বাপসরে আজ মরতে মরতে বেঁচেছি
পাড়ার জগন্নাথ তথা জগা দা বরাবরাই মজার কথা বলে আনন্দ করে। সেদিন রাতে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িতে এসে বললো, এক গ্লাস জল দে তো! বাপসরে আজ মরতে মরতে বেঁচেছি।
সে কি! কী হলো আবার। ঘটনা কি!
তুমি তো বললে কবরস্থানে গিয়েছিলে, রসুল চাচার বডি নিয়ে।
বলছি দাঁড়া, জলটা খাই।
জগা দা বলতে শুরু করলো।
আমরা তো চাচাকে নিয়ে ওনার গ্ৰামের বাড়িতে চলেছি গোরুর গাড়ি করে। আমরা চারজন ছিলাম। গ্ৰামে পৌঁছে দেখি একটা সরু গলি দিয়ে বাড়িতে যেতে হবে। গরুর গাড়ি যেতে পারবে না সে রাস্তায়। তাই বডি কাঁধে নিয়ে আমরা এগোচ্ছি; পথে নামলো বৃষ্টি। আমরা চাচার বডিটা একটা চায়ের দোকানের পাশে রেখে বসে চা খাচ্ছি।
চা খাওয়া শেষে আমরা বডি কাঁধে নিতে গিয়ে দেখি ভীষণ ভারী লাগছে। ভাবলাম বৃষ্টিতে ভিজে বুঝি ভারী হয়ে গেছে।
বাড়িতে নিতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে।গ্ৰামের বাড়ির পাশেই কবরস্থান। আগে থেকেই ব্যবস্থা করা আছে । দুটো হ্যাজাক আলো নিয়ে কয়েকজন কবরস্থানে বডি নিয়ে গেলাম। বডি নামাতেই দেখি নড়াচড়া করছে। আধো অন্ধকারে সকলে ভূত বলে ভয়ে দৌড়াতে শুরু করলো। আমি বেসামাল হয়ে পড়ে গেলাম বডির উপর। কে যেনো আমার গলা জরিয়ে ধরলো। আমি পরিত্রাহি চিৎকার করছি আমায় বাঁচাও। শুনতে পাচ্ছি , সে বলছে আমি কোথায়?আমায় বাড়ি নিয়ে চলো।
আমার তখন হার্টফেল করার মত অবস্থা। কেউ কাছে নেই।
কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটছি।
তারপর বাড়ির কাছাকাছি এসে সবাই তাকিয়ে দেখি পিছন পিছন কেউ আসছে। সবাই একজোট হয়ে সাহস করে দাঁড়ালাম। দেখি এক মাতাল টলতে টলতে আসছে।
এগিয়ে গিয়ে ব্যাটাকে ধরি। বলে, এটা কোন্ জায়গা বলেন তো! আমি এখানে কেন?
জানা গেলো , মাতাল বৃষ্টির সময় মৃতের চাদরের তলায় ঢুকে শুয়ে ছিল। আমরা কেউ টের পাইনি। সেইজন্যই বডি কাঁধে নিলে এতো ভারী লাগছিল।
ব্যাটাকে আচ্ছা করে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে, রসুল চাচাকে মাটি দিলাম।
কিছুক্ষণ হয়েছে ফিরেছি। তুই বিজ্ঞান বইটা চেয়েছিলি, দিতে এলাম।
ওরে বাবারে আজকে যা বাঁচান বেঁচেছি কস্মিন কালেও ভুলবো না।
বাড়ির সবাই শুনে অবাক! আমি বললাম সত্যি!
তা সত্যি না তো কি! তুই চাচার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করিস।
বাবা শুনে বললেন, এও কি সম্ভব। আগে বুঝিস নি! এ তো আষাঢ়ে গল্প।
আঃ, মেসোমশাই আপনি না! থমথমে আসরটা দিলেন তো কেঁচে!