তব্যে নিয়ে যাবে কুকুরটি।বৃদ্ধ বয়সে রোবট কুকুর তার
সেবাও করতে পারবে আশা করেন।বৃদ্ধের চিন্তায়
ব্যস্ত থাকবে রোবট কুকুর। সংঘর্ষ এবার বিভিন্ন
প্রজাতির রক্তমাংসের কুকুরের সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির রোবট কুকুরের সমাদরে।