বাস্তব কল্পনা
জয় অনেকদিন ধরেই মায়ের কাছে আবদার
করে সে কুকুরছানা পুষবে।মা কিন্তু রাজি
হয় না।কুকুরের কথা বলতে গেলেই বলে
মাধ্যমিক পরীক্ষা সামনে। এখন পোষ্যের বায়না
কেন? ইস্কুল বন্ধ থাকায় সারাক্ষণ পড়তে জয়ের ভালো লাগে না। সময় সুযোগে টিভি চ্যানেল ঘুরিয়ে খেলা দেখে, অন্যান্য চ্যানেল ঘুরিয়ে দেশবিদেশের খবর শোনে, কখনো পশুপাখির চ্যানেল দেখে তাদের কথা মন দিয়ে শোনে।
একদিন সে মাকে বলেছিল,
খেতে না পাওয়া গরিব যুবককে কোটিপতি বানিয়ে দিতে পারে তার পোষা কুকুর ‘সাইলার’।
সে এক ‘সেলেব্রিটি অ্যানিম্যাল।’
মা তার কথায় কান না দিয়ে বলে তুমি তো পড়াশোনায় ভালো পজিশন নিয়ে পাশ করতে
পারলেই ভালো চাকরি করে কোটিপতি হতে
পারবে।পোষা কুকুর কাকে কোটিপতি করেছে
তাই তুমিও কুকুর পুষে কোটিপতি যে হবে তার
নিশ্চয়তা আছে?
আচ্ছা মা পরীক্ষায় আমি যে ভাল নম্বর পাব তারপর ভালো চাকরি যে পাবো তারও
তো নিশ্চয়তা নেই। কত ভালো ভালো ছেলে ঘরে
বসে তাদেরও তো চাকরি নেই।তারাও সব মোবাইলে নানা রকম ভিডিও পোষ্ট করে টুকটাক
রোজগার করছে।
বাহ সুন্দর ভবিষ্যৎ। পেট চলবে তাতে?
বতর্মান যুগ ডিজিটাল। সুযোগ অনেক বেশি
ঘরে বসেই রোজগার করা যায়। শুধু বুদ্ধিটা কাজে
লাগাতে হবে।বইয়ের পড়াশোনায় শুধু ডিগ্রিটাই হবে।
আচ্ছা তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি।কি
সব আলতু ফালতু বলছিস।যা তো মন দিয়ে
মাধ্যমিক পরীক্ষাটা আগে ভালো ভাবে পাশ কর।
জয় বলছে আজকাল কুকুর পুষে লোকে ব্যবসা
করছে কতরকম।
তবে আর কি পাড়ার নেড়ির ছানাকে এবার ঘরে
নিয়ে এসো।
হ্যাঁ গো মা বেজিংয়ের এক যুবক ঝৌ তিয়াংশিয়াও একটা ভালো জাতের কুকুর খুব
সস্তায় কিনতেই তার ভাগ্য ফিরেছে।
তোমার মাথাটা ইউটিউব দেখে একেবারে গেছে দেখছি।
ওসব চীন দেশেই সম্ভব।এখানে লোকে খেতেই
পায় না। তারা পোষ্য ঘরে রাখবে কি করে?
আহ তার ভাগ্য ফিরতেও তো পারবে।যেমন ঝৌ এর ভাগ্য ফিরেছিল।
আসলে কুকুর সাইলার তার কাছে, ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’। সাইলারকে মানুষের মতোই হাঁটতে
শেখায়। সে হাই ফাইভের মানে বুঝতে পারে, সে টেবিলের উপর খাবার রেখে খেতে পারে।বালিশ মাথায় বিছানায় ঘুমায়।
এই সবই ইউটিউব ভিডিও দেখে ঝৌ শিখিয়েছিলেন সাইলারকে। শিখিয়েছিলেন লেডি গাগার গানের সঙ্গে নাচতেও। তারপর সাইলারের এই ভিডিও শেয়ার করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সাদা-কালো রঙের মিশেলে এই দস্যিটা সকলের মন জয় করেছে। সাইলারের আট লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিও জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে ঝৌয়ের। ভিডিও প্রতি মিলতে থাকে টাকা।
মা বিস্মিত হয়ে বলে এভাবে সে কত টাকা পেতে পারবে?
হ্যাঁ মা ভিডিও থেকে পাওয়া টাকা জমিয়ে
রাখে ঝৌ।প্রত্যেকে সাইলারকে দেখতে চায়। আদর করতে চায়।
খবর পায় বেজিংয়ের কাছে এক পরিত্যক্ত বাড়ি আছে যার আশপাশে কেউ যায় না।
সাইলারের জন্যই ওই পরিত্যক্ত বাড়িটাকে কিনে নেয় ঝৌ। শুরু হয় তার মেকওভার। পোষ্যদের জন্য বিশেষ খাবার আর খেলনার ই-কমার্স সাইটও খুলে ফেলে। ফুলে ফেঁপে ওঠে ব্যবসা।সেটাই এখন বিশাল ম্যানসন।
সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে প্রাসাদটি। দু’ একর জমিতে রয়েছে অতিথিশালা, রয়েছে স্পা, ইন্ডোর পুল, ট্রাম্পোলিন। রয়েছে পার্টি রুম। চকবোর্ড ওয়ালও রয়েছে আঁকিবুকির জন্য। আর রয়েছে সাইলারের দুটো মূর্তি।
এই ম্যানসনেই তার পোষ্যদের জন্য পার্লার ও স্পা রয়েছে। যেখানে সারমেয়রা অয়েল ম্যাসাজও করতে পারে ৪০০ ডলারের বিনিময়ে। রয়েছে ২৬ ডলারে পোষ্যদের মেডিসিনাল স্পা-এর ব্যবস্থাও। এভাবে দু’বেলা ঠিকমতো খেতে না পাওয়া ঝৌ এখন ধনকুবের ব্যবসায়ী।
মা ছেলের মুখে এইসব কথা শুনে সত্যিই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। কুকুর পুষে তার ভিডিও বানিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় আপ্লোড করে এতো অর্থ
উপার্জন করা যায়?
সত্যিই বর্তমান যুগটা পালটে গেছে।আমাদের
সময় এসব কল্পনা করা যেত না।