Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পূর্ণিমা আমার বোন || Samarpita Raha

পূর্ণিমা আমার বোন || Samarpita Raha

চক্রবর্তী বাড়িতে দুর্গা মা বাড়িতে তৈরী হয়।যুগ যুগ ধরে এই বনেদী বাড়ির পূজা হয়ে আসছে।এক কাঠামোতো ঠাকুর গড়ে।তারপর কাপড় পড়ানো হয়।সব অস্ত্র দেওয়া হয়।তবে ঠাকুর দালানে বসে ঠাকুর বানানো হয়।প্রায় এক মাস ধরে বাড়ির কর্তা ও কুমোর টুলির মানিক পাল মিলে বানান।চক্রবর্তী বাড়ির সব প্রজন্মের ছেলেরা ঠাকুরের কাজ জানে।সঙ্গে থাকে মানিক পাল বা কখনো ওনার ছেলে বা কখনো ওনার নাতি।দুই বাড়ির এক নিয়মে একত্রে ঠাকুর বানায়।
ঠাকুর তৈরির সব উপকরণ হাতের কাছে চলে আসে …কিন্ত্ত বারাঙ্গনার উঠানের মাটি আনতে হয় চক্রবর্তী বাবুদের।এবার চক্রবর্তী বাবু নাতি তুহিনকে ডেকে বুঝিয়ে দেয় …যা পিছন পাড়ার মঞ্জু মাসীর বাড়ি থেকে মাটি নিয়ে আয়।ঠাকমা চিৎকার করে বলে তুহিন শুধু যাবি..মাটি নিবি …চলে আসবি…বুঝলি?
না ঠাকমা যদি চা খেতে বলে!
ওরা অনেক আপ্রায়ণ করবে…তুই বলবি তাড়া আছে।
আরে তোর দাদু তো গেলে আসত চায়ত না।
বাবু ব্রাহ্মণ হয়ে চা খেয়ে আসতেন।
তবে বাড়িতে এসে স্নান করে নিত।
হ‍্যাঁ রে ঐ নিয়ে তুহিন তোর ঠাকমার কি চিৎকার।কাক..চিল বসত না।
তোর দাদু যা বলুক তুই ওই পাড়াতে সাবধানে যাস।
কেন ঠাকমা বাঘ আছে নাকি?
ঠাকমা গম্ভীর ভাবে বলে নষ্টা মেয়েরা থাকে।

এই যে শুনছেন ,মঞ্জু মাসীর বাড়ি কোনটা?

মু তো এই নাইনে লতুন,ওদ্দেরকে জিইজ্ঞেসটো কইর ক‍্যানে!
তু তো ভইদ্দ্রোলুক্কের ছেল্লেটা আচ্ছিস!
অইল্প বইয়স ..ই পাড়্ড়ায় আস্সিস না।

-না না আমি মাটি নিতে এসেছি।

কি জন্যি মাট্টি দইরকার রে বাব্বু__

-বাড়িতে দুর্গা পূজা হয়।তার জন্য বেশ‍্যাপাড়ার মাটি লাগে।

কি বইল‍্যি দুইগ্গামা গইড়বিক,তা কেন‍্যে রে,
মুরা তো ছুট্টজাইত,লা লা জাইতপাইত লয়
মুরা তো পইতিতা ।

-হ‍্যাঁ তোমরা নষ্টা মেয়ে আমি জানি।।আমার মঞ্জু মাসীর ঘর থেকে মাটি চাই।নাহলে তোমাদের পাড়ায় আমার ঢোকার ইচ্ছে নেই।

শুইন মাট্টি দিবক লাই,ক্যান্ন জান্নিস–
তুরা তো ঠাক্কুর গইড়বিক,পুজ্জা হব্বেক
তা বট্টেক,তুরা মুদ্দের অইঞ্জলি টো দিত্তে দিব্বিক?
লা খেদ্দাই দিব্যিক,বল ক্যানে?

-হ‍্যাঁ তোমরা সেজে ঠিকমতো মন্ডপে যাও।
কে তোমাদের চিনবে?
-যাবে অঞ্জলি দিয়ে আসবে।তবে আমাদের তো বাড়ির পূজো।ঘরের মধ্যে হয়..আমার ঠাকমা জানতে পারলে তোমাদের ঢুকতে দেবে না।

না রে বাব্বু মইন্ডপেও ঢুইকতে দ‍্যায় না ওর্রা।তাইড়িয়ে দ‍্যায়।
মুদ্দেরর ঘইরে রাত্তের অইন্ধকারে ফূইর্তি
কইরতে পার‍্যে।প্রইকাশ‍্য দিব্বালোক্কে মুদ্দের রাইস্তার কুক্কুরের মইতো আচ্চরন কইরে।
পইল্লীর মা টোকে, গত্ত বছ্ছর খেদ্দাই দিল্লেক।মার তো অইঞ্জলিটো দিব্বার স্বোয়াদটো জেইগেছিলক।পূজ্জা কম্মিটির সিক্রেটারি বুললেক ভাগ- শালী।এ ভদ্রলুকদের জাইয়গা বট্টেক।

-তুমি বলে দিলে না কেন?এটা সবার জায়গা

মুদ্দেরর ঘইরের মাট্টি লিব্বি,তুখ্খন তুদ্দের অভিযুগটো লাই।মুরা গেল্লেই ঠাক্কুর অপবিত্র রে।ক‍্যান রে তুরাই তো লষ্ট কইরেছিস মুদ্দের।

-ঠিক আছে আমি সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছি।একদিন এসে তোমাদের সব কথা ভালোভাবে শুনে পেপারে লিখব।

-ও মঞ্জু মাসী আমি চক্রবর্তীর নাতি ।আমাকে মাটি দাও।

আচ্ছা বসো বাবা দিচ্ছি।কদিন ধরে ভাবছি বুড়া কর্তা মাটি নিতে এলেন না।
পূর্ণিমা দাদাকে চা করে দে।

-না মাসী চা খাব না।
হঠাৎ পূর্ণিমার আবির্ভাব।ঠিক আছে দিদা উনি খাবেন না জোর করো না।
-তুহিন চমকে বলে ,তুমি সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সবচেয়ে ভালো মেয়ে পূর্ণিমা না???

হ‍্যাঁ।তাতে কি হয়েছে।অনুগ্রহ করে কলেজের কাউকে বলবেন না আমি এই পরিবেশে থাকি।তাহলে সবাই ঘৃণার চোখে দেখবে।
তারপর মঞ্জু মাসী মাটি দিয়ে বলে ।ওকে তো পড়ার খরচ বুড়ো কর্তা দেয়।
আসলে পাঁকে পদ্ম ফোঁটে।আমি ওকে মানুষের মতো মানুষ করে দেখাতে চায় সমাজকে।আসলে ও তোমার বাবার সন্তান।আমার মেয়ে পূর্ণিমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে।তারপর তোমার বাবা এই পাড়াতে কোনদিন আসে নি।বুড়ো কর্তা সব জানেন।তার মানে পূর্ণিমা আমার বোন।

-মাসি আজ বারাঙ্গনা উঠানের মাটি নিয়ে গেলাম।চাকরি পাই..আমি আমার বোনকে নিয়ে যাব।
তোমাকে অনেক অনেক আশীর্বাদ করি।আমার মেয়ে কিন্তু খারাপ মেয়ে ছিল না।নাইন পাশ দিয়েছিল।তারপর তোমার বাবার সাথে কালীমন্দিরে বিয়ে করে চুপিচুপি।আবার বাড়িতে গিয়ে আবার তোমার মাকে বিয়ে করে।তারপর মেয়েটাকে জন্ম দিতে গিয়ে —-
-পূর্ণিমা আমি যাচ্ছি।তোকে সময় বুঝে নিয়ে যাব।
মঞ্জু মাসী বলে চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি…পাড়াটা তো ভালো নয়।।
ঠাকমার জন্য স্নান করে করে ঢুকতে হয়।বোনটার জন্য মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যায়।
দাদুকে বলি বাইরে চাকরি পেলে বোনকে নিয়ে চলে যাব।দাদুর মুখে খুশির ঝিলিক।
আমার বাবাকে দেখো —দেখলে মনে হয় না এরকম পাপ কাজ করে বসে আছে।

ভাবলেই অবাক লাগে আমি আমার বোনের চেয়ে তিন মাসের বড়।আজ দুজনেই বেনারস থাকি চাকরিসূত্রে।পদবী কিন্তু বোন চক্রবর্তী লিখত।বন্ধুরা সবাই জানে আমরা যমজ।
আমার বোনের সামনের মাসে বিয়ে।সকলে আশীর্বাদ করো আমার বোন সুখে থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress