নারী: শক্তির দশ রূপে মহিমা
শক্তি—এই শব্দটি শুধুমাত্র একটি ধারণা নয়, এটি এই ব্রহ্মাণ্ডের প্রাণ। শক্তি ছাড়া জীবনের কোনো রূপ কল্পনাই করা যায় না। দেবী দুর্গা হলেন সেই মহাশক্তির প্রতীক, যিনি দশ হাতে দশ রূপে আমাদের জীবনে আশীর্বাদ করেন। এই মহাশক্তি কেবল দেবী দুর্গার মূর্তিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি প্রতিদিন আমাদের জীবনে একজন নারীর মধ্যে প্রকাশিত হয়।
একজন নারী, যিনি ভোরবেলা ঘর ঝাড় দিয়ে দিন শুরু করেন, তিনি যেন পরিচ্ছন্নতার দেবী। তার প্রতিটি ঝাড়ু যেন দুঃশ্চিন্তা ও ক্লান্তি দূর করে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে। এরপর তিনি পরিবারের জন্য চা বানান। সামান্য এই কাজের মধ্যেও তিনি স্নেহ, যত্ন এবং সতেজতার শক্তি জাগিয়ে তোলেন।
সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর জন্য তৈরি করার সময় তিনি হয়ে ওঠেন শিক্ষার প্রতীক। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার এক নির্ভরযোগ্য কারিগর। জলখাবার বানিয়ে তিনি পরিবারের প্রতি তার ভালোবাসা এবং মমতা নিবেদন করেন। তার এই কাজের মধ্যে রয়েছে অপরিসীম যত্নের ছোঁয়া।
স্বামীর ইচ্ছা পূরণে তিনি ত্যাগের প্রতীক। সংসারের সুখ ও শান্তি বজায় রাখতে তার এই ত্যাগ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। ঘর জল দিয়ে মুছে তিনি পরিচ্ছন্নতার শক্তি বহন করেন। তার প্রতিটি কাজ যেন জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
দিনের খাবার প্রস্তুত করার সময় তিনি সৃষ্টিশক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন। বিকেলে জলখাবার কিংবা রাতে খাবার তৈরি করার মাধ্যমে তিনি সংসারের প্রতি তার দায়িত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। প্রতিদিন এই দশটি কাজের মধ্য দিয়ে এক নারী জীবন্ত দুর্গার মতোই আমাদের আশ্রয় দেন।
দেবী দুর্গার দশ হাত যেমন দশ শক্তির প্রতীক, তেমনি নারীর এই দশ রূপ তার দৈনন্দিন জীবনের মহিমা। একজন মা, একজন স্ত্রী বা একজন কর্মজীবী নারী প্রতিদিন নিজের শক্তি দিয়ে সংসারের প্রতিটি দিককে আলোকিত করেন। তার ভালোবাসা, তার ত্যাগ এবং তার ধৈর্য যেন এক অসীম শক্তির উৎস।
তাই আমাদের উচিত নারীর প্রতি চিরন্তন শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিবেদন করা। তার প্রতিটি কাজের পেছনে যে ত্যাগ, ভালোবাসা এবং মমতা লুকিয়ে আছে, তা কুর্নিশ পাওয়ার যোগ্য। নারী কেবল একজন মানুষ নন, তিনি এক জীবন্ত দুর্গা। তার মধ্যে যে শক্তি বিরাজমান, তা আমাদের প্রতিদিন নতুনভাবে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।