Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঞ্জিতাকে মনে রেখে || Shamsur Rahman

রঞ্জিতাকে মনে রেখে || Shamsur Rahman

রঞ্জিতা তোমার নাম, এতকাল পরেও কেমন
নির্ভুল মসৃণ মনে পড়ে যায় বেলা-অবেলায়।
রঞ্জিতা তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল কোনো কে
গ্রীষ্মের দুপুরে দীপ্র কবি সম্মেলনে
কলকাতায় ন’বছর আগে, মনে পড়ে?

সহজ সৌন্দর্যে তুমি এসে বসলে আমার পাশে।
কবি প্রসিদ্ধির
অমেয় ভাণ্ডার থেকে রত্নরাজি নিয়ে
আজ আর সাজাব না তোমাকে রঞ্জিতা। শুধু বলি,
তোমার চোখের মতো অমন সুন্দর চোখ কখনো দেখিনি। ‘বিচ্ছিরি গরম’
বলেই সুনীল খাতা দুলিয়ে আমাকে তুমি হাওয়া
দিতে শুরু করেছিলে, সেই হাওয়া একরাশ নক্ষত্রের মতো
মমতা ছড়িয়ে দ্যায়। যদি আমি রামেন্দ্র সুন্দর
ত্রিবেদী হতাম, তবে বলতাম হে মেয়ে ‘ইহাই বাঙালিত্ব’।

কিছুই বলেনি একালের কবি, শুধু মুগ্ধাবেশে
দেখেছে তোমার মধ্যে তন্বী গাছ, পালতোলা নৌকো,
পদ্মময় দীঘি আর শহরের নিবিড় উৎসব।
রঞ্জিতা সান্নিধ্য বড় বেশি মোহময় চিত্রকল্প তৈরি করে,
দেখায় স্বপ্নের গ্রীবা-বুঝি তাই আমিও ভেবেছি,
ক’দিনের সান্নিধ্যের সুরা পান করে,
একান্ত আমারই দিকে বয়েছিল তোমার গোলাপি হৃদয়ের
মদির নিঃশ্বাস আর সে বিশ্বাসে আমরা দু’জন
অপরাহ্নে পাশাপাশি হেঁটে গেছি কলেজ স্ট্রিটের
অলৌকিক ভিড়ে, ফুটপাথে ফুটেছিল মল্লিকা, টগর, জুঁই
তোমার হৃদয়ে উন্মীলিত
আমারই কবিতা আর চোখের পাতায় শতকের অস্তরাগ।
বঞ্জিতা আবার কবে দেখা হবে আমাদের কোন
বিকেল বেলার কনে-দেখা আলোর মায়ায়, কোন
সে কবি সভায় কিংবা ফুটপাতে?
রঞ্জিতা তোমাকে আমি ডেকেছি ব্যাকুল বারংবার

ডেকেছি আমার।
নিজস্ব বিবরে। এই চরাচরব্যাপী অসম্ভব হট্ররোলে
অসহায় আমার এ কণ্ঠস্বর কি যাবে না ডুবে?
কী করে আমরা ফের হবো মুখোমুখি
বিচ্ছন্নতাবোধের পাতালে?
ছদ্মবেশী নানাদেশী ঘাতকের খড়্গের ছায়ায়
কী করে আমরা চুমো খাব?
কী করে হাঁটব আণবিক আবর্জনাময় পথে?
ভীষণ গোলকধাঁধা রাজনীতি, আমরা হারিয়ে ফেলি পথ
বার বার, পড়ি খানাখন্দে, মতবাদের সাঁড়াশি
হঠাৎ উপড়ে ফেলে আমাদের প্রত্যেকের একেকটি চোখ। যে ভূখণ্ডে
রঞ্জিতা তোমার আদিবাস, তার মাৎস্যন্যায় দু’চোখের বিষ
এবং আমার মধ্যে নেই কোনো বশংবদ ছায়া।

হয়তো কখনো আর কলকাতায় যাব না এবং
তুমিও ঢাকায় আসবে না। তাহলে কোথায় বলো
দেখা হবে আমাদের পুনরায় অচেনা পথের কোন মোড়ে?
মস্কো কি পিকিং-এ নয়, ওয়াশিংটনেও নয়, ব্যাঙ্কক জাকার্তা
জেদ্দা কি ইস্তামবুল, হামবুর্গ, কোনোখানে নয়।
আমরা দু’জন
হয়তো মিলিত হবো নামগোত্রহীন
উজ্জ্বল রাজধানীতে কোনো, যাকে ডাকব আমরা
মানবতা বলে,
যেমন আনন্দে নবজাতককে ডাকে তার জনক-জননী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *