পথঘাট ভিজে জাব, ট্যাক্সির ওয়াইপার মাথা
নাড়ে মাতালের মতো। দূর থেকে তোমার নিকট
পুনরায় এসে গেছি, যেমন নাগর
জড়িয়ে ফুলের মালা হাতে
সেজে-গুঁজে আসে রূপজীবীর কোঠায়,
যদিও তোমার সঙ্গে হয়নি দীঘল সোহবত।
সেবার তো নিঃস্ব হয়ে, বলা যায়, প্রত্যাবর্তনের
সুর গুনগুনিয়ে করেছিলাম প্রস্থান
উল্টে-যাওয়া কলসের উদাসীনতায় ভরপুর,
বিদ্যুল্লতা স্মরণ করিয়ে
দেয় বার বার, স্মৃতি বৃষ্টির ছাঁটের মতো লাগে
চোখে-মুখে, ক্ষয়ে যায় বয়সের ভার।
কলকাতা হঠাৎ তুমি রাত এগারোটা পঁয়ত্রিশে
গড়িয়াহাটের ব্রিজে বল্লে কানে কানে,
‘এতদিন পর কেন এলে?
আমি তো কবেই মুছে ফেলেছি তোমার
চুম্বনের বাসী দাগ আর
আলিঙ্গন ছায়া বৈ তো নয়।
দ্যাখো, দ্যাখো, আমার চোখের নিচে কী গভীর কালি।
মাইরি, এ মধ্য বয়সের গোধূলিতে
কী পেলে গঙ্গার ধারে, বিকেলের চৌরঙ্গীর ভিড়ে?
তোমার হৃদয়ে যারা পা ঝুলিয়ে বসে আছে তারা-
অনেকেই কবিতার গ্রীবায়, ঊরুতে নাভিমূলে
স্বাক্ষর রাখার লোভে রঙচটা কাঠের টেবিলে
হাতের সকল তাস ফেলে খেলে যাচ্ছে ক্রমাগত,
তোমাকে প্রকৃত কতটুকু মনে রাখে?
পরিচয় গাঢ় কিন্তু চিনতে পারি না। শুনে ফেলি
মধ্যরাতে স্বপ্নের ঈষৎ উল্কি-আঁকা
কলকাতার কণ্ঠে মদির ছেনালি,
যেন তার গলার ভেতর
থেকে এক কামবিদ্ধা বিড়ালিনী কিছু ধ্বনি
মসৃণ উগরে দিচ্ছে। বুঝি
আমার সত্তার গহনতা
থেকে উঠে-আসা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা
এবং মেঘনার তীব্র ঘ্রাণ,
বনদোয়েলের শিস, কলাপাতা শাপলার হুটোপুটি তার
ক্ষয়াটে বর্তুল ফোমে-গড়া স্তনে ভিন্ন শিহরণ
জাগাল আবার।
কলকাতার বুকের ভেতর কলকল,
কলকাতার বিষণ্ন ধূসরতায় নীলপদ্ম ফোটে, দিনভর রাতভর।
ক’দিনইবা আছি? এখন তো পা রাখার জায়গা নেই
তোমার হৃদয়ে;
জানি আমি প্রেমিকের স্বীকৃতি পাব না কোনো দিন।
এবার চুম্বন কিংবা আলিঙ্গন নয়
তোমার মুখের লালা ভেজা সপ্সপে
গহ্বর আমাকে গিলে ফেলার আগেই
স্বৈরিণী জেনেও
তোমার কপালে আমি পরিয়ে সোহাগে
স্খলিত প্রহরে শ্বেত চন্দনের টিপ
সফেদ রুমাল নেড়ে নেড়ে
চলে যাব চুপচাপ ঘরমুখো বেগানা পুরুষ।