পল্লী কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
ভাঙ্গন ধরা অজয় নদীর বাঁকে যাঁর বাড়ি সেই পল্লী কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিক এর একশ উনচল্লিশতম জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই। রবীন্দ্র যুগের কবি হয়েও তিনি নিজস্ব ধারায় সমুজ্জ্বল। তাঁর পল্লী প্রকৃতির বর্ণনার অনাবিল সৌন্দর্যে বাংলা কাব্য অঙ্গন সুরভিত ও সুসজ্জিত হয়েছে।
মনে পড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহজপাঠ কিশলয়ের কবিতায় তাঁর সাথে প্রথম পরিচয়।
“রামসুক তেওয়ারি”র বাংলায় এসে চা খাওয়া শুরু করে তার শরীর খারাপের কথা খুব মনে পড়ে—” প্রাতে আর সন্ধ্যায় চা ধরেছে নিত্য
আজ বাডে অম্বল কাল বাডে পিত্ত।”
“ঘোষাল পুকুরের “টলটলে কালো জলের সাথে টুনির মায়ের পুকুর বেচার ব্যথা যেন মিলেমিশে একাকার।–” টলটলে কালো জলে ভরা
সারি সারি তালগাছ পাডে
কে না চেনে ঘোষাল পুকুর
গ্রামে যেতে রাস্তার ধারে।”
পল্লীকবির তুলির আঁকনে প্রকৃতি মায়ের কি অপরূপ রূপ—
“দোপাটি ফুল চুটকি পায়ের সন্ধ্যামণির নাকছাবি
গোট পরেছে অপরাজিতার কুন্দকলির সাতনরি হার
আঁচল খুঁটে রিংটি ভরা কৃষ্ণকলির লাখচাবি।”
তাঁর “ভক্তির যুক্তি”তে প্রকৃতির মাতৃরূপের বাখানে তিনি বলেছেন—
“জগৎ জননী মা না হতো যদি দোপাটি পেত কি ফোঁটা?
গোলাপ পেত কি রাঙা চেলি তার কদলী গরদ গোটা?
ময়ূর পেত কী ময়ূরকণ্ঠী, রেশমি পোশাক টিয়া?
ঝুঁটি কোথা পেত ছোট বুলবুলি বাঁধা লালফিতা দিয়া?
সুমুখেতে দেখো দুষ্টু বোলতা সোনালী ঘুন্সি পরা
বকের কামিজে কিবা ইস্তিরি যায় না ময়লা করা।
ডোবার যে পানা তাহারও পোশাক তাহাতেও ফুল কাটা
ওর ও গায় দেখো সবুজ দোলাই ওই যে খেজুর কাঁটা।”
আবার “ছোটর দাবি “র কি কাব্যিক উপস্থিতি—
“ছোট যে হায় অনেক সময় বড়র দাবি দাবিয়ে চলে
রেখা টেনে ছোটর গতি বড় যে জল গাবিয়ে চলে।
অতি বড় তুচ্ছ যা তাই ভালোবাসি আমরা সবাই ভুলায় বড়র অট্টহাসি ছোটর কণা নয়ন জলে।”
আবার মনে পড়ে—-
” ভুলি দ্বারবতীর ঘটা কংস বধের গৌরবও
ভুলায় কুরুক্ষেত্র গোটা বিদুর ক্ষুদের সৌরভ।”
তাঁর কাব্যের হাত ধরে আমরা বাংলার পল্লী প্রকৃতি কে বারবার চিনতে পারি। কবিগুরু ঠিকই বলেছিলেন—” কুমুদ রঞ্জন এর কবিতা পড়লে বাংলা গ্রামের তুলসী মঞ্চ সন্ধ্যাপ্রদীপ মঙ্গল শঙ্খের কথা মনে পড়ে!”
তার জন্মদিনের পুণ্য প্রভাতে তাকে জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম– নমি নমি চরণে!