Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পিপাসার গান || Pipashar Gaan by Jibanananda Das

পিপাসার গান || Pipashar Gaan by Jibanananda Das

কোনো এক অন্ধকারে আমি
যখন যাইব চ’লে – বারবার আসিব কি নামি
অনেক পিপাসা লয়ে এ মাটির তীরে
তোমাদের ভিড়ে !
কে আমারে ব্যথা দেছে ,- কে বা ভালোবাসে ,-
সব ভুলে ,- শুধু মোর দেহের তালাশে
শুধু মোর স্নায়ু শিরা রক্তের তরে
এ মাটির’পরে
আসিব কি নেমে !
পথে পথে,- থেমে- থেমে- থেমে
খুঁজিব কি তারে ,-
এখানের আলোয় -আঁধারে
যেইজন বেঁধেছিল বাসা !-
মাটির শরীরে তার ছিল যে পিপাসা ,
আর যেই ব্যথা ছিল,- যেই ঠোঁট , চুল,
যেই চোখ ,- যেই হাত,- আর যে আঙুল
রক্ত আর মাংসের স্পর্শসুখভরা ,-
যেই দেহ একদিন পৃথিবীর ঘ্রাণের পসরা
পেয়েছিল ,- আর তার ধানীসুরা করেছিল পান,
একদিন শুনেছে যে জল আর ফসলের গান,
দেখেছে যে ঐ নীল আকাশের ছবি
মানুষ – নারীর মুখ ,- পুরুষ – স্ত্রীর দেহ সবি
যার হাত ছুঁয়ে আজো উষ্ণ হয়ে আছে ,-
ফিরিয়া আসিবে সে কি তাহাদের কাছে !
প্রণয়ীর মতো ভালোবেসে
খুঁজিবে কি এসে
একখানা দেহ শুধু !-
হারায়ে গিয়েছে কবে কঙ্কালে কাঁকরে
এ মাটির’পরে !

অন্ধকারে সাগরের জল
ছেনেছে আমার দেহ ,- হয়েছে শীতল
চোখ – ঠোঁট- নাসিকা- আঙ্গুল
তাহার ছয়াছে;- ভিজে গেছে চুল
শাদাশাদা ফেনাফুলে ;
কতবার দূর উপকূলে
তারাভরা আকাশের তলে
বালকের মতো এক – সমুদ্রের জলে
দেহ ধুয়ে নিয়া
জেনেছি দেহের স্বাদ ;- গেছে বুক-মুখ পরশিয়া
রাঙা রোদ ,- নারীর মতন
এ দেহ পেয়েছে যেন তাহার চুম্বন
ফসলের ক্ষেতে !
প্রথম প্রণয়ী সে যে , কারতিকের ভোরবেলা দূরে যেতেযেতে
থেমে গেছে সে আমার তরে !
চোখ দুটো ফের ঘুমে ভরে
যেন তার চুমো খেয়ে !
এদেহ,- অলস মেয়ে
পুরুষের সোহাগে অবশ !-
চুমে লয় রৌদ্রের রস
হেমন্ত বৈকালে
উড় পাখপাখালীর পালে
উঠানের ;- পেতে থাকে কান,-
শোনে ঝরা শিশিরের গান
অঘ্রাণের মাঝরাতে ;
হিম হাওয়া যেন শাদা কঙ্কালের হাতে
এ দেহেরে এসে ধরে ,-
ব্যথা দেয় ! নারীর অধরে
চুলে- চোখে – জুয়ের নিশ্বাসে
ঝুমকো- লতার মতো তার দেহ- ফাঁসে
ভরা ফসলের মতো পড়ে ছিঁড়ে
এই দেহ ,- ব্যথা পায় ফিরে!…
তবু এই শস্যক্ষেতে পিপাসার ভাষা
ফুরাবে না;- কে বা সেই চাষা,-
কাস্তে হাতে ,- কঠিন –কামুক,-
আমাদের সবটুকু ব্যথাভরা সুখ
উচ্ছেদ করিবে এসে একা ! –
কে বা সেই !- জানি না তো ,- হয় নাই দেখা
আজো তার সনে;
আজ শুধু দেহ- আর দেহের পীড়নে
সাধ মোর ;- চোখে ঠোঁটে চুলে
শুধু পীড়া ,-শুধু পীড়া !- মুকুলে মুকুলে
শুধু কীট ,- আঘাত,-দংশন ,-
চায় আজ মন !

নক্ষত্রের পানে যেতেযেতে
পথ ভুলে বারবার পৃথিবীর ক্ষেতে
জন্মিতেছি আমি এক সবুজ ফসল !-
অন্ধকারে শিশিরের জল
কানে কানে গাহিয়াছে গান,-
ঢালিয়াছে শীতল আঘ্রাণ ;
মোর দেহ ছেনে গেছে অলস-আঢুল
কুমারী আঙুল
কুয়াশার ; ঘ্রাণ আর পরশের সাধ
জাগায়েছে ;- কাস্তের মতো বাঁকা চাঁদ
ঢালিয়াছে আলো ,-
প্রণয়ীর ঠোঁটের ধারালো
চুম্বনের মতো !
রেখে গেছে ক্ষত
সবজীর সবুজ রুধিরে!
শস্যের মতো মোর এ শরীর ছিঁড়ে
বারবার হয়েছে আহত
আগুনের মতো
দুপুরের রাঙা রোদ !
আমি তবু ব্যথা দেই,-
ব্যথা পাই ফিরে!-
তবু চাই সবুজ শরীরে
এ ব্যথার সুখ !
লাল আলো ,- রৌদ্রের চুমুক,
অন্ধকার ,- কুয়াশার ছুরি
মোরে যেন কেটে লয়,- যেন গুঁড়ি গুঁড়ি
ধুলো মোরে ধীরে লয় শুষে !-
মাঠ- মাঠে – আড়ষ্ট পউষে
ফসলের গন্ধ বুকে ক’রে
বারবার পড়ি যেন ঝ’রে!
আবার পাব কি আমি ফিরে
এই দেহ !- এ মাটির নিঃসাড় শিশিরে
রক্তের তাপ ঢেলে আমি
আসিব কি নামি !
হেমন্তের রৌদ্রের মতন
ফসলের স্তন
আঙুলে নিঙাড়ি
এক ক্ষেত ছাড়ি
অন্য ক্ষেতে চলিব কি ভেসে
এ সবুজ দেশে
আর একবার! শুনিব কি গান
ঢেউদের !- জলের আঘ্রাণ
লব বুকে তুলে
আমি পথ ভুলে
আসিব কি এ পথে আবার !
ধুলো-বিছানার
কীটেদের মতো
হব কি আহত
ঘাসের আঘাতে!
বেদনার সাথে
সুখ পাব !
লতার মতন মোর চুল,
আমার আঙুল
পাপড়ির মতো ,-
হবে কি বিক্ষত
তোমার আঙুলে – চুলে !
লাগিবে কি ফুলে
ফুলের আঘাত! বারবার
আমার এ পিপাসার ধার
তোমাদের জাগাবে পিপাসা !
ক্ষুধিতের ভাষা
বুকে ক’রে ক’রে
ফলিব কি !- পড়িব কি ঝ’রে
পৃথিবীর শস্যের ক্ষেতে
আর একবার আমি-
নক্ষত্রের পানে যেতে যেতে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *