Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ধনদৌলতের মোহ || Pallav Sanyal

ধনদৌলতের মোহ || Pallav Sanyal

রায়চন্দ দত্ত, শহরের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি, একটি বিলাসবহুল প্রাসাদে বাস করতেন। প্রাসাদের চারদিকে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল। ভিতরে ছিল সবুজ গাছপালা, মনোমুগ্ধকর বাগান এবং ঝরনা। বাড়ির প্রতিটি কোণে সুদৃশ্য মূর্তি শোভা পাচ্ছিল। তাঁদের জীবন ছিল সমৃদ্ধি এবং আভিজাত্যের প্রতিচ্ছবি।

বাড়িতে ছিল বিভিন্ন জাতের কুকুর, রঙিন টিয়া, বিড়াল এবং এমনকি সাদা কবুতর। এই সব পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার জন্য বিশেষ কর্মচারী নিযুক্ত ছিলেন। রায়চন্দের স্ত্রী, মাধবী, তাঁর সোস্যাইটি ক্লাবে প্রায়ই এই পোষা প্রাণীদের নিয়ে আলোচনা করতেন। যেন এগুলো তাঁদের ধনসম্পদের প্রতীক।

“আমাদের কাছে শারপাই জাতের কুকুর আছে। প্রতি সপ্তাহে ওকে গ্রুমিং করতে পাঠাই,” মাধবী একথা বলার সময় তাঁর মুখে একগুচ্ছ অহংকার ঝরে পড়ত।

কিন্তু এই আভিজাত্যের মধ্যে রায়চন্দ এবং মাধবীর দুই সন্তান, আরব এবং নায়রা, কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছিল। আরব দশম শ্রেণিতে পড়ত, আর নায়রা অষ্টম শ্রেণিতে। তাঁদের কাছে খেলনা, গ্যাজেট এবং ব্র্যান্ডেড জিনিসের অভাব ছিল না। তবে তাঁদের জীবনে একটি জিনিসের অভাব ছিল—মা-বাবার ভালোবাসা এবং সময়।

আরব এবং নায়রার দেখভালের জন্য একজন কাজের মহিলা রাখা হয়েছিল, যিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গ দিতেন। যখন বাচ্চারা তাঁদের স্কুলের গল্প শোনাতে মা-বাবার অপেক্ষা করত, তখন রায়চন্দ দত্ত অফিসের মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন আর মাধবী তাঁর ক্লাবের কিটি পার্টিতে।

একদিন আরব তার বাবাকে বলেছিল, “বাবা, তুমি কি আমার স্কুলের ফাংশনে আসতে পারবে? আমি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছি।”
রায়চন্দ হালকা হেসে বলেছিলেন, “বাবা, চেষ্টা করব, কিন্তু এই সপ্তাহে একটি বড় প্রজেক্ট চলছে।”
আরব জানত এই ‘চেষ্টা’ কখনও পূর্ণ হবে না।

সময় বয়ে চলল। আরব এবং নায়রা ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠল। তারা এখন মা-বাবার চেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে শুরু করল। বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার তেমন কোনো প্রয়োজন আর ছিল না। কিছুদিনের মধ্যেই দুই ভাইবোন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে চলে গেল। রায়চন্দ এবং মাধবী তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনার সাফল্যে গর্বিত হলেও বাড়ির নিস্তব্ধতা তাঁদের একাকিত্ব আরও বাড়িয়ে তুলল।

কয়েক বছর পরে, রায়চন্দ এবং মাধবী অবসর নিলেন। প্রাসাদ সেই আগের মতোই ছিল, পোষা প্রাণীরাও ছিল, কিন্তু এখন আর সেগুলোর প্রতি কোনো আকর্ষণ রইল না। তাঁদের সন্তানরা বিদেশে স্থায়ী হয়ে গেল। ফোনে কথা বলাও একটা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ল।

রায়চন্দের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করল, আর মাধবীর পক্ষে একা সব সামলানো কঠিন হয়ে উঠল।
একদিন রায়চন্দ মাধবীকে বললেন, “মাধবী, আমার মনে হয় আমাদের একটি বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাওয়ার কথা ভাবা উচিত। এই প্রাসাদে একা আর থাকতে ইচ্ছা করে না।”
মাধবী, যিনি সর্বদা তাঁর আভিজাত্য বজায় রাখার বিষয়ে যত্নশীল ছিলেন, চুপচাপ বসে রইলেন। কয়েক মাস পর, তাঁরা শহরের একটি বড় বৃদ্ধাশ্রমে চলে গেলেন। সেখানেও তাঁদের দেখভালের জন্য কর্মচারী ছিল, কিন্তু সেই আত্মীয়তার উষ্ণতা ছিল না।

রায়চন্দ এবং মাধবী তাঁদের জীবনে সব কিছুই পেয়েছিলেন—ধনসম্পদ, খ্যাতি, এবং আরামদায়ক জীবন। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তাঁরা হারিয়েছিলেন—সন্তানদের ভালোবাসা এবং সঙ্গ। তাঁরা অবশেষে বুঝতে পেরেছিলেন যে ধনদৌলতের মোহ যত তীব্র, তার ক্ষয়ক্ষতির শূন্যতা তত গভীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *