শালিনী
আদালত কক্ষ ভিড়ে ঠাসা। আজ বিচারপতি শালিনীর করা অভিযোগের রায় দেবেন। এর মধ্যে বেশ কয়েক মাস অতিক্রান্ত। শালিনী যবে থেকে এই অভিযোগ দায়ের করেছে একের পর এক তারিখ পড়েছে আবার কখনো বিবাদী পক্ষের উকিলের অনুপস্থিতি কখনো বা বিবাদী পক্ষের উকিলের আদালত কক্ষে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া।
যখনই সওয়াল জবাব হয়েছে প্রতি ক্ষেত্রেই বিবাদী পক্ষের উকিল চেষ্টা করেছেন শালিনীকে ভুল প্রতিপন্ন করতে অথবা ওর চরিত্রে কালো দাগ ছেঁটাতে । কিন্তু শালিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে ধর্ষণ ও সচক্ষে দেখেছে তার শেষ দেখবেই।
আদালত কক্ষ ভিড়ে ঠাসা হবার আরেকটি কারন হলো ইতিমধ্যে খবরের কাগজের মাধ্যমে লোকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপারটা। শালিনীর হয়ে সওয়াল জবাব করছেন বর্তমানে পেশা নিবৃত্তি নিয়ে নেওয়া একসময়ের দুঁদে উকিল। যার নামে একসময় বাঘে গোরুতে একঘাটে জল খেতো।
শালিনী অভিযোগ দায়ের করা থেকে ওকে ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তখন প্রাণভয়ে ও বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে গিয়ে রাস্তায় ধাক্কা লাগে উকিলসাহেবের সাথে। উকিলসাহেব ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারলেন যে খুবই ভয় পেয়ে আছে মেয়েটি। উনি দয়াপরবশ হয়ে মেয়েটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে বসে উকিলসাহেব শালিনীর থেকে আদ্যোপান্ত জেনে নেন। ওকে যে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল সেটা জেনে নিজের ঘরেই রেখে দিলেন শালিনীকে।
উনি আদালত থেকে সমস্ত কাগজপত্র তুলে নিয়ে এলেন এবং সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে দেখে নিলেন। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন শালিনীকে জিতিয়ে বের করে নিয়ে আসবেন।
ওনার সওয়াল জবাবে একে একে সবাই স্বীকার করতে বাধ্য হলো নিজেদের দোষ। বিচারপতি চারজনকেই দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তারই রায়দান হবে এখন। উকিল সাহেব শালিনীর এই সাহসিকতার জন্য ওকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসতে শুরু করেছেন। এদিকে বাবা মা হারা শালিনীও উকিল সাহেবের স্নেহ পেয়ে উকিল সাহেবকেই নিজের বাবা ভাবতে শুরু করেছে।
এদিকে আদালত কক্ষ ভীড়ে পরিপূর্ণ। সবাই উৎসুক, কি হবে রায়দান। বিচারপতি আদালত কক্ষে ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। বিচারপতি সবাইকে চুপ করতে বলে বললেন “এই রায়দান করতে গিয়ে আমি গতকাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি।কি রায় হবে বা কিভাবে রায়দান করব।” একজন প্রতিবাদী মহিলা আর একজন অত্যাচারিত মহিলাকে সুবিচার পাইয়ে দিতে যেভাবে আদা জল খেয়ে উঠে পড়ে লেগেছে তাকে কুর্নিশ জানিয়ে সরাসরি রায়দান পর্বে চলে গেলেন। দুই পক্ষের উকিলকেই জিজ্ঞাসা করলেন আর কোন সওয়াল জবাবের প্রয়োজন আছে কিনা।
শালিনীর পক্ষের উকিলসাহেব শুধু বললেন “ধর্মাবতার আজ সকাল থেকে শালিনীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মনে হয় যারা ওকে হুমকি দিচ্ছিল এটা তাদেরই কাজ। ওকে অপহরণ করা হয়েছে। আর এখানে, যে অপরাধ এই চারজন করেছে তাদের কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হোক। এদের বয়স নয় দোষকেই একমাএ গুরুত্ব দেওয়া হোক। আর কিছুটা সময় রায়দান স্থগিত রাখুন, ধর্মাবতার যদি কোনোওমতে শালিনী এখানে চলে আসতে পারে তাহলে ও নিজেই রায়দানটা শুনতে পারতো।”
বিবাদী পক্ষের উকিল বললেন “ধর্মাবতার আর কতক্ষন অপেক্ষা করতে হবে। যদি শালিনী আজ না আসতে পারে তাহলে কি রায়দান হবে না আজ? “
বিচারপতি কিছুক্ষণ সময় নীরব থাকলেন। প্রায় ঘন্টাদেড় দুই কেটে যাবার পর আদালত চত্বরে ফিসফিস আওয়াজ হতে শুরু করলো। দেখা গেল মাথায় ব্যান্ডেজ জামাকাপড় অবিন্যস্ত সারাপায়ে মাটি মাখা ক্লান্ত বিধ্বস্ত শালিনী টলতে টলতে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেই অজ্ঞাণ হয়ে পড়লো। সাথে সাথে আদালতের তরফ থেকে শালিনীকে সেবাসুশ্রুষা করে সুস্থ করে তুলতেই ও বললো “স্যার ওরা সকালবেলায় আমাকে তুলে নিয়ে গেছিল যখন আমি পূজার ফুল তুলতে বাইরে বেরিয়েছিলাম। ওরা আমার সাথেও সেই একই ব্যাবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওখানে আসলাম ভাই হঠাৎ এসে আমার ইজ্জত বাঁচিয়ে নেয় এবং আমাকে এখানে নিয়ে আসে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ।”
বিচারপতি রায়দানকালে বললেন “যে গর্হিত কাজ এরা করেছে তার কোন ক্ষমা নেই। রায়দান করতে গিয়ে এদের চারজনকেই আমরণ সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করছি । এখন ভারতবর্ষে ফাঁসি রদ হয়ে গেছে না হলে জনসাধারণের সামনে এদের ফাঁসির আদেশ দিতাম। এর সাথে পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছি শালিনীর সাথে যারা এই কাজ করতে চেয়েছিল তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেওয়া হোক”।।