Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিন্দু বিন্দু || Sunil Gangopadhyay

বিন্দু বিন্দু || Sunil Gangopadhyay

পাথর
এক যে ছিল পাথর, তাকে হঠাৎ কারা
বানিয়ে দিল দেবতা
পাথরটি তা চেয়েছিল কি চায়নি, কেউ
কখনো ভাবে সে কথা?

গুরু-শিষ্য
গুরু অ্যারিস্টটল, তাঁর পিঠে চেপেছে ছাত্র
গুরুর বয়েস অনেক, ছাত্র বছর দশেক মাত্র।
গুরু হলেন ঘোড়া, ছাত্ৰ ছপটি মারছে বারবার
বিশ্বজয়ে যাবেই যাবে, নামটি আলেকজান্ডার।
পণ্ডিতে বই লিখছে শুধু, লাগে কলম-কাগজ
রক্ত ছড়ায় ছাত্রের দল, লাগে না কোনো মগজ!

সত্য
সত্য কাকে বলে?
হস্তী দর্শনের মতো কত ব্যাখ্যা নানান ছলেবলে
হস্তী আসলে কী?
গুলি চালাও, ছবিতে রাখো, জ্যান্তটাই মেকি!

নারী-স্বাধীনতা
এমনও তো হতে পারে, মেয়েরা বলতেই পারে
কিছুতেই ছেলেদের করব না বিয়ে!
অজাত শিশুরা সব বিমান ও রেলপথ
গাড়ি-ঘোড়া, রাস্তাঘাট দেবে আটকিয়ে?

এখন
রাখালরা আর বাজায় না বাঁশি
রাজপুতরাও চালায় না অসি
বাঘ গর্জায় চিড়িয়াখানায়
ভূতেরা এখন সিনেমা বানায়।

ভালোবাসা
ভালোবাসায় আছে একটা অতি গোপন আলো
কেউ দেখে না সেটা, কিংবা কেউ বা দেখে কালো
ভালোবাসার অন্ধকারেও জ্বলে সবুজ শিখা
কেউ পেয়ে যায় পথের দিশা, কেউ বা মরীচিকা।

প্রজাপতি
শ্রম ছাড়া ধনরত্নের স্বাদ পাবার উপায় কিছু নেই আর
গরিব কবিরা খাটো, খাটো, খুব শরীর ঘামাও কাজে দাও মতি
এই কথা লিখে গিয়েছেন কবি, মহান ফরাসি আপোলিনেয়ার
কত কবি মুখে রক্ত তুলছে, গুটিপোকা থেকে হবে প্রজাপতি।

কলম
কলম বলল, অনেক দিন তো থাকতে হল
অন্য হাতের অধীন
এবার নিজেই রচনার কথা ভাবব।
হাতটি বলল, ভালোই তো ভাই, খাটতে খাটতে
হয়েছি বিষম ক্লান্ত
স্বাধীন ভাবেই লেখো না অমর কাব্য!

কুমির
কুমিরেরা সত্যি যদি লোপ পায় নদী-খালে-বিলে
তাদের কান্নার কথা থাকবে না আর অভিধানে?
খরা ও বন্যায়, ভোটে, মন্দিরে-মসজিদে রক্ত ক্ষয়ে
কুম্ভীরাশ্রু বয়ে যাবে তবু জোয়ারের হু হু টানে।

কবিতা-গদ্য
একটা কবিতা কবুতর হয়ে রয়েছে বুকের মধ্যে
তবু মেঘহীন সন্ধ্যায় কবি ঝড়-ঝঞ্ঝাটে আটকা
কাজ-অকাজের দুখানা কেল্লা গোলাগুলি ছোড়ে গদ্যে
কে জেতে কে হারে, ভুরুসন্ধিতে এই নিয়ে চলে ফাটকা!

দীর্ঘশ্বাস
পেয়ারা গাছের ডালে দোল খায় কৈশোরের স্বপ্নময় ছবি
জলের আয়নায় স্বর্ণ ভোরবেলা মাধুর্যের কণাগুলি ঝলসে ওঠে গুপ্ত ইশারায়
আলোকলতার মূল খোঁজে এক দার্শনিক, হেসে ওঠে অবিশ্বাসী কবি
আকাশের দেবতারা লোভীর মতন দেখে, কত দীর্ঘশ্বাস উড়ে যায়।

মাতৃভাষা
ঘুটে কুড়ুনির ছেলেটি দিব্যি পড়তে শিখেছে বই
গড়গড় করে ছড়াও সে বলে খাসা
মাকে সে শুধোয়, জননী বানান দীর্ঘ-ই নাকি হ্রস্ব-ই
হায়রে কত না মায়েরা শেখে না মাতৃভাষা!

স্বাধীনতা
দেশটা হয়েছে স্বাধীন, এবার পূর্ণ অর্ধ শতক
তবু মনে মনে রয়ে গেছে এক ধন্ধ
কত হল সেতু, বাঁধ, কারখানা, আকাশচুম্বী সৌধ
শুধু ফুল থেকে চলে গেল কেন গন্ধ?

অমরত্ব
জানতেন কি রাজা অশোক ইতিহাসে তাঁর নাম থাকবে
ঠিক ক পাতায় চিরকালের স্বত্ব?
শাজাহান কি তাজমহলটা বানিয়ে ছিলেন পাঠ্যবইয়ের
ছবির লোভে, তাতেই অমরত্ব?
তবু তাঁদের কীর্তি গরিমা যুগ যুগ সঞ্চিত
কত তলোয়ার ঘোরানো বীরেরা রয়ে গেল বঞ্চিত!

বনভোজন
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে কেউ না
কী করে পশুরা জেনে গেল সেটা, হি হি করে হাসে হায়েনা।
মানুষের হাতে ভিক্ষের ঝুলি, মানুষের হাতে অস্ত্র
কেউ হাঁক ডাকে গগন কাঁপায়, কেউ ভয়ে গলবস্ত্র।
জন্তুরা এই গল্পে মেতেছে, পাখিরাও মাতে কূজনে
ভারী কৌতুকে মিলেছে সবাই, বসে গেছে বনভোজনে।

পরিত্যক্ত
সাহেবরা গেছে, রেখে গেছে কিছু
থুতু ও গয়ের, শ্লেষ্মা
তৈরি হয়েছে নকল নবীশ
স-টাই, বাঁদর, বেশ্যা!

হরি, হরি
সাপটি বলল, ওহে ব্যাঙ ভায়া, যথেষ্ট হল খেলা
এবারের মতো জপ করো হরিনাম
ব্যাঙটি বলল, হরি তো নিজেই দূরদর্শনে আটক
কী আর করব, পুরাও মনস্কাম!

মা ও মাটি
মায়ের কথা শুনতে গেলাম ধানের ক্ষেতে, বিদ্যুৎ চমকাল
মা-মাটি সব পিতৃহীনের মতন মিশকালো
রক্ত দিলাম স্বাধীনতার জন্য, সেই রক্তে ছিল জল
অন্ন নেই, ভোটের কাগজ, কাগজই সম্বল!

খাওয়া-দাওয়া
একটা সময় পাথর চিবিয়ে খেতুম, কিংবা লোহা
বললেন এক অম্বুলে রুগি হাত পা ছড়িয়ে চাতালে
আজকেও যারা পাথর মিশিয়ে আঙুল ফুলিয়ে কলাগাছ
তারাও যখন তখন ছুটছে, পেট রোগা, হাসপাতালে।

কেউ জানে না
দেশ হয়েছে স্বাধীন
একটা, দুটো, তিন পেয়ালা চা দিন।
বোমা ফাটাল ফুটুস মোটে পাঁচটা
ফিকফিকিয়ে হাসে অশোক গাছটা।
দেশ বিদেশে কত কি লোকে ভাববে
কেউ জানে না কী লেখা হল উপন্যাসে, কাব্যে।

নদী ও খাল
খাল বলে নদীটিকে, কী যে তোর চেহারাটা
এত আঁকাবাঁকা
সভ্য সমাজে আর মান রাখা দায় হয়
আজ থেকে আত্মীয় বলে ডাকা মানা।
নদী বলে বেশ কথা, আমি আর কত দিন,
ঠিক নেই থাকা বা না থাকা
তুমি ভাই বেঁচে থাকো, জলে যদি টান পড়ে
পাহাড় বা সাগরের জানো তো ঠিকানা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress