Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ছিল, নেই || Chilo Nei by Taslima Nasrin

ছিল, নেই || Chilo Nei by Taslima Nasrin

মানুষটি শ্বাস নিত, এখন নিচ্ছে না।
মানুষটি কথা বলত, এখন বলছে না।
মানুষটি হাসত, এখন হাসছে না।
মানুষটি কাঁদত, এখন কাঁদছে না।
মানুষটি জাগত, এখন জাগছে না।
মানুষটি স্নান করত, এখন করছে না।
মানুষটি খেত, এখন খাচ্ছে না।
মানুষটি হাঁটত, এখন হাঁটছে না।
মানুষটি দৌড়োত, এখন দৌড়োচ্ছে না।
মানুষটি বসত, এখন বসছে না।
মানুষটি ভালবাসত, এখন বাসছে না।
মানুষটি রাগ করত, এখন করছে না।
মানুষটি শ্বাস ফেলত, এখন ফেলছে না।

মানুষটি ছিল, মানুষটি নেই।

দিন পেরোতে থাকে, মানুষটি ফিরে আসে না।
রাত পেরোতে থাকে, মানুষটি ফিরে আসে না।
মানুষটি আর মানুষের মধ্যে ফিরে আসে না।
মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে যে মানুষটি নেই,
মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে যে মানুষটি ছিল।

মানুষটি কখনও আর মানুষের মধ্যে ফিরে আসবে না।
মানুষটি কখনও আর আকাশ দেখবে না, উদাস হবে না।
মানুষটি কখনও আর কবিতা পড়বে না, গান গাইবে না।
মানুষটি কখনও আর ফুলের ঘ্রাণ শুঁকবে না।
মানুষটি কখনও আর স্বপ্ন দেখবে না।

মানুষটি নেই।
মানুষটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, মানুষটি ছাই হয়ে গেছে, মানুষটি জল হয়ে গেছে।
কেউ বলে মানুষটি আকাশের নক্ষত্র হয়ে গেছে।
যে যাই বলুক, মানুষটি নেই।
কোথাও নেই। কোনও অরণ্যে নেই, কোনও সমুদ্রে নেই।
কোনও মরুভূমিতে নেই, লোকালয়ে নেই, দূরে বহুদূরে একলা একটি দ্বীপ, মানুষটি ওতেও
নেই।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও আর যাকে পাওয়া যাক,
মানুষটিকে পাওয়া যাবে না।
মানুষটি নেই।

মানুষটি ছিল, ছিল যখন, মানুষটিকে মানুষেরা দুঃখ দিত অনেক।
মানুষটি ছিল, ছিল যখন, মানুষটির দিকে মানুষেরা ছুঁড়ে দিত ঘৃণা।
মানুষটি ছিল, ছিল যখন, মানুষটিকে ভালবাসার কথা কোনও মানুষ ভাবেনি।
মানুষটি যে মানুষদের লালন করেছিল, তারা আছে, কেবল মানুষটি নেই।
বৃক্ষগুলোও আছে, যা সে রোপন করেছিল, কেবল মানুষটি নেই।
যে বাড়িতে তার জন্ম হয়েছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে বাড়িতে তার শৈশব কেটেছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে বাড়িতে তার কৈশোর কেটেছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে বাড়িতে তার যৌবন কেটেছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে মাঠে সে খেলা খেলেছিল, সে মাঠটি আছে।
যে পুকুরে সে স্নান করেছিল, সে পুকুরটি আছে।
যে গলিতে সে হেঁটেছিল, সে গলিটি আছে।
যে রাস্তায় সে হেঁটেছিল , সে রাস্তাটি আছে।
যে গাছের ফল সে পেরে খেয়েছিল, সে গাছটি আছে।
যে বিছানায় সে ঘুমোতো, সে বিছানাটি আছে।
যে বালিশে সে মাথা রাখত, বালিশটি আছে।
যে কাঁথাটি সে গায়ে দিত, সে কাঁথাটি আছে।
যে গেলাসে সে জল পান করত, সে গেলাসটি আছে।
যে চটিজোড়া সে পরত, সে চটিড়োড়াও আছে।
যে পোশাক সে পরত, সে পোশাকও আছে।
যে সুগন্ধী সে গায়ে মাখত, সে সুগন্ধীও আছে।
কেবল সে নেই।

যে আকাশে সে তাকাত, সে আকাশটি আছে
কেবল সে নেই।
যে বাড়ি ঘর যে মাঠ যে গাছ যে ঘাস যে ঘাসফুলের দিকে সে তাকাত, সব আছে
কেবল সে নেই।

মানুষটি ছিল, মানুষটি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *