প্রতিদিন ভোরবেলার জন্যে কী তীব্র প্রতীক্ষা আমার।
কোনও কোনও মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে গেলে
কিছতেই ঘুম আসে না আর। বিছানায়
এপাশ ওপাশ করতে থাকি, যেমন ঢেউয়ে এদিক ওদিক
দুলতে থাকে নৌকা। বারবার
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই, আকাশ আলোর রেখা খুঁজি।
খুব ভোরে আমার ঘুম ভেঙে যায়, ভোরবেলার
প্রথম আলো শুধু আকাশে ফোটে না,
আমার মনেও ছড়িয়ে পড়ে ময়ূরের কলাপের মতো। নিজেকে
দেখতে পাই আকাশের রেশমি মেঘের
বিছানায় এবং তুমি আমার পাশে পেলব শুয়ে আছ,
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
কখন যে দু’জন মেঘলোকে সঙ্গমের মোহনায়
যুগ্মতায় লীন হয়ে যাই, বলতে পারব না।
তুমি নেই, অথচ তোমাকে প্রত্যহ ভোরবেলার প্রথম আলোয়
এভাবেই পেয়ে যাই, যেমন
কবিতার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যায়
রোদের ঝলক মেশা কুয়াশায় কখনও কখনও।
ভোরবেলার আলো দেখার জন্যে, পাখির
গান শোনার জন্যে, মেঘের শয্যায় তোমাকে নিবিড়
পাওয়ার জন্যে আমি অপেক্ষা করি পরম ব্যাকুলতায়।
এখনও যে রোজ সকালবেলার সঙ্গে
আমার দেখা হয়, এ তো পরম সৌভাগ্য
এই অভাজনের জন্যে। প্রত্যুষের জন্যে আমার এই প্রতীক্ষা
শেষ হবে হঠাৎ একদিন, যেদিন আমার রোগক্লিষ্ট শরীর
বিছানায় পড়ে থাকবে নিষ্পন্দ, নিষ্প্রাণ। সেদিনও
ভোরের আলো আমাকে দেখবে নৈর্ব্যক্তিক ভঙ্গিতে,
আমি ওকে, কাউকেই দেখব না, কিছুই দেখতে পারব না।