বড়দিনে আসে হলুদ পাখি
বড়দিনের বিশেষ আকর্ষণ ! জানেন কি ক্রিসমাস ট্রির সাজানোর পিছনে গল্পটা কী ?
ক্রিসমাস ট্রি সাজানো বড়দিনের একটি বিশেষ অঙ্গ, এই গাছেই বিভিন্ন রংয়ের আলোক সজ্জা আর বিভিন্ন দ্রব্যে সাজিয়ে রাখা হয়।মোমবাতি, পাখি, ফুল, ফল, স্বর্গদূত আর রঙবেরঙের কাগজ ও বাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়।
ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে যে গাছটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সেটি হল ফার গাছ। এটি মূলত দেবদারু জাতীয় গাছ।
ক্রিসমাস ট্রি’তে আলোর ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অর্নামেন্ট দিয়ে সাজানো হয়। এই গাছের ওপরে একটি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি বেথেলহেমে জন্ম নেয়া যিশুখ্রিস্টের প্রতীক।
বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো এবং উপহার দেওয়ার শুরু কীভাবে হয় তার কোনো লিখিত দলিল নেই। এ নিয়ে প্রচলিত আছে বিভিন্ন গল্প।
এমন একটি গল্প বলছে সাজানো গাছে এসে বসা পরিযায়ী হলুদ পাখি।
পাখি বলছে রোমের এক গরিব কাঠুরের ঘরে একদিন এক শীতার্ত শিশু হাজির হল। কাঠুরে দম্পতি ছিল যিশুভক্ত। তারা শিশুটিকে আদর করে খাওয়ালেন, নরম বিছানায় শুতে দিলেন। সকালে ওই শিশু দেবদূতের রূপ ধরে বলল, ‘আমিই যিশু’।
তাকে আদর-আপ্যায়ন করার জন্য কাঠুরে দম্পতিকে তিনি একটি গাছের ডাল দিলেন এবং তা মাটিতে পুঁতে রাখতে বললেন। এরপর ক্রিসমাসের দিন দেখা গেল ডালটি সোনালি আপেলে ভরে গেছে। তখন তারা এ গাছের নাম দেন ক্রিসমাস ট্রি।
একদিন এক গরিব শিশু কিছু পাইন গাছের চারার বিনিময়ে পয়সা দেওয়ার অনুরোধ করল এক গির্জার মালিকে। মালি গাছগুলো নিয়ে গির্জার পাশে পুঁতে রাখল।
ক্রিসমাসের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, গাছগুলো গির্জার চেয়েও বড় হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে অজস্র তারার আলো ঝরে পড়ছে। মালি তখন গাছগুলোর নাম দিল ক্রিসমাস ট্রি।
তবে এ নিয়ে যত গল্পই থাকুক না কেন, ক্রিসমাসে যতটা মজা হয়, তার অনেকটাই কিন্তু জুড়ে থাকে এই ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর পরেই গাছে এসে বসতে ভাল লাগে বলছে হলুদ পাখি। আমরা বাঁচতে চাই। হারিয়ে যেতে চাই না।
কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে ‘ইয়েলো ব্রেস্টেড বান্টিং’! বাঁচাতে তৎপর ‘অক্টোপিক’!
শীত এলেই শিলিগুড়ি সংলগ্ন এলাকায় টানা তিন থেকে চার মাস প্রচুর বিদেশী পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে l
কিন্তু অবহেলা এবং দূষণের জেরে ক্রমশ কমছে পরিযায়ীর সংখ্যা।
বিশেষ করে শহর লাগোয়া মহানন্দা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকা এবং মহানন্দার নদীর ধারে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের পাখি দেখতে পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে হলুদ পাখি একটি বিশেষ ধরনের পাখি। যার পোশাকি নাম হল “ইয়োলো ব্রেস্টেড বান্টিং”! আকারে অনেকটাই ছোটো। অনেকটা চড়ুই পাখির মতো দেখতে। গোটা বিশ্বেই ওই পাখিটি এখন অবলুপ্তির পথে।
সাধারণত ম্যাঙ্গোলিয়া, জাপান, রাশিয়ায় এদের দেখতে পাওয়া যায়।
শীতের সময়ে পরিযায়ী পাখির ঢল নেমে আসে।
আর শীতে ভিড় জমায় মহানন্দা ব্যারেজ সংলগ্ন পোড়াঝার গ্রামে। বর্তমানে এদের সংখ্যা বেশ কমেছে।
শিলিগুড়ির পরিবেশপ্রেমী সংস্থা অক্টোপিকের সদস্যরা এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখেছে মহানন্দা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকায় পোড়োঝাড়ে সেচ দফতরের জমিতে ঘাস, গুল্ম ও হোগলার জঙ্গল কেটে এবং পুড়িয়ে চাষাবাদের জমি তৈরি করা হচ্ছে। এই পাখিটি মূলত ঘাস ,গুল্ম হোগলার জঙ্গলে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু চাষের জমি তৈরির কারণেই তাদের থাকার জায়গার অভাব ঘটছে l
প্রতি বছর বড়দিনে এই পাখি পোড়োঝাড়ে আসে। সারা পৃথিবীতে এর সংখ্যা মাত্র হাজার দেড় থেকে দুয়েক। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির এই বিশেষ ধরনের পাখির সঠিকভাবে বসবাসের জায়গা অক্ষুন্ন রাখতে অক্টোপিকের পক্ষ থেকে এলাকায় সচেতনতা শিবির করা হয়। যাতে সম্পূর্ণরূপে পাখিরা বিলুপ্ত না হয়ে যায়।
দূষণের হাত থেকে এলাকাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে সকলকেই। তাহলেই আসবে পরিযায়ীরা। বাঁচবে “ইয়েলো ব্রেস্টেড বান্টিং” সহ অন্য পরিযায়ীরা। বাঁচবে পরিবেশ!