আজকাল কিভাবে যেন মাঝরাতে ঘুম ছুটে যায়। নিঃশব্দে শূন্য বিছানায়
বসে সিগ্রেট টানি। অবলীলায় তোমার চলে যাওয়ার দৃশ্যগুলো মনে পড়তে
থাকে। ভয় লাগে, মৃত্যুকে তোমার মত আকস্মিকভাবে অতিক্রমের সাহস
কই আমার?
তবে মৃত্যু যে আকস্মিক শূন্যতার ভেতরও গর্ত সৃষ্টি করে তা আমি
প্রতিদিন মর্মে মর্মে, একটু একটু করে বুঝতে শিখেছি। তোমার যাওয়ার
বছরখানেক পর একটি বন্ধ দেরাজ তালাশ করতে গিয়ে তোমার খোঁপা
সাজাবার আইভরির চিরুনিটি হাতে পেয়ে কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে থাকি।
কাঁটাগুলোর ফাঁকে একগুচ্ছ চুল এখনও লেগে আছে দেখে সাবধানে তুলে
মুঠোবন্ধ করে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ি।
প্রথমে বিস্ময় ও নৈশব্দ ছাড়া কিছুই মনে হয়নি।
বার বার মুঠো খুলি আর বন্ধ করি। অকস্মাৎ মনে হল তোমার ঠাণ্ডা, ছিন্ন
কেশগুচ্ছ স্মৃতির সুতো হয়ে আমার শরীরের ভেতরে আক্ষেপের জাল বুনে
চলেছে। আমি আমার অবসন্ন হাতের তালু বাতাসে উন্মুক্ত করে দিতেই
তোমার পরিত্যক্ত অলকগুচ্ছ ফ্যানের এলোমেলো হাওয়ায় সাঁতার কেটে
চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেল। ধুলো ঘূর্ণি যেমন শেষপর্যন্ত পাক খেয়ে ধরণীতেই
মিশে যায় তোমার স্মৃতিও এর বেশি কিছু নয়।
এখন আর তোমার পরিত্যক্ত বাক্সোপেটরা ঘাঁটাঘাঁটি করি না।
কেবল তোমার শূন্য বালিশের ফুলতোলা নকশার ওপর তোয়ালে চাপা
দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে বিছানায় একাকী বসে
সিগ্রেট টানি।
মনে হয় জানালার ফাঁক দিয়ে নামা জ্যোছনা, পোড়া নিকোটিনের সাথে
গোলাপের গন্ধ তালগোল পাকিয়ে একটা অবস্থার সৃষ্টি করেছে
যা কাব্যসৃষ্টি বা ন্দ্রিার সহায়ক নয়।
আমি কবিতা বা প্রেমের ভিখিরি নই। পুনর্বার কারো সাক্ষাপ্রার্থীও নই,
সব ফিরিয়ে দিলেই কি সব নেওয়া যায়? তুমি কি নেবে? তাহলে আমাকে
কেন ঘুমুতে দেবে না।