গল্প হলেও সত্যি
সেদিন ইমার্জেন্সীর সামনে মস্ত ভিড় শ্রীজনীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভীতরে। শ্রীজাত বাবু, ছবি দেবী এবং শ্রীজনীর একমাত্র ভাই পিযুষ ছাড়া ও সেখানে শ্রীজনীর স্বামী তন্ময় আর ওর কিছু বন্ধু বান্ধব ও উপস্থিত ছিল।
শ্রীজাত বাবুর দুটি ছেলে মেয়ে। মেয়ে শ্রীজনী বড় এবং ছেলে পিযুষ। পিযুষ এখন সবে উচ্চমাধ্যমিক দেবে। মধ্যবিত্ত মানুষ শ্রীজাত বাবু পেশায় একজন সরকারি কর্মচারী। অর্থের বৈভব না থাকলেও সংসারে কোনো কিছুরই কোনো অভাব তার ছিল না। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার তার। মেয়েকে শ্রীজাত বাবু একটু বেশীই স্নেহ করতেন। যেমনটা হয় আর কি। আসলে প্রত্যেক বাবার কাছেই তার মেয়ে রাজকুমারী আর প্রতিটা মেয়ের কাছেই তার বাবা তার দেখা সব থেকে আদর্শ একজন পুরুষ।
শ্রীজনী এ বছর স্নাতক হয়েছে। শ্রীজাত বাবু এবং আর শ্রীজনীর ইছে ছিলো স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করার কিন্তু ছবি দেবীর তাতে মত নেই। তার কথা হলো, দিনকালের পরিস্থিতি ভালো নয় সোমত্ত মেয়ে তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এবার তাকে সুপাত্রস্থ করতে হবে। শ্রীজাত বাবু তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, দিনকালের পরিস্থিতি বদলেছে। তাদের সময় আর নেই। এখন মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা খুব দরকার। আগে মেয়ে পড়াশুনা শেষ করে চাকরি বাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াক তারপর না হয় এসব কথা ভাবা যাবে। কিন্তু ছবি দেবীর যুক্তি হলো আজকাল বিয়ের পরে ও বহু মেয়েরা তারা পড়াশুনা করে। পাত্রপক্ষের সাথেও সেই ভাবেই কথা বলা হবে।
শেষমেষ ছবি দেবীর যুক্তি আর জেদের কাছে হার মেয়ে নিয়ে শুরু হলো পাত্র খোঁজার কাজ। একমাত্র মেয়ে তাকে তো আর যার তার হাতে তুলে দেওয়া যায় না। শেষে খবরের কাগজ দেখে সম্বন্ধ স্থির হয়। পেশায় ব্যবসায়ী বিশ্বম্ভর বাবুর ওই একমাত্র ছেলে তন্ময়। পৈতৃক ব্যাবসা ছাড়াও তার নিজের ও বিভিন্ন রকম ব্যাবসা আছে। তিন তলা বাড়ি দু দুটো দামি গাড়ি অর্থ আর প্রাচুর্যের কোনো অভাব নেই। মেয়ে দেখতে এসে বিশ্বম্ভর বাবু আর মিথিলা দেবীর এক দেখাতেই মেয়ে পছন্দ ও হয়ে যায়। মিথিলা দেবী বেশ গদগদ হয়ে বলে যান আমার তো আর মেয়ে নেই ওই একটিই ছেলে আপনাদের মেয়ে আমার সংসারে আমার মেয়ের মতোই থাকবে। কোনো সমস্যা হবে না। তন্ময় আমাদের একমাত্র ছেলে বলে বলছি না ওর মতো ছেলে পাওয়া আজকালকার দিনে সত্যিই খুব ভাগ্যের ব্যাপার। এমন পাত্র পেয়ে ছবি দেবী আর শ্রীজাত বাবু ও যারপর নাই খুশি এবং নিশ্চিন্ত ও বটে। সংসারে জুট ঝামেলা বলতে তেমন কিছুই নেই, মা আর বাবা। বাড়িতে ঠাকুর চাকরের ও অভাব নেই। মেয়ে বেশ সুখেই থাকবে তাদের।
শুভদিনে শুভক্ষণে চার হাত এক হয়। বিয়ের পর তিন চারটে মাস যেনো স্বপ্নের মতো কেটে যায় শ্রীজনীর। কিন্তু ঝামেলা শুরু হয় তারপর থেকে। তন্ময় প্রায় দিনই মাঝরাত করে বাড়ি ফেরা শুরু করে। এবং ফেরে প্রায় অর্ধ মাতাল অবস্থায়। এই নিয়ে শ্রীজনী প্রতিবাদ করতে গেলে শ্বশুর শাশুড়ি তাকে ছেলের হয়ে দু চার কথা শোনাতে ও ছাড়েন না। ছেলে তাদের ব্যবসায়ী ব্যাবসার কাজে মাঝে মধ্যে এরকমটা হতেই পারে তাই নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। তাছাড়া সে এসেছে একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বড় বাড়ির এসব আদপ বড় আদপ কায়দা তার জানার কথা ও নয়। সে কি আর কোনোদিন ও ভেবেছিল এমন ঐশ্বর্যের মধ্যে সে এসে পড়বে? তাই যা আছে তাই নিয়ে খুশি থাকো। তন্ময়কে বললে সে অশ্রাব্য ভাষায় তাকে গালিগালাজ করে। শ্রীজনী তন্ময়ের এমন ব্যবহারে যে শুধু আঘাত পায় তাই নয় খুব অবাক ও হয় কারণ সে তার বাবাকে তার মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করতে কখনো দেখেনি। শত অসুবিধাতেও সে শ্রীজাত বাবুকে কখনো কোনো কারণে মানুষকে খারাপ কথা বলতে বা খারাপ ভাষা ব্যবহার করতে শোনেনি।
সেদিন ছিল রবিবার তন্ময় দুপুরে বাড়ি থাকায় দুপুরের খাবার সবাই একসাথেই খেতে বসে। সবাই চুপচাপ নিজের খাবার খেতে ব্যাস্ত। মৌনতা ভেঙে শ্রীজনী বললো “মা আমার একটা কথা ছিল আপনাদের সাথে”। মিথিলা দেবী তাকে বলে ” এসে থেকে তো তোমার কথাই শুনে যাচ্ছি মা। বলো কি কথা আছে তোমার”?
শ্রীজনী তাদের জানায় যে সে আবার নতুন করে লেখাপড়া শুরু করতে চায়। শ্রীজনীর এই কথায় তন্ময় কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ থাকলেও মিথিলা দেবী বলে ” কেনো মা সংসারে কি কাজ কম যে সেই সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এখন তুমি আবার পড়াশুনা করতে চাইছো? নাকি পড়াশুনার নামে বাইরে বাইরে ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়াবে তাই পড়াশুনার দোহাই দিয়ে বাইরে বের হতে চাইছো? এই জন্যই নিজেদের সমান ঘরে সম্পর্ক করতে হয়। বড় বাড়ির আদপ কায়দা নিয়ম কানুন শিক্ষা সে আর তোমার মতোন এমন ভিখিরি ঘরের মেয়ে আর জানবে কি করে? ভুলটা আসলে আমাদেরই। কি দেখে যে পছন্দ হয়েছিলো তোমাকে?
মিথিলা দেবীর এমন কথায় শ্রীজনী নিজের রাগ সামলাতে না পেরে বলে ” আমি শুধু পড়াশুনা করতে চাইলাম বলে আপনাদের বড় বাড়ির মানসন্মানে আঘাত লেগে গেলো আর দিনের পর দিন যখন আপনাদের ছেলে বেহেড মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে তখন বুঝি আপনাদের শিক্ষা সন্মান কোনো কিছুতেই কোনো আঘাত লাগে না তাই না”?
শ্রীজনীর এমন কথায় যারপর নাই বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে মিথিলা দেবী। সে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলে ” দেখ দেখ তোর বৌ আমার সাথে কি ভাবে বলছে দেখ। আমি কোনোদিন তোর ঠাকুমার মুখের উপর কোনো কথা বলতে সাহস পাইনি”।
মায়ের কথায় তন্ময় কোনো উত্তর না দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে এঁটো হাতেই সপাটে চড় কষায় শ্রীজনীর গালে। শ্রীজনী অবাক হয়ে তন্ময়ের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। ছেলের এমন ব্যবহারে মিথিলা দেবী এবং বিশ্বম্ভর বাবু কোনো প্রতিবাদ তো করেনই না উল্টে তারা শ্রীজনীকে বলে ” ছোটো থেকে তো বাবা, মা ভালো কোনো শিক্ষা দিতে পারেননি তাই এখন এই দায়িত্বটা ও আমার ছেলেকেই নিতে হলো। কি কুক্ষণে যে এখানে ছেলের বিয়ে দিতে গেছিলাম”।
অকস্মাৎ এমন ঘটনায় শ্রীজনী একপ্রকার কিংকর্তব্যবিমূঢ়র মতো নিঃশ্চুপ হয়ে বসে থাকে। ছোটো থেকে কেউ কোনোদিন কোনো কারণে তার গায়ে হাত তোলার সাহস দেখায়নি বা তার প্রয়োজন ও পড়েনি কখনো। শুধু একবার ছবি দেবী তাকে কোনো কারণ বশত একটা চড় মারায় শ্রীজনী প্রথম এবং শেষবারের মতো বাবাকে রেগে যেতে দেখেছিলো। আজ এমন ঘটনায় প্রথমটায় সে বুঝে উঠতে পারেনি তার সাথে এটা কি ঘটে গেলো।
আজ প্রায় দুদিন তন্ময় মাঝ রাত ছেড়ে ভোর রাতের দিকে বাড়ি ফিরছে আবার খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ও যাচ্ছে সকালে। ছেলের এমন করার পিছনে মিথিলা দেবী শ্রীজনীকেই বার বার দায়ী করতে থাকেন। তন্ময়ের ব্যাবহার যেনো কি রকম সন্দেহজনক। কারো সাথে একটা লুকিয়ে ফিসফিস করে কথা বলা ফোন এলে ওর সামনে থেকে সরে যাওয়া। এমনকি তন্ময়ের জামার থেকেও আজকাল মেয়েদের পারফিউমের গন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস শ্রীজনীর হয়নি। কারণ এখন যে কিছু হলেই তন্ময় যে ওর গায়ে হাত তুলতে দু বার ভেবে দেখবে না সেটা ও খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলো।
সন্ধ্যে বেলা মন মরা হয়ে একাই ঘরে বসেছিল শ্রীজনী এমন সময় শ্রীজাত বাবুর ফোন আসে। শ্রীজনী ফোন ধরলে তিনি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন সে কেমন আছে তন্ময় কেমন আছে? বাড়ির সকলের খোঁজখবর নেন। কিছুক্ষন কথা বলার পর তিনি জিজ্ঞাসা করেন তোর কি হয়েছে রে মা তোর গলাটা এমন শুকনো শোনাচ্ছে কেনো? শরীর ভালো আছে কি না ইত্যাদি। বাবা, মা কষ্ট পাবে জেনে শ্রীজনী কোনো কথাই তাদের কাছে বলে না। সম্পূর্ণটাই চেপে যায়। ওনারা ওকে যেতে বললে সে বলে ” তোমাদের জামাইয়ের কাজের অনেক চাপ ওর কাজের চাপটা একটু কমলেই আমরা একসাথে সেখানে যাবো”।
রাত তখন দুটো তন্ময় বাড়ি ফেরে। ওর জামায় লিপস্টিকের দাগ শ্রীজনীর বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তার স্বামী বাইরে মাঝ রাত পর্যন্ত কি কাজে ব্যস্ত ছিল। রাতে ওকে কিছু না বললে ও সকালে এই নিয়ে প্রশ্ন করলে তন্ময় আবার আগের দিনের মতো তেড়ে আসে শ্রীজনীর দিকে। জোড়ে হাত মুচকে দিতেই শ্রীজনী ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে ” খবরদার আজকে আর তার গায়ে হাত দেবার সাহস যেনো সে না করে এর ফল ভালো হবে না”। শ্রীজনীর এই কথা শুনে বিশ্বম্ভর বাবু ছেলেকে শান্ত করে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বলেন ” বেশী বাড়াবাড়ি করিস না। বাইরের কেচ্ছা বাইরে রেখে এলেই তো হয়। নিজের গুনোপনার প্রমাণ বাড়ির অন্দরমহল পর্যন্ত বয়ে নিয়ে এলে তো এমনটা হবেই। তাই বেশী বাড়াবাড়ি না করে সে যেনো আজকে একটু চুপ করেই থাকে। কারণ বাড়ির অশান্তি কোনো ভাবে একবার বাইরে গেলে সেটা তাদের পরিবারের জন্য ভালো হবে না। তারা ব্যাবসা করে খায় তাদের একটা সামাজিক রেপুটেশন বজায় রেখে চলতেই হবে”। বাবার কথা মতো সে ও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
শ্রীজনী বুঝতে পারে এই বিয়ের সিদ্ধান্তটা তার এবং তার পরিবারের কতো বড় ভুল। ও সেদিন কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সোজা বাপের বাড়িতে চলে যায়। অকস্মাৎ মেয়েকে কোনো খবর না দিয়ে আসতে দেখে শ্রীজাত বাবু আর ছবি দেবী দুজনেই একসাথে বলে ওঠে ” কি রে মা তুই? কোনো খবর না দিয়েই হুট করে চলে এলি যে? জামাই আসেনি”?
বাবা মায়ের এমন প্রশ্নে শ্রীজনী ওদের বলে ” কেনো মা? না বলে বুঝি আমার আর এখানে আসতে নেই”? মেয়ের এমন কথায় শ্রীজাত বাবু বলেন ” না রে মা তা নয় আসলে আগের দিনই তো তুই বললি যে তন্ময়ের কাজের অনেক চাপ ওর কাজের চাপ টা কমলেই তোরা একসাথে আসবি তাই আর কি”! বাবার কথায় চুপ করে মাথা নীচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে শ্রীজনী। মেয়েকে ঐভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওনারা নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে! তারপর ছবি দেবী মেয়ের হাত ধরে বলেন ” আয় আয় ভিতরে আয় বাইরে এইভাবে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে? রাগ করিস না মা”। কিন্তু হাত ধরে টানতেই শ্রীজনী ব্যথায় আহ্ করে উঠল ছবি দেবী মেয়ের হাত উঁচু করে দেখেন হাতের কব্জিতে কালসিটে দাগ। উনি আৎকে উঠে জিজ্ঞাসা করেন ” এ কি হাতে এমন করে কালসিটে দাগ ! কি করে এমন হলো? কি রে কিছু বল চুপ করে আছিস কেনো”?
শ্রীজাত বাবু দাঁড়াও দাঁড়াও মেয়েটাকে আগে ঘরে তো ঢুকতে দাও। তুই আয় মা ঘরে আয়। ঘরের ভিতরে যেতেই শ্রীজাত বাবু মেয়েকে শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করে ” এবার বলতো মা এরকম ব্যথা কি ভাবে লাগালি? কোনো কাজ করতে গিয়ে ব্যথা পাসনি তো”? বাবার কথায় চুপ করে থাকে শ্রীজনী। এরমধ্যেই শ্রীজাত বাবুর ছেলে পিযুষ দিদির হাত টেনে ধরে বলে ” কই দেখি দিভাই কোথায় ব্যথা পেয়েছিস তুই? চল তোকে আমি ওষুধ লাগিয়ে দি”। হাতটা টেনে নিয়ে দেখতেই ওর মুখটা থমথমে করে নিয়ে বলে ” সত্যি করে বলতো দিভাই এটা কি তুই ব্যাথা পেয়েছিস নাকি অন্য কিছু”?
ছবি দেবী চিৎকার করে বলে ” অন্য কিছু ? অন্য কিছু আবার কি হবে শুনি? তোকে না কতোদিন বলেছি বাবু বড়দের কথার মধ্যে তুই একদম থাকবি না। কোনো কথা শুনিস না তুই আমার”। মায়ের কথায় কোনো কর্ণপাত না করে পিযুষ আবার ওর দিদিকে বলে ” কি হলো দিভাই বল আমি যা জিজ্ঞাসা করছি”।
ভাইয়ের কথায় চোখ বেয়ে জল নেমে আসে শ্রীজনীর। ওকে কাঁদতে দেখে পিযুষ ওর মাকে বলে ” আমি বলেছিলাম তো তোমাদের দিভাই ওখানে ভালো নেই। তোমার তো ছোটো ছোটো বলে আমার কোনো কথাই শুনতে চাও না। এবার মিললো তো আমার কথা”? মেয়েকে কাঁদতে দেখে শ্রীজাত বাবু ব্যাস্ত হয়ে বলে ” কি রে মা ও কি বলছে? তুই কি সত্যি সেখানে ভালো নেই? তন্ময় তোর গায়ে হাত তুলেছে”?
শ্রীজনী ক্ষীণ স্বরে বলে ” ও ঠিকই বলছে মা ওরা ভালো লোক না বাবা। ওরা কথায় কথায় আমার বাপের বাড়ি তুলে যা নয় তাই বলে। ওদের কথায় আমাদের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই যে ওদের সাথে আমরা আত্মীয়তা করতে পারি। এটা ওদের মহানুভবতা যে ওরা আমাকে ওদের ঘরের বউ করে নিয়ে গেছে। সেদিন পড়ার কথা বলতেও ওর মা আমাকে যাচ্ছেতাই করে কথা শুনিয়েছে। ওরা সারাক্ষণ বলে আমাদের সাথে সম্পর্ক করে ওরা পসতাচ্ছে। বাবা, মা আমি আর ওখানে ফিরে যাবো না। তারপর তন্ময়ের সমস্ত কথা এক এক করে শ্রীজনী সবটাই ওর বাবা, মায়ের কাছে বলে। পিযুষ বলে ” আমি অনেক আগেই জেনেছি যে তন্ময় দার অন্য অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে”।
ছেলের কথায় ছবি দেবী তাকে বলে ” তুই? তুই এসব কি করে জানলি”? মায়ের কথার উত্তরে তন্ময় বলে প্রিয়ম বলেছে আমাকে। তন্ময় দা মেয়েগুলো কে নিয়ে যেই হোটেলে যায় হোটেলটা প্রিয়মের বাড়ির কাছেই। ও অনেকদিন দেখে আমাকে বলেছে। প্রথমটায় যদিও আমি ওর কথায় বিশ্বাস করিনি কিন্তু সেদিন ওর কথা যাচাই করতে আমি ওর বাড়ি যাই আর নিজের চোখে সবটা দেখি। আমি দিভাইকে ও ফোন করে কথাগুলো জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু দিভাই তো আমার কোনো কথা না শুনেই ফোন রেখে দিলো । তোমাদের বলতে গেলেও তোমারা আমার কথা শুনতে চাওনি”।
সব শুনে শ্রীজাত বাবু আর ছবি দেবীর পায়ের তলার মাটি যেনো একটু একটু করে সরে যেতে থাকে। ছবি দেবী স্বামীকে বলে ” এবার কি হবে গো”! ” কি আর হবে”? ওদের সাথে কথা বলতে হবে উত্তর দেয় শ্রীজাত বাবু।
বাবার কথা শুনে শ্রীজনী বলে ” না, বাবা তুমি ওদের সাথে কোনো কথা বলবে না। ওরা ভালো মানুষ নয়। ওরা তোমাকে অপমান করবে বাবা”।
মেয়ের কথা শুনে শ্রীজাত বাবু বলে ” না, মা কথা তো বলতেই হবে। দেখ একটা কিছু তৈরী করা খুব কঠিন রে মা ভেঙে ফেলতে কতটুকু সময় লাগে বল? আর তাছাড়া আমরা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের ঘরের একটা মেয়ের বিয়ের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বরাবরের মতো বাপের বাড়ি চলে আসবে এটা সমাজ, সংসার ভালোভাবে মেনে নেবে না। তাছাড়া আমাকে তো জানতে হবে সবটা আগে ভালো করে”! শ্রীজাত বাবুর কথায় শ্রীজনী অবাক হয়ে বলে ” এ কথা তুমি বলছো বাবা? ওদের কাছ থেকে আর তোমার কি জানার আছে? আমার কথাগুলো কি তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা বেশ আমার কথা না হয় বিশ্বাস করলে না কিন্তু পিযুষের কথা ও কি বিশ্বাস করছো না তোমরা”?
শ্রীজাত বাবু মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে ” তুই আমাদের ভুল বুঝিস না মা! কথাটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের নয়। তুই এখন চলে এলে নানা জনে নানা প্রশ্ন করবে। নানান কথা জানতে চাইবে আমি তো বললাম আমি আর তোর মা, আমরা গিয়ে কথা বলবো তোর শ্বশুর বাড়িতে”।
স্বামীর কথায় সায় দিয়ে ছবি দেবী বলেন ” তোর বাবা তো ঠিক কথাই বলছে। দেখ মা বিয়ের পর প্রথম জীবনে মেয়েদের অনেক ঝড় ঝাপটা আসে কিন্তু সেটাকে মানিয়ে নিয়ে কাটিয়ে উঠতে হয়। নাকি সংসার ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে হয়”।
” যে মানুষগুলো কথায় কথায় তোমাদের অপমান করে আমাকে ছোটো বড় কথা বলে আমার গায়ে হাত তোলে তোমারা আমাকে তাদের সাথে মানিয়ে চলতে বলছো? এটাই কি তোমাদের দেওয়া শিক্ষা ছিল? বাবা তুমি না বলতে যে , যে অন্যায় করে আর যে সহ্য করে দুজনেই সমান অপরাধী। সেগুলো কি শুধুই কথার কথা ছিল”?
শ্রীজাত বাবু মেয়ে বলে ” দেখ মা সংসার বড্ড কঠিন জায়গা সেখানে কিছু সময় নিজের ভালো লাগা না লাগার সাথে কিছুটা আপোস করে নিতেই হয়। তুই তো আমাদের সব বললি আমরা যাবো তন্ময় আর ওর বাড়ির লোকের সাথে কথা বলবো নিশ্চয়ই একটা কোনো সমাধানের রাস্তা বের হবে”।
সেদিন মেয়েকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে শ্রীজাত বাবু আর ছবি দেবী শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পিযুষ কিন্তু চেয়েছিল যে তার দিভাই আর যেনো সেই বাড়িতে আর ফিরে না যায়। কিন্তু ছোটো বলে তার কথায় কেউই কোনো কর্ণপাত করেনি।
আজ প্রায় দুদিন শ্রীজনী তার শ্বশুর বাড়িতে ফিরে গেছে। সেদিন রাতে মাতাল অবস্থায় তন্ময় ফিরলে শ্রীজনীর সাথে একপর্যায়ে তার তর্কাতর্কি চরমে পৌঁছায়। তন্ময় তার হাতের কাছে রাখা একটা ফুলদানি দিয়ে খুব জোড়ে শ্রীজনীর মাথায় আঘাত করলে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শ্রীজনী।
ছেলের এমন কাণ্ড দেখে ভয় পেয়ে যায় মিথিলা দেবী আর বিশ্বম্ভর বাবু। একসাথে চিৎকার করে বলে ” এ তুই কি করলি বাবু? এবার কি হবে? যদি মরে যায়”?
তন্ময় রুমাল দিয়ে নিজের মুখ মুছতে মুছতে বলে ” তোমরা দেখতে পাচ্ছিলে না ও আমার সাথে কেমন ভাবে তর্ক করে যাচ্ছিলো? তোমারা জানো না যে তর্ক আমার একদম ভালো লাগে না”!
বিশ্বম্ভর বাবু দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ছেলেকে বলে ওঠেন ” কিন্তু এবার কি হবে? একে তো এখুনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। না হলে তো মরেই যাবে”।
তন্ময় খুব শান্তভাবে বলে ” নিয়ে যাবো! গিয়ে বলবো বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে গেছে ব্যাস”। মিথিলা দেবী ছেলের কথায় বলেন ” ওর বাড়ির লোক কি সেটা বিশ্বাস করবে? মেনে নেবে ওরা? এমনিতেই তো সেদিন বাড়িতে গিয়ে সবই লাগিয়ে এসেছে”।
” তাতে কি লাভ হয়েছে? ওর ভিখারী বাপ, মা তো আবার নিজেদের গলার কাঁটা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। তোমরা ওসব নিয়ে ভেবো না। টাকা ছড়ালে সব সম্ভব। টাকার একটাই রং বুঝলে আর সেটা হলো সাদা। তোমারা বাড়িতেই থাকো আমি ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। কই মাছের জান শালির কটা সেলাই পড়বে ঠিক হয়ে যাবে”।
প্রায় দু ঘণ্টা বাদে ইমার্জেন্সী থেকে ডাক্তার বাবু বেড়িয়ে এসে বলে ” শ্রীজনী ঘোষের বাড়ির লোক কে আছেন”? শ্রীজাত বাবু এগিয়ে গিয়ে বলেন ” আমি, আমি ডাক্তার বাবু আমি ওর বাবা”! ডাক্তার বাবু গম্ভীর হয়ে বলেন ” ওনার স্বামী তো ওনাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন। উনি কোথায়”?
তন্ময় এগিয়ে এসে বলে ” আমি এখানেই আছি ডাক্তার বাবু। আমার স্ত্রী এখন কেমন আছে? ও ভালো আছে তো? সুস্থ হয়ে যাবে তো ডাক্তার বাবু? আমাদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ছমাস হয়েছে। আর এরমধ্যেই ওর এমন দুর্ঘটনা”।
গম্ভীর ভাবে ডাক্তার বাবু তন্ময়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলে ” ওনার এমন অবস্থা হলো কি ভাবে”? তন্ময় মিথ্যে চোখের জল মুছতে মুছতে বলে ” বাথরুমে ডাক্তার বাবু, বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গেছে ও”।
” কিন্তু ওনার আঘাতটা দেখে তো মনে হচ্ছে ওনাকে ভারি কোনো কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে”। ডাক্তারের কথা শুনে তন্ময় হাউহাউ করে কেঁদে উঠে বলে ” এ আপনি কি বলছেন ডাক্তার বাবু? কে মারবে ওকে। ওর যে সময় এমন হয়েছে সেই সময় তো বাড়িতে আমার অসুস্থ বাবা, মা ছাড়া আর কেউ ছিল না। আমার বাবা খুব অসুস্থ ডাক্তার বাবু। ওর পড়ে গিয়ে এমন অবস্থা হওয়াতে আমার মা খুব ভয় পেয়ে যায় আর আমাকে ফোন করে সব জানালে আমি দৌড়ে বাড়ি আসি আর তারপর ওকে এখানে নিয়ে আসি”।
তন্ময়ের কথায় ডাক্তার বাবু আবার প্রশ্ন করেন ” এতো রাতে আপনি বাইরে কি করতে ছিলেন”?
আমাদের অনেক ধরনের ব্যবসা আছে ডাক্তার বাবু। ইট, বালি সিমেন্ট কাজের জায়গায় যেদিন মাল যাবার থাকে সেদিন আমার রাত হয়।
” হুম বুঝলাম! কেসটা এক্সিডেন্ট কেস, বডি পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠাতে হবে আমাদের। আমরা পুলিশকে ইনফর্ম করেছি”।
শ্রীজাত বাবু ছুটে গিয়ে চিৎকার করে বলেন ” পুলিশ? পোস্টমর্টেম এসব আপনি কি বলছেন ডাক্তার বাবু। আমার মেয়েটা কেমন আছে”?
ডাক্তার বাবু শান্ত দুটো চোখ নিয়ে শ্রীজাত বাবুর কাঁধের উপর হাত রেখে বলেন ” মাথায় খুব জোড়ে আঘাত লাগায় অনেক চেষ্টার পরেও ওনাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। অনেক রক্তক্ষরণ হয়ে গেছে। সময় মতো আনলে হয়তো কিছু করা যেতো। বাকি উনি পড়ে গেছেন নাকি কেউ ওনাকে মেরেছে সেটা তো তদন্ত হলেই জানা যাবে”।
ওদের কথার মাঝখানেই পিযুষ দৌড়ে গিয়ে তন্ময় কে বলে ” আমার দিদি পড়ে যায়নি তুমি, তুমি আমার দিভাই কে মেরে ফেলেছো। দিভাই সেদিন বাড়িতে এসে বলেছিলো তুমি ওর গায়ে হাত দাও”! তন্ময় এক ধাক্কায় পিযুষ কে সরিয়ে দিয়ে বলে ” সর এখান থেকে যতো বড় মুখ নয় ততো বড় কথা? শালা একটা রুগি আধ পাগলা মালকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে আমার জীবন টা বরবাদ করে দিয়ে শান্তি হয়নি। এখন এসেছে খুনের দায় চাপাতে। শালা একটা ভিখারী পরিবার”।
জামাইয়ের কথা শুনে ছবি দেবী বলেন ” মুখ সামলে কথা বলো তন্ময়। তুমি জানো না তুমি কি বলছো”!
” আরে থামুন তো বড়লোক ছেলে দেখলে আপনাদের মতো লোয়ার স্ট্যান্ডার্ড ঘরের লোকের মুখ থেকে লালা ঝরে সে কি আর আমি জানি না। তখনই নিজেদের মেয়েটাকে সেই ছেলের ঘাড়ে চাপানোর জন্য আপনারা যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। আমার ভালো মানুষ বাবা, মায়ের ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে চাপিয়ে দিয়েছেন নিজেদের অসুস্থ মেয়েটাকে আমার ঘাড়ে। আবার বড় বড় কথা”।
গল্পটা পড়ে কার কেমন লাগবে জানি না। কারো ভালো লাগবে কারো বা না। কেউ আবার জানতে চাইবে গল্পের শেষটা কি হলো? তন্ময় আর ওর বাবা, মা তাদের কোনো শাস্তি হলো কি না? সত্যি বলতে আমার ও জানা নেই। না, বলবেন হয়তো গল্পটা আপনি তো লিখলেন তাহলে আপনার কি করে জানা নেই? কেনো জানা নেই? সত্যি বলতে কি আমি তার দরকার ও মনে করিনি।
কারণ কি জানেন তো এটাই আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র। গল্পে দোষীদের শাস্তি হলো কি না হলো তাতে কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তবিক চিত্রটা বদলে যায় না। গল্পে দোষীরা শাস্তি পাক আর নাই পাক কিন্তু বাস্তবে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দোষীরা মুক্তি পেয়ে যায়। তাদের কোনো শাস্তি হয় না। অর্থের জোড়ে ক্ষমতার জোড়ে তারা কিন্তু ঠিক ছাড় পেয়েই যায়। হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে যে শাস্তি হয় না আমি কিন্তু তা মোটেই বলছি না।
কিছু সংখ্যক বাবা, মায়েরা আজও একটা সময় আর বয়সের পর মেয়েদের লেখাপড়ার চেয়ে তাদের বিয়ের দেবার দিকে বেশী মনোযোগ দিয়ে ফেলেন। এবং ভালো পাত্র বলতে বোঝেন ভালো চাকরি, ভালো ব্যবসা সম্পত্তির পরিমাণ, বড় বাড়ি, দামী গাড়ি ইত্যাদি প্রভৃতি। কিন্তু সত্যি কি একজন ভালো মানুষের পরিচয় তার অর্থ কিংবা সম্পত্তির খতিয়ান?
সত্যি বলতে কি, যে বিপদের ভয়ে কিছু সংখ্যক বাবা, মায়েরা তাদের মেয়েদের সাত তাড়াতাড়ি বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়েন আপনাদের কি মনে হয় যে বিপদ এড়াতে তারা এমনটা করে থাকেন নিজেদের অজান্তেই তাদের নিজেদের বিপদ তারা নিজেরা ডেকে আনছেন না? যে মেয়েটাকে তার বাবা, মা একপ্রকার চোখের পাতার উপর রেখে বড় করেন সেই মেয়েটাই শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে এমন হেনস্থার শিকার হয়। এতেই কিন্তু শেষ নয় কোনো মেয়ে যদি এসে বলে যে সে শ্বশুর বাড়িতে ভালো নেই, প্রতিদিন কারণে অকারণে তাকে আর তার বাড়ির লোকদের সেখানে গালমন্দ করা হচ্ছে। তার স্বামীর পরকীয়া আছে এক বা একাধিক মেয়ের সাথে তখন ঠিক এই শ্রীজাত বাবু আর ছবি দেবীর মতো অনেক বাবা, মেয়েরাই বলে থাকেন ” মানিয়ে নে মা। প্রথম জীবনে এমন হয় ধীরে ধীরে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। একটা বাচ্চা হলে জামাইয়ের ঘরে মন বসবে”! সত্যিই তাই হয় কি?
আচ্ছা ধরুন কেনো ছেলে এমন না করে কোনো মেয়ে এমনটা করে। না, আমি বলছি না সব মেয়েরাই ধোয়া তুলসি পাতা। ব্যতিক্রম সব কালে সব যুগেই ছিল আজও আছে। ভালো ছেলে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে সে আমি বলছি না। এমন অনেক ছেলে আছে যারা ভালো করে মানিয়ে নিয়ে সংসার করতে চায়, করে। তারা মেয়েদের যথার্থ সন্মান ও করে। কিছু ক্ষেত্রে তারাও নির্যাতিত নিপীড়িত হয়। কিন্তু যদি আমরা সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব করি তাহলে কিন্তু সেই জাতীয় পুরুষের সংখ্যা মেয়েদের থেকে কিছু সংখ্যক কমই পাওয়া যাবে। এর পিছনের কারণটা আমাদের সমাজ এবং তার কিছু ধ্বসে পড়া নিয়ম নীতি।
যাই হোক, মোদ্দা কথায় আসা যাক ধরুন এমন পরকীয়া কোনো স্ত্রী করলো সে ও কাজের অজুহাত রাত করে নেশা করে বাড়ি ফেরে তার ও এক বা একাধিক পুরুষ বন্ধু বা পরকীয়া আছে। তাহলে কি একজন মেয়ের বাবা, মায়ের মতো করেই সেই ছেলেটির বাবা বা মায়েরা বলবে ” বাবা প্রথম জীবনে এমন একটু আধটু হয় ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু মানিয়ে নে”! আমার তো মনে হয় বলবে না। জানি না আপনাদের কি মনে হয়। হতেই পারে আমি ভুল। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে যদি উত্তরটা না হয় তাহলে একজন মেয়ে কেনো কি কারণে একটা ছেলের এমন ব্যাবহার মেনে নেবে এবং মানিয়ে নিয়ে থাকবে? কেনো? মেনে নেওয়া মানিয়ে নেওয়া সেটা কি শুধুই মেয়েদের জন্য বরাদ্দ করা?
একটা কথা কি জানেন তো ” There is a significant difference between the words “adjustment” and “compromise,” which every person needs to understand, whether they are a man or a woman”।
যে কোনো পরিস্থিতি সঙ্গীর সাথে মানিয়ে নেওয়াটা কিন্তু যে কোনো কারোরই কর্তব্য সেটাই উচিত কাজ। কিন্তু মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেবার অর্থটা কিন্তু সম্পূর্ণ রূপেই আলাদা। একটা কথা মনে রাখবেন, যে নিজেকে সন্মান করতে পারে না ভালোবাসতে পারে না তাকে কেউ সন্মান করে না ভালোবাসে না। অর্থাৎ নিজে ভালো না থাকলে কাউকে ভালো রাখা যায় না। নিজেকে ভালোবাসার উদাহরণ কিন্তু তন্ময়ের মতো মানুষেরা নয়। নিজেকে ভালোবাসার অর্থ কিন্তু অন্যকে কষ্ট দেওয়া না। অন্যকে ছোটো করা বা অপমান করা নয়। অন্যকে কারণে অকারণে ছোটো করা বাজে কথা বলা এটা তারাই করে যারা নিজেরাও কোথাও তার যোগ্য সম্মান পান না। হ্যাঁ, এটাই সত্যি। কারণ, যে সম্মান পায় সে সন্মান দিতেও জানে।
আমরা বলি স্বামী স্ত্রী এরা নাকি অর্ধাঙ্গিনী। তাহলে এবার আপনারাই বলুন তো অর্ধাঙ্গিনী কথার অর্থ তো শরীরের অর্ধেকটা কি তাই তো? তাহলে শরীরের অর্ধেকটা যদি ভালো না থাকে কষ্টে থাকে দুঃখে থাকে তাহলে বাকি অর্ধেকটা কি ভাবে ভালো থাকতে পারে? সম্ভব কি?
আমাদের সমাজে বিয়েকে আজ একটা পবিত্র বন্ধন হিসেবেই গণ্য করা হয়। দুটো মানুষ একজন আর একজনকে সাথে নিয়ে সুখে দুঃখে ভালো মন্দে একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার করে। সেখানে কেউ বড় না কেউ ছোটো না। দুজনের জায়গা, অধিকার, ভালো মন্দ দুটোই সমান। বিয়ে দুটো মনের মিলন দুটো পরিবারের মিলন। সেখানে একজন একজনকে কোনো কারণে কোনো ভাবেই ছোটো করতে পারে না।
সর্বোপরি বলবো মেয়ের বিয়ে দেবার আগে মানুষটাকে দেখুন তার পরিবার, পারিবারিক শিক্ষা এগুলোর খোঁজ নিন নাকি তার কতো বড় বাড়ি, গাড়ি কতো বড় চাকরি বা ব্যাবসা সেগুলোর। কারণ আপনার মেয়ে বা ছেলে সেই মানুষটার সাথে সংসার করবে তার বাড়ি গাড়ি টাকা বা সম্পত্তির সাথে নয়। তাই সবথেকে আগে সেই মানুষটার একজন প্রকৃত ভালো মানুষ হওয়া খুব দরকার যার সাথে আপনার ছেলে বা মেয়ে তার বাকি জীবনটা কাটাতে চলেছে।