প্রতীক্ষার অবসান
মা বাবাকে সেই ছোট থেকেই দেওয়ালে পেরেক দিয়ে আটকানো ধুলো মাখানো ছবিটা দেখে কৌতুহল মনে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিল মেয়েটি তোমাদের সাথে ছবিতে এরা কারা? বিরক্তি হয়ে তারা তাকে জানায় এনারা তার দাদু- দাদি। মেয়েটি তার দাদু আর দাদির কথা জানতে চায়। এনারা যদি বেঁচে থাকেন তবে তারা কোথায় থাকেন? তাদের বাড়িতে কেন তারা আসেন না?
উত্তরে মা বাবা বিরক্ত হয়ে বলতো, তার দাদু-দাদি অন্য আত্মীয়দের সাথে থাকেন। মেয়েটি অনেক বার বলেছিল তাদেরকে সে একবার দেখবে। কিন্তু তার মা বাবা তাকে কোনদিন সেই আত্মীয়দের বাড়ি নিয়ে যায়নি। সেই থেকে মেয়েটির মনে ইচ্ছাজাগে সে নিজেই খুঁজে বার করবে তার দাদু- দাদিকে।
একদিন স্কুল থেকে বৃদ্ধাশ্রমে ঘুরতে নিয়ে যাবে ঠিক হয়।মেয়েটিও বন্ধুদের সাথে সেখানে যায়। সেখানে ঘোলাটে চশমায় বারান্দায় হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে এক বৃদ্ধাকে। তাকে দেখে তার বাড়িতে দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা ফ্রেমে আটকানো ছবিটার সাথে মিল খুঁজে পায়। তখনই দৌড়ে গিয়ে দাদিমাকে জড়িয়ে ধরে মেয়েটি ।
দাদিমা তার নাতনির পরিচয় জানতে চায়। খুশিতে ঘোলাটে চশমাটা খুলে চোখ ডলতে ডলতে নাতনিকে বুকে জড়িয়ে ধরে। তার গলার স্বর যেন বুজে আসছিল। ধরা ধরা গলায় বৃদ্ধা বলেছিল তার ছেলের এতো বড় আলিশান ফ্লাটে তার জায়গা হয়নি। বৌমাও তাকে সহ্য করতে পারতো না। সে তো বুড়িয়ে গেছে তাইনা! ছেলেকে তিনি নিজে কত কষ্ট করে মানুষ করেছেন, কখনও বিন্দুমাত্র অভাবের আঁচড় লাগতে দেয়নি। নিজে কষ্টে থেকে তাকে সবসময় ভাল রাখার চেষ্টা করেছেন। তাকে বলেছিলেন বড় হয়ে মাকে যেন সে ভুলে না যায়। কিন্তু বুঝতে পারেনি সে এতো বড় হয়ে যাবে। সেদিন স্কুল থেকে ভ্রমণের জন্য বৃদ্ধাশ্রমে দিতি নামের এই মেয়েটি না গেলে হয়তো তার প্রতীক্ষার অবসান হতো না। অকল্পিত ভাবে সেইখানে তখন সে তার আপন দাদুকে দাদিকে খুঁজে পায়। খুঁজে পাওয়ার আনন্দে দাদিমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়েটি। স্কুল থেকে বৃদ্ধাশ্রমে ঘুরতে গিয়ে, হারানো দাদু-দাদিকে খুঁজে পেয়ে বহুদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটল মেয়েটির জীবনে।