Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আবার এমারেল্ড টাওয়ার। এ বার আট তলা নয়, তিন তলায়। ভাদ্রের ভ্যাপসা দুপুর তখন সব গড়িয়ে গড়িয়ে বিকেলে পৌঁছেছে। ঘড়ির কাঁটায় পাক্কা একশো কুড়ি ডিগ্রি। বেশ কয়েক বার ফ্ল্যাটের বেল বাজাতে হল মিতিনকে। অবশেষে খুলেছে দুয়ার। এবং সামনে এক রূপবান তরুণ। বয়স তিরিশের আশেপাশে, টকটকে রং, খাড়া নাক, গাঢ় নীল চোখ, পেটা স্বাস্থ্য, উচ্চতা প্রায় ছ’ফুট। হঠাৎ দেখলে মনে হয়, যেন জীবন্ত গ্রিক ভাস্কর্য। পরনে লাল শর্টস, হাতাবিহীন হলুদ টি শার্ট। বুকে নকশা করে লেখা, আই অ্যাম হাংরি। হাতে ব্রেসলেটও আছে, এক কানে দুল।
এই নব্য যুবাটি তবে রণজয়? লাবণ্য দেবীর জামাতা? দরজার পাল্লায় একটা হাত রেখে দাঁড়িয়েছে রণজয়। মিতিনকে এক টুকরো মেয়ে পটানো হাসি উপহার দিয়ে বলল, ইয়েস প্লিজ? মিতিনের পরিচয় শুনেই অবশ্য নিবে গেছে হাসিটা। চোখ পলকে সরু, ও, আপনিই সে দিন ওপরে গিয়েছিলেন? রুমকির মা আপনার কাছেই…?
— হ্যাঁ। আজ দুপুরে ফোনে রুমকির সঙ্গে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়েছে। রুমকি আমাকে এখানে আসতে বলেছেন।
— কিন্তু রুমকি তো এখনও ফেরেনি।
— আমি বোধহয় একটু আর্লি পৌঁছে গেছি। মিতিনের ঠোঁটে আলগা হাসি, ভেতরে একটু ওয়েট করতে পারি?
সামান্য দোনামোনা করে রণজয় পথ ছেড়ে দিল। মিতিন পায়ে পায়ে ঢুকেছে অন্দরে। আট তলার মতো প্রকাণ্ড না হলেও লিভিংরুমখানা নেহাত ছোট নয়। সাজসজ্জা বাহুল্যবিহীন। ছিমছাম। তবে সোফায়, আর পর্দার রঙে, টিভি ক্যাবিনেটে সাজানো সুন্দর সুন্দর শো পিস, ল্যাম্পশেডে, রুচির ছাপ স্পষ্ট।
রণজয় খানিক তফাতে দাঁড়িয়ে। জুলজুল চোখে দেখছিল সোফায় বসা আগন্তুককে। মিতিন হেসে বলল, আমি বুঝি আপনাকে ডিসটার্ব করলাম? রুমকি বলছিলেন আপনার নাকি বাড়িতেই অফিস?
মুখভঙ্গি করে রণজয় বলল, তা হলে নিশ্চয়ই এটাও বলেছে, আমার কাজটা কী?
— অন লাইন শেয়ার ট্রেডিং?
— ইয়েস। ঠিক চারটেয় মার্কেট ক্লোজ হয়। এই সময়টায় আমি সত্যিই ব্যস্ত থাকি।
— তা চারটে তো বেজে গেছে, এই মুহূর্তে নিশ্চয়ই তেমন কাজ নেই?
— উঁহু, আছে। সারা দিনে স্টক ওঠা পড়ার হালচালটা এই সময়েই স্টাডি করি। ডেলি প্রফিট লসের হিসেবটা কষতে হয়।
— সে এক দিন না হয় পরেই করলেন। বসুন না, একটু গল্প করি।
— বুঝেছি। রণজয়ের ঠোঁটে ধূর্ত হাসি, আমায় ক্রস করতে চাইছেন।
— বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনাও বলতে পারেন। মিতিন রণজয়ের চোখে চোখ রাখল, একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর আপনাকে দিতে পারি।
— কী?
— লাবণ্য দেবীকে বিষ খাইয়ে মারা হয়েছে।
— খাইয়ে? রণজয় ধপ করে বসে পড়ল, কী করে জানলেন?
— পুলিশ রিপোর্ট। হুইস্কিতে আর্সেনিক ছিল।
— ইজ ইট? রণজয়ের মুখ ফ্যাকাসে, ষ্ট্রেঞ্জ, ভেরি ষ্ট্রেঞ্জ!
— ষ্ট্রেঞ্জ বলছেন কেন?
— কে মেশাবে বিষ? কখন মেশাবে?
— কেন, দুপুর দুটোর পর থেকে তো উনি একাই ছিলেন। যে কেউ গিয়ে ওই কাজটি করতে পারে। মিতিন মুখ টিপে হাসল, পুলিশ তো কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না, সন্দেহের তির আপনার দিকেও আসতে পারে।
— কি-কি-কিন্তু আমি তো সারা ক্ষণ এই ফ্ল্যাটেই ছিলাম।
— প্রমাণ করতে পারবেন তো?
— অফ কোর্স। রুমকি সাক্ষী। রণজয় যেন ঈষৎ উত্তেজিত, রুমকি আমায় চারটেয় ফোন করেছিল। দশ মিনিট পর তার সঙ্গে আবার আমার কথা হল…
— মোবাইলে? না ল্যাণ্ডলাইনে?
— প্রথম বার মোবাইল। নেক্সট টাইম ল্যাণ্ডলাইনে। ওর কাছে একটা লোক আসার কথা ছিল। ইনসিয়োরেন্সের এজেন্ট। আমাকে বসাতে বলেছিল। সে বোধহয় এল সাড়ে চারটের আগে। তার সঙ্গে বসে কথা বলছি, রুমকি ফিরল স্কুল থেকে।
— আর দুটো থেকে চারটে?
— আশ্চর্য, আমি তো জানি না উনি সে দিন মারা যাবেন! তা হলে নয় পাঁচটা বন্ধুকে ডেকে সারা দিন বাড়িতে বসিয়ে রাখতাম। রণজয়ের সুন্দর মুখখানা কেমন বিকৃত দেখাল। দু’হাত ঝাঁকিয়ে বলল, তা ছাড়া উনি তো মারা গেছেন পাঁচটা, সাড়ে পাঁচটায়। তখন তো আমি, রুমকি, ইনসিওরেন্সের লোকটা, সবাই এ ঘরে।
— বটেই তো। বটেই তো। মিতিনের স্বর শান্ত, আসলে আপনি কাছাকাছি থাকেন বলেই প্রশ্নটা মাথায় এল।
— কাছাকাছি মানে? রণজয় দপ করে জ্বলে উঠেছে, হোয়াট ডু ইউ মিন?
— আহা, এক্সাইটেড হচ্ছেন কেন? আপনারা সেম প্রেমিসেসের বাসিন্দা, নিশ্চয়ই ওপরতলায় আপনার যাতায়াতও আছে…
— তো? দুপুরে কাজকর্ম ফেলে আমি তার ঘরে বসে ড্রিংক করব?
— আমি তো বলিনি আপনি ড্রিংক করছিলেন। জাস্ট একটা সম্ভাবনা…
— কীসের সম্ভাবনা? আমি গ্লাসে বিষ মিশিয়েছি? কেন, লাবণ্য মজুমদার মারা গেলে আমার কী লাভ?
— সরি। আমি কিন্তু আপনাকে হার্ট করতে চাইনি।
রণজয় তবু গজগজ করছে, কাছাকাছি তো অনেকেই থাকে। রুমকির বাবা, মালতীদেরই বা বাদ দিচ্ছেন কেন? লাবণ্য মজুমদার তো স্লো পয়জনিংয়ের ব্যাপারে হাজব্যাণ্ডকেই সন্দেহ করতেন।
— ডোন্ট ওরি, আমাদের সবই স্মরণে আছে। তবে পুলিশ ডিটেকটিভদের কাছে সকলেই সাসপেক্ট। আমাদের নজরটাই বাঁকা কিনা। মিতিন ফের হাসল, যাকগে ও সব কথা। এ বার সত্যি সত্যিই গল্প করি। আপনি এক্সাইটমেন্ট খুব ভালবাসেন, তাই না?
— এমন অনুমানের কারণ?
— আপনার শেয়ার মার্কেটে ইন্টারেস্ট দেখে মনে হল।
— ভুলে যাচ্ছেন, এটাই আমার রুটিরুজি।
— হয় ভাল রোজগারপাতি? শুনেছি এতে ভীষণ রিস্ক? দু’টাকা এলে দশ টাকা বেরিয়ে যায়?
— টাকা তো আসা যাওয়ার জন্যই। হু কেয়ারস।
কথার মাঝেই রুমকি এসে পড়েছে। লাবণ্যর সঙ্গে মিল নেই মেয়ের, চেহারাটা বরং বাবা ঘেঁষা। টেনেটুনে সুশ্রী বলা যায়। বছর পঁচিশেকের ছোট্টখাট্টো রুমকির পোশাক আশাক, হাবভাব, সবই লাবণ্যর বিপরীত। চোখেমুখে বিষণ্ণতার আভাস। সদ্য মা হারিয়েছে বলে কি? না কি রুমকি এ রকমই?
একটু যেন নিস্তেজ গলাতেই রুমকি জিজ্ঞেস করল, অনেক ক্ষণ এসেছেন?
— এই তো মিনিট কুড়ি পঁচিশ। মিতিন ভদ্রতা করে হাসল, আপনার হাজব্যাণ্ডের সঙ্গে গল্পগুজব করছিলাম।
— চা খাবেন?
— নো, থ্যাংকস। লালবাজারে ডিসি ডিডির সঙ্গে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, এখানকার কাজ সেরে চটপট বেরোতে হবে।
— ও। রুমকি কাঁধের ঝোলা ব্যাগ টেবিলে রেখেছে। তাপহীন স্বরে রণজয়কে বলল, যদি চাও… এ বার তোমার কাজে যেতে পারো।
— হুঁ। যাই।
খানিকটা যেন অন্যমনস্ক মুখে উঠে গেল রণজয়। তেরচা চোখে তার যাওয়াটা দেখে নিয়ে মিতিন বলল, আপনার হাজব্যাণ্ড মানুষটা কিন্তু বেশ। ঝাপসা ভাবে হাসল রুমকি। অস্ফুটে বলল, থ্যাংকস।
— আপনাদের কি লাভ ম্যারেজ?
— পুরোপুরি নয়। রুমকি সামান্য থেমে থেকে বলল, একটা লেডিজ ক্লাবের ফাংশনে মা আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। তার পর রণজয়ের বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু হল… নিজেই এক দিন বিয়ের কথা তুলল…
— আপনিও নিশ্চয়ই এক কথায় রাজি?
রুমকির ঠোঁটে আবার একটা আবছা হাসি, মাও খুব চেয়েছিল আমাদের বিয়েটা হোক।
— বাহ্‌, বেশ। মিতিন সোজা হল, তা আপনার মার পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম তো সব মিটে গেছে। তাই না?
— হ্যাঁ। অপঘাতে মৃত্যু… তিন দিনে কাজ…
— অপঘাতের নেচারটা তো তখন ফোনে বললামই। পুলিশের সন্দেহটাও।
— আমি কিন্তু এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। রুমকির গলায় যেন কান্না, কে এই কাজ করল বলুন তো? কেন করল?
— সে প্রশ্ন তো আমাদেরও। …আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?
— কাকে সন্দেহ করব?
— কোনও আত্মীয়স্বজন? বন্ধুবান্ধব?
— আত্মীয়দের সঙ্গে আমাদের তেমন যোগাযোগ নেই। একমাত্র মামাই যা আসে কালেভদ্রে। মার বন্ধুরাও তো বাড়িতে আসত না বিশেষ। তাদের সঙ্গে মার দেখাসাক্ষাৎ তো সব বাইরে বাইরে। কখনও যদি মা বাড়িতে পার্টি টাটি দিল তো…
— ওই দিন তো সে রকম কিছু ছিল না! অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় তাদের কেউ আসেনি?
— বটেই তো। এলে তো মালতীর কাছে শুনতাম।
— কিন্তু মালতী তো দুটোয় চলে গেছে। তার পর যদি কেউ…
— সেটা হতে পারে। …দুটো হুইস্কির গ্লাসও তো পাওয়া গেছে।
— এই দ্বিতীয় ব্যক্তিটি কে? যার সঙ্গে বসে আপনার মা ড্রিংক করছিলেন?
— সরি। বলতে পারব না।
— আপনি নিশ্চয়ই জানতেন লাবণ্যদেবী স্লো পয়জনিংয়ের আতঙ্কে ভুগছিলেন?
— জানি। ওটা মার এক ধরনের মেন্টাল ফিক্সেশান ছিল।
— তিনি কিন্তু বিশেষ এক জনকে সন্দেহও করতেন।
— বাবাকে তো? রুমকি হঠাৎই অসহিষ্ণু ভাবে মাথা ঝাঁকাল, অসম্ভব। একেবারেই ভিত্তিহীন ধারণা।
— লাবণ্যদেবী কিন্তু আমায় বলেছিলেন হাজব্যাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মোটেই ভাল ছিল না।
— মা কী বলেছে জানি না, তবে… বাবা মাকে ভীষণ ভালবাসত। নইলে আঠাশ বছর মার সঙ্গে ঘর করতে পারত না। জোরের সঙ্গে বলতে পারি, মার মৃত্যুকামনা করা বাবার পক্ষে অসম্ভব।
— হুম। মিতিন নড়ে বসল, আচ্ছা, ঘটনার দিন কি লাবণ্য দেবীর সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?
— প্রায় রোজই স্কুল বেরোনোর আগে এক বার ওপরে ঘুরে যাই। সে-দিনও গিয়েছিলাম।
— তখনও তো অনিমেষবাবু ফেরেননি, তাই না?
— বাবা বোধহয় এগারোটা নাগাদ এসেছিল। দুপুরে মাকে ফোন করেছিলাম, তখনই শুনি।
— দুপুরে? ক’টায়?
— স্কুলের টিফিনটাইমে। ধরুন পৌনে দুটো।
— রোজই বুঝি দুপুরে ফোন করতেন?
— না। মাঝে মাঝে। তবে শুক্রবারটা করতামই। মালতী দুপুরে চলে যায় তো, তাই…
— সে দিন মালতী তখনও ছিল?
— হ্যাঁ। মা বলল, এ বার বেরোবে।
— ও। …তা বিকেলে তো আর মার কাছে যাননি? একেবারে সন্ধেবেলায়…
— মালতীর ডাক পেয়ে। গিয়ে মার হাতটা ধরতেই ঝটকা খেয়ে গেলাম। দেখি একদম ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
— এবং তক্ষুনি আপনারা ফোন টোন শুরু করলেন?
— হ্যাঁ। আমার ফোন পেয়েই বাবা এসে গেল। তার পরে পরেই ডাক্তারবাবু।
— অনিমেষবাবু নিশ্চয়ই খুব ভেঙে পড়েছিলেন?
— এ কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! এলই তো প্রায় উদভ্রান্তের মতো। ছুটতে ছুটতে বোধহয় দশ বারো মিনিটের মধ্যেই।
— তাই? মিতিনের দৃষ্টি পলকের জন্য তীক্ষ্ণ। পলকে গলা স্বাভাবিক করেছে। সহজ সুরে বলল, ওকে। আপাতত আর কিছু জানার নেই। …মালতীকে এখন নিশ্চয়ই ওপরে পাব? রুমকি অস্ফুটে বলল, এখন ওপরেও যাবেন?
— যাই এক বার। দু’একটা ছোটখাটো ব্যাপার জানার আছে।
মিতিন উঠে দরজার দিকে এগোল। দুঃখী দুঃখী মুখে রুমকি আসছে পিছন পিছন। হঠাৎই নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে উঠল, ম্যাডাম, খুনি ধরা পড়বে তো?
— চেষ্টা তো করছি।
— আচ্ছা, যে গ্লাস দুটো পুলিশ নিয়ে গেছে, তাতে কারও হাতের ছাপ…? মানে ও-সব দিয়েও তো ধরা যায়।
ঘাড় ঘুরিয়ে মিতিন ঝলক দেখল রুমকিকে। হেসে বলল, হ্যাঁ, তা তো যায়ই। পুলিশ সবই দেখবে। বলেই মিতিন সোজা করিডোরে। তার পর লিফ্‌ট ধরে সটান আট তলায়।
ফাঁকা ফ্ল্যাটে টিভি দেখছিল মালতী। মিতিনকে দেখে বেশ চমকেছে। অবাক মুখে বলল, দিদি আপনি? আবার?
— তোমার রুমকিদিদির কাছে এসেছিলাম। ভাবলাম তোমার সঙ্গেও একটু দেখা করে যাই।
— বসুন।
— না মালতী, বসার সময় নেই। মিতিন মালতীর কাঁধে হাত রাখল, তোমায় শুধু একটা কথা জানানোর ছিল।
— কী দিদি?
— তোমার মামি কিন্তু আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে খুন করা হয়েছে।
— অ্যাঁ? মালতী প্রায় আঁতকে উঠেছে, কে মারল?
— এমন এক জন, যে তুমি না থাকার সময়ে এসেছিল। মিতিনের স্বর শীতল, অবশ্য তুমিও যে দুপুরবেলা ফ্ল্যাটে ছিল না, তার কিন্তু কোনও প্রমাণ নেই।
— কী বলছেন দিদি? মালতীর মুখ সাদা হয়ে গেল, বিশ্বাস করুন, আমি ঠিক দুটোয় বেরিয়েছি।
— সে তোমার পঞ্চাননতলায় খোঁজ নিলেই জানা যাবে।
— আপনি আমার বাড়িতে যাবেন নাকি?
— পুলিশ যাবে। তারা তো সব কিছু ভাল করে বুঝে নেবে।
— তাই? মালতী ঝপ করে মিতিনের হাত চেপে ধরেছে, আমাকে বাঁচান দিদি। …আ-আ-আমি সে দিন বাড়ি যাইনি।
— তার মানে ফ্ল্যাটেই ছিলে?
— নাআআ। আমি সে দিন সিনেমায় গিয়েছিলাম। দিলীপের সঙ্গে।
— কে দিলীপ?
— ইলেকট্রিকের কাজ করে। এ পাড়ায় দোকান আছে।
— হুম। ধরে নিলাম তুমি সত্যি বলছ। মালতীকে আপদমস্তক জরিপ করে নিয়ে মিতিন ফের বলল, কিন্তু পুলিশ তো ছাড়বে না। তোমার কাছেই জানতে চাইবে, দুপুর বিকেলে কেউ ফ্ল্যাটে আসত কি না, সে দিনই বা কে এসে থাকতে পারে, তোমার সঙ্গে তার কোনও যোগসাজশ ছিল কি না…
— মা কালীর দিব্যি, আমি ও সবে নেই। কিচ্ছু জানি না।
— তা বললে চলবে! তুমি রাতদিনের লোক…
— বিশ্বাস করুন দিদি, এমনি দিনে কেউ দুপুরে আসত না। বেশির ভাগ দিন মামিই তো বাইরে বাইরে। তবে শুক্কুুরবার…
— থেমে গেলে যে বড়?
— না মানে…। মালতী ঢোঁক গিলল, সে দিন তো আমি থাকি না, বলব কেমন করে কী হত!
পরিষ্কার বোঝা যায়, মালতী কিছু গোপন করার চেষ্টা করছে। কাকে আড়াল দিতে চায়? মিতিন অবশ্য চাপাচাপিতে গেল না আর। ভূতলে নেমে ঢুকেছে সিকিউরিটির কুঠুরিতে। ব্যাগ থেকে পরিচয়পত্র বার করে দিয়ে বলল, একটা জরুরি খবর দরকার।
সবুজ উর্দি নিরাপত্তারক্ষীটি ঈষৎ তটস্থ, বলুন?
— গত শুক্রবার আটশো চার নম্বর ফ্ল্যাটে কে কে এসেছিল? দুপুর দুটো থেকে চারটের মধ্যে?
— কেউ আসেনি। শুধু কাজের মেয়েটা বাইরে গিয়েছিল। তখন বোধহয় দুটো বাজে। তার পর তো সন্ধেবেলা ফিরে দেখে…
— মাঝে মেয়েটা একবারও আসেনি?
— না ম্যাডাম। এলে চোখে পড়ত।
— ওদের বাড়ির আর সবাই? অনিমেষবাবু? তাঁর মেয়ে? জামাই? তারা কে কখন…?
— দিদিমণি তো বিকেলে স্কুল থেকে এলেন। যেমন আসেন। দাদা বেরোয়নি। বলতে বলতে যুবকটির কপালে ভাঁজ, হ্যাঁ, অনিমেষ স্যর চলে গিয়েও এক বার ফিরে এলেন।
— তাই? কখন?
— টাইমটা নিখুঁত মনে নেই ম্যাডাম। এখানকার বাসিন্দাদের ঢোকা বেরোনো তো অত খেয়াল করি না…। তবে অনিমেষ স্যর একটু পরেই আবার বেরিয়ে গিয়েছিলেন। গাড়ি ছাড়াই। হেঁটে হেঁটে। এত ক্ষণে মিতিনের সামনে যেন আলোর আভাস। হিসেব বোধহয় এ বার মিলবে আস্তে আস্তে।

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *