রাধুবাবুর বাড়ীর কাজ
চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর রাধানাথ সেন উরফে রাধুবাবু ধুবড়ি শহরের বিদ্যাপাড়ায় এসে বসবাস শুরু করেছেন। সারাটা জীবন কেটেছে ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিনপাড়ে গারোপাহাড়ের ফুলবাড়ী-ভাইটবাড়ী অঞ্চলে। প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ অবধি পদোন্নতি হয়েছিল। বিয়ে করেছিলেন বেশ বয়স করে। বাড়ির বড়ছেলে বলে দায়িত্ব ছিল অনেক। বোনের বিয়ে দেওয়া, ভাইদের পড়াশোনা করানো। অবসর নেওয়ার পর ছেলে সবে মাধ্যমিক পাশ করেছে। বাড়ী তৈরীর কাজটাও শেষ করে উঠতে পারেন নি।
বাজারে আসা-যাওয়ার পথে রাধুবাবু ইদানিং লক্ষ্য করছেন, এক মধ্যবয়স্ক ভবঘুরে টাইপের লোক মাথায় উষ্ক-খুষ্ক চুল, চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে বাজারের কালীমন্দিরের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। রাধুবাবুকে দেখতে পেলে এগিয়ে এসে আলাপ জমাতে চায়।
– কেমন আছেন, সেনমশায়? ঘরের কাজ কতদূর। তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলুন। রাধুবাবু মনে মনে খিস্তি দেন। তোমার এতো চিন্তা কেন বাপু? আমার কাজ আমি দেখে নেবো। কিন্তু কেন যেন মুখে কিছুই বলে উঠতে পারেন না। শুধু বলেন – এইতো শুরু করব এবার। জিনিসপত্রের যা দাম বেড়েছে। এমনিভাবে লোকটার সাথে প্রায়ই দেখা হতে থাকে রাধুবাবুর। কখনো সকাল, কখনো দুপুর, কখনো সন্ধ্যা। সেই একই প্রশ্ন। – ঘরের কাজ কতদূর এগোলো? লোকটার থেকে অব্যাহতি পেতে রাধুবাবু তাড়াতাড়ি পা চালাতে চালাতে উত্তর দেন – এই মাস খানেকের মধ্যে শুরু করে দেব।
সেদিন ঠিক সন্ধ্যে সন্ধ্যে হবে। বিদ্যাচরণের বাড়ীর ঠিক পাশের নেতাজিসংঘের ক্লাবঘরটার সামনে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যাচরণ উরফে বিধু রাধুবাবুর স্কুলের সহপাঠী। কমবয়সেই প্রেম করে বিয়েটা সেরে ফেলেছিল। স্থানীয় কাউন্সেলারের ডান হাত। ছেলের সদর বাজারে হোটেলের ব্যবসা। বেশ খাসা পেল্লাই একখানা বাড়ী বানিয়েছে। চোখে তাক লাগিয়ে দেয়। নাতি নাতনি নিয়ে খুব আনন্দেই আছে। মাস খানেক আগে নাতনীর ৫ম বার্ষিকী জন্মদিনে স্কুল বন্ধুদের ডেকেছিল। সবাই মিলে বেশ আনন্দ, খাওয়া-যাওয়া হলো। রাধুবাবু লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন – এখানে কি করছেন? লোকটি উত্তর দিল – বিধুবাবুর সাথে কাজ আছে। এখনোও সময় হয়নি। সন্ধ্যের পর যাবো। – ও! আচ্ছা। বলে রাধুবাবু ভাবতে লাগলেন। লোকটার বিধুর সাথে কি কাজ থাকতে পারে!
পরদিন সকাল সাতটা নাগাদ কাজের বকুলমাসী হাঁপাতে হাঁপাতে ড্রয়িংরুমের দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে বলল- শুনেছেন দাদাবাবু, গতকাল সন্ধ্যেয় বিধুবাবু গত হয়েছেন। ওনার ছেলে বলল, হার্ট এটাক। রাধুবাবুর সমস্ত শরীর যেন অবশ হতে শুরু করেছে। এ কি করে সম্ভব? লোকটির অদ্ভুত চোখদু’টি সামনে ভেসে উঠল। লোকটির কি কাজ ছিল বিধুর সাথে?
রাধুবাবুর শিরদাঁড়া দিয়ে যেন শীতল বরফ নেমে যাচ্ছে। লোকটাকে কেন বারবার মনে হচ্ছে। ‘ঘরের কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলুন’। কিসের ইঙ্গিত দেয় লোকটি বিধুবাবুকে । তবে কি…?