Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ধামরাই রথ || Dhamrai Rath by Jasimuddin

ধামরাই রথ || Dhamrai Rath by Jasimuddin

ধামরাই রথ, কোন অতীতের বৃদ্ধ সুত্রধর,
কতকাল ধরে গড়েছিল এরে করি অতি মনোহর।
সূক্ষ্ম হাতের বাটালি ধরিয়া কঠিন কাঠেরে কাটি,
কত পরী আর লতাপাতা ফুল গড়েছিল পরিপাটি।
রথের সামনে যুগল অশ্ব, সেই কত কাল হতে,
ছুটিয়া চলেছে আজিও তাহারা আসে নাই কোন মতে।

তারপর এলো নিপুণ পটুয়া, সূক্ষ্ম তুলির ঘায়,
স্বর্গ হতে কত দেবদেবী আনিয়া রথের গায়।
রঙের রেখার মায়ায় বাঁধিয়া চির জনমের তরে,
মহা সান্ত্বনা গড়িয়া রেখেছে ভঙ্গুর ধরা পরে।

কৃষ্ণ চলেছে মথুরার পথে, গোপীরা রথের তলে,
পড়িয়া কহিছে, যেওনা বন্ধু মোদের ছাড়িয়া চলে।
অভাগিনী রাধা, আহা তার ব্যথা যুগ যুগ পার হয়ে,
অঝোরে ঝরিছে গ্রাম্য পোটোর কয়েকটি রেখা লয়ে।

সীতারে হরিয়া নেছে দশানন, নারীর নির্যাতন
সারা দেশ ভরি হৃদয়ে হৃদয়ে জ্বালায়েছে হুতাশন।
রাম-লক্ষ্মণ সুগ্রীব আর নর বানরের দল,
দশমুন্ড সে রাবণে বধিয়া বহালো লহুর ঢল।
বস্ত্র হরণে দ্রৌপদী কাঁদে, এ অপমানের দাদ,
লইবারে সাজে দেশে দেশে বীর করিয়া ভীষণ নাদ।
কত বীর দিল আত্ম-আহুতী, ভগ্ন শঙ্খ শাঁখা।
বোঝায় বোঝায় পড়িয়া কত যে নারীর বিলাপ মাথা।
শ্মশান ঘাটা যে রহিয়া রহিয়া মায়েদের ক্রদনে,
শিখায় শিখায় জ্বলিছে নির্বিছে নব নব ইন্ধনে।

একদল মরে, আর দল পড়ে ঝাপায়ে শক্র মাঝে,
আকাশ ধরণী সাজিল সে-দিন রক্তাশ্বর সাজে।
তারপর সেই দুর্যধনের সবংশ নিধনিয়া,
ধর্ম রাজ্য প্রতিষ্ঠিত যে হলো সারা দেশ নিয়া।
এই ছবিগুলি রথের কাঠের লিলায়িত রেখা হতে,
কালে কালে তাহা রুপায়িত হতো জীবন দানের ব্রতে।
নারীরা জানিত, এমনি ছেলেরা সাজিবে যুদ্ধ সাজে,
নারী-নির্যাতন-কারীদের মহানিধনের কাজে।

বছরে দু-বার বসিত হেথায় রথ-যাত্রার মেলা,
কত যে দোকান পসারী আসিত কত সার্কাস খেলা।
কোথাও গাজীর গানের আসরে খোলের মধুর সুরে।
কত যে বাদশা বাদশাজাদীরা হেথায় যাইত ঘুরে।
শ্রোতাদের মনে জাগায়ে তুলিত কত মহিমার কথা,
কত আদর্শ নীতির ন্যায়ের গাঁথিয়া সুরের লতা।
পুতুলের মত ছেলেরা মেয়েরা পুতুল লইয়া হাতে।
খুশীর কুসুম ছড়ায়ে চলিত বাপ ভাইদের সাথে।
কোন যাদুকর গড়েছিল রথ তুচ্ছ কি কাঠ নিয়া,
কি মায়া তাহাতে মেখে দিয়েছিল নিজ হৃদি নিঙাড়িয়া।
তাহারি মায়ায় বছর বছর কোটী কোটী লোক আসি,
রথের সামনে দোলায়ে যাইত প্রীতির প্রদীপ হাসি।

পাকিস্তানের রক্ষাকারীরা পরিয়া নীতির বেশ,
এই রথখানি আগুনে পোড়ায়ে করিল ভস্মশেষ।
শিল্পী হাতের মহা সান্ত্বনা যুগের যুগের তরে,
একটি নিমেষে শেষ করে গেল এসে কোন বর্বরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *