রুদ্রর খেলা
খুব ছোট থেকেই রুদ্র খেলতে ভালোবাসে। অবশ্য সবাই ভালবাসে, রুদ্রর মা ওর হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল সোদপুরের এ.সি.সি ক্লাবে। ওই ক্লাবের কর্ণধার ছিলেন ড. কুন্তল রায় এবং তার সহধর্মিনী শুভ্রা রায়। অনেক ছেলে-মেয়ে দূরদূরান্ত থেকে খেলতে আসত এই মাঠে। অভিভাবকরা বসে থাকতেন। ম্যাডাম ছিলেন সকলের প্রিয়। শিক্ষার সময় তিনি খুব কঠোর ছিলেন। তবুও বাচ্চারা তাকে অতিরিক্ত ভালোবাসতো। ওনার আরও গুণ ছিল, সমস্ত বাচ্চার পরিবার সম্বন্ধে জেনে নিতেন, প্রয়োজনে তাদেরকে সাহায্য করতেন। অ্যাথলেটিক ক্লাব ছিল। তাই হার্ডলস, লং জাম্প, হাই জাম্প, শট পাট, রান ও আরো কয়েকটি ইভেন্ট শেখানো হতো। সবাইকে সব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হতো। ছেলেমেয়েদের কী উৎসাহ। তারা মাঠে নেমেই warm-up ও অন্যান্য শরীরচর্চা সেরে ফেলত। ছোটরা খুব কথা শুনত বড় দাদা দিদিদের। রুদ্র মাঠে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠতো। রেল লাইন ক্রস করতে হতো, তাই রুদ্রকে একা ছাড়া যেত না। মায়ের হাত ধরে মাঠে যেত। কত সুন্দর খেলা গুলো শিখত। মাঝেমধ্যে ঝোলা প্র্যাকটিস করত। ওর মা বসে বসে হাসতো। দৌড়ে এসে সঙ্গে সঙ্গে জল খাওয়া নিষেধ ছিল। বাচ্চারা কত সুন্দর ম্যাডামের কথা শুনে চলত।একে একে প্রতিযোগিতা হল। সাব ডিভিশন_রুদ্র খুব ভালো খেললো, এরপর ডিস্ট্রিক্ট এর খেলা। সারাদিন উত্তেজনায় ছেলেকে নিয়ে ওর মা থাকতো। ম্যাডাম প্রতিটা খেলায় সঙ্গে থাকতেন। ওদের মনের জোর বাড়াতেন। তারপর এসে গেল স্টেট এর খেলা। মাঠ ভর্তি লোক, কত প্রতিযোগী। প্রত্যেকের মধ্যে এক প্রবল উৎসাহ। নিজেকে পুরোটা দেওয়ার একটা অদম্য ইচ্ছাশক্তি। কেউ কাউকে এক বিন্দু ছাড়তে রাজি নয়। টানটান উত্তেজনা। মায়েরা বসে রয়েছে নির্দিষ্ট জায়গায়। কখনো কখনো বয়স নিয়ে চলছে চিৎকার-চেঁচামেচি। বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে চলছে ওদের ঘোরাঘুরি। এরই মাঝে খেলা থেমে নেই। দৌড় দৌড় দৌড়। খেলার আগে ওয়ার্ম আপ। তারপর নিজেদের মধ্যে আলোচনা। বড়রা ছোটদের কিছু উপদেশ দিচ্ছে। তারপর যখন শুরু হলো খেলা, অল্পের জন্য রুদ্র ফোর্থ হল। মন ভেঙে গেল, কিছুক্ষণ কান্নাকাটি। রুদ্রর মা তাকে সাহস যোগাচ্ছিল। এইভাবে রুদ্ররা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলল। শুধু কোনি নয়, সমস্ত ঘরে ঘরে কোনিরা চেষ্টা করছে নিজেদের সবটুকুকে দিয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে। তবে সংসারের অভাব অনেক বেশি বাধার সৃষ্টি করে। এগিয়ে এসেও পিছিয়ে যেতে হয়। তবে ঈশ্বররূপী কিছু মানুষের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। যারা তাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। রুদ্র এভাবে অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছে। রুদ্রর মা খুব খুশি, খেলাধুলার মধ্যে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল রুদ্র। পড়াশোনাতে কোন ফাঁকি ছিল না। কেবল কষ্ট পেত, যখন পরিবারের কেউ কেউ খেলাধুলা টাকে মেনে নিতে পারত না। অংকে 100 পাওয়া কে ভালো ছেলের তকমা দিত। রোজ রুদ্রর মাকে যুদ্ধ করতে হতো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এটা ছাড়া আর কোন কষ্ট ছিলনা তার।